সাশা ব্যারন কোহেন | |
---|---|
ডাকনাম | সাশা নোম ব্যারন কোহেন |
জন্ম | হ্যামারস্মিথ, লন্ডন, ইংল্যান্ড | ১৩ অক্টোবর ১৯৭১
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | দ্য হাবারডাশের্স আস্কিস্ বয়জ স্কুল ক্রাইস্টস্ কলেজ, ক্যামব্রিজ |
ধরন | চারিত্রিক প্রহসন, ব্ল্যাক প্রহসন, ক্রিঞ্জ প্রহসন, শারীরিক প্রহসন, বিদ্রুপ |
দম্পতি | ইসলা ফিশার (২০১৫)[১] |
সন্তান | ৩ |
পিতা-মাতা | ড্যানিয়েলা ব্যারন কোহেন জেরাল্ড ব্যারন কোহেন |
আত্মীয় | এরান ব্যারন কোহেন (ভাই) অ্যাম্নোন ব্যারন কোহেন (ভাই) অ্যাশ ব্যারন-কোহেন (তুতো ভাই) সাইমন ব্যারন-কোহেন (তুতো ভাই) |
উল্লেখযোগ্য কাজ | আলি জি বোরাত সাগ্ডিয়েভ ব্রুনো গেহার্ড কিং জুলিয়ান অ্যাডমিরাল জেনারেল আলাদীন |
সাশা নোম ব্যারন কোহেন[২] (জন্ম: ১৩ অক্টোবর ১৯৭১) একজন ব্রিটিশ অভিনেতা, কৌতুকাভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় অধীন ক্রাইস্টস কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রীধারী ব্যারন কোহেন ব্যাপকভাবে সু-পরিচিত তার সৃষ্ট চারটি কাল্পনিক চরিত্র: আলি জি, বোরাত সাগদিয়েভ, ব্রুনো গেহার্ড এবং অ্যাডমিরাল জেনারেল আলাদীনের জন্য।
ব্যারন তার অভিনয় কর্মসূচিতে সেইসব সরল-বিশ্বাসী মানুষদের চরিত্রই ফুটিয়ে তোলেন যারা তাদের প্রাহসনিক অবস্থা এবং ব্যাঙ্গাত্মক আত্ম-প্রকাশমূলক পরিস্থিতি নিয়ে বুঝতে অপারগ। তার অন্যান্য কাজগুলো হলো মাদাগাস্কার (২০০৫-২০১২) নামক একটি ধারাবাহিক ছবিতে ত্রয়োদশ কিং জুলিয়ান এর চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়া। পাশাপাশি তিনি সুইনি টডঃ দ্য ডিমন বারবার অব ফ্লিট স্ট্রীট (২০০৭), হুগো (২০১১) এবং লেস মিজারেবলস (২০১২) ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি এমআই৬ এর এক গুপ্তচরের ভাই হিসেবে গ্রিমসবি (২০১৬) নামের একটি কৌতুকপ্রদ চলচ্চিত্র এবং এবং অ্যালিস থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস (২০১৬) নামের আরো একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার কথা রয়েছে।
ব্যারন কোহেন ১৯৯৯ সালে দ্য ইলেভ্যান ও'ক্লক শো নামক একটি কমেডি ধারাবাহিকের জন্য ব্রিটিশ কমেডি অ্যাওয়ার্ডস কর্তৃক সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ডা আলি জি শো এর জন্য দুইটি বাফটা অ্যাওয়ার্ড, এমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য কয়েকবার মনোনয়ন, সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার মনোনয়ন এবং তার চলচ্চিত্র বোরাতের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার অর্জন করেন। বোরাত চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর ব্যারন কোহেন বলেন যে, যেহেতু “বোরাত” আর “আলি জি” দর্শকদের মাঝে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, তাই তিনি এই দুই চরিত্রে আর অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নেন। একইভাবে ব্রুনো চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পরও ব্যারন কোহেন, ব্রুনো চরিত্রে আর অভিনয় না করার কথা জানিয়েছিলেন।[৩] ২০১২ সালের ব্রিটিশ কমেডি অ্যাওয়ার্ডসে তার আলি জি চরিত্রের জন্য ব্যারন কোহেন "আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড" অর্জন করেন।[৪] এছাড়াও ২০১৩ সালে কমেডি দক্ষতার জন্য বাফটা চার্লি চ্যাপলিন ব্রিটানিয়া অ্যাওয়ার্ডস পুরস্কার পান।[৫]
তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠতম ব্যারন কোহেন পশ্চিম লন্ডনের হ্যামারস্মিথে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ড্যানিয়েলা নাওমি, যিনি একজন মুভমেন্ট ইন্সট্রাক্টর, ইসরায়েলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৬] তার বাবা জেরাল্ড ব্যারন কোহেন, যিনি একজন কাপড়ের দোকান মালিক, জন্মগ্রহণ করেন লন্ডনে এবং বেড়ে উঠেছেন ওয়েলসে।[৭][৮] ব্যারন কোহেনের পরিবার ইহুদি ধর্মাবলম্বী। তার বাবার পরিবাররা ছিলেন পূর্ব-ইউরোপের ইহুদি বাসিন্দা যারা দেশান্তরিত হয়ে পন্টিপ্রিড, ওয়েল্স্ এবং লন্ডনে এসেছিলেন এবং তার মায়ের পরিবাররা ছিলেন জার্মান ইহুদি। তার "ব্যারন" নামটি রেখেছিলেন তার দাদা মরিস কোহেন। তার দাদি ছিলেন একজন ব্যালে নৃত্যশিল্পী যিনি ইসরায়েলের হাইফাতে বসবাস করতেন।[৭][৯][১০][১১] ব্যারন কোহেনের দুই সহোদর হলেন এরান এবং অ্যাম্নোন।[১২] তার ভাই এরান একজন সুরকার এবং ব্যারন কোহেনের অনেক চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছিলেন। এছাড়া তার চাচাতো ভাই সাইমন ব্যারন কোহেন আন্তর্জাতিকভাবে একজন প্রখ্যাত অটিজম গবেষক।[১৩]
ব্যারন কোহেন উত্তর-লন্ডনের হ্যার্টফোর্ডশায়ারের এলসট্রিতে "দ্য হ্যাবারডাশের্স আস্কিস্ বয়জ স্কুলে" পড়াশোনা করেন।[১৪] তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় অধীন ক্রাইস্টস কলেজ থেকে ইতিহাসের উপর ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উচ্চতর স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন।[১৫] ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি অ্যামেচার ড্রামাটিক ক্লাবে সদস্য থাকাকালীন ব্যারন কোহেন ফিডলার অন দ্য রুফ এবং সাইরানো ডি বার্জেরাক নাটকে অভিনয় করেন এবং হাবোনিম ড্রোর ইহুদি মঞ্চনাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন।[১৬]
ব্যারন কোহেনের বোরাত চরিত্রটি বোরাত: কালচারাল লার্নিংস অব আমেরিকা ফর মেক বেনেফিট গ্লোরিয়াস নেশন কাজাখস্তান (বা বোরাত) চলচ্চিত্রের মুখ্য চরিত্র। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালে টরোন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ২ নভেম্বর ২০০৬ সালে ছবিটি যুক্তরাজ্যে, ৩ নভেম্বর ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এবং ২৩ নভেম্বর ২০০৬ সালে ছবিটি অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির মূল কাহিনী হলো আইস-ক্রিমের ট্রাকে করে দু'জন মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিয়ে, যেখানে চলচ্চিত্রটির মুখ্য চরিত্র “বোরাত” পামেলা অ্যান্ডারসনকে বিয়ে করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। এটি একটি মক্যুম্যান্টারিধর্মী (বা ডক্যুকমেডি) চলচ্চিত্র যেখানে আমেরিকান সংস্কৃতি, বর্ণ-বিদ্বেষ, লিঙ্গ বৈষম্য, হোমোফোবিয়া (সমকামী মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ-পূর্ণ মানসিকতা), ইহুদি-বিদ্বেষ এবং জিংগোইজম্ (অন্ধদেশপ্রেম) নিয়ে কৌতুকপ্রদ ঘটনার অবতারণা করা হয়েছিল। ব্যবসায় সফল এই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের ৮৩৭টি থিয়েটারে প্রদর্শন করে আনুমানিক ২৬.৪ মিলিয়ন ডলার আয় করে।[১৭]
ব্যারন কোহেন “বোরাত” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৭ সালে “শ্রেষ্ঠ অভিনেতা - মিউজিক্যাল অথবা কমেডি” বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পান। যদিও “বোরাত” চলচ্চিত্রটি “বেস্ট মোশন পিকচার- মিউজিক্যাল অর কমেডি” বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল, কিন্ত শেষে ড্রিমগার্লস্ চলচ্চিত্রের কাছে ছবিটি হেরে যায়। ২৩ জানুয়ারি ২০০৭ সালে, ব্যারন কোহেন ছবিটির জন্য সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্যের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ব্যারন কোহেন তার মনোনয়ন “বোরাত” চলচ্চিত্রের কাহিনীর সহ-লেখক অ্যান্ট হাইন্স, পিটার বেইনহ্যাম, সাই মোরডেকাই ফিনেস্টো, ড্যান ম্যাজার এবং টড ফিলিপসের সাথে ভাগ করে নেন।
কৌতুক উপাদান ছাড়াও ব্যারন কোহেন তার দর্শকদের জন্য বোরাত চরিত্রে কিছু অস্বস্তিকর সত্যেরও সংযোজন করেছিলেন। ইহুদি সম্প্রদায়ভুক্ত হয়েও তিনি তার বোরাত চরিত্রটিকে ইহুদি-বিদ্বেষী হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।[১৮] ২১ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে ব্যারন কোহেন বোরাত চরিত্রটি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন।[১৯]
ব্রুনো হলো ব্যারন কোহেনের আরেকটি চরিত্র যে একজন সমকামী এবং অস্ট্রিয়ান ফ্যাশান শো উপস্থাপক এবং সে প্রায়ই তার অনিচ্ছাকৃত বিষয়গুলোকে বিতর্কিত বক্তব্য এবং হতবুদ্ধিকর আচরণের মাধ্যমে হাস্যকর করে তোলে। ব্রুনো সবাইকে “হ্যাঁ অথবা না” দিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে বলে এবং তার প্রত্যেক প্রশ্নই হয় “Vassup” (যার মানে কি খবর) অথবা “Ich don't think so” (যার মানে আমি তা মনে করি না) দিয়ে। মাঝে মাঝে তাকে “Ach, ja!” (যার মানে আহ ইয়াহ!) অথবা “Nicht, nicht” (জার্মান শব্দ “Nicht” এর অর্থ হলো “না”) বলতেও শোনা যায়।
ব্রুনোর কমেডিক স্যাটায়ার মূলত ফ্যাশান এবং ক্লাবিং জগতের অর্থহীন বিষয়গুলো নিয়ে। ২০০৯ সালের মে মাসে ব্যারন কোহেন একটি সাদা রঙের এঞ্জেল পোশাক, একটি সাদা জকস্ট্রেপ, সাদা গো-গো বুটস্ এবং একজোড়া সাদা পাখনা পড়ে ব্রুনো চরিত্রের বেশে এমটিভি মুভি অ্যাওয়ার্ডস্ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে এমিনেমও তার সাথে একই স্টেজে পারফর্ম করেছিল।[২০]
ব্যারন কোহেনের এই চরিত্রটি হলো ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া তার ছবি দ্য ডিক্টেটর ছবির মূল চরিত্র।[২১] আলাদীন চরিত্রে ব্যারন কোহেন একটি কাল্পনিক দেশ রিপাবলিক অব ওয়াদিয়ার স্বৈরাচারের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[২২][২৩] বোরাত এবং ব্রুনো চলচ্চিত্রের পরিচালক ল্যারি চার্লস ছবিটি পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রটির স্যাটায়ার মূলত লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে কেন্দ্র করেই বানানো হয়েছিল।[২৪] ছবিটির চিত্রনাট্য যখন লেখা হচ্ছিল সেই সময় গাদ্দাফি জীবিত ছিলেন। এই বিদ্রুপাত্মক (স্যাটায়ার) ধর্মী ছবি গাদ্দাফিকে রাগান্বিত করতে পারে ভেবে এবং সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা এড়ানোর জন্য চলচ্চিত্রটির প্রযোজকরা ইচ্ছাকৃতভাবে চলচ্চিত্রটিকে ইরাকের একনায়ক সাদ্দাম হোসেনের রম্য উপন্যাসের আংশিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে ছবিটি বানানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছিল।[২৪]
ব্যারন কোহেনের সাথে অভিনেত্রী ইসলা ফিশারের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি পার্টিতে।[২৫] ২০০৪ সালে তাদের দু'জনের বাগদান সম্পন্ন হয় এবং ২০১০ সালের ১৫ মার্চ ফ্রান্সের প্যারিসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।[২৬][২৭] ব্যারন কোহেন এবং ইস্লা ফিশারের দুই কন্যা- অলিভ (জন্ম: ১৯ অক্টোবর, ২০০৭ সাল)[২৮] এবং এলুলা লটি মিরিয়াম (জন্ম: অক্টোবর, ২০১০ সাল)[২৯] এবং একটি পুত্র সন্তান মন্টগোমেরি মোজেস ব্রায়ান (জন্ম: ১৭ মার্চ, ২০১৫ সাল) রয়েছে।[৩০]
ব্যারন কোহেন সমাজতান্ত্রিক-জায়নবাদ যুবা সংগঠন হাবোনিম ড্রোরের নাট্যশালায় কিছুকাল অভিনয় করেছিলেন।[৩১][৩২]
ব্যারন কোহেন ইসরায়েলী কৃষি সম্প্রদায় রশ হানিক্রা ও বেইত হা-এমেকের হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য প্রায় এক বছর ইসরায়েলে অবস্থান করেছিলেন।
ব্যারন কোহেন বলেন, “আমি কখনও বলি না যে আমি একজন ধার্মিক ইহুদি। কিন্তু আমি আমার ইহুদি পরিচয় নিয়ে গর্বিত এবং ইহুদি ধর্মের কিছু জিনিস এবং রীতিনীতি আমি পালন করার চেষ্টা করি”। ব্যারন কোহেন বছরে দুইবার সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) যান এবং কোশের (হালাল) খাবার খাওয়ার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন।[৩৩]
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে ব্যারন কোহেন এবং তার স্ত্রী ইসলা ফিশার উত্তর সিরিয়ার শিশুদের হাম রোগের টিকা দানের জন্য সেভ দ্য চিলড্রেন সংগঠনকে ৩,৩৫,০০০ পাউন্ড (৫,০০,০০ মার্কিন ডলার) অনুদান হিসেবে দান করেন এবং সম-পরিমাণ অর্থ যুদ্ধ বিদ্ধস্থ সিরিয়ার শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটিকে অনুদান হিসেবে প্রদান করেন।[৩৪]
First acted with the Habonim Dror Jewish youth group and at Cambridge in plays such as Cyrano de Bergerac and Fiddler on the Roof.