সাবিত্রী খানোলকর | |
---|---|
জন্ম | ইভ ইভোন্নে ম্যাডে ডি মারোস ২০ জুলাই ১৯১৩ নেউচাতেল, সুইজারল্যান্ড |
মৃত্যু | ২৬ নভেম্বর ১৯৯০ নয়া দিল্লি, ভারত | (বয়স ৭৭)
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
পেশা | ডিজাইনার |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | পরম বীর চক্রের নকশা করা |
দাম্পত্য সঙ্গী | মেজর জেনারেল বিক্রম রামজি খানোলকর (বি. ১৯৩২; মৃ. ১৯৫২) |
সন্তান | কুমুদিনী শর্মা,মৃণালিনী |
পিতা-মাতা |
|
সাবিত্রি বাঈ খানোলকর (জন্ম- ইভ ইভোন্নে ম্যাডে ডি মারোস, ২০শে জুলাই ১৯১৩ - ২৬শে নভেম্বর ১৯৯০) [১] হলেন একজন ডিজাইনার, যিনি ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পদক পরমবীর চক্রের নকশা করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য এই পদক দেয়া হয় । এছাড়াও তিনি অশোক চক্র (এসি), মহাবীর চক্র (এমভিসি), কীর্তি চক্র (কেসি), বীর চক্র (ভিসি) এবং শৌর্য চক্র (এসসি) সহ আরও বেশ কয়েকটি বড় পদকগুলির নকশা করেছিলেন। তিনি জেনারেল সার্ভিস মেডেল ১৯৪৭ ও ডিজাইন করেছিলেন ।যা ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। [২] তিনি চিত্রশিল্পী এবং শিল্পীও ছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতার পরপরই তাকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল হীরা লাল অটল যুদ্ধের ক্ষেত্রে বীরত্বের জন্য ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার পরমবীর চক্রের নকশা করতে বলেছিলেন। [১][৩] মেজর জেনারেল অটলকে স্বাধীন ভারতের নতুন সামরিক সজ্জা তৈরি ও নামকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। খানোলকারকে বেছে নেওয়ার জন্য তাঁর কারণগুলি ছিল তাঁর ভারতীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃত এবং বেদ সম্পর্কে গভীর এবং অন্তরঙ্গ জ্ঞান। তিনি আশা করেছিলেন যে সাবিত্রী এই নকশাটিকে সত্যিকারের ভারতীয় নীতি প্রদান করবেন।
কাকতালীয়ভাবে, প্রথম পিভিসি বড় মেয়ে কুমুদিনী শর্মার ভগ্নিপতি মেজর সোম নাথ শর্মা কে ভূষিত করা হয়েছিল, যাকে কাশ্মীর এ ১৯৪৭ -এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে মরণোত্তর সম্মান দেওয়া হয়েছিল ৩রা নভেম্বর ১৯৪৭ সালে। [২]
তার পূর্ব নাম ছিল ইভ ইভোন্নে ম্যাডে ডি মারোস । তিনি সুইজারল্যান্ডের নেউচাতেলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আন্দ্রে ডি ম্যাডেই ।তিনি ছিলেন হাঙ্গেরীয়ান।তিনি ছিলেন জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সোসিয়াটি ডি সোসিয়েলজি দে জেনেভার প্রেসিডেন্ট। মাতার নাম ছিল ম্যারেথ হ্যান্টজেল্ট।যিনি ছিলেন রাশিয়ান। যিনি ইনস্টিটিউট জাঁ জ্যাক রুশো (রুশো ইনস্টিটিউট) তে শিক্ষকতা করতেন।তার জন্মের সময় তিনি তার মাকে হারান। তাঁর শৈশবকাল জেনেভাতে কেটেছিল। যেখানে তিনি প্রকৃতি ও বহিবিশ্বের প্রতি ভালবাসা সম্পন্ন এক মমতাময়ী মেয়ে হিসেবে বড় হয়েছিলেন।তার পিতা তখন লিগ অফ নেশনের গ্রন্থাগারিক ছিলেন । তিনি সাবিত্রীকে রিভেরার একটি স্কুল পড়তে পাঠান। বাবা পুস্তকালয়ে কাজ করার কারণে ছুটির দিনগুলিতে তিনি বই পড়তেন। বই পড়তে পড়তে কোনও এক সময় ভারতের প্রতি তার মনে ভালবাসা জন্ম নেয়। ১৯২৯ সালে একদিন যখন তিনি আপনার বাবা এবং অন্য পরিবারের সাথে রিভেরার সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটাছিলেন তখন তাঁর পরিচয় ভারতীয়দের একটি গোষ্ঠীর সাথে হয়। এই গোষ্ঠীতে বিক্রম খানলকরও ছিল। তখন তিনি কিশোরী ছিলেন। এক মারাঠি পরিবার থেকে আসা খানোলকার ছিলেন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি সানহর্স্টে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এক তরুণ ভারতীয় সেনা ক্যাডেট। ছুটিতে তিনি সুইজারল্যান্ড সফর করছিলেন। যদিও সে তার চেয়ে অনেক বড় ছিল, কিন্তু সে তার প্রেমে পড়েছিল। তিনি তার সাথে ভারতে যেতে চাইলেন। তার বাবা তাকে ভারতের মতো দূর দেশে যেতে দিতে রাজি হননি। কিন্তু সাবিত্রী ছিলেন একজন দৃঢ়মনা যুবতী। তার ভালবাসা ছিল প্রবল ।বিক্রমের সাথে চিঠি আদান প্রদান ছিল। তিনি কয়েক বছর পরে বিক্রমের জন্য ভারতে যান।তিনি বিক্রমকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন (পরে মেজর জেনারেল ) বিক্রম রামজি খানোলকরকে লখনৌতে মারাঠি হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করে সাবিত্রি বাঈ খানোলকার রাখেন ও ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেন।
ইউরোপীয় পটভূমি থেকে আগত (বা সম্ভবত আসার কারণে) হওয়া সত্ত্বেও, সাবিত্রী বাঈ হিন্দু ঐতিহ্য এবং আদর্শের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন । তিনি খুব সহজেই ভারতীয় সমাজের সাথে মিশে যান। তিনি শাড়ি পরা শুরু ক্রেন।তিনি আমিষ ছেড়ে নিরামিষী হন।তিনি সাবলীল ভাবে মারাঠি, সংস্কৃত এবং হিন্দি বলতে শেখেন ।ক্যাপ্টন বিক্রম যখন মেজর হন তখন পাটনায় তার বদলি হয়।এতে সাবিত্রীর জীবন এক নতুন দিশা পায়। তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নাটক, বেদান্ত, উপনিষদ এবং হিন্দু ধর্ম নিয়ে প্রচুর অধ্যয়ন করেন। এই বিষয়গুলিতে তিনি এত পারদর্শী হন যে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে এই বিষয়গুলির উপর বক্তৃতা দেন । তিনি চিত্রাঙ্কন এবং পেনসিল চিত্রাঙ্কনে পটু হয়ে ওঠেন। পৌরানিক বিষয়ের উপর চিত্র তৈরি করা তাঁর প্রিয় শখ ছিল।সেখানে তিনি উদয় শঙ্কর এর (পণ্ডিত রবিশঙ্করের বড় ভাই) কাছ থেকে নৃত্য শেখেন।এভাবে তিনি এক সাধারণ ভারতীয়র থেকে বেশি ভারতীয় হয়ে ওঠেন। তিনি ইংরেজিতে সেন্টস অফ মহারাস্ট্র এবং সংস্কৃত ডিকশনারি অফ নেমস নাম দু'টি বই লেখেন।সেন্টস অফ মহারাষ্ট্র বইটি আজও জনপ্রিয়। তিনি সর্বদা বলতেন যে তিনি আসলে ভারতীয় আত্মা ভুল করে ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । কেউ তাকে "বিদেশী" বললে তিনি রেগে যেতেন । তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিতে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি প্রচুর হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পড়তেন । ভারতের প্রাচীন ইতিহাস এবং কিংবদন্তি সম্পর্কে ও তিনি গভীর জ্ঞান রাখতেন। এজন্যই পরম বীর চক্রের স্রষ্টা মেজর জেনারেল হিরা লাল অটল পদক ডিজাইনের জন্য সাবিত্রী বাঈয়ের সহায়তা চেয়েছিলেন। যাতে এমন এক পদকের ডিজাইন করা যায় যাতে সত্যই সর্বোচ্চ সাহসী হওয়ার প্রতীক ফুটে ওঠে।
ইউরোপীয় পটভূমি থেকে আগত (বা সম্ভবত আসার কারণে) হওয়া সত্ত্বেও, সাবিত্রী বাঈ হিন্দু ঐতিহ্য এবং আদর্শের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন । তিনি খুব সহজেই ভারতীয় সমাজের সাথে মিশে যান। তিনি শাড়ি পরা শুরু ক্রেন।তিনি আমিষ ছেড়ে নিরামিষী হন।তিনি সাবলীল ভাবে মারাঠি, সংস্কৃত এবং হিন্দি বলতে শেখেন ।ক্যাপ্টন বিক্রম যখন মেজর হন তখন পাটনায় তার বদলি হয়।এতে সাবিত্রীর জীবন এক নতুন দিশা পায়। তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নাটক, বেদান্ত, উপনিষদ এবং হিন্দু ধর্ম নিয়ে প্রচুর অধ্যয়ন করেন। এই বিষয়গুলিতে তিনি এত পারদর্শী হন যে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনে এই বিষয়গুলির উপর বক্তৃতা দেন । তিনি চিত্রাঙ্কন এবং পেনসিল চিত্রাঙ্কনে পটু হয়ে ওঠেন। পৌরানিক বিষয়ের উপর চিত্র তৈরি করা তাঁর প্রিয় শখ ছিল।সেখানে তিনি উদয় শঙ্কর এর (পণ্ডিত রবিশঙ্করের বড় ভাই) কাছ থেকে নৃত্য শেখেন।এভাবে তিনি এক সাধারণ ভারতীয়র থেকে বেশি ভারতীয় হয়ে ওঠেন। তিনি ইংরেজিতে সেন্টস অফ মহারাস্ট্র এবং সংস্কৃত ডিকশনারি অফ নেমস নাম দু'টি বই লেখেন।সেন্টস অফ মহারাষ্ট্র বইটি আজও জনপ্রিয়। তিনি সর্বদা বলতেন যে তিনি আসলে ভারতীয় আত্মা ভুল করে ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । কেউ তাকে "বিদেশী" বললে তিনি রেগে যেতেন । তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিতে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি প্রচুর হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পড়তেন । ভারতের প্রাচীন ইতিহাস এবং কিংবদন্তি সম্পর্কে ও তিনি গভীর জ্ঞান রাখতেন। এজন্যই পরম বীর চক্রের স্রষ্টা মেজর জেনারেল হিরা লাল অটল পদক ডিজাইনের জন্য সাবিত্রী বাঈয়ের সহায়তা চেয়েছিলেন। যাতে এমন এক পদকের ডিজাইন করা যায় যাতে সত্যই সর্বোচ্চ সাহসী হওয়ার প্রতীক ফুটে ওঠে।
সাবিত্রী বাঈ বৈদিক ঋষি দধীচি সম্পর্কে ভাবলেন ।যিনি দেবতাদের জন্য চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। তিনি তাঁর দেহ করেছিলেন যাতে দেবতারা তাঁর হার দিয়ে একটি মারাত্মক অস্ত্র বজ্র তৈরি করা যায়।সাবিত্রী বাঈ মেজর জেনারেল হীরা লাল অটলকে দিলেন ডাবল বজ্রের ডিজাইন। যা তিব্বতে প্রচলিত। কথিত আছে যে, সাবিত্রী বাঈ ভারতের ইতিহাস অধ্যয়নের পর শিবাজীর একটি চিহ্ন তৈরী করে তাকে সম্মান দিতে চেয়েছিলেন।যিনি তার মতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ হিন্দু যোদ্ধা। তিনি নিশ্চিত করেন শিবাজীর তলোয়ার যেন ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক পদকে জায়গা পায়। তিনি এমন একটি নকশা তৈরি করেছিলেন যাতে শিবাজীর তরোয়াল ভবানী দ্বারা ইন্দ্রের বজ্র দুটি দিক দিয়ে ঘেরা ছিল। [৪]
পদকটি ছোট আকারের। এটি ১৩/৮ইঞ্চি(৪১.২৭৫ মিমি) ব্যাসার্ধের ব্রোঞ্জ এর উপর তৈরী করা হয় । এর কেন্দ্রে একটি উত্থিত বৃত্তের উপর রাষ্ট্রীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ, যা ইন্দ্রের বজ্রের চারটি প্রতিরূপ দ্বারা বেষ্টিত ।এই পদকটি একটি অনুভূমিক দন্ড থেকে ঝোলানো থাকে। পদকের পেছনের দিকে পদ্মফুল এবং হিন্দী ও ইংরেজি ভাষায় পরমবীর চক্রে লেখাটি খোদিত। ৩২ মিলিমিটার (১.৩ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যের একটি গোলাপী রঙের ফিতে দিয়ে এই পদকটি আটকানো থাকে।
সাবিত্রী বাঈ অনেক সামাজিক কাজ করেছিলেন যা তিনি তাঁর পরবর্তী বছরগুলিতেও অব্যাহত রেখেছিলেন । দেশভাগের সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া সৈন্য এবং তাদের পরিবার এবং শরণার্থীদের জন্য কাজ করেছিলেন। ১৯৫২ সালে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন ।তিনি দার্জিলিং এর রামকৃষ্ণ মঠে যান। সেখানে তিনি তার মেয়ে মৃণালিনীর সাথে শেষ জীবন অতিবাহিত করেন।
১৯৯০ সালের ২৬শে নভেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। [২][৫]