সিদ্ধিদাস মহাজু (নেপাল ভাষা: सिद्धिदास महाजु) (বিকল্প নাম: সিদ্ধিদাস অমাত্য) (১৫ অক্টোবর ১৮৬৭ – ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৯) হলেন একজন নেপালি কবি এবং নেপাল ভাষার চার স্তম্ভের অন্যতম। তৎকালীন সরকারের দাপ্তরিক অবদমনের ফলে স্থবির হয়ে যাওয়া নেপাল ভাষার সাহিত্যের পুনর্জাগরণ আন্দোলনে তিনি অগ্রপথিক ছিলেন।[১] এ কারণে তাকে "মহাকবি" উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।[২][৩]
সিদ্ধিদাস কাঠমান্ডুর কেল টোল শহরতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম লক্ষ্মী নারায়ণ এবং মায়ের নাম হর্ষ লক্ষ্মী। তিনি বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নিকট গৃহেই শিক্ষা লাভ করেন। অতি অল্প বয়সেই গঙ্গা দেবী নামে একজনের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি চাকরি করতে বাধা পেয়ে সিদ্ধিদাস পারিবারিক বস্ত্র ব্যবসার হাল ধরেন। ব্যবসার কাজে বস্ত্র কিনতে তাকে প্রায়শই ভারতের কলকাতায় যেতে হতো। এই সময়ে তিনি বিভিন্ন লাইব্রেরি ও বইয়ের দোকানে যাওয়ার সুযোগ পেতেন।
কাঠমান্ডুতে তিনি কাপড়ের দোকানের চেয়ে কবিতা লিখতেই বেশি সময় ব্যয় করতেন। ফলে কাপড়ের দোকানের ক্ষতি হচ্ছিল। প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে ব্যর্থ হলে তিনি বীরগঞ্জে একজন ব্যবসায়ীর মালামালবাহী হিসেবে নিযুক্ত হন। কয়েক বছর পর তিনি কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন, যখন ব্যবসা প্রায় ধ্বংসের মুখে। তার অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একটি ওষুধের দোকানের সহকারীর চাকরি নেন।
অসুখী পারিবারিক জীবন এবং খারাপ স্বাস্থ্যের জন্য হতাশ হয়ে সিদ্ধিদাস শেষ জীবনে তার বোনের কাছে থেকে যান। তিনি পশুপতিতে মৃত্যুবরণ করেন।[৪]
সিদ্ধিদাস কবিতা, মহাকাব্য, ছোট গল্প এবং প্রবন্ধ মিলিয়ে প্রায় ৪৪টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে উপদেশমূলক কবিতার বই সজ্জন হৃদয়াভরণ হলো তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত একমাত্র গ্রন্থ। এটি ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের বেতিয়া থেকে প্রকাশিত হয়। সিদ্ধিদাস ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নেপাল ভাষায় সিদ্ধি রামায়ণ নামে রামায়ণ মহাকাব্যের অনুবাদ সংকলন করেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে থৌনকানহে প্রকাশন থেকে এটি প্রকাশিত হয়।[৫]
সিদ্ধিদাসের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সত্যসতী (নারী শিক্ষার ওপর লিখিত মহাকাব্য; এটিকে সিদ্ধিদাসের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম বিবেচনা করা হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে লিখিত) এবং সিদ্ধি ব্যাকরণ (১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে লিখিত নেপাল ভাষার ব্যাকরণ) ইত্যাদি।[৬]
১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে নেপাল সরকারের ডাক সেবা বিভাগ সিদ্ধিদাসের প্রতিকৃতি সংবলিত একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।[৭] কাঠমান্ডু মহানগর কর্তৃপক্ষ তার নামে শহরের কেন্দ্রীয় একটি সড়ককে সিদ্ধিদাস মার্গ নামে নামকরণ করেছে।[৮] ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে হেটৌডায় সিদ্ধিদাসের একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।[৯]
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ সেপ্টেম্বর কবি সিদ্ধিদাসের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কাঠমান্ডুর রত্নপার্কে তার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।[১০]