খন্দকার সাকিব আল হাসান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
দায়িত্ব গ্রহণ ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
যার উত্তরসূরী | সাইফুজ্জামান শিখর | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সংসদীয় এলাকা | মাগুরা-১ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যক্তিগত বিবরণ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | মাগুরা, খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ মার্চ ১৯৮৭|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
দাম্পত্য সঙ্গী | উম্মে আহমেদ শিশির (বি. ২০১২) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সন্তান | ৩ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাসস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শিক্ষা | ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক (বিবিএ) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পেশা | রাজনীতিবিদ, ক্রিকেটার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | ফয়সাল[১] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | স্লো বামহাতি অর্থোডক্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | অলরাউন্ডার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৪৬) | ১৮ মে ২০০৭ বনাম ভারত | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ৪ এপ্রিল ২০২৩ বনাম আয়ারল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৮১) | ৬ আগস্ট ২০০৬ বনাম জিম্বাবুয়ে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ ওডিআই | ৭ নভেম্বর ২০২৩ বনাম শ্রীলঙ্কা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওডিআই শার্ট নং | ৭৫ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টি২০আই অভিষেক (ক্যাপ ১১) | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ বনাম জিম্বাবুয়ে | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টি২০আই | ১৬ জুলাই ২০২৩ বনাম আফগানিস্তান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টি২০আই শার্ট নং | ৭৫ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০০৪- বর্তমান | খুলনা বিভাগ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১০–২০১১ | ওরচেস্টারশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১১–২০১৭ | কলকাতা নাইট রাইডার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১২–২০১৩ | খুলনা রয়েল বেঙ্গলস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৩, ২০১৬–বর্তমান | ঢাকা ডায়নামাইটস[২] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৩ | লিচেস্টারশায়ার[৩] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৩ | বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস[৪] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৪-বর্তমান | অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স[৫] | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৫ | মেলবোর্ন রেনেগেডস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৫ | রংপুর রাইডার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৬ | করাচী কিংস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৭- | পেশোয়ার জালমি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০১৮-২০১৯ | সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০২১ | কলকাতা নাইট রাইডার্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো, ৬ মার্চ ২০২৩ |
খন্দকার সাকিব আল হাসান (জন্ম: ২৪ মার্চ ১৯৮৭) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং মাগুরা-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য।[৬] তিনি বামহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে খেলা সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত সাকিবকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার বলে গণ্য করা হয়।[৭] ১০ বছর ধরে শীর্ষ অল-রাউন্ডার এর রেকর্ডের অধিকারী সাকিব এখনো একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট ফরম্যাটে সর্বোচ্চ র্যাংকিং ধরে রেখেছেন।[৮] তিনি ইএসপিএন দ্বারা বিশ্বের ৯০তম বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্থান পেয়েছেন।[৯] ২০২২ সাল পর্যন্ত, তিনি টি২০ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন।[১০]
২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার অভিষেক হয়। সাকিব বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)- এর একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। সাকিব ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইসিসির খেলোয়াড়দের র্যাংকিং অনুসারে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০ প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্করণে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক নম্বর অল-রাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৪,০০০ করার গৌরব অর্জন করেন এবং ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান (২১৭) সংগ্রাহক হন। তিনি টি২০তে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান পূর্ণ করেন ৷ এছাড়া দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি২০তে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন। ২০১৯ সালের জুনে তিনি দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে মাত্র ১৯৯ ম্যাচে ৫,০০০ রান ও ২৫০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।[১১][১২]
সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডারের মধ্যে একজন, যিনি একই সাথে দীর্ঘদিন তিন ফরমেটের (টেস্ট, ওয়ান-ডে, টি-২০) ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ, নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার হিসাবে ছিলেন। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন রেকর্ড শুধুমাত্র সাকিবের।
সাকিব ১৯৮৭ সালের ২৩শে মার্চ মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাশরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা শিরিন শারমিন একজন গৃহিণী।[১৩] তরুণ বয়সেই সাকিব খেলাপাগল ছিলেন। তার বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে এবং এক কাজিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলতেন। দৈনিক প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র'র বর্ণনা অনুসারে, "সাকিবের ক্রিকেট দক্ষতা ছিল অসাধারণ এবং গ্রাম-গ্রামান্তরে তাকে খেলার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হত।"[১৪] এরকমই এক ম্যাচে সাকিব এক আম্পায়ারকে অভিভূত করেছিলেন যিনি পরবর্তীতে সাকিবকে ইসলামপুর পাড়া ক্লাব (মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দল) এর সাথে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। সাকিব তার স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও দ্রুতগতির বোলিং অব্যাহত রাখেন, সেই সাথে প্রথমবারের মত স্পিন বোলিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ও সফল হন। ফলস্বরূপ, ইসলামপুর দলে খেলার সুযোগ পান এবং প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন। সত্যিকারের ক্রিকেট বল দিয়ে এটাই ছিল তার প্রথম করা বল, এর আগ পর্যন্ত তিনি টেপড টেনিস বল দিয়েই খেলতেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ছয়মাস প্রশিক্ষণ নেন[১৪] এবং ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে জাতীয় লীগে খেলার জন্য খুলনা দলে নাম জমা দেন।
মাত্র পনের বছর বয়সেই সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান।[১৫] ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে (অপর দুটি দেশ ছিল ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা) মাত্র ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে ও তিনটি উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে সহায়তা করেন তিনি।[১৬] ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ৩৫.১৮ গড়ে তিনি মোট ৫৬৩ রান সংগ্রহ করেন এবং ২০.১৮ গড়ে নেন মোট ২২টি উইকেট।[১৭]
২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে সাকিব প্রথমবারের মত বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। একই ট্যুরে ওয়ানডে অভিষেক হয় ফরহাদ রেজা ও মুশফিকুর রহিমের। সাকিব ও রেজাকে তখন "দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রতিভা" হিসেবে গণ্য করা হত, সকল ডিপার্টমেন্টে যাদের দক্ষতা অসামান্য। তৎকালীন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের বক্তব্য এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য: "তরুণদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। এখনই সময় তাদের আন্তর্জাতিক লেভেলে খেলার সুযোগ করে দেয়া।" একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় সাকিবের অভিষেক হয় ৬ই আগস্ট। তার প্রথম শিকার হন এলটন চিগুম্বুরা। ৩৯-১, এই ছিল তার সেদিনকার বোলিং ফিগার। ব্যাট হাতে তিনি ৩০ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন। শাহরিয়ার নাফিস সেদিন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে ভূমিকা রাখেন। ম্যাচটি ছিল সিরিজের শেষ ম্যাচ যাতে জিম্বাবুয়ে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী হয়। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে সাকিব, ফরহাদ রেজা ও মেহরাব হোসেন জুনিয়র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। ফলে, বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের সংখ্যা ২০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ এ।[১৮]
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আয়োজিত '২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ' এ হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন ১৫ জনের বাংলাদেশ স্কোয়াডে ডাক পান এই তরুণ ক্রিকেটার।[১৯] টুর্নামেন্টের দ্বিতীর পর্বে যেতে সক্ষম হয় এই দল এবং ৭ নম্বর টিম হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করে।[২০] শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে দলটি বড়সড় রকমের অঘটনের জন্ম দেয়।[২১] তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব - এ তিনজনের হাফ সেঞ্চুরির উপর ভর করে বাংলাদেশ সহজেই ১৯২ রানের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়। টুর্নামেন্টে সাকিব ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৯ ম্যাচে তিনি ২৮.৮৫ গড়ে ২০২ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন মোহাম্মদ আশরাফুল (২১৬)। সাকিব ৪৩.১৪ গড়ে ৭টি উইকেটও নেন।[২২]
সে বছরই মে মাসে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে'র এক সফরে ভারত বাংলাদেশে আসে। মে মাসের ১৮ তারিখ সাকিবের টেস্ট অভিষেক হয় ভারতের বিপক্ষে। অভিষেকটা ঠিক স্বপ্নের মত হয়নি তার জন্য। এক ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে এই অলরাউন্ডার ২৭ রান করেন এবং ১৩ ওভার বল করে উইকেটশূণ্য অবস্থায় থাকেন। ম্যাচটি ড্র হয়। ভারত টেস্ট সিরিজ জেতে ১-০ ব্যবধানে এবং ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ তে। সিরিজ শেষে ডেভ হোয়াটমোর দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং হাবিবুল বাশারের স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ আশরাফুল।[২৩][২৪] সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত আইসিসি টুয়েন্টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয়ের সুবাদে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পায়।[২৫] ম্যাচটিতে সাকিব ৩৪ রানে নেন ৪ উইকেট। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি টি-২০ ফরম্যাটে ৩টির বেশি উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। অক্টোবর মাসে ঘোষণা করা হয় যে, জেমি সিডন্স, অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন সহকারী কোচ, বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে আসছেন।[২৬] সিডন্স বাংলাদেশের উন্নতিকল্পে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেন এবং প্রতিভাবান তরুণদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশি বেশি সুযোগ দেবার ঘোষণা দেন।
২০০৭-এর ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ দল দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে নিউজিল্যান্ড আসে।[২৭] প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ না পেলেও পরের টেস্টেই সাকিব এনামুল হক জুনিয়রকে রিপ্লেস করেন তার ব্যাটিং কোয়ালিটির জন্য। এটা ছিল সাকিবের চতুর্থ টেস্ট। তখন পর্যন্ত সাকিব টেস্টে উইকেটশূন্য ছিলেন। সাকিবের প্রথম টেস্ট শিকার হন নিউজিল্যান্ডের ক্রেইগ কামিং। নিউজিল্যান্ড জেতে এক ইনিংস ও ১৩৭ রানে।[২৮] ওয়ানডে সিরিজেও নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে। তিন ম্যাচে সাকিব ১০.৩৩ গড়ে ৩১ রান করেন এবং ৪২.৩৩ গড়ে তিনটি উইকেট নেন।[২৯] ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ সফরে আসে। দুটো টেস্টেই সফরকারী দল জয়লাভ করে। সাকিব ১২২ রান দিয়ে মাত্র একটি উইকেট নেন এবং ব্যাট হাতে ৭৫ রান করেন।[৩০][৩১] ওয়ানডে সিরিজেও দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-০ তে জয় পায়। এ সিরিজেই সাকিব ওয়ানডেতে ১০০০ রানের মাইলস্টোন অতিক্রম করেন। ৩৯টি ম্যাচ খেলে সাকিবের ব্যাটিং গড় তখন ৩৫.৩৭।
সাকিব আল হাসানের গড় ২৮ অক্টোবর, ২০১৯[৩২] | |||||
---|---|---|---|---|---|
ম্যাচ | রান | ব্যাটিং গড় | উইকেট | বোলিং গড় | |
টেস্ট | ৫৬ | ৩৮৬২ | ৩৯.৪০ | ২১০ | ৩১.১২ |
ওডিআই | ২০৬ | ৬৩২৩ | ৩৭.৮৬ | ২৬০ | ৩০.২১ |
টুয়েন্টি২০ ইন্টাঃ | ৭৬ | ১৫৬৭ | ২৩.৭৪ | ৯২ | ২০.৫৮ |
টুয়েন্টি২০ | ৩০৮ | ৪৯৭০ | ২১.০৫ | ৩৫৪ | ২১.০৭ |
প্রথম শ্রেণী | ৯২ | ৫৭৭৭ | ৩৭.২৭ | ৩১০ | ৩০.০৩ |
লিস্ট এ | ২৫১ | ৭৪৬৫ | ৩৫.৮৮ | ৩২১ | ২৮.৭০ |
একজন অল-রাউন্ডার হওয়া সত্ত্বেও অক্টোবর,২০০৮ এর নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ ট্যুরের আগ পর্যন্ত সাকিবকে বোলার নয়, ব্যাটসম্যান হিসেবেই গণ্য করা হত। টেস্টে সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেও ওয়ানডেতে কিন্তু প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যেই থাকতেন তিনি। ট্যুরের আগ দিয়ে কোচ জিমি সিডন্স জানালেন, সাকিবকে স্পেশালিস্ট বোলার হিসেবেই টেস্ট সিরিজ খেলানো হবে। কোচকে হতাশ করেননি সাকিব। উদ্বোধনী টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তিনি ৩৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৭টি উইকেট। তখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশী বোলারের টেস্টে এটাই ছিল বেস্ট বোলিং ফিগার। বাংলাদেশ সিরিজ হারে ২-০ তে, কিন্তু সাকিব ১৭.৮০ গড়ে ১০টি উইকেট নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জয় পায়। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়।[৩৩] শেষ পর্যন্ত অবশ্য স্বাগতিক দল সিরিজ হারে ২-১ এ।[৩৪] সাকিব ৩ ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে মাশরাফি মুর্তজা (৭ উইকেট)'র পেছনে থেকে সিরিজে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।[৩৫]
পরের মাসেই বাংলাদেশ দল দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-২০ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়।[৩৬] সাকিবের বোলিং পারফরম্যান্স এখানেও অব্যাহত থাকে। প্রথম টেস্টের প্রথম দিন সাকিব উইকেটশূন্য থাকলে মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, বাংলাদেশের তৎকালীন সহকারী কোচ, তাকে বলে 'ফ্লাইট' দেবার পরামর্শ দেন। গুরুর উপদেশ শিরোধার্য করে সাকিব দ্বিতীয় দিনেই পাঁচ-পাঁচটি উইকেট তুলে নেন। দ্বিতীয় টেস্টে সাকিব আবারও এক ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নেন। সিরিজ শেষে সাকিবের ঝুলিতে জমা হয় ২০.৮১ গড়ে ১১টি উইকেট।[৩৭] সাকিবের বোলিং দেখে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক লেগ স্পিনার ক্যারি ও' কীফে তাকে 'বিশ্বের সেরা ফিঙ্গার স্পিনার' হিসেবে অভিহিত করেন। ২০০৮ এর ডিসেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কা এদেশে দুটি টেস্ট ও একটি ত্রি-দেশীয় ওয়ানডে টুর্নামেন্ট (অপর দলটি ছিল জিম্বাবুয়ে) খেলতে আসে।[৩৮] দুটো টেস্টই শ্রীলঙ্কা জিতে নেয়। সেই সাথে ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালও। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য সাকিবের করা ৯২* রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজের একমাত্র জয়ের স্বাদ এনে দেয়।[৩৯] সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।
২২ জানুয়ারী, ২০০৯ সাকিব আইসিসি'র ওডিআই অল-রাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে উঠে আসেন।[৪০] ২০১১ সালে আইপিএল এর নিলামে তাকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনে নেয়।
২০০৯ এর শুরুতে বাংলাদেশের টানা কয়েকটি হার এবং দীর্ঘ রানখরার কারণে আশরাফুলের অধিনায়কত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। তখন থেকেই বিসিবি সাকিবকে জাতীয় দলের 'সম্ভাব্য কর্ণধার' হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। বিসিবি অবশ্য এতো দ্রুত সাকিবের কাঁধে অধিনায়কত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি ছিল না। পরবর্তীতে 'টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ,২০০৯' এর প্রথম পর্বেই বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও ভারতের কাছে হেরে বিদায় নেবার ফলে আশরাফুলের অধিনায়কত্বের বিষয়টি আবার সামনে চলে আসে। জুন, ২০০৯ এর মাশরাফিকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়, সাকিবকে করা হয় সহ-অধিনায়ক।[৪১]
জুলাই মাসে বাংলাদেশ ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরে যায়। প্রথম টেস্টেই মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। খেলার শেষ দিনে তিনি মাঠেই নামতে পারেননি এবং তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে সাকিব যেন নতুন রূপে জ্বলে ওঠেন। তিনি ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাকের নেতৃত্ব দেন এবং দু'জনে মিলে মোট ১৩টি উইকেট তুলে নিয়ে দেশকে এক ঐতিহাসিক জয় এনে দেন।[৪২] দেশের বাইরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। ওয়েস্ট-ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম এবং সর্বসাকুল্যে দ্বিতীয় টেস্ট বিজয়।[৪৩] ওয়েস্ট-ইন্ডিয়ান দলটি অবশ্য খানিকটা অনভিজ্ঞ ছিল। বেতনাদি নিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ও 'খেলোয়াড় সংগঠনের' মধ্যে রেষারেষি চলছিল। দলের প্রথম একাদশ এ সিরিজটি বর্জন করে এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি দল মাঠে খেলতে নামে। সাতজন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয় এই ম্যাচে। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফ্লয়েড রেইফার, যিনি কিনা শেষ ১০ বছরে মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছিলেন।[৪৪]
মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টা সাকিবই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সাকিবের নেতৃত্ত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয় এবং দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়।[৪৫] ব্যাট হাতে ১৬ ও ৯৬* রান করে এবং বল হাতে ৫৯/৩ ও ৭০/৫ উইকেট নিয়ে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ-দুটো পুরস্কারই নিজের ঝুলিতে পুরেন। গোটা সিরিজে তিনি ৫৩.০০ গড়ে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১৮.৭৬ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়ে কেমার রোচের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।[৪৬] টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জেতার পর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজও ৩-০ তে জেতে। সিরিজে সাকিব দুটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন। ব্যাটিং গড় ছিল ৪৫.০০।[৪৭] ৪৮.০০ গড়ে তিনি দুটো উইকেটও নেন। এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য ওয়ানডে সিরিজেও তিনি 'সেরা খেলোয়াড়ে'র খেতাব জিতে নেন।
মাশরাফি আহত অবস্থায় থাকায় সাকিবকেই আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিব মাত্র ৬৪ বলে ১০৪ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে ও দলকে ২-০ তে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন।[৪৮] সাকিব সিরিজ শেষ করেন ৪২.৫০ গড়ে ১৭০ রান করে, পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে। ৩৯.৬৬ গড়ে নেন মোট ৬ট উইকেট। ৪-১ এ সিরিজ জয় শেষে কুঁচকির ব্যথা সারানোর জন্য সাকিব অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।[৪৯] ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই ব্যথাটা তাকে ভোগাচ্ছিল। ব্যথাকে উপেক্ষা করেই তিনি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবার সিদ্ধান্ত নেন। পুরো বছর জুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে সাকিব আইসিসি কর্তৃক 'টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯' ও 'ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯' এর জন্য মনোনীত হন।[৫০] সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি এ ধরনের ক্যাটাগরীতে মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয় যে, পরের মাসে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফি-ই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন এবং সাকিব আবারও সহ-অধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।[৫১] কিন্তু মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরি থেকে সময়মত সেরে উঠতে না পারায় সাকিবকেই অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়।[৫২] উদ্বোধনী খেলায় হারলেও সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় [৫৩] এবং ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়[৫৪] নভেম্বর মাসে 'দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স' সাকিবকে 'বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার' ঘোষণা করে।
২০১০-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড। সবগুলো ম্যাচেই ইংল্যান্ড জয় পায়।[৫৫] টেস্ট ও ওয়ানডে- দুটোতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন সাকিব (টেস্টে ৯ উইকেট ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট)।[৫৬][৫৭] দ্বিতীয় টেস্টের দু'ইনিংসে সাকিব যথাক্রমে ৪৯ ও ৯৬ রান করেন এবং ১২৪ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। দুটো টেস্টই শেষ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ম্যাচের ত্তীয় দিনে আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত অবশ্য যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক হারের জন্য সাকিব আম্পায়ারদের পরোক্ষভাবে দোষারোপ করেন। [৫৮] সে বছরই মে মাসে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ট্যুরে যায়। এবারও বাংলাদেশ ২-০তে টেস্ট সিরিজ হারে এবং ৮টি উইকেট নিয়ে সাকিব সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।[৫৯] ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দিয়ে বাংলাদেশ 'এশিয়া কাপ, ২০১০' খেলার উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কা যায়। তিনটি ম্যাচের প্রতিটিতেই বাংলাদেশ হারে।[৬০] সাকিব ও শফিউল ৫টি করে উইকেট নিয়ে যৌথভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।
অধিনায়ক হিসেবে সাকিব নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সেই সাথে অল-রাউন্ডার হিসেবেও নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এই দ্বিবিধ জটিলতার কারণে জুলাই মাসে সাকিব অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। দলের দায়িত্ব পুনরায় মাশরাফির কাঁধে বর্তায়। ব্যাপারটাকে সিডন্স ব্যাখ্যা করেন এভাবে, "দেখুন, সাকিব বুঝেশুনেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। ব্যাটিংয়ে ওর ফর্মটা খারাপ যাচ্ছিল। ওর একটু রেস্ট দরকার।"[৬১] শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এসে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারাতে সমর্থ হয়।[৬২] বাংলাদেশ সিরিজ হারে ২-১ এ। ইংল্যান্ড সফর শেষে বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি এবং স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১টি করে ওয়ানডে খেলার কথা ছিল। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় এবং আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড-উভয়ের কাছেই বাংলাদেশ হারে।[৫৮]
জুলাই মাসে সাকিব পূর্ব-নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশন কাউন্টি দল ওরচেস্টারশায়ারে যোগ দেন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি কাউন্টিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এ দলের পক্ষেই সাকিব করেন তার ফার্স্টক্লাস ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং (৩২/৭, মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে)। ৮টি ফার্স্টক্লাস ম্যাচ খেলে সাকিব ২৫.৫৭ গড়ে করেন ৩৬৮ রান এবং ২২.৩৭ গড়ে নেন মোট ৩৫টি উইকেট।[৬৩][৬৪] ওরচেস্টারশায়ার প্রথম ডিভিশন লীগে উন্নীত হয় এবং সাকিবও দলের হয়ে ৫টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পান। দুটো অর্ধ-শতকের সাহায্যে সাকিব ৩৭.৪ গড়ে করেন ১৮৭ রান এবং ১৭.৭৭ গড়ে নেন ৯টি উইকেট।[৬৫][৬৬] এশিয়া কাপ ২০১২ এ বাংলাদেশ অভাবনীয় খেলে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে পাকিস্তান এর বিপক্ষে খেলার। চূড়ান্ত খেলায় বাংলাদেশ মাত্র ২ রান এ হেরে যায়। সাকিব সেখানেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হন।
অক্টোবর, ২০১০ এ পাঁচ ওয়ানডে'র একটি সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে আসে। প্রথম ম্যাচেই মাশরাফি অ্যাংকেল ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।[৬৭] ফলশ্রুতিতে সাকিব অধিনায়কের দায়িত্ব নেন। সাকিব একেবারে সামনে থেকে দলকে নেত্ত্ব দেন। ব্যাট হাতে করেন ৫৮রান, বল হাতে নেন ৪টি উইকেট। দল জেতে ৯ রানে।[৬৮] চতুর্থ ম্যাচে সাকিব আবারও শতক হাঁকান এবং তিন উইকেট নিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ৪-০তে।[৬৯] পূর্ণশক্তির কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিরুদ্ধে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। ২১৩ রান করে সাকিব সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১১ উইকেট নিয়ে হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।
ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে। মাশরাফি ততদিনে ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। এতৎসত্ত্বেও সাকিবকেই দলের অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়। প্রথম ম্যাচে পরাজয়র পর প্রেস কনফারেন্সে সাকিব বলেন, "দায়িত্বটা নিতে আমি ঠিক মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না এবং অধিনায়ক হিসেবে আমার ভূমিকা নিয়েও আমি সন্তুষ্ট না।[৭০]" সিরিজের বাকি তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ জয় পায়[৭১], একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ১৫৬ রান করে সাকিব বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন, বল হাতে নেন ৯টি মূল্যবান উইকেট।[৭২][৭৩]
নতুন নেতৃত্বের বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামে অক্টোবর, ২০১১। অধিনায়কত্ব থেকে মুক্তির পর, বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট এবং ওডিআইয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারী হন।[৭৪][৭৫] এরপর, সাকিব বাংলাদেশের শীর্ষ রানকারী এবং উইকেট শিকারী হন দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে।[৭৬][৭৭] সিরিজের ২য় টেস্টে তিনি প্রথম বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে একটি শতরান (তার সেরা ইনিংস ১৪৪) এবং একই টেস্টে ৫ উইকেট নেন।[৭৮] সিরিজের পর তিনি আইসিসির টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে উঠে আসেন।[৭৯]
২০১২ সালের এশিয়া কাপে দুর্দান্ত খেলার জন্য সাকিব আল হাসান ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন। এই সিরিজে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠে এবং মাত্র ২ রানে হেরে যায়।[৮০] সিরিজে সাকিব ৪ ম্যাচে ৩টি অর্ধ-শতক এবং অপর ম্যাচে ৪৯ রান করেন। এছাড়া বল হাতে ৬টি উইকেট নেন।
১০-১৪ জুন, ২০১৫ তারিখে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে দেশীয় রেকর্ড গড়েন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বৃষ্টিবিঘ্নিত একমাত্র টেস্টে তিনি ২০০৪ রান তোলেন। এরফলে দেশের মাটিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই সহস্রাধিক রান করতে পেরেছেন তিনি। এছাড়াও ১০৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশে সর্বাধিক টেস্ট উইকেট পেয়েছেন তিনি।[৮১]
২০১২ সালের আইপিএলে সাকিব ক্রিকইনফো ওয়েবসাইটে সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন, তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন হয়।[৮২]
২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে বিসিবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে।[৮৩] এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।[৮৪] ১৮ ফেব্রুয়ারি ম্যানুকা ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ-পর্বের প্রথম খেলায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে চমকপ্রদ ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন সাকিব। মুশফিককে সাথে নিয়ে ১০০ রানের একটি জুটি গড়ে তোলেন যা বাংলাদেশের জয়ে ভুমিকা রাখে। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান একদিনের আন্তর্জাতিকে ৪,০০০ রান সংগ্রহ করেন। [৮৫] অর্ধ-শতকের পাশাপাশি ২ উইকেট লাভ করে বাংলাদেশ দলকে ১০৫ রানে জয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসরের পর সাকিব দ্বিতীয়বারের মত টি২০ দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে মুশফিকুর রহিমকেও টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে সাকিবকে পুনরায় টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ বাংলাদেশ ত্রি-দেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ও ব্যাট হাতে ৩৭ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার অর্জন করেন এবং তার দল ৮ উইকেটের জয় পায়। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ব্যাট হাতে ৬৭ রান করে ও বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন এবং তার দল ১৬৩ রানের জয় পায়। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি পুনরায় ৩ উইকেট তুলে নেন এবং তার দল ৯১ রানে জয় লাভ করে। এই সিরিজে তিনি আঙ্গুলে আঘাত পান এবং কয়েক দিনের জন্য বিশ্রামে যান। তার অনুপস্থিতিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তার স্থলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ ও ২০১৮ নিদহাস ট্রফিতে অধিনায়কত্ব করেন। অধিনায়ক হিসেবে তার প্রথম সফর ছিল জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
২০১৭ সালের ২৮শে আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাকিব ৪র্থ বোলার হিসেবে সকল টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড ব্যতীত, যারা এই বছরের শুরুতে টেস্ট খেলার মর্যাদা অর্জন করে) ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন। তিনি প্রথম ইনিংসে অর্ধ-শতকও করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাট হাতে মাত্র ৮ রান করেন, কিন্তু বল হাতে আরও ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তার প্রথম ১০ উইকেট পান এবং ম্যাচটি জয়লাভ করেন। যাই হোক, সিরিজ শেষে তিনি সীমিত ওভারের খেলায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য টেস্ট থেকে বিরতি নেন।
২০১৮ সালের এপ্রিলে তিনি দশজন ক্রিকেটারের একজন ছিলেন, যাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ২০১৮ মৌসুমের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে চুক্তিবদ্ধ করে। এই মাসের শেষের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালের ৩১শে মে অনুষ্ঠিতব্য একটি টি২০ খেলায় বাকি বিশ্ব একাদশ দলে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি পরবর্তী কালে ব্যক্তিগত কারণে এই দল থেকে নাম প্রত্যাহার করেন। ২৪শে মে তিনি দ্বিতীয় টি২০ খেলোয়াড় হিসেবে এই সংস্করণে ৩০০ উইকেট ও ৪০০০ রান করার কৃতিত্ব গড়েন।
২০১৮ সালের অক্টোবর তিনি ঢাকা ডায়নামাইটস দলে অন্তর্ভুক্ত হন।
২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তিনি বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন। এই ম্যাচে তিনি ম্যাচের দিক থেকে দ্রুততম খেলোয়াড় হিসেবে ৩,০০০ রান ও ২০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন। ৫৪টি ম্যাচ খেলে তিনি এই রেকর্ড গড়েন।
সাকিব ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির সদস্য মনোনিত হন। মেরিলবোন ক্রিকেট ক্লাব (সংক্ষেপে এমসিসি) ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রিকেট খেলার যাবতীয় নিয়ম কানুন ও নানা পরিবর্তনসহ খেলার ভালো-মন্দ নিয়ে আইসিসিকে সুপারিশ করে এ কমিটি। [৮৬] এতে বিশ্বের বর্তমান ও সাবেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবং আম্পায়াররা সদস্য মনোনিত হন। ক্রিকেটের প্রাসঙ্গিক বেশিরভাগ আলোচনা ও সুপারিশ করে এমসিসি। কমিটির সভা অনুমোদন করে আইসিসি।[৮৭]
২০১৯ সালের এপ্রিলে সাকিব ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তিনি ও মুশফিকুর রহিম তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের জুটি গড়েন, যা বিশ্বকাপের বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। বাংলাদেশ দল ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ রান সংগ্রহ করে, যা একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি এইডেন মার্করামের উইকেট তুলে নেন, যা তার একদিনের আন্তর্জাতিকে তার ২৫০তম উইকেট, এবং তিনি ম্যাচের সংখ্যার দিক থেকে মাত্র ১৯৯ ম্যাচ খেলে ২৫০ উইকেট নেওয়া ও ৫,০০০ রান করা দ্রুততম ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ ২১ রানে ম্যাচটি জিতে এবং সাকিব ম্যাচ সেরা ঘোষিত হন। এছাড়া এই ম্যাচে তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০৭ থেকে টানা চার বিশ্বকাপে নিজ দলের উদ্বোধনী ম্যাচে অর্ধ-শতক করার রেকর্ড গড়েন।
এই আসরে বাংলাদেশের পরের ম্যাচে সাকিব নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার ব্যক্তিগত ২০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তিনি এই আসরে টানা দ্বিতীয় অর্ধ-শতক করেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২টি উইকেট তুলে নেন। ৮ই জুন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে তার প্রথম এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক তুলে নেন। ১৭ই জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি দলকে জেতানো শতক তুলে নেন এবং ম্যাচ সেরা হন। এই ম্যাচে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬,০০০ রান পূর্ণ করেন।
২৪শে জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ১,০০০ রান করার কৃতিত্ব গড়েন এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া তিনি যুবরাজ সিঙের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে ১ ম্যাচে অর্ধশত রান ও ৫ উইকেট শিকারের অধিকারী হন। ২রা জুলাই ভারতের বিপক্ষে তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০ রান ও ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন। ৫ই জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্ধশত রান করেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে আট ম্যাচে ৬০৬ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ সমাপ্ত করেন।
২০২১ সালের ৪ই আগস্টে আইসিসি ঘোষণা করে যে সাকিব, মিচেল মার্শ এবং হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র ২০২১ সালের জুলাই মাসের 'প্লেয়ার অব দ্য মান্থ' পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
এক বছর নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ও ওডিআই সিরিজের জন্য জাতীয় দলে যোগদান করেন।[৮৮] প্রথম ওডিআইয়ে তিনি দেশের মাটিতে ১৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড করেন।[৮৯] এছাড়া তিনি প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার ও বামহাতি স্পিনার হিসেবে দেশের মাটিতে ১০০ ইনিংস বল করার রেকর্ড করেন।[৯০] তৃতীয় ওডিআইয়ে তিনি একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সকল ফরম্যাটে ৬,০০০ রান ও ৩০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড করেন।[৯১] বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জয় লাভ করে এবং তিনি ১১৩ রান ও ৮.৩৩ গড়ে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হন।[৯২]
২০১৩ সালের মার্চ মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২য় ওডিআই ম্যাচে ৩২৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে তিনি ৬৯ বলে ৫৮ রান করেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওডিআই ম্যাচে তিনি এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী বোলার এবং সামগ্রিকভাবে ১৪তম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট শিকারি হন। ১৮ই মার্চ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওডিআইয়ে ৯৩ রান করেন এবং সনাথ জয়াসুরিয়া ও শহীদ আফ্রিদির পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৭০০০ রান ও ৩০০ উইকেট শিকারি হন।[৯৩]
মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে সাকিব আল হাসান বিভিন্ন সময় সমলোচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজের ২য় ওডিআই[৯৪] চলাকালীন ড্রেসিংরুমে অশালীন অঙ্গভঙ্গি[৯৫] প্রদর্শন করায়, তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ও তিন লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হয় তাকে।[৯৬]
২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে জাতীয় দল থেকে ৬ মাসের জন্য ও বাংলাদেশের বাইরের ক্লাব ক্রিকেটের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিষিদ্ধ করে।[৯৭][৯৮] জাতীয় দলের কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহার সাথে দুর্ব্যবহার, মাঠে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান দাবি করেন।[৯৮] যদিও এই শাস্তি দেয়ার জন্য বোর্ডকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।[৯৯] [১০০] [১০১]
পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট বিসিবির বোর্ড সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কথা বিবেচনা করে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে সাকিব একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর[১০২] থেকে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবেন। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন এবং প্রথম টেস্টে ৫৯ রানের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেন।[১০৩]
জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও তা আইসিসি বা বিসিবিকে না জানানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দু’বছরের জন্যে আইসিসি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সাকিব ভুল স্বীকার করায় তা কমিয়ে ১ বছর করা হয়, বাকি ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।[১০৪][১০৫]
২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ঢাকার হোটেল রূপসী বাংলা'য় তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। যেখানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বিভিন্ন খেলোয়াড় উপস্থিত ছিলেন।[১০৬] বর্তমানে তিনি দুইটি কন্যা সন্তান এবং একটি পুত্র সন্তানের জনক।[১০৭][১০৮] তার বড় মেয়ের নাম আলাইনা হাসান অব্রি এবং ছোট মেয়ের নাম ইররাম।[১০৯][১১০] ছেলের নাম ইজাহ আল হাসান।[১১১]
২০২১ সালের ১৬ মার্চ তারিখে (বাংলাদেশ সময়) তৃতীয় সন্তানের বাবা হন সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন।[১১২][১১৩]
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৮৯ রানের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হয় মিরপুর স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসানের ১০০০ রান। মিরপুরে নিজের ১৩শ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামেন সাকিব আল হাসান। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসানের পরিসংখ্যন ১৩ ম্যাচ ২৫ ইনিংস ১০৫৮ রান এবং গড় ৪৬.০০[১৩৭]
দেখুন : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের পাঁচ-উইকেট লাভের তালিকা
সাকিব ২০১১ সালের পর নিজের ৩য় সেঞ্চুরি করেন সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।[১৩৮] ঐ ম্যাচে বৃহস্পতিবারের প্রথম ঘণ্টাতেই ত্রয়োদশবারের মতো পাঁচ উইকেট তুলে নেন সাকিব।[১৩৯] জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ২য় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের চতুর্দশ পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির মাধ্যমে সাকিব সাকলাইন মুশতাক ও মাইকেল হোল্ডিংয়ের অর্জনকে পিছনে রেখে দেন। বামহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক টেস্টে দুইবার পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির পর সাকিবও এ তালিকায় যুক্ত হন। প্রথম ইনিংসে ১৩৭ রান ও ৫/৮০ পান। পরবর্তীতে ৫/৪৪ পান দ্বিতীয় ইনিংসে। তার এ কৃতিত্বে জিম্বাবুয়ে ১৬২ রানে পরাজিত হয় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।[১৪০] নাতসাই মুশাঙউইকে আউট করে সাকিব তার দশম উইকেট পূর্ণ করেন।[১৪১] সাকিবের সেঞ্চুরি ও দশ উইকেট প্রাপ্তির পূর্বে ১৯৮৩ সালে ফয়সালাবাদে ভারতের বিপক্ষে ইমরান খান সর্বশেষ এ কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। একমাত্র অন্য খেলোয়াড় ইয়ান বোথাম এ তালিকায় রয়েছেন। তন্মধ্যে সাকিব প্রথম স্পিনার হিসেবে। ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়াসিম আকরাম তিন টেস্টের সিরিজে সেঞ্চুরিসহ তিনবার পাঁচ উইকেট পান। তারপরই সাকিবের এ অর্জন। ধারাবাহিকভাবে পাঁচ উইকেট লাভের দিক দিয়ে সাকিবের অবস্থান পঞ্চম। তার সম্মুখে রয়েছেন সিডনি বার্নস, ক্ল্যারি গ্রিমেট, মুত্তিয়া মুরালিধরন, রিচার্ড হ্যাডলি। তবে হার্বার্ট সাটক্লিফ করেছেন মাত্র ১২ ইনিংসে।[১৩৯]
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; SAH200
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; 200wickets
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; 4000runs
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নিপূর্বসূরী মাশরাফি বিন মর্তুজা |
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক ২০০৯-২০১০ |
উত্তরসূরী মাশরাফি বিন মর্তুজা |
পূর্বসূরী মাশরাফি বিন মর্তুজা |
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক ২০১০-২০১১ |
উত্তরসূরী মুশফিকুর রহিম |