মহামান্য তুর্কমেনবাশি সাপারমুরাত নিয়াজভ | |
---|---|
সাপারমিরাত নিয়াজু | |
তুর্কমেনিস্তানের ১ম রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২ নভেম্বর ১৯৯০ – ২১ ডিসেম্বর ২০০৬ | |
প্রধানমন্ত্রী | হান আহমেদু (১৯৯০–৯২) |
উপরাষ্ট্রপতি | ওরাজগেলদি আয়দোগদিউ গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুহামেদু |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুহামেদু |
তুর্কমেনিস্তানের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা | |
কাজের মেয়াদ ২৮ অক্টোবর ১৯৯১ – ২১ ডিসেম্বর ২০০৬ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুহামেদু |
তুর্কমেনিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সম্পাদক | |
কাজের মেয়াদ ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৫ – ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ | |
পূর্বসূরী | মুহাম্মেতনাজার গাপুরু |
উত্তরসূরী | পদ বিলুপ্ত |
২৮তম পলিটব্যুরোর পূর্ণ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৪ জুলাই ১৯৯০ – ২৯ আগস্ট ১৯৯১ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | সাপারমুরাত আতায়েভিচ নিয়াজভ ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ গিপজাক, সোভিয়েত তুর্কমেনিস্তান, সোভিয়েত ইউনিয়ন |
মৃত্যু | ২১ ডিসেম্বর ২০০৬ আশগাবাত, তুর্কমেনিস্তান | (বয়স ৬৬)
রাজনৈতিক দল | টিডিপি |
দাম্পত্য সঙ্গী | মুজা মেলিনকভা[১] |
সন্তান |
|
পিতামাতা | আতামিরাত নিয়াজভ গুর্বানসোলতান নিয়াজভা |
শিক্ষা | লেনিনগ্রাদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট |
জীবিকা | বিদ্যুৎ প্রকৌশলী |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | তুর্কমেনিস্তান |
শাখা | তুর্কমেনিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী |
পদ | সেনাবাহিনীর জেনারেল[২] |
সাপারমুরাত আতায়েভিচ নিয়াজভ[ক] (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ – ২১ ডিসেম্বর ২০০৬), যিনি তুর্কমেনবাশি[খ] নামেও পরিচিত, একজন তুর্কমেন রাজনীতিবিদ ছিলেন যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একনায়কতান্ত্রিকভাবে তুর্কমেনিস্তান শাসন করেছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তুর্কমেন কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্পাদক ছিলেন এবং ১৯৯১ সালের সোভিয়েত অভ্যুত্থান চেষ্টাকে সমর্থন করেছিলেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর তুর্কমেনিস্তানকে তিনি ১৫ বছর যাবত শাসন করেন।
তুর্কমেন গণমাধ্যম তাঁকে "মহামান্য সাপারমুরাত তুর্কমেনবাশি, তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিপরিষদের চেয়ারম্যান" শিরোনাম ব্যবহার করে উল্লেখ করতো।[৩] তুর্কমেনবাশি তাঁর স্বপ্রদত্ত উপাধি, যাঁর অর্থ তুর্কমেনদের প্রধান, উপাধিটি মূলত বিশ্ব তুর্কমেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হিসেবে তাঁর ভূমিকাকে উল্লেখ করে।[৪] ১৯৯৯ সালে তুর্কমেনিস্তানের আইনসভা নিয়াজভকে তুর্কমেনিস্তানের আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে।
তাঁর শাসনকালে তিনি বিশ্বের অন্যতম কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী ও দমনমূলক একনায়ক ছিলেন।[৫][৬] তিনি নিজের চারপাশে এক প্রকার ব্যক্তি পূজা প্রচার করেছিলেন এবং দেশের উপর তাঁর ব্যক্তিগত খামখেয়ালিপনা আরোপ করেছিলেন, যেমন তিনি তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই রুহনামার প্রসঙ্গ অনুসারে তুর্কমেন ক্যালেন্ডারের মাস ও সপ্তাহের দিনের নাম পরিবর্তন করেন।[৭] তিনি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে রুহনামা পড়া বাধ্যতামূলক করেছিলেন, চাকরির ইন্টারভিউতে নতুন সরকারি কর্মজীবিদের বইয়ের উপর পরীক্ষা করা দিতে হত এবং বইটির শিক্ষার উপর একটি পরীক্ষা দেওয়া তুর্কমেনিস্তানের ড্রাইভিং পরীক্ষার একটি অংশ ছিল। এমন একটি দেশে যেখানে সেই সময়ে অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করতো,[৮] সেখানে ২০০৫ সালে তিনি রাজধানী শহর আশগাবাতের বাইরে সকল গ্রামীণ লাইব্রেরি ও হাসপাতাল বন্ধ করে দেন। তিনি একবার বলেছিলেন, "যদি লোকেরা অসুস্থ হয়, তাঁরা আশগাবাতে আসতে পারে।"[৯]
তাঁর শাসনামলে মধ্য এশিয়ার মধ্যে তুর্কমেনিস্তানের মানুষের আয়ুষ্কল সবচেয়ে কম ছিল। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের প্রতিবেদন অনুসারে, নিয়াজভের নিয়ন্ত্রণে থাকা এবং বিদেশে রাখা অর্থ ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি হতে পারে, যার মধ্যে ১৮০–২৬০ কোটি ডলার জার্মানির ডয়চে ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তহবিলে জমা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।[১০]
নিয়াজভ ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ সালে সোভিয়েত তুর্কমেনিস্তানের আশগাবাতের ঠিক বাইরে গিপজাকে (বা কিপচাক) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তুর্কমেনদের প্রভাবশালী তেকে গোত্রের সদস্য ছিলেন।[১১] তাঁর জীবনীর দাপ্তরিক সংস্করণ অনুসারে, তাঁর বাবা আতামিরাত নিয়াজভ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মারা গিয়েছিলেন, যেখানে অন্যান্য সূত্র দাবি করে, যে তিনি যুদ্ধ এড়িয়ে যান তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের আশগাবাত ভূমিকম্পে তাঁর মা এবং দুই ভাই নিহত হন। তাঁর মা গুর্বানসোলতান এজে পরবর্তীকালে নিয়াজভের ব্যক্তি পূজার অংশ ছিলেন। তিনি একটি সোভিয়েত অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠেন, পরবর্তীতে রাষ্ট্র তাঁকে দূর-সম্পর্কের আত্মীয়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।[১২][১৩][১৪]
১৯৫৯ সালে স্কুল শেষ করার পর তিনি তুর্কমেন ট্রেড-ইউনিয়ন অনুসন্ধান কমিটিতে একজন প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন। তারপরে তিনি লেনিনগ্রাদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়ন করেন, যেখানে তিনি ১৯৬৭ সালে তড়িৎ প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার) হিসাবে ডিপ্লোমা পেয়েছিলেন। স্নাতক হওয়ার পর তিনি রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে যান, কিন্তু কয়েক বছর পর প্রাতিষ্ঠানিক অকৃতকার্যতার জন্য বহিষ্কৃত হন।[১]
১৯৬২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়ার মাধ্যমে নিয়াজভ তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি দ্রুত পদান্নোতি পান, আশগাবাত নগর কমিটির প্রথম সম্পাদক হন[১৫] এবং ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত তুর্কমেনিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্পাদক হন। একটি তুলা-সম্পর্কিত কেলেঙ্কারির জন্য সোভিয়েত সাধারণ সম্পাদক মিখাইল গর্বাচেভ পূর্বসূরি মুহাম্মেতনাজার গাপুরভকে সরিয়ে দেওয়ার পর নিয়াজভ এই পদটি লাভ করেন। নিয়াজভের অধীনে তুর্কমেন কমিউনিস্ট পার্টি সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে কট্টরপন্থী এবং অসংস্কারহীন দলীয় সংগঠনগুলির একটি হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। ১৩ জানুয়ারি ১৯৯০ সালে নিয়াজভ সোভিয়েত তুর্কমেনিস্তান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইনসভার সুপ্রিম সোভিয়েতের চেয়ারম্যান হন। পদটি ছিল রাষ্ট্রপতির সমতুল্য।
নিয়াজভ ১৯৯১ সালের সোভিয়েত অভ্যুত্থান চেষ্টাকে সমর্থন করেছিলেন।[১৬] যাইহোক, অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি বিলুপ্তপ্রায় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তুর্কমেনিস্তানকে আলাদা করার কথা বলেন। তুর্কমেন সুপ্রিম সোভিয়েত তুর্কমেনিস্তানকে স্বাধীন ঘোষণা করে এবং ২৭ অক্টোবর ১৯৯১ তারিখে নিয়াজভকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২১ জুন ১৯৯২ তারিখে ১৯৯২ তুর্কমেনিস্তানি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিয়াজভকে একমাত্র প্রার্থী হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং দেশের প্রথম ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনীত হন। এক বছর পর তিনি নিজেকে তুর্কমেনবাশি ঘোষণা করেন, যার অর্থ "সকল তুর্কমেনদের নেতা"।
১৯৯৪ সালে একটি গণভোট ২০০২ সাল পর্যন্ত নিয়াজভের মেয়াদ বৃদ্ধি করে যাতে তিনি একটি ১০-বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা তত্ত্বাবধান করতে পারেন। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে যে ৯৯.৯% ভোটার এই প্রস্তাবটি অনুমোদন করেন। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে সংসদ নিয়াজভকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে; এর কয়েক সপ্তাহ আগেই সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই সকল প্রার্থীকে বেছে নিয়েছিলেন।
নিয়াজভ ও তাঁর স্ত্রী মুজা নিয়াজভা (জন্মগত নাম মেলনিকোভা), যিনি রুশ ও ইহুদি বংশোদ্ভূত ছিলেন, তাঁদের এক পুত্র (মুরাত) ও এক কন্যা (আইরিনা) রয়েছে।
তুর্কমেনিস্তানের একটি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রে রূপান্তরের সময় নিয়াজভ রাষ্ট্রপতি হন। এককেন্দ্রিক সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি প্রাথমিক পতনের মাধ্যমে তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বকে চিহ্নিত করা হয়েছিল যা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্রতর, পৃথক, রাষ্ট্রগুলিতে রূপান্তরের জন্য অনুপযুক্ত ছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীদের সামান্য পরিমাণ ধর্মীয় অধিকার সম্পর্কে বহির্বিশ্বের উদ্বেগ ছিল। রুহনামা রচনা ও প্রচারের মাধ্যমে নিয়াজভ নতুন তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রের জন্য একটি সাংস্কৃতিক পটভূমি তৈরি করতে একটি ব্যক্তিগত চেষ্টা করেছিলেন, রুহনামা একটি আত্মজীবনীমূলক বই যার উদ্দেশ্য ছিল তুর্কমেনিস্তানের জনগণকে তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা দিয়ে পথ দেখানো এবং দেশীয় সংস্কৃতির প্রচার করা (এবং বিদেশি সংস্কৃতির নিষিদ্ধকরণকে সম্প্রসারিত করে)। তিনি নির্দিষ্ট তুর্কমেন প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন ছুটির দিনসমূহ তৈরিতেও অংশ নিয়েছিলেন এবং রুশ সিরিলীয় বর্ণমালাকে প্রতিস্থাপনের জন্য একটি নতুন লাতিন-ভিত্তিক তুর্কমেন বর্ণমালা চালু করেছিলেন। লাতিন তুর্কমেন বর্ণমালার অক্ষরগুলির মধ্যে রয়েছে: Aa, Bb, Çç, Dd, Ee, Ää, Ff, Gg, Hh, Ii, Jj, Žž, Kk, Ll, Mm, Nn, Ňň, Oo, Öö, Pp, Rr, Ss, Şş, Tt, Uu, Üü, Ww, Yy, Ýý, Zz।[১৭]
তাঁর শাসনামলে কেন্দ্রিভূত পরিকল্পনা থেকে সরে এসে মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং পূর্ণ গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো পরিকল্পনাই অগ্রসর হয়নি। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বার্ষিক পরিকল্পনা এবং একটি কেন্দ্রিভূত অর্থনীতি রাষ্ট্র-শাসিত অর্থনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার কিছুটা ইঙ্গিত দেয় এবং তাঁর অনেক ডিক্রির স্বৈরাচারী প্রকৃতি ও নিজেকে "আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি" ঘোষণা করায় এসব ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতির আশা আর দেখা যায়নি।
তুর্কমেনিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে, যেটি রাষ্ট্রের জন্য উচ্চ রাজস্ব সরবরাহ করে। যেহেতু দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি প্রজাতন্ত্র রূপে বিদ্যমান ছিল তাই সরকার কেন্দ্রিভূত পরিকল্পনা ব্যবহার করেছে, যেমন উৎপাদন ও সংগ্রহের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, কম সুদের হারের সাথে সরাসরি ব্যাংক আমানত, বিনিময় হারের সীমাবদ্ধতা এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণ।[১৮]
স্বাধীনতা পরবর্তী বছরগুলিতে তুর্কমেনিস্তান পেট্রোলিয়ামের প্রাথমিক সরবরাহকারী দেশ থেকে আরও উন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তর করার প্রচেষ্টাস্বরূপ উদ্ভিদ ও মেশিনারি শিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল; এই ধরনের বিনিয়োগের মধ্যে তেল শোধনাগার এবং একটি পলিথিন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। Rossiyskaya Gazeta সংবাদপত্রের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে নিয়াজভ দাবি করেছেন, যে তুর্কমেনিস্তান তাঁর অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৮৫% প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। উপরন্তু ইরানের কোর্পেদজে খনি থেকে কোর্ত-কোই পর্যন্ত পাইপলাইনের স্থাপনের মতো অসংখ্য পেট্রোলিয়াম পরিবহন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে নিয়াজভ পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিশোধিত লবণকে দশ বছরের জন্য বিনামূল্যে নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য ডিক্রি জারি করেন।[৪]
২০০৫ সালে নিয়াজভ আতামুরাদ বের্দিয়েভকে সরিয়ে গুর্বানমিরাত আতাইউকে তেল ও গ্যাস মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন।[১৯]
তুর্কমেনিস্তানের অন্যান্য প্রাথমিক সম্পদ হলো তুলা ও শস্য। নিয়াজভ কৃষি উৎপাদনে বাৎসরিক কোটা দাবি করার পুরোনো প্রথা অব্যাহত রাখেন এবং পরবর্তীতে কোটা পূরণ না হলে উপমন্ত্রীদের দোষারোপ করতেন ও/অথবা বরখাস্ত করতেন।[২০][২১] তা সত্ত্বেও তুর্কমেনিস্তানের একটি উদ্ভূত যুগ ছিল যেখানে উদ্ভিদ ও মেশিনারিতে প্রচুর বিনিয়োগ ছিল যাতে দেশটি কাঁচা তুলা উৎপাদনকারী দেশ থেকে তুলা প্রক্রিয়াজাতকারী দেশে পরিবর্তিত হতে পারতো। নিয়াজভের রাষ্ট্রপতিত্বকালে তুর্কমেনিস্তানে একটি বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
নিয়াজভ "ফুটি দিবস" চালু করেন, এটি একটি ফসল কাটার উৎসব যেটি আগস্টের ২য় রবিবার পালিত হয়; তাঁর অন্যান্য সৃষ্টিকর্মের বিপরীতে "ফুটি দিবস" উদযাপন তাঁর মৃত্যুর পরেও অব্যাহত রয়েছে।
নিয়াজভ তুর্কমেনিস্তানের উন্নয়নে তুর্কমেনি সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনকে শীর্ষ অগ্রাধিকারে রেখেছেন। তিনি সিরিলীয়র পরিবর্তে লাতিন বর্ণমালার উপর ভিত্তি করে একটি নতুন তুর্কমেন বর্ণমালা প্রবর্তন করেন। তুর্কমেন সংস্কৃতির (তুর্কমেন: "গালকিনিশ") প্রচারের জন্য জাতীয় পুনরুজ্জীবন আন্দোলন নামে একটি সংস্থাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
অনেক ক্ষেত্রে নিয়াজভের সাংস্কৃতিক ধারণা ও পরিবর্তনগুলি বাইরের দর্শনার্থীদের নিকট সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছিল। তুর্কমেন বীর, কবি, ঐতিহাসিক ঘটনা, পরিবারের সদস্য ও নিজের নামের সাথে মিল রেখে মাস সেইসাথে সপ্তাহের দিনের নামের পরিবর্তন[২২] সারা বিশ্বে অনেক সমালোচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিয়াজভের লেখা বইটির সম্মানে সেপ্টেম্বরের নাম পরিবর্তন করে রুহনামা রাখা হয়েছিল (যেটি তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে লেখা শেষ করেছিলেন)।[২৩] তবে সকল পরিবর্তন নিয়াজভকে উন্নীত করেনি; যেমন ২৭ অক্টোবর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে অক্টোবরের নতুন নামকরণ করা হয় গারাশসিজলিক (স্বাধীনতা) এবং সুলতান সানজারের সম্মানে নভেম্বরের নাম হয় সানজার, যিনি সেলজুকদেরকে শেষবারের পূর্ণ শক্তি অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নতুন নামগুলি একটি নতুন শ্রম আইন প্রবর্তনের সাথে কার্যকর হয় যেখানে বলা হয়, যে "প্রাতিষ্ঠানিক ছুটির দিনগুলি তুর্কমেনিস্তানের রাষ্ট্রপতির ডিক্রির মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে"। পরবর্তীতে এই পরিবর্তিত নামগুলি এপ্রিল ২০০৮-এ তাঁর উত্তরসূরি বের্দিমুখামেদভ বিলুপ্ত করেছিল।[২৪]
নিয়াজভের আমলে ৯ মে বিজয় দিবস উদযাপনকে রূপ দিতে তাঁর পিতা আতামিরাত নিয়াজভের লালফৌজের চাকরিজীবনকে ব্যবহার করা হত। মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের বিপরীতে নিয়াজভের অধীনে তুর্কমেনিস্তান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশটির মানুষের আত্মত্যাগের স্মরণের উপর জোর প্রদান করে। ২০০৫ সালে নিজায়ভ যুদ্ধ সমাপ্তির হীরকজয়ন্তী উদযাপনের জন্য মস্কোর উদ্দেশ্য যাত্রা করেন এবং এর মাত্র কয়েকদিন আগে, তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তুর্কমেন প্রবীণদের পাশাপাশি ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে রাশিয়ান প্রবীণ এবং ভিক্টর ইউশচেঙ্কোর পক্ষে ইউক্রেনীয় প্রবীণ সৈনিকদের সম্মানিত করেছিলেন।[২৫] ১৯৯৪ সালে নিয়াজভের পিতাকে আলাদাভাবে তুর্কমেনিস্তানের বীরের সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল এবং ২০০৪ সালে তুর্কমেন স্থলবাহিনীর একটি ডিভিশনের নাম পরিবর্তন করে আতামিরাত নিয়াজভের নামে রাখা হয়েছিল।[২৬] বর্তমানে সের্দারে মোতায়েকৃত ২২তম মোটর রাইফেল ডিভিশন "আতামিরার নিয়াজভ" তাঁর নাম বহন করে।[২৭]
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর প্রথম দিকের কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা। তিনি জনগণকে আনুষ্ঠানিকভাবে মানবাধিকারও প্রদান করেছিলেন, যদিও বাস্তবে তাঁদের তা দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সরকার বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার হিসাবে সমালোচিত হয়েছিল। নিয়াজভের নেতৃত্বকালে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যপারটিও অনেক বেশি সমালোচিত হয়েছিল যেভাবে মধ্য এশিয়ার অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির ক্ষেত্রেও করা হয়েছিল। তুর্কমেনিস্তানের গণমাধ্যম ক্রমাগত রাষ্ট্রপতির প্রতি আনুগত্য দেখাতো এবং তাঁর ব্যক্তি পূজা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। ২০০০ সালের মে মাসে সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তুর্কমেন টেলিকম ব্যতীত সকল ইন্টারনেট লাইসেন্স প্রত্যাহার করে এবং জুন ২০০১-এ সকল ইন্টারনেট ক্যাফে বন্ধ করে দেয়।[২৮] ২০০৫ সালের মধ্যে, তুর্কমেনিস্তানে ৩৬,০০০ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, যা জনসংখ্যার মাত্র ০.৭% ছিল।[২৯]
মার্চ ২০০৪-এ নার্স, ধাত্রী, স্কুল হেলথ ভিজিটর ও ওয়ার্ড সহকারীসহ ১৫,০০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।[৩০] ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে আশগাবাতের বাইরের সকল হাসপাতাল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এই যুক্তিতে যে অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হবে।[৩১] রাজধানীর বাইরের সব লাইব্রেরিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, কারণ নিয়াজভ বিশ্বাস করতেন যে অধিকাংশ তুর্কমেনদের পড়ার জন্য একমাত্র বই হচ্ছে কুরআন ও তাঁর বই রুহনামা।[৩২]
জানুয়ারি ২০০৬-এ দেশের এক-তৃতীয়াংশ প্রবীণের অবসরভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে আরও ২,০০,০০০ জনের ভাতা হ্রাস করা হয়েছিল। পূর্ববর্তী দুই বছরে প্রাপ্ত ভাতা রাষ্ট্রে ফেরত প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়েছিল।[৩৩][৩৪] তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দৃঢ়ভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, যে পেনশন হ্রাসের ফলে অনেক বয়স্ক তুর্কমেনিদের মৃত্যু হয়েছে, আর অভিযোগ করে, যে বিদেশি গণমাধ্যমগুলি এই বিষয়ে "ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত" তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।[৩৫] ১৯ মার্চ ২০০৭-এ তুর্কমেনিস্তানের নতুন রাষ্ট্রপতি গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুহামেদু ১,০০,০০০ এরও বেশি বয়স্ক নাগরিকদের ভাতা পুনরুদ্ধার করে নিয়াজভের সিদ্ধান্তকে পাল্টিয়ে দেন।[৩৬]
ডিসেম্বর ২০০৮-এ নতুন রাষ্ট্রপতি জাতীয় সঙ্গীতেও পরিবর্তন আনেন, যার স্তবকের মধ্যে নিয়াজভকে উল্লেখ করেছিল।[৩৭]
তুর্কমেন সমাজের প্রাধান্যপূর্ণ ইসলামি প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে রাষ্ট্রপতি নিয়াজভ প্রতি বছর রমজান মাসে শবে কদরে (ভাগ্যের রজনী) ক্ষমা মঞ্জুর করতেন।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫ সালে ২২৯ বিদেশি নাগরিকসহ ৮,১৪৫ দোষীকে ক্ষমা প্রদান করা হয়েছিল।[৩৮] ২০০৬ সালে তুর্কমেনিস্তান ১১টি দেশের ২৫৩ জন বিদেশি নাগরিকসহ ১০,০৫৬ জন বন্দিকে মুক্তি প্রদান করে। নিয়াজভ বলেন:
"রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই মানবিক কাজটি তুর্কমেন সমাজের সত্যিকারের নৈতিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য পরিবেশন করতে দিন। সমগ্র বিশ্বকে জানাতে দিন যে ধন্য তুর্কমেন মাটি কখনো মন্দ ও সহিংসতার স্থান হয়নি।"[৩৯]
আল্লাহর এই উপহারের একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। আমরা সুস্বাদু ফুটির নামের সম্মানে এটিকে একটি জাতীয় ছুটির দিন বানাবো।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ছোট কুকুরদের দেখতাম। তাঁদের দাঁত শক্ত করার জন্য হাড়গুলোকে চিবাতে দেওয়া হত। আপনাদের মাঝে যাঁদের দাঁত পড়ে গেছে তাঁরা হাড় চিবিয়ে খায়নি। এটা আমার পরামর্শ...[৫৩]
নিয়াজভ বৈদেশিক বিষয়ে কঠোর নিরপেক্ষতার নীতি প্রচার করেন, ন্যাটো বা গুয়ামের সদস্যপদ চাওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং সিএসটিও-কে প্রায় এড়িয়ে যান। তুর্কমেনিস্তান জাতিসংঘের কোনো শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেনি, তবে ইন্টারপোলের সদস্য হয়েছে।
তুর্কমেনিস্তানের পূর্ণ স্বাধীনতা ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাব "তুর্কমেনিস্তানের স্থায়ী নিরপেক্ষতা" দ্বারা স্বীকৃত হয়েছিল। ফলস্বরূপ ২০০৫ সালের মধ্যে তুর্কমেনিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রমণ্ডলের (সিআইএস) সাথে তাঁর সম্পর্ক কমিয়ে আনবে, সিআইএস সনদের অনুচ্ছেদ ৮-এর অধীনে শুধুমাত্র একটি সহযোগী সদস্য হবে, যেমন দেশটি সিআইএস-এর কোনো সামরিক কাঠামোতে অংশগ্রহণ করবে না।
২০০৬ সালে নিয়াজভের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে "মানবাধিকার সংলাপে" প্রবেশের ঘোষণার পর, ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটি তুর্কমেনিস্তানকে ইইউ-র সাথে "সর্বাধিক অনুকূল জাতি"র বাণিজ্য মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ভোট দেয়, যাকে ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রতি আগ্রহের থেকে অনুপ্রাণিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।[৫৪]
জানুয়ারি ১৯৯৬-এ নিয়াজভ তেহরানে তাজিক নেতা সায়িদ আবদুল্লহ নুরির সাথে সাক্ষাৎ করেন, তাঁকে জানাতে, যে মস্কোতে সিআইএস-এর একটি শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সেই সময়ে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাওয়া সদস্য রাষ্ট্র তাজিকিস্তানে সিআইএস শান্তিরক্ষীদের মোতায়েনের আদেশনামা পুনর্নবীকরণ করতে সম্মত হয়েছে।[৫৫]
নিয়াজভ তাঁর আদর্শের মাধ্যমে মার্ক্স ও লেনিনের আদর্শ প্রতিস্থাপন করে সাম্যবাদী (কমিউনিস্ট) ব্যবস্থার পতনের ফলে সৃষ্ট শূন্যতার একটি বিকল্প হয়ে উঠেন। তাঁর শাসনামলে নিয়াজভ নিজের চারপাশে একটি শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের পূজা তৈরি করেছিলেন, যা উত্তর কোরিয়ায় কিম শাসকগোষ্ঠীর আশেপাশে গড়ে উঠা ব্যক্তিত্বের পূজার মতোই ছিল। তিনি তাঁর উপাধি তুর্কমেনবাশি অনুসারে ক্রাসনোভদস্কের কাছে একটি শহরের নাম পরিবর্তন করেছিলেন এবং নিজের ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে স্কুল, বিমানবন্দর এবং এমনকি একটি উল্কাপিণ্ডেরও নামকরণ করেছিলেন। সরকারি তুর্কমেন গণমাধ্যমের আনুগত্যপ্রবণ কর্মকাণ্ড নিয়াজভের ব্যক্তিত্ব পূজাকে সমর্থন করেছিল। Neitralniy Turkmenistan অনুসারে চিকিৎসকদের হিপোক্রেটিসের শপথ প্রতিস্থাপন করে রাষ্ট্রপতির উপর শপথ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।[৫৬]
দেশের সর্বত্র তার মূর্তি ও প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। আশগাবাতে তিনি ১.২ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নিজের একটি ঘূর্ণায়মান সোনার ভাস্কর্য স্থাপন করেছিলেন, যেটি সর্বদা সূর্যের দিকে মুখ করে থাকতো।[৫৭] নিয়াজভ প্রত্যেক নাগরিককে তাঁর প্রতিকৃতি সংবলিত একটি ঘড়ি দিয়েছিলেন।
নিয়াজভ একইসাথে "সংস্কারের" নামে শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ তহবিল কমিয়ে দেন ও আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন করেন, যেখানে সকল বিদ্যালয়কে তাঁর নিজের বই রুহনামাকে তাঁদের প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য এটিতে আদর্শিক অনুপ্রেরণা উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে রুহনামা পড়া বাধ্যতামূলক করেছিলেন, চাকরির ইন্টারভিউতে নতুন সরকারি কর্মজীবিদের বইয়ের উপর পরীক্ষা করা দিতে হত এবং বইটির শিক্ষার উপর একটি পরীক্ষা দেওয়া তুর্কমেনিস্তানের ড্রাইভিং পরীক্ষার একটি অংশ ছিল। এমনকি তুর্কমেন রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে "মহান তুর্কমেনবাশির পবিত্র রুহনামা বিভাগ" নামের একটি অনুষদ ছিল এবং রুহনামা শিক্ষাকে প্রায়শই দেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমতুল্য হিসেবে গবেষণা একটি প্রধান লক্ষ্য হিসেবে অনুসরণ করা হতো।[৫৮] নিয়াজভ দাবি করেছেন যে যাঁরা এটি তিনবার পাঠ করবে তাঁরা বেহেশতে যাবে।[৫৯][৬০][৬১] কিম ইল-সাং এর মতো, তাঁকে ঘিরে একটি আধ্যাত্মিক পৌরাণিক কাহিনিও গড়ে উঠে।[৬২][৬৩]
নিয়াজভের রাষ্ট্রপতিত্বের সময় না সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল, না বাক-স্বাধীনতা ছিল। এর আরও অর্থ হচ্ছে যে নিয়াজভের বিরোধিতা কঠোরভাবে দেশে নিষিদ্ধ ছিল এবং প্রধান বিরোধী ব্যক্তিত্বদের কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, অবরুদ্ধ করা হয়েছিল, নির্বাসিত করা হয়েছিল বা তাঁরা দেশ ছেড়ে পালায় এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়মিতভাবে কর্তৃপক্ষ দ্বারা হয়রানি করা হতো।[৬৪] নিয়াজভের একটি পরিলেখ টেলিভিশন সম্প্রচারে লোগো হিসেবে ব্যবহার করা হতো।[৬৫] বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলিতে, তাঁর জারিকৃত কিছু ডিক্রির উদ্ভট প্রকৃতি এবং রাষ্ট্রপতির বিপুল সংখ্যক প্রতিকৃতি একটি স্বৈরাচারী নেতার ধারণার দিকে পরিচালিত করে। তাঁর দেশ তেল সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে করতেন যেখানে দেশের মানুষ এই সম্পদের কোনো সুবিধাই ভোগ করেনি। এসব ও অন্যান্য আরও কারণে, মার্কিন সরকার তাঁর মৃত্যুর সময় বলেছিল যে, "নিয়াজভের ব্যক্তিত্বের পূজা... একটি রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ধর্মের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।"[৬৬]
২৫ নভেম্বর ২০০২ সালে সকাল ৭টার দিকে যখন নিয়াজভ আরশাবিলে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে তাঁর কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন আশগাবাত শহরের কেন্দ্রস্থলে তাঁর মোটরযানের উপর গুলি চালানো হয়। নিয়াজভ দাবি করেছিলেন, যে এটি অভ্যুত্থানের একটি প্রচেষ্টা ছিল এবং ফলস্বরূপ তুর্কমেন সরকার হাজার হাজার সন্দেহভাজন ষড়যন্ত্রকারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। যাঁদেরকে গ্রেফতার/অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস শিহমিরাদু ও বাতির বের্দিউ, সেইসাথে তুর্কমেন স্থলবাহিনীর মেজর বেগেঞ্চ বেকনাজারভ ও জেনারেল স্টাফের চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সের্দার চারিয়ারভ।[৬৭] সমালোচকরা দাবি করেন, যে সরকার দেশি ও বিদেশি রাজনৈতিক বিরোধিতার বিরুদ্ধে দমন করতে এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাটি সাজিয়েছে।[৬৮] পরবর্তীতে তুর্কমেনিস্তানের জাতিগত রুশদের অসমভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।[৬৯][৭০]
২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালে রাজধানী আশগাবাতে একটি লিফলেট প্রচারাভিযান দেখা যায়, যাতে নিয়াজভকে উৎখাত ও বিচারের আহ্বান জানানো হয়। কর্তৃপক্ষ প্রচারণা বন্ধ করতে পারেনি এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় টেলিভিশনে তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ একাডেমির পরিচালককে বরখাস্ত করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।[৭১] তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অযোগ্যতার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং ঘোষণা করেন: "আমি বলতে পারি না যে আপনার কোনো মহান যোগ্যতা ছিল বা অপরাধ মোকাবেলায় অনেক কিছু করতে পেরেছেন।"
পরবর্তীতে নিয়াজভ ঘোষণা করেন, যে ভবিষ্যতে এরকম প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে একটি আপাত সতর্কতা হিসেবে তুর্কমেনিস্তানের সকল প্রধান সড়কে ও স্থানে নজরদারির জন্য ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
২১ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে বিকালের দিকে তুর্কমেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ঘোষণা করে, যে রাষ্ট্রপতি সাপারমুরাত নিয়াজভ তাঁর বাসভবন তুর্কমেনবাশির প্রাসাদে ৬৬ বছর বয়সে স্থানীয় সময় বেলা ০১:১০ এ হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।[৭২][৭৩] তাঁর মৃত্যুর এক মাস আগে নিয়াজভ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন, যে তিনি গত কয়েক বছর ধরে একটি অজ্ঞাত হৃদপিণ্ড-সংক্রান্ত অবস্থার জন্য হার্টের ওষুধ সেবন করছেন। পরবর্তীতে মস্কোর তুর্কমেন দূতাবাস এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
তিনিই তুর্কমেনিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি পদে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন।
তুর্কমেনিস্তানের সংবিধানের আইন অনুসারে নিয়াজভ তাঁর মৃত্যুর আগে কোনো উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেননি, তাই পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েজগেলদি আতাইউ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য আয়োজক কমিশনের প্রধান হিসেবে উপ-প্রধানমন্ত্রী গুর্বাঙ্গুলি বের্দিমুহামেদুর নাম ঘোষণা করা হয়। যাইহোক, আতাইউকে ২১ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীকালে বের্দিমুহামেদুকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি মনোনীত করা হয়। বের্দিমুহামেদু ও হাল্ক মাসলাহাতি ২৬ ডিসেম্বর ২০০৬ সালে ঘোষণা করেন যে নিয়াজভের উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হবে।[৭৪]
নিয়াজভের মৃত্যুকে কিছু গণমাধ্যম জল্পনা দ্বারা বেষ্টিত করে। কিছু তুর্কমেন বিরোধী সূত্র এও দাবি করে, যে ২১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত তারিখের বেশ কয়েক দিন আগে নিয়াজভ মারা গিয়েছিলেন।[৭৫]
বিদেশি সংবাদ প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে নিয়াজভ অতিরিক্ত ওজন এবং অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হৃৎ-ধমনীর ব্যাধি ও বৃক্কের অকার্যকারীতায় ভুগছিলেন।[১]
নিয়াজভকে ২৪ ডিসেম্বর আশগাবাত থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে তাঁর নিজ গ্রাম গিপজাকে অবস্থিত কিপচাক মসজিদে তাঁর পূর্বেই প্রস্তুতকৃত সমাধিতে সমাহিত করা হয়েছিল। গ্রামে নিয়ে যাওয়ার আগে নিয়াজভের মৃতদেহ সকাল ৯:০০ থেকে দুপুর ১২:০০ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে একটি খোলা কফিনে রাখা হয়েছিল।[৫৯] তিন ঘণ্টার ব্যবধানে কফিনের পাশ দিয়ে বিদেশি প্রতিনিধিসহ অনেক শোকাহত মানুষ যান। সাধারণ নাগরিকদের অনেকেই হাঁটার সময় নাটকীয়ভাবে কেঁদেছিলেন, এমনকি কেউ কেউ কফিনে আঁকড়ে ধরেছিলেন ও অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।[৭৬] তুর্কমেনিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত তুর্কমেনি বিমান বাহিনী শেষবিদায়ের অংশ হিসাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার শেষযাত্রায় অংশ নেয়। দাফনের আগে একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়, প্রধান মুফতি জিন আজা পাঠ করেন।[৫৯] তাঁকে সমাহিত করার সময় ২১টি-গুলির স্যালুটের সাথে জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়েছিল, ২১টি গুলি তিনি যত বছর ক্ষমতায় ছিলেন তার প্রতীক।[৭৭]
নিয়াজভের মৃত্যুর পর নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বের্দিমুহামেদু, নিয়াজভের ব্যক্তিপূজার কিছু উদ্ভট স্বভাব অপসারণ শুরু করেন। ২০০৮ সালে নিয়াজভের মৃত্যুর দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, তাঁর দ্বারা পরিবর্তিত তুর্কমেন বর্ষপঞ্জির পুরোনো নামগুলো আবার পুনরুদ্ধার করা হয়[৮৬] এবং তুর্কমেনিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের যে অংশ নিয়াজভের উল্লেখ ছিল সেখানে "জনগণের" শব্দটি দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়।[৮৭] সেই বছর নাগাদ নিয়াজভের রাষ্ট্রপতিত্বের সময় গৃহীত তুর্কমেনিস্তানের পুরোনো সংবিধান, যেটিতে নিয়াজভকে সর্বোপরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত করে উল্লেখ করা হয়েছিল, তা প্রতিস্থাপন করা হয় এবং সরকার একটি গণতন্ত্রীকরণ কর্মসূচি চালু করে, যা তাঁর চিন্তাধারা থেকে ভিন্ন ছিল।
বের্দিমুহামেদু ২০০৭ সালের বসন্তে নিয়াজভের জীবনীমূলক বই রুহনামা-র প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ধৃতিসমূহকে ছাঁটাই করেন এবং ২০০৯-১০ সালের দিকে টেলিভিশনে বইটির প্রচারণা বন্ধ হয়ে যায়।[৮৮] ২০১১ সালের মধ্যে বের্দিমুহামেদু সরকার বইটির উপর নেওয়া মাধ্যমিক-স্কুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাহার করে[৮৯] এবং ২০১৪ সালে, অবশেষে ঘোষণা করা হয় যে তুর্কমেনিস্তানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর বইটি সম্পর্কে আবেদনকারীদের জ্ঞানের পরীক্ষা নিবে না।[৯০][৯১] তুর্কমেনবাশি রুহি মসজিদ ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে কুরআনের সঙ্গে বইটি প্রদর্শন ও রাখাও বন্ধ হয়ে যায়।
দেশজুড়ে স্থাপিত তাঁর মূর্তি ও প্রতিকৃতিও অপসারণ হয়। নিয়াজভের ঘূর্ণায়মান সোনার ভাস্কর্য আর্চ অফ নিউট্রালিটি ২৬ আগস্ট, ২০১০ সালে শহরতলিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। জারি করা নতুন তুর্কমেনিস্তানি মানাতগুলোতেও (মুদ্রা) তাঁর ছবি ছিল না।
যাইহোক, সাপারমুরাত নিয়াজভ তুর্কমেনিস্তানের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হিসেবেই রয়ে গেছেন। তাঁর জন্মদিনটিকে জাতীয় দিবস (সরকারি ছুটির দিন নয়) হিসাবে পালন করা হয়, যার নাম "তুর্কমেনবাশি স্মরণ দিবস"। অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন, তাঁর কিছু সৃষ্টি অপরিবর্তিত রয়ে যায়, যেমন ফুটি দিবস উদযাপন। তুর্কমেনবাশি শহর ও নিকটবর্তী তুর্কমেনবাশি নগরী, সেইসাথে বেশ কয়েকটি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গা এখনও তাঁর নাম বহন করে।[৯২] ২০২২ সালের নভেম্বরে, নিয়াজভ, গুর্বানসোলতান এজে ও সেরদার শহরগুলোর নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল।[৯৩] তুর্কমেনিস্তানের একটি শহরসহ বেশ কিছু স্থান এখনও তাঁর নাম বহন করে। তাঁর নামে তুরস্কের একটি পার্কেরও নামকরণ করা হয়েছে। তাঁর সোনার ভাস্কর্যটিও পরবর্তীকালে আবার স্থাপন করা হয় এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
নিয়াজভের দুটি সন্তান ছিল, উভয়েই তাদের পিতার মৃত্যুর পর রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে।[৯৪]