সাগর | |
---|---|
ভূগোল | |
অবস্থান | বঙ্গোপসাগর |
স্থানাঙ্ক | ২১°৩৯′১০″ উত্তর ৮৮°০৪′৩১″ পূর্ব / ২১.৬৫২৮° উত্তর ৮৮.০৭৫৩° পূর্ব |
দ্বীপপুঞ্জ | সুন্দরবন |
সর্বোচ্চ উচ্চতা | ৪ মিটার (১৩ ফুট) |
প্রশাসন | |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
জনপরিসংখ্যান | |
জনসংখ্যা | ২,১২,০৩৭ (২০১১) |
ভাষা | বাংলা] English |
অতিরিক্ত তথ্য | |
সময় অঞ্চল | |
ডাককোড | 743373 |
সাগর দ্বীপ হল বঙ্গোপসাগরের মহাদেশীয় সোপানে অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার (৫৪ সামুদ্রিক মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। দ্বীপটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজ্য সরকার কর্তৃক শাসিত। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার। এই দ্বীপে মোট ৪৩টি গ্রাম আছে। দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ১৬০,০০০।[১]
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান-এর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই দ্বীপ দক্ষিণদিকে প্রায় ৮ মাইল চওড়া। এর পশ্চিমে হুগলী নদীর প্রবাহ, পূর্বে বড়তলার খাল, হলদি নদী (পুরাতন রূপনারায়ণ) থেকে হুগলি নদী দেখা দিয়েছে। একদা হিজলীর সঙ্গে এই ভূখণ্ডের অবিচ্ছিন্ন সংযোগ ছিল, পরবর্তীকালে এটি বিচ্ছিন্ন হয়েছে। উত্তরদিকের দুটি দ্বীপ – ঘোড়ামারা ও লোহাচূড়া পরবর্তীকালে উঠেছে, এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাগর লাইটহাউসটি ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি।[২]
বিখ্যাত হিন্দু তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর সাগর দ্বীপে অবস্থিত। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে এখানে বিরাট মেলা হয়। এই সময় বহু তীর্থযাত্রী এখানে হুগলি নদীর মোহনায় তিনদিন ধরে স্নান করেন এবং স্থানীয় কপিল মুনি মন্দিরে পূজা দেন।
সাগর দ্বীপে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি পাইলট স্টেশন ও একটি বাতিঘর আছে।[১]
সাগরদ্বীপের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী উৎকল জাত। এঁরা অধিকাংশই মেদিনীপুরী বাংলা ভাষার অন্তর্গত কাঁথি বাংলায় কথোপকথন করেন। উক্ত অঞ্চলের সংস্কৃতি বঙ্গ এবং উৎকল সংস্কৃতির মিশ্রণ।
গঙ্গাসাগর মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা (কুম্ভমেলার পরে)। সাগর দ্বীপের দক্ষিণে হুগলি নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হচ্ছে। এই স্থানটি হিন্দুদের কাছে পবিত্র তীর্থ। তাই প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বহু লোক তীর্থস্নান করতে আসেন; তবে বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত অবাঙালি পুণ্যার্থীদের ভিড়ই হয় সর্বাধিক।[৩]
কিংবদন্তি আছে, এখানে সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন (রামায়ণ, বালকাণ্ড, ৪৩ অধ্যায়)। মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের কথা বলা হয়েছে। পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতে তার গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে।
এখানকার মন্দিরতলা, ধবলাট, মনসাদ্বীপ, হরিণবাড়ি, সুমতিনগর, মহিষমারি প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ভূগর্ভস্থ পাকাবাড়ি, দেবালয়, পাতকুয়ো, চৌবাচ্চা, চাতাল, নৌকা মুদ্রা-অলঙ্কারা বিষ্ণুমূর্তি, জৈনমূর্তি প্রভৃতি প্রাক্-মুসলমান যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন না হলেও এখানে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজকীয় দুর্ধর্ষ নৌবহরের ঘাঁটি ছিল বলে অনুমান করা হয়।
ইংরেজ উইলসন সাহেব তার হিন্দুধর্মবিষয়ক গ্রন্থে (১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছিলেন যে, গঙ্গাসাগরে একটি মন্দির ছিল এবং তার মধ্যে কপিলমুনির বিরাট একটি প্রস্তরমূর্তি বসানো ছিল। তার সামনে একটি বড় গাছতলায় রাম ও হনুমানের মূর্তি ছিল; পিছনে ছিল সীতাকুণ্ড। যদিও এখনকার কপিলমূর্তি ও মন্দিরের সাথে উইলসন-বর্ণিত মন্দির-মূর্তির কোন সম্পর্ক পাওয়া যায় না।[২]
২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, ১৮,০০০,০০০ লোক গঙ্গাসাগর মেলায় তীর্থস্নান করেছিলেন। বছরের অন্যান্য সময় গড়ে ১০,০০,০০০ মানুষ গঙ্গাসাগরে আসেন।[৪] ২০১৪ সালে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ গঙ্গাসাগরে তীর্থ করতে এসেছিলেন।[৫]
পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় জাহাজ পরিবহন মন্ত্রক সাগর দ্বীপকে পশ্চিমবঙ্গের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে স্থলপথে যুক্ত করার জন্য প্রায় ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ৩.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।[১] এছাড়া সাগর দ্বীপের কাছে একটি গভীর সমুদ্র বন্দরও স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে যেটি পি.পি.পি মডেলে কেন্দ্র, রাজ্য এবং বেসরকারি মালিকানাধীন হবে। যার আনুমানিক খরচ ধরা হয়ছে ১২০০০ কোটি টাকা।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যার নাম রেখেছেন ভোর সাগর বন্দর। এছাড়া ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়নের কাজ চলছে।
বহিঃস্থ ভিডিও | |
---|---|
Ganga Sagar Mela 2013 |