বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান |
---|
নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর একটি ধারাবাহিকের অংশ |
![]() |
বহু দশক ধরে গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন এবং অজস্র প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, সকল জীব একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। বিবর্তনের কারণে পৃথিবীতে জৈববৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আধুনিক বিবর্তনীয় সংশ্লেষণকে সমর্থন করে এবং এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়, কেন ও কীভাবে জীবন সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়। বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানীরা সাধারণ পূর্বপুরুষের সপক্ষে অসংখ্য প্রমাণ একাট্টা করেছেন, যা থেকে অনুমিত হয় সমগ্র জীবকুলের সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল।
জীবসমূহের মধ্যে ডিএনএ অনুক্রমের তুলনা থেকে দেখা গিয়েছে, যেসব জীব জাতিজনী ভাবে কাছাকাছি অবস্থান করে তাদের ডিএনএ অনুক্রম বা সিকোয়েন্স, জাতিজনী ভাবে দূরে থাকা অন্যান্য জীবের তুলনায় অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। জিনগত তথ্য এবং ডিএনএ আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা প্রজাতির সাথে জীবের সম্পর্ক ও জাতিজনী বৃক্ষ তৈরীতে সক্ষম হন। যেখানে প্রতিটা জীব কীভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত তা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে। একই সাথে আণবিক ঘড়ি তৈরীতে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হয়েছেন, যার ফলে প্রজাতির শ্রেণিগুলো একে অপর থেকে কখন পৃথক হয়েছে তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। সম্ভব হয়েছে জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণ।
প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক সময়ে কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে, তা বুঝার জন্য জীবাশ্ম থেকে সংগৃহীত তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।,
ডারউইন বেঁচে থাকা অবস্থায় প্রাণীর রঞ্জন যেমনঃ ক্যামোফ্ল্যাজ, মিমিক্রি এবং সতর্কীকরণ রঞ্জন সংক্রান্ত উদাহরণ গুলো পরিলক্ষিত হয়েছিল। এসব উদাহরণগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচনকেই সত্যায়িত করে।
ব্যাকটেরিয়া যেভাবে নিজেকে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী করে তুলছে এবং ছড়িয়ে পরছে, তা থেকে বুঝা যায়, প্রকৃতিতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের দরুণ ক্রমাগত বিবর্তন হচ্ছে। প্রজাত্যায়নের মত নতুন প্রজাতির সৃষ্টি প্রকৃতিতে এবং পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। জীবের সাধারণ পূর্বপুরুষ আছে কিনা, তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলো, ঐতিহাসিক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে জীবের নির্বাচিত প্রজনন ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এই নিবন্ধের প্রতিটা অনুচ্ছেদে বিবর্তনের বিভিন্ন উদাহরণকে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হবে।
সাধারণ পূর্বপুরুষের স্বপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ জিনের সিকোয়েন্স বা ক্রমবিন্যাস থেকেই এসেছে। তুলনামূলক ক্রমবিন্যাসের বিশ্লেষণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ডিএনএ ক্রমবিন্যাসের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে[১] ডারউইনের সাধারণ পূর্বপুরুষ সংক্রান্ত অনুমিত সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে একাধিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যদি সাধারণ পূর্বপুরুষের অনুমিত ধারণা সত্য হয়, তবে সাধারণ পূর্বপুরুষের ডিএনএ ক্রমবিন্যাস পরবর্তী উত্তরপুরুষে স্থানান্তরিত হয়েছে। সবচেয়ে কাছের সম্পর্কিত প্রজাতিগুলোতে ডিএনএর বিভিন্ন অংশবিশেষ অভিন্ন এবং দূরবর্তী প্রজাতিগুলোর তুলনায় নিকটবর্তী প্রজাতিগুলোতে অধিক সংখ্যক ডিএনএ অংশবিশেষ বিনিময় হয়।
সবচেয়ে সরল এবং শক্তিশালী প্রমাণ এসেছে জাতিজনি বৃক্ষের পুনর্গঠন থেকে। এই বৃক্ষ নির্মাণ করার সময় বিশেষ করে প্রোটিনের ক্রমবিন্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল, যা আধুনিক জীবের বিবর্তনীয় ইতিহাসে এক অনবদ্য কাজ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে, এমনকি এই বৃক্ষ নির্মাণের ফলে বিবর্তনীয় ইতিহাসে যেসব জীব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে; তাদেরও অনেককে ( যেমনঃ ম্যামথ অথবা (নিয়ান্ডারথাল) স্থান দেওয়া গিয়েছে। এই পুনর্নিমিত বৃক্ষ অঙ্গসংস্থান ও জৈব রাসায়নিক বিদ্যার মধ্যকার সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।[২] সুকেন্দ্রিক কোষীয় জীবের সবারই মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম থাকায়, সেই জিনোমের উপর ভিত্তি করেই বিস্তৃতপরিসরে এই পুনর্গঠন করা সম্ভবপর হয়েছে,[৩]। সম্প্রসারিত এই পুনর্গঠন করা সম্পন্ন হয়েছে প্রাচীন প্রোটিনের অনুক্রম ও রাইবোসোম আরএনএর অনুক্রম ব্যবহার করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ট্রান্সপোসন, সুডোজিন, এবং প্রোটিন কোডিং সিকোয়েন্সে সংগঠিত হওয়া মিউটেশন; যা এমিনো এসিডের সিকোয়েন্সে কোনো পরিবর্তন করে না; এরূপ ডিএনএর অক্রিয় উপাদানের সাথেও জাতিজনি প্রভাবের সম্পর্ক আছে।[৪]
সুডোজিন ননকোডিং ডিএনএ নামেও পরিচিত। এই ধরনের ডিএনএ বলতে বুঝানো হয়, এরা জিনোমেরই অংশ কিন্তু আরএনএতে ডিএনএর তথ্য অনুলিপি (ট্রান্সক্রাইব) হয়ে তা প্রোটিন সংশ্লেষণ করে না। ননকোডিং ডিএনএর কিছু কাজ জানা গিয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগেরই কাজ জানা যায় নি, তাই একে "জাঙ্ক ডিএনএ"ও বলা হয়।[৫][৬][৭][৮] এই জাঙ্ক ডিএনএ হচ্ছে অতীতের চিহ্ন যার প্রতিলিপন হওয়ার জন্য শক্তি ব্যবহৃত হত। কোনো কোড করতে সক্ষম জিনে মিউটেশনের ফলে তা কিছু জিনে ট্রান্সক্রাইব বা অনুলিপি হওয়াকে প্রতিরোধ করে দিতে পারে, ফলে সেসব জিন কার্যক্ষমতাহীন হয়ে পরে,এভাবেই সুডোজিনের সৃষ্টি হতে পারে।[৫] কিন্তু যদি এইসব জিন ট্রান্সক্রাইব বা অনুলিপি না হয় এবং প্রজাতিতে নন-কোডিং ডিএনএ কোনো সুবিধা না দেয়, তবে এসব জিন বিলুপ্ত হয়ে যায়। কার্যক্ষমতাহীন সুডোজিন পরবর্তী প্রজাতিতে স্থানান্তরিত হতে পারে, যার সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করে।
টিকে থাকা সমস্ত পরিচিত জীবকূলের জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়া একই হয়। জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া বলতে বুঝানো হচ্ছে যে, জিনগত তথ্য নিউক্লিক এসিডে (ডিএনএ অথবা অনেক ভাইরাসে আরএনএ) এনকোডেড হওয়া, আরএনএতে ট্রান্সক্রাইব হওয়া এবং এরপর অত্যন্ত সংরক্ষণশীল রাইবোসম দ্বারা প্রোটিনে (যা এমিনো এসিডের পলিমার) অনুলিপন বা ট্রান্সলেশন হওয়া। জেনেটিক কোডের (এমিনো এসিড এবং ডিএনএর মধ্যে "অনুলিপন ছক") মত তথ্য প্রায় সব জীবে একই। এর অর্থ হলো ব্যাকটেরিয়াতে ডিএনএর যে অংশ কোড করে একই এমিনো এসিড মানুষের কোষেও কাজ করে। সমস্ত টিকে থাকা জীবে একটাই শক্তির একক; আর তা হলো এটিপি। ক্রমবিকাশমান জীববিজ্ঞান অঙ্গসংস্থান গত বিন্যাসও একই। এমনকি জীবে জিনগত উপাদানেও বিনিময় ঘটে।[৯] উদাহরণস্বরূপ, যদিও বিশ্বাস করা হয় যে, ক্যামেরার মত চোখ ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে স্বাধীনভাবে বিবর্তিত হয়েছে,[১০] তবে সমস্ত প্রজাতির চোখই আলোক-সংবেদী প্রোটিন (অপসিন) বিনিময় করে। যেহেতু বেশিরভাগ প্রজাতিতে এই বৈশিষ্ট্য কমন; তাই এটা অনুমেয় যে, এসবজীবের দর্শনের জন্য একটি কমন বিন্দু আছে।[১১][১২] আরো একটি উদাহরণ হলো ভার্টিব্রাটা পর্বের প্রাণীদের মধ্যে একই প্রকার মিল, যেখানে তাদের শারীরিক গঠন এবং অবস্থান একটাই জিন হোক্স জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং নির্ধারিত হয়।
ডিএনএ সিকুয়েন্সের মাঝে তুলনা করে একই ধরনের ডিএনএ সিকুয়েন্স সম্পন্ন প্রজাতির মাঝে সম্পর্ক দেখানোর মতো ফাইলোজেনিক ট্রি তৈরি করা যায়। এবং এই ফাইলোজেনিক ট্রি দ্বারা সঠিক ট্যাক্সোনমিক ক্লাসিফিকেশন করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপঃ মানুষের ডিএনএ সিকুয়েন্স নিজের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রজাতি, শিম্পাঞ্জীর সাথে প্রায় ১.২ শতাংশ ভিন্ন। মানুষের ডিএনএ সিকুয়েন্সের সাথে ভিন্নতা গরিলার ডিএনএ সিকুয়েন্সের সাথে ১.৬ শতাংশ এবং বেবুনের ডিএনএর সাথে ৬.৬ শতাংশ।[১৩][১৪] জিনেটিক সিকুয়েন্সের এই মিল মানুষ ও অন্যান্য নরবানর বা এইপদের মধ্যকার জিনগত সম্পর্কের প্রমাণ তুলে ধরে। [১৫][১৬] 16S রাইবোজোমাল আরএনএ জিনের সিকুয়েন্স, এই গুরুত্বপূর্ণ জিন রাইবোজোমের একটি অংশ। এই সিকুয়েন্স দিয়েই সকল জীবের মধ্যকার সম্পর্ক বৃহাদাকারের ফাইলোজিনেটিক ট্রি দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছিলো। কার্ল উয়িজের থ্রী-ডোমেন সিস্টেম দ্বারা জীবনের বিবর্তনের প্রাথমিক সময়ে সংঘটিত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিভক্তির ব্যাখ্যা করা হয়। প্রথম বিভক্তি আধুনিক ব্যাক্টেরিয়ার উতপত্তি এবং পরবর্তীতে হওয়া দ্বিতীয় বিভক্তি আধুনিক আরকিয়া এবং সুকেন্দ্রিক কোষীয় প্রজাতির সূচনা করে।
কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির মাঝে ডিএনএ সিকুয়েন্সে মিল পাওয়া যায়। ধারণা করা হতো যে, বিবর্তনের তত্ত্বমতে এরকম ডিএনএ সিকুয়েন্সের মাঝে ভিন্নতা প্রজাতির মধ্যকার শারীরস্থান সম্পর্কিয় মিল থাকার কথা ইঙ্গিত করলেও সময় ও স্থানের ভিন্নতায় দুই প্রজাতি দুই ধরনের বিবর্তনীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়, যা ফসিলের মাঝে দ্রষ্টব্য। এই ধরনের পরিবর্তনের হার কিছু সিকুয়েন্সে কম আবার কিছু সিকুয়েন্সে বেশি। জটিল আরএনএ বা প্রোটিন সিকুয়েন্সে যেমন এই ধরনের পরিবর্তনের হার কম। অপরদিকে, জটিল গড়নের আরএনএ বা প্রোটিনে বেশি। অবশ্য নির্দিষ্ট সিকুয়েন্সের জন্য পরিবর্তনের হার সময়ের প্রেক্ষিতে একটি নির্দিষ্ট হার মেনে চলে। [১৭]
প্রোটিনের সেট সংক্রান্ত প্রমাণাদি সাধারণ পূর্বপুরুষের স্বপক্ষের বিষয়টিকে সমর্থন করেছে। রাইবোসোম, ডিএনএ পলিমারেজ, আরএনএ পলিমারেজ এর মত গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনসমূহ প্রাকেন্দ্রিক কোষ, ব্যাকটেরিয়া থেকে স্তন্যপায়ীর মত জটিল কোষে পাওয়া গিয়েছে। প্রোটিনের কেন্দ্রীয় অংশ জীবনের সমস্ত শাখায় পাওয়া গিয়েছে; যা একইরকম কাজ করে। উচ্চতর জীবগুলোতে অতিরিক্ত প্রোটিন সাবইউনিট যুক্ত হয়েছে যা রেগুলেশন এবং প্রোটিন-প্রোটিন মিথস্ক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছে। অন্যান্য উপাদান যেমনঃ ডিএনএ, আরএনএ, অ্যামিনো এসিড, লিপিড এর দ্বিস্তর ঝিল্লী সাধারণ পূর্বপুরুষ তত্ত্বকে সমর্থন করে। বিভিন্ন জীবের প্রোটিন ক্রমবিন্যাস থেকে নির্মিত সমস্ত জীবের জন্য জাতিজনি বৃক্ষ পূর্বের ন্যায় একইরূপ হিসেবে দেখা গিয়েছে।[১৮] ডিএনএ, আরএনএ এবং অ্যামিনো এসিডের কাইরালিটি সমস্ত পরিচিত জীবে সংরক্ষিত আছে। যদিও আণবিক কাইরালিটিতে ডানহাত হবে না বাহাতি হবে, তা নিয়ে কোনো উপযোগিতা নেই, তবে সরল অনুমিত সিদ্ধান্ত হলো প্রাচীন কোনো জীবে এই বাছাইকরণ হয়েছিল এলোমেলো প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এবং সাধারণ পূর্বপুরুষের মাধ্যমে তা পরবর্তী জীবগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। "মৃত জিন", সুডোজিনের মত সময়ের সাথে সাথে মিউটেশনকে ত্বরান্বিত করার মত জাঙ্ক ডিএনএ থেকে প্রাপ্ত প্রমাণসমূহকে একাট্টা করে পূর্ববর্তী বংশধরদের বৃক্ষ নির্মাণ করতে গিয়ে সাধারণ পূর্বপুরুষ থাকার স্বপক্ষে দৃঢ় প্রমাণ পাওয়া যায়।[১৯]
বিপাকীয় প্রক্রিয়ার কোনো জীবাশ্ম না হলেও টিকে থাকা প্রাণীগুলোর কোষীয় প্রক্রিয়ার বিবর্তন কীভাবে সংগঠিত হয়েছে, তা বুঝার নিমিত্তে তুলনা করে গবেষণা করা হয়েছে। নতুন বিপাকীয় ক্রিয়া আসার সাথে সাথে বহু বংশ বিভাজিত হয়ে গিয়েছে। উত্তরপুরুষের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাধারণ পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য বা তাদের শারীরিক গঠন বিশ্লেষণ করে তাত্ত্বিকভাবে এটা নির্ণয় করা সম্ভব যে, কখন সুনির্দিষ্ট বিপাকীয় ক্রিয়া আবির্ভূত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপঃ ভূমণ্ডলে অক্সিজেনের আবির্ভাব থেকে এটা বুঝা যায়, কখন সালোকসংশ্লেষণ এর বিবর্তন হয়েছে।
হোমো স্যাপিয়েন্স ও শিম্পাঞ্জীর যে এক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় উভয়ের ক্রমোজম সংখ্যা থেকে। হোমিনিডির সকল সদস্যের ২৪ জোড়া ক্রোমোজোম আছে, একমাত্র মানুষের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২৩ জোড়া। প্রাচীনকালে মানুষের ক্ষেত্রে দুই জোড়া ক্রমোজম এন্ড-টু-এন্ড ফিউশনের মাধ্যমে এক জোড়া ক্রমোজমে পরিণত হয়। সে ক্রমোজমটি মানবদেহে ২ নং ক্রমোজম হিসেবে পরিচিত।[২০][২১]
দুই জোড়া ক্রমোজম এক জোড়া ক্রমোজমে পরিণত হয়েছে, এমনটা দাবী করার পিছনে ব্যাখ্যা
এইভাবেও ২ নং ক্রমোজম মানুষ এবং অন্যান্য বানর গোত্রভুক্ত প্রাণীর একদা একই পূর্বপুরুষ ছিল, তার সপক্ষে শক্ত প্রমাণ হিসেবে দলিল পেশ করে। গবেষক যে. ডব্লিও ইজডোর মতে, "আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি প্রাচীনকালে দুইটি এপ বা বানর-ক্রোমোজম ফিউশনের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে ২ নং ক্রমোজমের সৃষ্টি করেছে।"[২৫]
বিবর্তনের স্বপক্ষে জৈব-রাসায়নিক প্রমাণের অন্যতম ধ্রুপদী উদাহরণ হল, সমস্ত জীবন্ত কোষে সাইটোক্রোম সি প্রোটিনের (সমস্ত জীবন্ত কোষে প্রোটিনটি থাকে কারণ জীবনের একদম বুনিয়াদি ক্রিয়া-কলাপ এটি সম্পন্ন করে) প্রকরণ উপস্থিত থাকা। বিভিন্ন জীবে সাইটোক্রোম সি এর যে প্রকরণ; তা পরিমাপ করা হয় অ্যামাইনো এসিডের সংখ্যার তারতম্যের উপর। এই যে অ্যামিনো এসিডের ভিন্নতা; তা পরিব্যক্তির কারণে বেস পেয়ারের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট হয়। একটি বেসপেয়ার প্রতিস্থাপন এর ফলাফলের দরণ প্রত্যেক অ্যামিনো এসিড ভিন্ন হয় বলে অনুমান করা হয়। সাইটোক্রোম সি জিনের বেসপেয়ার কখন পরিবর্তিত হয়ে দুইটি প্রজাতি ভিন্ন হয়, সে হিসেব করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি সাইটোক্রোম সি জিনের একটি বেস পেয়ার পরিবর্তিত হতে গড়পরতায় "ক" বছর লাগে এবং মানুষ এবং বানরের সাইটোক্রম সি জিনের বেস পেয়ারে সে ভিন্নতাটি দেখা যায়; তবে এই মানুষ এবং বানর গোত্রীয় প্রজাতি একে অপর থেকে ক বছর পূর্বে পৃথক হয়ে গিয়েছিল।
সাইটোক্রোম সি-এর যে প্রাথমিক গঠন; তা ১০০ টি অ্যামাইনো এসিড নিয়ে একটি চেইন বা শৃংখল হিসেবে গঠিত হয়। উচ্চশ্রেণীর প্রজাতিতে এই শৃংখল টি ১০৪টি অ্যামাইনো এসিড নিয়ে গঠিত হয়।[২৬]
বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানে সাইটোক্রোম স্ত্রী খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়বস্তু। মানুষ আর শিম্পাঞ্জির ক্ষেত্রে মাইটোকণ্ড্রিয়ার প্রোটিন সাইটোক্রম সিতে (মাইটোকণ্ড্রিয়াতেই এই প্রোটিন পাওয়া যায়) প্রাপ্ত অ্যামিনো এসিডের অনুক্রম একদম একই। রেসাস বানরের ক্ষেত্রেও প্রায় একই; শুধুমাত্র ৬৬ নাম্বার অ্যামিনো এসিডের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা দেখা যায়। মানুষের ৬৬ নং অ্যামিনো এসিড আইসোলিউসিন; রেসাস বানরের থ্রিওনিন[২৬]। মুরগী আর তুর্কি পাখি গুলো একই অনুক্রম শেয়ার করে। গরু, ভেড়া, শুকরও একই অনুক্রম শেয়ার করে।[২৭]
সাইটোক্রম সি-এর হোমোলোগাসে এরকম মিল থাকা, সাধারণ পূর্বপুরুষ এর স্বপক্ষের প্রমাণ কে পোক্ত করে। অ্যামাইনো এসিড এর কনফিগারেশনে যদি ভিন্নতা তৈরি হয় তবে তা প্রোটিনটির কার্যপ্রণালীতে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। এ থেকে বোঝা যায় বেশ পেয়ারের এ প্রতিস্থাপন সুনির্দিষ্ট কোনো নকশার অংশ নয় বরং এলোমেলো পরিব্যক্তির ফসল।[২৮]
অধিকন্তু, সাইটোক্রোম বি এর ক্রমবিন্যাস এর অনিত্যতার জন্য একে সাধারণত মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএর অংশ হিসেবে ব্যবহার করে জীবের মধ্যে জাতিজনি সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। পরিবার এবং গোত্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে একে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাইটোক্রোম বি নিয়ে নিয়ে যেসব তুলনামূলক গবেষণা গুলো করা হয়েছে; তার ফলে নতুন শ্রেণিবিন্যাসের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এর ফলে নতুন বর্ণনাকৃত প্রজাতিকে সহজে কোন গোত্রে পরবে তা নিরুপম করা যায় এবং বিবর্তনীয় সম্পর্ক আরো গভীরভাবে অনুধাবন করা যায়।[২৯]
এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাস (অথবা ইআরভি) হচ্ছে জীবে প্রাচীনকালে কোনো ভাইরাসের আক্রমণের ফলে জিনোমে থাকা অবশিষ্ট অনুক্রম। রেট্রোভাইরাস (অথবা ভাইরোজিন) এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। এরফলে ভাইরো জিন সর্বদাই জিনোমে বিদ্যমান থাকে। এই ধরনের আক্রমণ খুবই বিরল এবং এলোমেলো ভাবে ঘটে, তাই যদি দেখা যায় দুইটি ভিন্ন প্রজাতির ভাইরোজিনের ক্রমোজমের অবস্থান একইরকম সাদৃশ্যপূর্ণ, তবে অনুমান করা যায়, এই দুই প্রজাতির পূর্বপুরুষ একই ছিল।[২৮] (ফেলিডে) পরিবারের বিড়ালের সদস্যদের ভাইরোজিনের উল্লেখযোগ্য ক্রমবিন্যাস থেকে বুঝা যায়, তাদের সবার সাধারণ পূর্বপুরুষ আছে।। প্যানথেরিনে উপপরিবার এবং মাংসাশী কার্নিভোরা বর্গের বড় বিড়াল (যেমনঃ বাঘ) থেকে বিভাজিত হয়ে ফেলিডের জাতিজনি বৃক্ষের ছোট বিড়াল (গৃহে পালন করা ছোট বিড়াল) সদস্যদের (ফেলিস চাউস, ফেলিস সিলভেসট্রিস, ফেলিস নিগ্রিপস এবং ফেলিস কাটুস) উদ্ভব হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ছোট বিড়ালের যে এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাস আছে; তা প্রাচীন ছোট বিড়ালে প্রথম প্রবেশ করে নি, তা বাঘের ন্যায় বড় বিড়ালে ছিল যা উত্তরাধিকার ধারায় এবংং প্রজাতির বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও ছোট বিড়ালে রয়ে গেছে।[৩০] আরো একটি উদাহরণ হলো মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির সাথে রেট্রোভাইরাসের জিনের সাদৃশ্য। মানুষ প্রচুর সংখ্যক ইআরভি তার জিনোমে ধারণ করে। যদি শতকরায় হিসাব করা হয় তবে তা ১%[৩১] থেকে ৮%[৩২] পর্যন্ত হতে পারে, এমনটাই মনে করেন গবেষকরা। মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি ভাইরোজিনের ৭টি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা শেয়ার করে। জাতিজনি বৃক্ষের সমস্ত প্রাইমেটরা সমরুপ রেট্রোভাইরাস জিন শেয়ার করে।[৩৩][৩৪]
সিওয়াল রাইট, রোনাল্ড ফিশার এবং জেবিএস হালডেন বিবর্তনের গাণিতিক মডেলের প্রবক্তা ছিলেন। এই মডেল আরো বিস্তৃত হয় মটো কিমুরার ডিফিউশন তত্ত্ব দ্বারা। এইসমস্ত তত্ত্ব বা মডেল; বিবর্তিত হওয়া জীবগোষ্ঠীর জিনগত গঠন কেমন হবে, তার ভবিষ্যৎবানী করে থাকে। আধুনিক জনগোষ্ঠীর ডিএনএর অনুক্রম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব ভবিষ্যৎবানী সঠিক কিনা, তা বুঝা যায়। উদাহরণস্বরুপ, আফ্রিকা থেকে বহির্গমনের তত্ত্ব অনুযায়ী, আধুনিক মানুষের ক্রমবিকাশ আফ্রিকাতে হয়েছে, যার ক্ষুদ্র অংশ (পপুলেশন বটলনেক অর্থাৎ, বিভিন্ন ঝড় তুফানের মত অন্যান্য ফ্যাক্টরের দরুণ) স্থানান্তরিত হয়। আর ভবিষ্যৎবানী অনুযায়ী এই স্থানান্তরের চিহ্ন অবশ্যই থাকবে। বিশেষ করে পোস্ট বটলনেক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে যারা স্থানান্তরিত হয়েছে (ইউরোপীয় এবং এশীয়), তাদের জিনগত বৈচিত্র্য আফ্রিকানদের চেয়ে কম হবে এবং এলিলের অনুক্রমের বণ্টন আফ্রিকানদের সাথে অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ হবে। এই দুইটি ভবিষ্যৎবানীই পুনঃপুন গবেষণাগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।[৩৫]
করোটি স্নায়ুর দশম স্নায়ু হচ্ছে ভেগাস স্নায়ু। ভেগাস স্নায়ুর চতুর্থ শাখা হচ্ছে স্বরযন্ত্রের স্নায়ু; যা স্বরযন্ত্রে বিস্তৃত হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীতে এর পথ বেজায় লম্বা। ভেগাস স্নায়ুর অংশ হিসেবে এটি মস্তিষ্ক থেকে প্রথমে গলার মধ্য দিয়ে হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং তারপর ডর্সাল অ্যাওট্রাকে আবর্তন করে পুনরায় গলার মধ্য দিয়ে স্বরযন্ত্রে ফিরে আসে। (চিত্রঃ ৫)
ভেগাস স্নায়ু থেকে স্বরযন্ত্রের দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চি, তাই ভেগাস স্নায়ু থেকে সরাসরী স্বরযন্ত্রে এ স্নায়ু আসাটাই সবচেয়ে সহজ যৌক্তিক পথ হত, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় ১ ফুটের কাছাকাছি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই স্নায়ু স্বরযন্ত্রে বিস্তৃত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে ৩ ফুট অতিরিক্ত পথ এ স্নায়ুকে পাড়ি দিতে হলেও জিরাফের ক্ষেত্রে তার লম্বা ঘাড়ে এ স্বরযন্ত্রের স্নায়ুকে পাড়ি দিতে হয় ৪ মি (১৩ ফু) লম্বা পথ।
স্বরযন্ত্রের স্নায়ুর এ দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার রহস্য উন্মোচিত হয়ে যায়, যখন এর বিবর্তনীয় পটভূমিকে বুঝা যায়। মেরুদন্ডী প্রাণীর পূর্বপুরুষ মাছে এ স্নায়ু ব্র্যাঙ্কিয়াল আর্চ থেকে নিচে নেমে আসে; সব মেরুদন্ডী প্রাণীদের প্রাথমিক পর্যায়ের মাছ সদৃশ ভ্রুণে এই স্নায়ুটি ৬নং ব্র্যাঙ্কিয়াল আর্চ এর রক্তনালীর পাশাপাশি উপর থেকে নিচে নেমে আসে। এটি অপেক্ষাকৃত বড় ভ্যাগাস স্নায়ুর একটি শাখা, যা মস্তিষ্ক থেকে পেছনের দিক দিয়ে নিচে নেমে আসে এবং পুর্ণবয়স্ক মাছের শরীরে এটি সেই একই অবস্থানেই থাকে, যা মস্তিষ্ককে ফুলকার সাথে যুক্ত করে পানি পাম্প করে বের করে দেবার জন্য সহায়তা করে। স্তন্যপায়ীদের বিবর্তনের সময়, ৫ম ব্রাঙ্কিয়াল আর্চ এর রক্ত নালী অপসৃত হয়ে যায়, ৪র্থ এবং ৬ষ্ঠ আর্চ থেকে রক্তনালীগুলো নিচে নেমে আসে ভবিষ্যতের শরীরের উপরের অংশ বুকে, যেখানে তারা মহাধমনী বা অ্যাওর্টা এবং একটি লিগামেন্ট এর পরিনত হয়, যে লিগামেন্টটি অ্যাওর্টা আর পালমোনারী আর্টারীকে সংযুক্ত রাখে। কিন্তু স্বরযন্ত্রের স্নায়ু তখনো ৬ নং আর্চের পেছনে, সেই ভ্রুণতাত্ত্বিক কাঠামোর সাথে সংযুক্তাবস্থায় থাকতে হয়, যা পরবর্তীতে স্বরযন্ত্র তৈরী করে এবং সেই সব কাঠামোর সাথে যাদের অবস্থান মস্তিষ্কের কাছাকাছি। যখন ভবিষ্যৎ মহাধমনী পেছন দিকে বিবর্তিত হয় হৃৎপিন্ডর দিকে, স্বরযন্ত্রের স্নায়ুও বাধ্য হয় এর সাথে সাথে পেছনের দিকে সরে যেতে, অনেক বেশি উপযোগী হতো যদি এটি মহাধমনীকে পাশ কাটিয়ে যেত, প্রথমে ভেঙ্গে এর পর আবার যুক্ত হয়ে আরো সরাসরি একটি পথ বেছে নিতে, কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন সেটা করতে পারেনি, কোন স্নায়ুকে কেটে আবার পরে সুবিধামত জোড়া লাগিয়ে দেবার ধাপটি আসলে ফিটনেস কমিয়ে দেয়। পেছন দিক বরাবর অ্যাওর্টার বিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ল্যারিনজিয়াল নার্ভ অনেক লম্বা এবং রিকারেন্ট বা যে দিক থেকে এটি নিচে নামে আবার সেই পথে এটি ঘুরে উপরে উঠে যায় তার গন্তব্যে। এবং সেই বিবর্তনীয় ধাপটির পুণরাবৃত্তি হয় ভ্রুণতাত্ত্বিক বিকাশের সময়, কারণ ভ্রুণ হিসাবে স্তন্যপায়ী প্রাণক্রা পুর্বসুরী মাছের মত বিন্যাস এর স্নায়ু এবং রক্তনালী নিয়ে যাত্রা শুরু করে।[৩৬][৩৭]
জিরাফে দেখা যাওয়া স্বড়যন্ত্রের স্নায়ুর মত ভাস ডিফারেন্স পুরুষ প্রজনন তান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অংশ, যা বেশিরভাগ মেরুদন্ডী প্রাণী তে দেখা যায়। বীর্যপাতের সময় এই নালী শুক্রাণুকে এপিডিডাইমিস থেকে পরিবহন করে। মানুষে ভাস ডিফারেন্স শুক্রাশয় থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে, এরপর ইউরেটারে (কিডনী থেকে আগত নল) প্যাচ তৈরী করে মুত্রনালি ও শিশ্নে প্রবেশ করে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রার প্রভাব এবং মানববিবর্তন কালীন সময়ে শুক্রাশয় উত্তরপুরুষে বিবর্তিত হওয়া কালীন ইউরেটরের উপরে দুর্ঘটনাক্রমে যে হুক বা প্যাচের সৃষ্টি হয়েছে তাকে জায়গা দেওয়ার জন্যই ভাস ডিফারেন্সের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়।[৩৭][৩৮]
২০০৪ সালের পূর্বে প্রত্নতত্ববিদরা উভচর প্রাণীর কান, গ্রীবা, চার পা সংবলিত যেসব জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন তার বয়স ৩৬৫ (৩ কোটি ৬৫ লক্ষ) মিলিয়ন বছরের বেশি। এই জীবাশ্মগুলো পাথরে সংগৃহীত ছিল। পাথরে মাছের যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে তা ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ বছরের পুরনো। কখনোই উভচর প্রাণীর বৈশিষ্ট্যসংবলিত এমন কোনো জীবাশ্ম পাওয়া যায় নি, যার বয়স ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ বছরের বেশি। তাই বিবর্তন তত্ত্বের ভবিষ্যৎবানী ছিল, মাছ থেকে যেহেতু উভচর প্রাণির উদ্ভব হয়েছে তাই মাছ থেকে উভচর উদ্ভবের পূর্বে মধ্যবর্তী প্রজাতি থাকবে এবং তার জীবাশ্ম পাওয়া গেলে, তার বয়স অবশ্যই ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ বছর থেকে ৩ কোটি ৬৫ লক্ষ বছর এর মধ্যে হবে। এই মধ্যবর্তী প্রজাতিতে একইসাথে উভচর ও মাছ উভয় প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ থাকবে। ২০০৪ সালে কানাডার উত্তরাঞ্চলে টিকট্যালিক জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এই টিকট্যালিক একই সাথে উভচর আর মাছের বৈশিষ্ট্য সংবলিত এবং এর বয়স ৩৭৫ মিলিয়ন (৩ কোটি পচাত্তর লক্ষ) বছরের বেশি।[৩৯] কিছু বছর পর পোল্যান্ডে টেট্রাপডের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়, এটি টিকট্যালিকেরই বৈশিষ্ট্য বহন করেছে। [৪০]
প্রকৃতিতে কিছু জনগোষ্ঠী পরিলক্ষিত হয় যেখানে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত জনগোষ্ঠীগুলো আন্তঃপ্রজননে সক্ষম হলেও অন্তত দু’টো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থাকে যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননে অক্ষম। জীববিজ্ঞানে এসব প্রজাতিকে চক্র প্রজাতি(ring species) বলা হয়। দু'টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিজেদের মাঝে প্রজননে অক্ষম হলেও মধ্যবর্তী কাছাকাছি সম্পর্কযুক্ত প্রজাতিদের মাঝে জিন প্রবাহ ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়। [৪১] চক্র প্রজাতি বিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে উদ্ধৃত হয়ে থাকে। সময়ের প্রেক্ষিতে একটি জনগোষ্ঠীর জিনগত বৈচিত্র্য চক্র প্রজাতি ফুটিয়ে তুলে। বিশেষ করে, অনেক আগেই বিলুপ্ত জনগোষ্ঠী ও বর্তমানে জীবিত জনগোষ্ঠীর মাঝে কি ঘটেছে, তা চক্র প্রজাতিরা জীবিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেই প্রদর্শন করে। অতীত থেকে বর্তমানে কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিবর্তন কীভাবে ঘটেছে, তা চক্র প্রজাতি সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠীতে নিজের চোখেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। রিচার্ড ডকিন্স চক্র প্রজাতি খন্ডকালীন সময়ের মধ্যে সবসময় ধরে চলে আসা দীর্ঘকালীন সময় ধরে ঘটা ঘটনাকে চোখের সামনে উপস্থাপন করে।[৪২]
উটের একস্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বিবর্তনের এক গভীর সংযোগ আছে। জীবাশ্মের নথি থেকে দেখা গিয়েছে ক্যামলিডের (বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া উট) যাত্রা ৬০ লক্ষ বছর আগে উত্তর আমেরিকায় শুরু হয়েছে (৪ নং ফিগার দেখুন), তারা এরপর বেরিং প্রণালি পার হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার পানামার ইসথুমুস হয়ে ৩৫ লক্ষ বছর পূর্বে এশিয়া এবং আফ্রিকাতে চলে আসে। একে অপর থেকে বিচ্ছিন্নতার পরে, তারা তাদের মত করে বিবর্তিত হতে থাকে। এর ফলে এশিয়া ও আফ্রিকাতে ব্যাকট্রিয়ান উট এবং ড্রোমেডারি উটের উদ্ভব হয়। দক্ষিণ আমেরিকাতে তাদের দূরবর্তী আত্মীয় লামার সৃষ্টি হয়। ক্যামেলডিস পরবর্তীতে শেষ বরফ যুগের পরে উত্তর আমেরিকায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।[৪৩]
প্রাকৃতিক নির্বাচন, ভৌগোলিক বিচ্ছেদকরণ এবং প্রজাত্যায়নের প্রভাব বিবর্তনে কতটা প্রভাব ফেলে তার উৎকৃষ্টতর উদাহরণ হলো মেরু ভল্লুক (Ursus maritimus) এবং বাদামী ভল্লুকের (Ursus arctos) মধ্যকার সম্পর্ক। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির হলেও দুই ধরনের ভল্লুকই নিজেদের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন করতে এবং প্রজননক্ষম সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম।[৪৪] এইধরনের ইন্ট্রোগ্রেসিভ হাইব্রিডাইজেশন বন্য পরিবেশ বা তাদেরকে আবদ্ধ করে উভয় পরিবেশেই করা সম্ভব[৪৫] এবং ডিএনএ পরীক্ষণের মাধ্যমে তা যাচাই করা হয়েছে।[৪৬] মেরু ভালুকের সবচেয়ে পুরাতন জীবাশ্মের বয়স ১,৩০,০০০ বছর থেকে ১,১০,০০০ বছর;[৪৭] কিন্তু আণবিক উপাত্তের মতে মেরু ভালুকের উদ্ভব তারও পূর্বে হয়েছে। মাইটোকন্ড্রীয় ডিএনএর হিসাবে মেরু ভালুকের বয়স ১,৫০,০০০ বছরের বেশি[৪৭] নিউক্লিয়ার জিনোম উপাত্ত অনুসারে বাদামী ভাল্লুক থেকে মেরু ভাল্লুকের উদ্ভব হয়েছে ৬,০৩,০০০ বছর পূর্বে।[৪৮] সম্পূর্ণ জিনোম ব্যবহার করে সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে বাদামী ভালুকের জনগোষ্ঠী থেকে মেরু ভালুকের উদ্ভব হয়েছে ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার বছর থেকে ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার বছরের মধ্যে।[৪৯] কোন সময়ে এই দুই প্রজাতি একে অপর থেকে পৃথক হয়েছে তানিয়ে ভিন্ন মতামত থাকলেও আণবিক উপাত্ত অনুসারে মেরু ভল্লুকের প্রজাত্যায়ন এবং দুইয়ের মধ্যে সংমিশ্রণ খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।[৫০]
ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের জন্য পিপার্ড মথের রঙ উজ্জ্বল থেকে কালো হয়ে যাওয়ার ফেনোটাইপিক অভিযোজন বিবর্তনের অন্যতম ধ্রুপদী উদাহরণ।
বিবর্তনের কারণে জীবের অভিযোজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো নাইলন খাদক ব্যাকটেরিয়া। এটি ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামের একটি স্ট্রেইন, যা নাইলন ৬ তৈরীর সময় সৃষ্টি হওয়া উপজাতকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বিজ্ঞানীরা এই ঐকমত্যে পৌছেছেন যে, একটি সাধারণ মিউটেশন এর ফলে নাইলোনেজকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার সক্ষমতা অর্জন করার ফলে ব্যাকটেরিয়া টিকে থাকতে বাড়তি সুবিধা পায়। মিউটেশন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে বিবর্তন যে হয়, তার সপক্ষে এটি একটি চমৎকার উদাহরণ। যতদিন না মানুষ নাইলন প্রস্তুত করেছে, ততদিন পর্যন্ত এরুপ ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি, বিবর্তন যে পর্যবেক্ষণ করা যায় এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।[৫১][৫২][৫৩][৫৪]
কোনো একটি নির্দিষ্ট সিস্টেম বা ব্যবস্থায় ইচ্ছাকৃত ভাবে চাপ দিয়ে, সেই ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ জীবের জিনে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব কিনা, তার একটি প্রত্যক্ষ উদাহরণ হলো কডমাছে পিসিবির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদাহরণ। জেনারেল ইলেক্ট্রিক নামক প্রতিষ্ঠান ১৭৪৭ সাল থেকে নির্বিচারে পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল (পিসিবি) যৌগ সংবলিত বর্জ্য পদার্থ হাডসন নদীতে ফেলতে থাকে। ১৯৭৬ সালে দেখা যায়, সেই নদীতে বসবাসকারী টমকড (মাইক্রোগেডাস টমকড) বিষাক্ত এই বর্জ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে।[৫৫] এর ফলে বিষাক্ত এই যোগ তাদের কাছে সহনীয় হয়ে গিয়েছে। সুনির্দিষ্ট জিনের কোডিং অংশে পরিবর্তনের মাধ্যমে বিষাক্ত এই বর্জ্য পদার্থকে প্রতিরোধে সক্ষম কডমাছের বিবর্তন হয়। জিনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, তা বুঝার নিমিত্তে নিউ ইংল্যান্ডের ৮ টি ভিন্ন ভিন্ন নদী থেকে কডমাছের জিনগত নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নদীগুলো ছিলঃ লরেন্স নদী, মিরামিছি নদী, স্কোয়ামসকট নদী, মার্গারে নদী, নিয়ান্টিক নদী, শাইনকক নদী, হাডসন নদী এবং হ্যাকেনসেক নদী। জিনগত বিশ্লেষণ থেকে দেখা গিয়েছে দক্ষিণের নদীগুলোতে বসবাসকারী কড মাছের এএইচআর২ (এরাইল হাইড্রোকার্বন রিসেপ্টর ২) জিনে পার্থক্য আছে। হাডসন নদীতে বসবাসরত ৯৯ শতাংশ কড মাছের জিনের এলিলে ২টি এমিনো এসিড ডিলিট বা উধাও এমনটা দেখা গিয়েছে[৫৬] পক্ষান্তরে হ্যাকেনসেক নদীতে ৯২%, নিয়ান্টিক নদীতে ৬ শতাংশ এবং শাইনকক নদীতে ৫ শতাংশ টমকড মাছে "এমিনো এসিড অপসারিত" এরুপ দেখা গিয়েছে।[৫৬] এমিনো এসিডের অপসারণের জন্যই টমকড মাছ বিষাক্ত বর্জ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থার সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে গবেষকরা মনে করেন। এই ধরনের অবস্থা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, পরিবেশের নির্ধারিত চাপের কারণে আটলান্টিকের টমকড মাছে পিসিবি প্রতিরোধী ব্যবস্থার বিবর্তন ঘটেছে।[৫৬]
সমরূপ গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে পলিসাইক্লিক এরোমেটিক হাইড্রোকার্বন (সংক্ষেপে পিএএইচ) (কয়লা তেল গ্যাসোলিন, তামাক কাঠ পোড়ালে এই যোগ উৎপন্ন হয়[৫৭]) ভার্জিনিয়ার পোস্টমাউথের এলিযাবেথ নদীকে দুষিত করে। আটলান্টিক কিল্লিফিশ (ফানডুলাস হেটারোক্লিটাস) পলিসাইক্লিক এরোমেটিক হাইড্রোকার্বনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থার বিবর্তনমুলক ক্রমবিকাশ ঘটায়। হাডসন নদীর কড মাছের মত কিল্লিমাছেও এএইচআর জিনে মিউটেশনের দরুন কিল্লিমাছ বিষাক্ত বর্জ্য প্রতিরোধী হয়ে উঠে।[৫৮]
মানুষ বন্যজীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা জীবের শহরে বন্যতা দেখে খুব সহজে উপলব্ধ করা যায়। মানুষের আবাস স্থলের নিরন্তর বৃদ্ধির ফলে বন্য পরিবেশের ক্রমশ সংকোচনে বন্যপ্রাণীরা টিকে থাকার জন্য শহরেই তাদের জীবনযাত্রা অভিযোজনে বাধ্য হচ্ছে। এই ধরনের পরিবেশ জীবে নতুন করে নির্বাচনে চাপ প্রয়োগ করে, এমনকি জীবে নতুন ধরনের অভিযোজনও হয়। উদাহরণস্বরূপ ফ্রান্সে ক্রিপিস সাংক্টা নামে একপ্রকার আগাছা পাওয়া যায়। যার দুধরনের বীজ হয়। একপ্রকার বীজ কিছুটা ভারী এবং অন্যপ্রকার বীজ হালকা। বীজ যদি ভারী হয়, তবে তা মার্তৃ উদ্ভিদের কাছে পরে থাকে এবং হালকা হলে তা বাতাসে ভেসে বহুদূর চলে যায়। শহুরে পরিবেশে বীজ যদি বাতাসে ভাসতে থাকে, তবে সেই বীজ বাতাসে ভেসে হয়তো অনুর্বর কনক্রিটের ভূমিতে পরবে। ফলে তার বংশবিস্তার করা দুরূহ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, শহরে বাড়তে থাকা এই আগাছার বীজের ৫-১২ প্রজন্মে ভারী বীজ দেখা যায়, পক্ষান্তরে গ্রামাঞ্চলের একই আগাছায় হালকা বীজ দেখা যায়।[৫৯][৬০] শহরে বন্যজীবনের আরো কিছু উদাহরণ আছে। যেমনঃ জালালী কবুতর অথবা কাকের প্রজাতি পুরো বিশ্বেই শহরাঞ্চলে বাস করে। সিমন শহরে আফ্রিকার পেঙ্গুইন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বেবুন এবং আরো বিভিন্ন প্রজাতির পতঙ্গ মানুষের আবাসস্থলের আশেপাশে বা অভ্যন্তরে বসবাস করার জন্য নিজেকে অভিযোজিত করে নিয়েছে। গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, মানব সৃষ্ট পরিবেশের সাথে সংমিশ্রণে প্রাণীর (বিশেষত স্তন্যপায়ী প্রাণীতে) স্বভাবে এবং তাদের মস্তিষ্কের গঠনে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।[৬১][৬২]
বিবর্তনের সপক্ষে প্রথমদিকে খুব বেশি প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিল না। তখন প্রাণির রঞ্জনকে সেই গুটিকয়েক প্রমাণের একটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হত। প্রাণির শরীরের রঞ্জন মোটাদাগে তিনভাগে বিভক্ত যা ১৯ শতকের শেষ ভাগে আবিষ্কৃত হয়। প্রাকৃতিক নির্বাচনের সপক্ষে এই প্রমাণগুলোকেই উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হলোঃ ক্যামোফ্ল্যাজ (শরীরের রঙ এমনভাবে বিবর্তিত, যাতে পরিবেশ থেকে আলাদাই করা যায় না); মিমিক্রি (ব্যাটেসিয়ান এবং মুলেরিয়ান); এবং এপোসেম্যাটিসম (এমনভাবে নিজের শরীরকে রঞ্জিত করে জীব, যাকে দেখে খুবই ভয়ংকর বা বিষাক্ত মনে হয়)। ডারউইন তার অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিসে পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে প্রানির রঞ্জনের প্রমাণের কথা উল্লেখ করার পর ডারউইনের সময়কার প্রকৃতিবিজ্ঞানী হেনরী ওয়ালটার ব্যাটস ও ফ্রিটজ মুলার ডারউইনের কথার সত্যতা যাচাই করতে নিজেদের মত করে প্রমাণ অন্বেষণ করেন।[৬৪]
জীববিজ্ঞানে মিমিক্রি বলতে একাধিক প্রজাতির মধ্যে সাদৃশ্যতাকে সাধারণত বুঝানো হয়। ব্যাটস এবং মুলার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের প্রজাপতির উপর পর্যবেক্ষণ করে মিমিক্রির ধরনকে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রজাপতির গড়নের এই বিন্যাসকে প্রাকৃতিক নির্বাচন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। পাখির মত শিকারী প্রাণীরা সেইসব পতঙ্গকে খাদ্য হিসেবে সহজ শিকার করে, যারা নিজেদের বিষাক্ত বা বিস্বাদ পতঙ্গের ন্যায় মিমিক্রি করে শিকারকে ধোকা দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে।[৬৫] আলফ্রেড রাসেল ওয়ালস এবং এডওয়ার্ড বাগনাল, ২০ শতকের হাগ কট ও বের্নার্ড ক্যাটেলওয়েল বিবর্তন হচ্ছে কিনা এমন প্রমাণ অন্বেষণ করেছিলেন।[৬৬][৬৭]
১৮৮৯ সালে ওয়ালাস ঋতুর সাথে পরিবর্তন হওয়া স্নো ক্যামোফ্ল্যাজ বিশেষ করে পাখির পালক এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন তারা নিজেদের লুকিয়ে রাখার জন্য এভাবে পরিবর্তন করেছে। যা অভিযোজনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা।[৬৩][৬৮] ১৮৯০ সালে পল্টন তার বই, কালারস অব এনিম্যালে প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে অসংখ্য প্রাণীর রঙকে তথ্যসূত্র হিসেবে উপস্থাপন করেন।[৬৯] কট ১৯৪০ সালে তার বই প্রাণীর অভিযোজিত রঙে বিভিন্ন ধরনের ক্যামোফ্লাজ, সতর্কীকরণ রঙ (অনেক প্রাণী শত্রু থেকে বাচার জন্য নিজের শরীরকে এমনভাবে রঞ্জিত করে, যাকে দেখে মনে হয় খুবই বিষাক্ত) এবং ব্যাঙে ক্যামোফ্লাজের বিপরীত রঙনাশক চিত্র ব্যবহার করে তার বর্ণনায় অন্যান্য জীববিজ্ঞানীদের কাছে উত্থাপন করে বলেছেন এধরনের ছদ্মবেশ প্রাকৃতিক নির্বাচনেরই উদাহরণ।[৬৬] পিপার্ড মথের উপর ক্যাটেলওয়াল পরীক্ষণ থেকে দেখানো হয়েছে, দুষনের কারণে পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য প্রজাতি পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়, যা ডারউইনের বিবর্তনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।[৬৭]