সাবানের বুদবুদ হল সাবান পানির অত্যন্ত পাতলা আবরন যা বাতাসপূর্ণ চিত্রাভ পৃষ্ঠের ফাঁপা গোলক তৈরি করে। সাবান বুদবুদ,হয় নিজে থেকে বা অন্য বস্তুর সংস্পর্শে ফেটে যাওয়ার আগে সাধারণত কয়েক সেকেন্ড টিকে। এগুলো প্রায়ই ব্যবহার করা হয় শিশুদের জন্য আনন্দ দেয়ার জন্য কিন্তু শিল্পসম্মত ক্রিয়াকাণ্ড এও ব্যবহৃত হয়। কতগুলো বুদবুদ মিলে ফেনা তৈরি করে।
যখন বুদবুদে আলো প্রতিফলিত হয়,এতে রঙের পরিবর্তন প্রদর্শিত হয়। বৈশিষ্ট্যমূলক প্রতিসরণের কারণে সামনের ও পিছনের সাবানের পাতলা আবরনে আলোর ব্যতিচারের জন্য অনেকটা রংধনুর মত দেখায়।আবরনের বেধের উপর বিভিন্ন রঙের গঠনমূলক ও ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার নির্ভর করে।
সাবানের বুদবুদ হল, ন্যূনতম তলে জটিল গাণিতিক সমস্যার গাঠনিক উদাহরণ। এগুলোতে দেয়া আয়তনে ন্যূনতম পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফলের আকার ধারণ করে। সাবানের আবরন দিয়ে শূন্য গড় বক্রতার একটি প্রকৃত ন্যূনতম তল সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করা যায়, যার ভিতরে আর বাইরে সমান চাপ বজায় থাকে। সাবানের বুদবুদ হল বদ্ধ সাবানের আবরণ।এর ভিতরের ও বাইরের চাপের পার্থক্যের জন্য তলের গড় বক্রতা ধ্রুবক।
১৮৮৪ সাল থেকে এটা পরিচিত যে একটি গোলাকৃতির সাবানের বুদবুদ হল ন্যূনতম ক্ষেত্রে প্রদত্ত বাতাসের আবদ্ধ পথ(H. A. Schwarz এর একটি উপপাদ্য), ২০০০ সালে প্রমাণিত হয় যে,দুটি মিলিত সাবানের বুদবুদের ন্যূনতম তল ক্ষেত্রফল ভিন্ন আকারের দুটি প্রদত্ত আয়তনের বায়ুর মিলিত হওয়ার সর্বউত্তম পথ প্রদান করে। এটা দ্বৈত বুদবুদ অনুমান হিসেবে পরিচিত।[১]
এইসব গুণাবলীর জন্য, সাবানের বুদবুদের ফ্লিম ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের আপ্লিকেশনের সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাই অটো ন্যূনতম তল ক্ষেত্রফলের পাতের জ্যামিতি নির্ধারণের জন্য সাবানের ফ্লিম ব্যবহার করেছিলেন যা বিভিন্ন বিন্দুর মধ্যে ছড়িয়ে পরে এবং এই জ্যামিতি পরিবর্তিত হয় যুগান্তকারী টেন্সিল ছাদের গঠনে।[২] একটি বিখ্যাত উদাহরণ হল,মন্ট্রিলের উৎপন্ন দ্রব্যাদির আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ৬৭ এর পশ্চিম জার্মান পটমণ্ডপ।
যখন দুটি বুদবুদ এক হয়, তখন এগুলোর বাতাসের আয়তনের সাথে সংগতিপূর্ণ,পরিধির যোগফলের যতটা সম্ভব ছোট আকার গ্রহণ করে। একই আকারের বুদবুদের দেয়াল সমতল থাকে।যদি এগুলোর আকার সমান না থাকে,দেয়াল বড়গুলোর মধ্যে ডুকে কারণ ইয়ং-ল্যাপলাসের সমীকরণ অনুসারে ছোট বুদবুদের ভিতরের চাপ বড় গুলোর থেকে বেশি।
একটি বিন্দুতে যখন তিন বা ততোধিক বুদবুদ মিলবে,এগুলো একই রেখা বরাবর মিলবে।কারণ পৃষ্ঠটান তিনটি তলেই সমান থাকবে,এগুলোর মধ্যকার কোণ ১২০ ডিগ্রির সমান হতে হবে। শুধুমাত্র ৪টি বুদবুদ একটি বিন্দুতে মিলতে পারে,যেখানে বুদবুদত্রয়ের দেয়াল কোসাইন্−১(-১/৩) ≈ ১০৯.৪৭° কোনে পৃথক হবে। এই নিয়মগুলো প্লেটোর নিয়ম নামে পরিচিত,যা বুদবুদ থেকে কীভাবে ফেনা তৈরি হয় তা নির্দেশ করে।
বুদবুদের বক্রপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল = 4πr^2 বুদবুদে মোট ২ টি পৃষ্ঠ থাকে। সুতরাং মোট ক্ষেত্রফল বৃদ্ধির পরিমান = 2×4πr^2
তলগঠনকারী পানির পাতলা আবরন বা মাইক্রোমিটার বেধের সাবানের আবরনের সহজেই ফাটলের জন্য একটি সাবানের বুদবুদের স্থায়িত্ব সীমিত।এটা এইভাবে সংবেদনশীল :
যখন একটি সাবানের বুদবুদ কঠিন বা তরলের কাছে আসলে,তল ভিজে যায়। কঠিন তলে, কঠিনের পৃষ্ঠশক্তির উপর বুদবুদের স্পর্শকোণ নির্ভর করে।[৩][৪] হাইড্রফিলিক তলের চেয়ে চিত্রের প্রান্তিক হাইড্রফোবিক তলে সাবানের বুদবুদের বড় স্পর্শকোন থাকে। তরল তলে, স্পর্শকোণ, সাবানের বুদবুদের আকারের উপর নির্ভর করে, ছোট বুদবুদের স্পর্শকোণ কম।[৫][৬]
সাবানের বুদবুদের পানির উপাদানের ভিন্নতার সাথে অনেক রেসিপি আছে। সবচেয়ে প্রচলিত রেসিপি হল,
বাসন ধোয়া সাবান এর উপস্থিতির কারণে, এটা শিশুদের ডার্মাটাইটিস এর জন্য বিরল নয় যার পরিণতি হল লাল লাল ফুসকুড়ি, ফোলা চোখ, বমি ও মাথা ঘোরা।
সাবানের বুদবুদের গঠন শুধুমাত্র গোলক নয়,কার্যত যে কোনো আকৃতির, উদাহরণস্বরূপ, ওয়্যার ফ্রেম।অতএব, বিভিন্ন ন্যূনতম তলের নকশা করা যায়। আসলে গাণিতিক নকশা করার থেকে এটা বাস্তবে তৈরি করা সহজ। এজন্য সাবানের ফ্লিম বা পাতলা আবরণ অ্যানালগ কম্পিউটার এর সাথে তুলনা করা যায় যা সিস্টেমের জটিলতার উপর নির্ভর করে প্রথাগত কম্পিউটারকে ছাড়িয়ে যাবে।[৭][৮][৯]
শিশুদের বিভিন্ন ধারণার অন্বেষণ ও শিক্ষার জন্য বুদবুদ ব্যবহার করা যেতে পারে। নমনীয়তা, রঙ এর গঠন, প্রতিফলক বা আয়নার উপরিভাগ, অবতল ও উত্তল উপরিভাগ, স্বচ্ছতা, বিভিন্ন আকার (বৃত্ত, বর্গক্ষেত্র, ত্রিভুজ, গোলক, ঘনক, চতুর্ভুজ, ষড়ভুজ), স্থিতিস্থাপক বৈশিষ্ট্য এবং তুলনামূলক আয়তন অনুযায়ী বিন্যাস, সেইসাথে বুদবুদের আরো গূঢ় বৈশিষ্ট্য এই পাতায় আছে।২ বছর বয়স থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারণা শিখাতে বুদবুদ খুবই দরকারী। সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাটালি হার্টযেল মনে করেন যে সকল শিশুরা বিনোদনের জন্য কৃত্রিম বুদবুদ ব্যবহার করে তাদের মস্তিষ্কের যে অংশ মোটর দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করে তার উপর স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং যে সকল শিশু কম বয়সে বুদবুদ দেখেছে তাদের পরিমাপযোগ্য গতির দক্ষতা রয়েছে যারা করেনি তাদের থেকে।[১০]
৪০০ বছর ধরে সাবানের বুদবুদ বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে,প্রমাণ স্বরুপ ১৭ শতকে ফ্লেমিশ চিত্রে দেখা যায় বাচ্চারা মাটির পাইপ দিয়ে বুদবুদ ঊড়াচ্ছে। ১৮৮৬ এ লন্ডন ভিত্তিক ফার্ম A. & F. পিয়ারস তাদের সাবানের একটি বিখ্যাত বিজ্ঞাপন প্রচারণায় জন এভারেট এর বাচ্চাদের বুদবুদ উড়ানোর চিত্র ব্যবহার করেছিল। শিকাগোর কোম্পানি Chemtoy ১৯৪০ এ বুদবুদের দ্রবণ বিক্রি শুরু করে এবং বুদবুদের দ্রবণ তখন থেকেই শিশুদের কাছে জনপ্রিয়।একটি শিল্প জরিপ অনুসারে বছরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বোতল বিক্রি হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
একটি বুদবুদ তৈরি হয়, স্বচ্ছ জলের পরিক্ষেপে স্বচ্ছ বাতাস দিয়ে। তবে সাবানের ফ্লিম বা আবরণ দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর মতই পাতলা ফলে ব্যতিচার হয়। সৃষ্টি হয় আলোর প্রতিপ্রভা, যার সাথে বুদবুদের এর গোলাকার আকৃতি এবং ভঙ্গুরতার ঐন্দ্রজালিক প্রভাব একইসাথে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের উপর পড়ে। প্রতিটি রঙ,সাবানের বুদবুদের আবরণের পুরুত্বের উপর নির্ভর করে। ফলে নানারকম নেমে সাবান বুদ্বুদ ফিল্ম. টম Noddy (মার্কাস দ্য সৌতয় এর কোড এ, দ্বিতীয় পর্ব এ অভিনয় করেছিল ) বুদবুদের তলে কন্টুর মানচিত্র দেখে উপমা দিয়েছিলেন। যাহোক কৃত্রিম রঙ্গিন বুদবুদ তৈরি করে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বায়রন, মেলোডি ও হেনোক সুইটল্যান্ড একটি পেটেন্ট অ-বিষাক্ত বুদবুদ উদ্ভাবন করেছে (টেকনোলজি বুদবুদ) অতিবেগুনি আলোতে জ্বলে।স্বাভাবিক আলোতে এই বুদবুদ দেখতে সাধারণ, উচ্চ মানের "পরিষ্কার" বুদবুদ এর মতই, কিন্তু অতি বেগুনী আলোতে আসলে জ্বলে উঠে।অতিবেগুনী আলো যত উজ্জ্বল হবে,এটা ততই উজ্জ্বল হবে।এই পরিবার বিশ্বব্যাপী এগুলো বিক্রি করেছে, কিন্তু পরে তাদের কোম্পানি বিক্রি করেছে।
বুদবুদে রঙ্গিন ডাই মিশিয়ে রঙ্গিন বুদবুদ তৈরি করা যায় নি কারণ ডাই পানির অনুর সাথে সাবানের বিরোধী হিসেবে যুক্ত হয়।অতএব,ডাই এর সাথে রঙ্গিন বুদবুদ তৈরি করার পথ শুরুতেি বন্ধ।ডাই রসায়নবিদ ড. রাম সাবিনস ল্যাক্টোন ডাই বিকশিত করেন যা সাবানের সাথে লেগে থেকে উজ্জল বুদবুদ তৈরি করে।যেমন বেগুনী ল্যাক্টন এর স্ফটিক।টিম কেহো উদ্ভাবিত অ-বিষাক্ত এবং দাগহীন রঙ্গিন বুদবুদ,যা অক্সিজেন বা চাপের উপস্থিতিতে তার রঙ হারায়, যা তিনি এখন অনলাইনে Zubbles নামে বাজারজাত করছেন।২০১০ এ, জাপানি মহাকাশচারী নাওকো ইয়ামাজাকি দেখান যে, ক্ষুদ্র মহাকর্ষে রঙীন বুদবুদ তৈরি করা সম্ভব । কারণ নিম্ন-মাধ্যাকর্ষণ পরিবেশে পানি অণু বুদবুদের চারপাশে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
−১৫ °সে (৫ °ফা) এর নিচে সাবানের বুদবুদ ঊড়ালে তা তল স্পর্শ করলে বরফে পরিণত হবে। ভিতরের বায়ু ধীরে ধীরে বের হয়ে যাবে,এবং বুদবুদটি নিজের ভারে ভেংগে পড়বে।−২৫ °সে (−১৩ °ফা) এর নিচে বুদবুদ বাতাসেই জমে যাবে এবং মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে যাবে। যখন বুদবুদ গরম বাতাস দিয়ে ফোলানো হবে,প্রথমে বুদবুদ আদর্শ গোলকের আকারে জমবে,পরে বাতাস ঠান্ডা হলে এর আয়তন কমতে থাকবে,বুদবুদ আংশিক ভেঙ্গে পড়বে।নিম্ন তাপমাত্রায় ছোট বুদবুদ সহজেই তৈরি করা যায় এবং দ্রুত জমে,এর বড় করলে ভেঙ্গে পড়ে[১১] তুষারে পরার ২ সেকেন্ডের মধ্যে ছোট সাবানের বুদবুদ জমে যায় (প্রায় -10...-14 °C বায়ু তাপমাত্রায়)।[১২]
সাবানের বুদবুদ প্রদর্শন বিনোদন সঙ্গে শৈল্পিক কৃতিত্ব এর সাথে একত্রিত। এর জন্য উচ্চমানের দক্ষতার প্রয়োজন। কিছু শিল্পী সাধারণ বাণিজ্যিক বুদবুদের তরল ব্যবহার করে,বাকীরা নিজেদের তৈরি দ্রবণ ব্যবহার করে। কেউ কেউ মানুষ বা বস্তুকে ঘেরা বিশাল বুদবুদ বা নল তৈরি করে। অন্যরা ঘনক,চতুষ্তলক এবং অন্যান্য আকার আকৃতি তৈরি করে।বুদবুদ মাঝে মাঝে খালি হাতে বানানো হয়। দৃশ্যমান অভিজ্ঞতার জন্য তারা মাঝে মাঝে ধোঁয়া, বাষ্প বা হিলিয়াম এবং সঙ্গে লেজার লাইট বা আগুন ব্যবহার করে। সাবানের বুদবুদে অগ্নিদাহ্য গ্যাস, যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা পূর্ণ করা যায় এবং তারপর জ্বালিয়ে দেয়া যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]