সি.এন. আন্নাদুরাই | |
---|---|
তামিলনাড়ু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১৪ জানুয়ারী ১৯৬৯ – ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ | |
রাষ্ট্রপতি | জাকির হুসেইন |
প্রধানমন্ত্রী | ইন্দিরা গান্ধী |
গভর্নর | সর্দার উজ্জল সিং |
স্পিকার | পুলাভার কে গোবিন্দ |
বিরোধীদলীয় নেতা | পিজি কারুতিরুমান |
পূর্বসূরী | মাদ্রাজ স্টেটের ৫ম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেই |
উত্তরসূরী | ভিআর নেদুনচেড়িয়ান (ভারপ্রাপ্ত) |
সংসদীয় এলাকা | তামিলনাড়ু প্রদেশের আইনসভার সভাপতি |
মাদ্রাজ প্রদেশের ৫ম এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৬ মার্চ ১৯৬৭ – ১৩ জানুয়ারী ১৯৬৯ | |
রাষ্ট্রপতি | সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন, জাকির হুসেইন |
প্রধানমন্ত্রী | ইন্দিরা গান্ধী |
গভর্নর | সর্দার উজ্জল সিং |
স্পিকার | এসপি আড়িতানার পুলাভার কে গোবিন্দ |
বিরোধীদলীয় নেতা | পিজি কারুতিরুমান |
পূর্বসূরী | এম ভক্তবাটশাল |
উত্তরসূরী | তামিলনাড়ু প্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেই |
সংসদীয় এলাকা | মাদ্রাজ আইনসভার সভাপতি |
সংসদ সদস্য, রাজ্যসভা | |
কাজের মেয়াদ ৩ এপ্রিল ১৯৬২ – ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ | |
রাষ্ট্রপতি | রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন |
প্রধানমন্ত্রী | জওহরলাল নেহরু, গুলজারিলাল নন্দ (ভারপ্রাপ্ত), লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, গুলজারিলাল নন্দ (ভারপ্রাপ্ত), ইন্দিরা গান্ধী |
লিডার অব দ্যা হাউজ | হাফিজ মোহাম্মাদ ইব্রাহীম যশবন্তরাও চবন জয়সুখলাল হাতী এম সি চগলা |
তামিলনাড়ু প্রদেশের গভর্নর | বিষ্ণুরাম মেদী, জয়চমচন্দ্র ওয়াড়িয়ার, পি চন্দ্র রেডি (ভারপ্রাপ্ত), জয়চমরাজেন্দ্র ওয়াড়িয়ার, সর্দার উজ্জল সিং |
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী | কে কামারাজ, এম ভক্তবাটশাল |
চেয়ারম্যান অব দ্যা জাউজ | সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন, জাকির হুসেইন |
ডেপুটি চেয়াম্যান অব দ্যা হাউজ | ভায়োলেট আলভা |
সংসদীয় এলাকা | মাদ্রাজ স্টেট |
মাদ্রাজ প্রদেশের আইনসভার সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১ এপ্রিল ১৯৫৭ – ১৮ মার্চ ১৯৬২ | |
রাষ্ট্রপতি | রাজেন্দ্র প্রসাদ |
প্রধানমন্ত্রী | জওহরলাল নেহরু |
গভর্নর | এজে জন, পিভি রজমানার (ভারপ্রাপ্ত), বিষ্ণুরাম মেদী |
মুখ্যমন্ত্রী | কে কামারাজ |
স্পিকার | এন গোপাল মেনন, ইউ কৃষ্ণ রাও |
বিরোধীদলীয় নেতা | ভিকে রামস্বামী মুদালিয়ার |
রাজনৈতিক দল | দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম |
সংসদীয় এলাকা | কাঞ্চিপুর |
দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম এর সাধারণ সম্পাদক | |
কাজের মেয়াদ 1962 – 3 ফেব্রুয়ারি 1969 | |
পূর্বসূরী | V. আর. নেদুনচেঝিয়ান |
কাজের মেয়াদ 17 সেপ্টেম্বর 1949 – 1956 | |
পূর্বসূরী | অবস্থান প্রতিষ্ঠিত |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আন্নাদুরাই ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৯ কাঞ্চিপুরাম, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ মাদ্রাজ (এখন চেন্নাই), তামিলনাড়ু, ভারত | (বয়স ৫৯)
মৃত্যুর কারণ | ক্যান্সার |
সমাধিস্থল | আন্না মেমোরিয়াল |
রাজনৈতিক দল | দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | দ্রাবিড় কড়গম (১৯৪৯ সালের আগ পর্যন্ত) |
দাম্পত্য সঙ্গী | রাণী (বি. ১৯৩০) (১৯৯৬ সালে মৃত্যু) |
পিতামাতা | বাবা : নেতারাজ মুদালিয়ার মা: বাঙ্গারু আম্মাল |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
কোঞ্জিভারাম নেতারাজ আন্নাদুরাই (১৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৯ - ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯), জনপ্রিয়ভাবে সি.এন. আন্নাদুরাই নামে পরিচিত, ভারতের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি তামিলনাড়ু প্রদশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ১৯৬৯ সালে বিশ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন, এর আগে তিনি ৫ম এবং মাদ্রাজ প্রদশের সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত, ১৯৬৯ সালে মাদ্রাজ প্রদেশের নাম তামিলনাড়ু হয়ে যায়। দ্রাবিড় রাজনৈতিক দলের প্রথম সদস্য ছিলেন তিনি।
তিনি একজন ভালো বাগ্মী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন, এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন ভালো লেখক। তিনি অনেক মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন এবং ওগুলোর কাহিনীও তিনি নিজে লিখতেন। তার অভিনয় করা কিছু মঞ্চনাটক পরে চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছিলো। তিনি ছিলেন প্রথম দ্রাবিড় রাজনীতিবিদ যিনি তামিল চলচ্চিত্রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া আন্নাদুরাই প্রথমে বিদ্যালয় শিক্ষক ছিলেন, এরপর তিনি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীতে একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। অনেক রাজনৈতিক ক্রোড়পত্র তিনি সম্পাদনা করতেন এবং দ্রাবিড় কড়গমের একজন সদস্য তিনি এর মধ্যেই হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ইভি রামস্বামীর অনুসারী ছিলেন এবং খুব দ্রুত রাজনৈতিক দলটির খ্যাতিমান সদস্য হতে পেরেছিলেন।
প্রাথমিকভাবে ইভি রামস্বামীর অনুসারী হলেও পরে তার সঙ্গে মতাদার্শিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন আন্নাদুরাই, আন্নাদুরাই দ্রাবিড় নাড়ু নামের একটি আলাদা একটি দেশ বানাতে চাইতেন, দেশটির রূপরেখা ছিলো তামিল সহ সকল দ্রাবিড় জনগণ আলাদা একটি ভূখণ্ডে থাকবে, এটা নিয়ে তার ইভি রামস্বামীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হতো। ইভি রামস্বামীএ তার চেয়ে অনেক ছোটো মেয়ে মণিআম্মাইকে বিয়ে করলে এই দ্বন্দ্বের অবসান হয়, আন্নাদুরাই ইভি রামস্বামীর এই কর্মকাণ্ডে রাগান্বিত হয়ে তার দল ত্যাগ করে নিজে নতুন একটি দল (দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম) তৈরি করেন তার নিজের অনুসারীদেরকে নিয়ে। আন্নাদুরাইয়ের নতুন বানানো দলটি তার আগের দলের মতোই মতাদর্শ অনুসরণ করতো কিন্তু ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হলে আন্নাদুরাই তার মতাদর্শ পরিবর্তন করেন, তিনি স্বাধীন দ্রাবিড় ভূখণ্ড বানানোর চিন্তা থেকে দূরে সরে আসেন। ষাটের দশকে কংগ্রেস সরকারের আমলে আন্নাদুরাই বারবার জেলে যেতে থাকেন, সর্বশেষ ১৯৬৫ সালে হিন্দি-বিরোধী আন্দোলনের জন্য। আন্নাদুরাইয়ের হিন্দি-বিরোধী আন্দোলন তাকে মাদ্রাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলো। ১৯৬৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে আন্নাদুরাই অনেক জনপ্রিয়তা পান এবং তার দল জিতে যায়। তিনি যে মন্ত্রিসভা বানিয়েছিলেন সেটা ছিলো তখনকার সময়ে সবচেয়ে ছোটো মন্ত্রিসভা, তিনি স্বাধিকার আন্দোলনকে সরকারীভাবে বৈধ করেছিলেন। তিনি তার প্রদেশে দুটি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে চালু করেছিলেন, মাতৃভাষা তামিল এবং রাষ্ট্রভাষা হিন্দি। মাদ্রাজ প্রদেশের নাম তামিলনাড়ু তার সরকারের আমলেই হয়েছিলো।
১৯৬৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আন্নাদুরাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার অন্তোষ্টিক্রিয়ায় লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটেছিলো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা তার নামে রয়েছে। চলচ্চিত্র অভিনেতা এমজিআর ১৯৭২ সালে সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম নামে একটি দল তৈরি করেছিলেন যেটি ছিলো আন্নাদুরাইয়ের দলেরই একটি নতুন রূপ।
১৯০৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর আন্নাদুরাই জন্মগ্রহণ করেন কাঞ্চিপুর (তখন কঞ্জিপুর) এর সেনগুনদার মুদালিয়ার সম্প্রদায়ে।[১] যে পরিবারে আন্নাদুরাই জন্মেছিলেন সেটি ছিলো একেবারেই গরীব পরিবার - নিম্ন মধ্যবিত্ত, আন্নদুরাইয়ের পিতা নেতারাজ মুচি ছিলেন আর তার মা দেবদাসী ছিলেন মন্দিরের চাকরাণী, তারা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন।[২] আন্নাদুরাইয়ের বোন রাজমণি আম্মাল তাকে অনেক পছন্দ করতেন এবং আন্নাদুরাই রাজমণির আদর পেয়ে বড় হয়েছিলেন। আন্নাদুরাই মাত্র একুশ বছর বয়সে রাণী নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। আন্নাদুরাই এবং রাণী কোনো বাচ্চা নেননি, তারা রাজমণির বাচ্চা এবং পরে তার নাতি-নাতনীদেরকে আদর করতেন। আন্নাদুইরাই পাচাইয়াপ্পা উচ্চ বিদ্যালয়য়ে পড়লেও পড়ালেখা বেশি দূর এগিয়ে নেননি।[৩] আন্নাদুরাই স্থানীয় মিউনিসিপাল অফিসে পিয়ন হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পরে আন্নাদুরাই আবার পড়া শুরু করেন একই স্কুলে এবং পাচাইয়াপ্পা ডিগ্রী কলেজে বিএ অধ্যায়ন করেন।[৩] পাচাইয়াপ্পা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।[৪] শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে পরে সাংবাদিকতার পেশা বেছে নিয়েছিলেন।
আন্নাদুরাই প্রথমে দ্রাবিড় কড়গমের নাস্তিক্যবাদী আদর্শের সমর্থক ছিলেন যদিও তিনি নিজে নাস্তিক ছিলেননা এবং একেশ্বরবাদী ছিলেন।[৫][৬] একজন ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ ছিলেন আন্নাদুরাই, তিনি নিজেকে হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিষ্টান - সব ধর্মের মানুষই বলতেন।[৭] আন্নাদুরাই ধর্মীয় কুসংস্কার, উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘোর বিরোধী হলেও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের ওরকম বিরোধী ছিলেননা। তিনি একবার বলেছিলেন, "আমি নারকেল ভাঙ্গিনা, আবার মূর্তিও ভাঙ্গিনা।"[৮]