উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য সিকিম। সিকিমের রন্ধনপ্রণালীতে ভাত একটি প্রধান খাদ্য। এখানে ঐতিহ্যগতভাবে গাঁজন করা খাবারের প্রচলন আছে।[১] সিকিম হল ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে ভারতীয় গোর্খারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিকিমের অনেক রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ধরনের নেপালি খাবার পরিবেশন করা হয়, যেমন লিম্বু, নেওয়া এবং থাকালি। তিব্বতি রন্ধনপ্রণালী সিকিমের রন্ধনপ্রণালীকে অত্যন্ত প্রভাবিত করেছে। বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালীর সংমিশ্রণে সিকিমের নিজস্ব রন্ধনশৈলী তৈরি হয়েছে।
সিকিমের ভূগোল এবং খাদ্য উৎপাদনের পদ্ধতি রাজ্যের খাদ্য সংস্কৃতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।[২] সিকিমের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর।[৩] রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলের কারণে, বেশিরভাগ জমি চাষের জন্য অনুপযুক্ত, তাই সোপান চাষ বা ঝুম চাষের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ধানের চাষই বেশি হয়। ধান[৪] ছাড়াও, সিকিমে চাষ করা অন্যান্য খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা, বার্লি এবং বাজরা। আলু, আদা, কমলালেবু, চা এবং এলাচ।[৫][৬] ভারতের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে সিকিম সবচেয়ে বেশি এলাচ[৭] উৎপাদন করে, যার পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৪২০০ টন।[৮] সিকিমে প্রধান উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, ব্রকলি এবং স্কোয়াশ।
যদিও দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ সিকিমে কম কিন্তু অল্প পরিমাণে, মাংস এবং ডিমের খাদ্যবস্তু সিকিমের খাদ্যেশৈলীর অন্তর্গত। সিকিমের গ্রামীণ এলাকার ১১.৭% মানুষই নিরামিষভোজী।[৯]
গাঁজানো খাবার সিকিমের খাদ্যাভাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা রাজ্যের মোট খাদ্যের ১২.৬%। সমীক্ষায় জানা গেছে যে সিকিমের ৬৭.৭% মানুষ কেনার পরিবর্তে তাদের বাড়িতে গাঁজানো খাবার তৈরি করে। সিকিমের লোকেরা গাঁজান পদ্ধতিতে বায়ুরোধী পাত্রে বিভিন্ন অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় প্রস্তুত করে যাতে সাধারণত বাজরা, চাল এবং ভুট্টা ব্যবহৃত হয়।[৯] সিকিমের ঐতিহ্যবাহী গাঁজনযুক্ত খাবারের উদাহরণ হল কিনেমা, গুন্ড্রুক, সিঙ্কি, মাসিউরা এবং খালপি। ঐতিহ্যবাহী পানীয়ের মধ্যে রয়েছে চ্যাং, টংবা, রাকসি এবং কোডো কো জানর।
ভাত, ডাল, তরকারি ও আচার হল সিকিমের সাধারণ রোজকার খাবার।[৯] এছাড়াও সিকিমের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খাদ্য হল ছুরপি, গুন্ড্রুক, ধিন্ডো, কিনেমা, মোমো, সেল রোটি, থুকপা ইত্যাদি।
চুরপি বা ছুরপি হল প্রথাগত নেপালি পনির যা বাটার মিল্ক বা মাখন-তোলা দুধ থেকে তৈরি। ছুরপির সাধারনত দুই প্রকার যার মধ্যে একটি হল নরম যা সহযোগী - পরিবেশন পদ হিসাবে খাওয়া হয় এবং আর একটি শক্ত হয় যা চিবিয়ে খাওয়া হয়।[১০]
গুন্ড্রুক হল নেপালের গেঁজিয়ে প্রস্তুত করা সবুজ শাকের তরকারি। উদ্বৃত্ত সরিষা, মুলা এবং ফুলকপির পাতা সংগ্রহ করে টুকরো টুকরো করা হয় ও তারপর একটি মাটির পাত্রে বায়ুরুদ্ধ করে রাখা হয় এবং একটি উষ্ণ জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়। এইভাবে গুন্ড্রুক প্রস্তুত হয়।
মোমো হিমালয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের জনপ্রিয় খাবার। এই খাবারটি সাধারণত তিব্বতি এবং নেপালিদের সাথে যুক্ত। ময়দার লেচি কেটে তার মধ্যে কিমা করা মাংস বা বাঁধাকপি জাতীয় শাকসবজির পুর ভরা হয়। এরপর তা জলে ভাপিয়ে মোমো প্রস্তুত করা হয়।[১১]
ফাগশাপা সিকিমের আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। এটি শুয়োরের মাংসের চর্বিযুক্ত একটি নেপালি খাবার যা মূলা এবং শুকনো লঙ্কা দিয়ে রান্না করা হয়।[১২]
সিকিমের আরেক জনপ্রিয় খাবার হল থুকপা যা আসলে সবজি বা মাংস সহযোগে প্রস্তুত তিব্বতি নুডল স্যুপ।[১৩]
|s2cid=
value (সাহায্য), ডিওআই:10.1039/9781839164446-00099, সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২৬