সিন্ধু লিপি | |
---|---|
লিপির ধরন | অর্থোদ্ধার সম্ভব হয়নি
সম্ভবত তাম্রযুগ লিখনি অথবা প্রোটো-লেখা |
সময়কাল | আনু. ৩৫০০–১৯০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ[১][২][ক] |
লেখার দিক | ডান-থেকে-বাম, বুস্ট্রফেডন |
ভাষাসমূহ | অজানা (হরপ্পা ভাষা দেখুন) |
আইএসও ১৫৯২৪ | |
আইএসও ১৫৯২৪ | Inds, 610 , সিন্ধু (হরপ্পা) |
সিন্ধু লিপি (ইংরেজি: Indus Script) বা হরপ্পান লিপি, সিন্ধু সভ্যতা দ্বারা উদ্ভাবিত কিছু চিহ্নের সংকলন। এই চিহ্ন সম্বলিত বেশিরভাগ শিলালিপি আকারে খুব ছোট হওয়ায় এটি সিন্ধু সভ্যতার সময়কার কোন লিখন পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত হয়েছিলো কি না তা বলা খুব কঠিন।[৩] অতীতে অনেক প্রচেষ্টার পরেও[৪] এই চিহ্নগুলোর অর্থোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, এমনকি এখনও চেষ্টা চলছে। জ্ঞাত এমন কোন দ্বিভাষিক শিলালিপি নেই যা এর অর্থোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।[৫] এবং সময়ের সাথে এই লিপির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনও দেখা যায় না। তবে স্থানভেদে কিছু শব্দবিন্যাসের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।[৩]
১৮৭৫ সালে[৬] আলেকজান্ডার কানিংহাম এর আঁকা একটি ছবিতে প্রথম হরপ্পান চিহ্ন সম্বলিত সিলমোহর প্রকাশিত হয়।[৭] ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় চার হাজার খোদাই করা বস্তু খুঁজে পাওয়া যায়,[৮] যার কিছু কিছু মেসোপটেমিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। সিন্ধু-মেসোপটেমিয়া সম্পর্কের কারণে প্রায় ৪০০ স্বতন্ত্র চিহ্ন জ্ঞাত শিলালিপিগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।[৯][৫]
কোন কোন পণ্ডিত, যেমন জি আর হান্টার,[১০] এস আর রাও, জন নিউবেরি,[১১] এবং কৃষ্ণ রাও[১২] এর মতে, সিন্ধু পদ্ধতির সাথে ব্রাহ্ম্যলিপির কিছুটা সম্পর্ক আছে। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্রাঙ্ক রেইমন্ড আলচিনও[১৩] মনে করেন সেই সম্ভাবনা আছে।[১৪][১৫] দক্ষিণ এবং মধ্য ভারত, এবং শ্রীলংকার মেগালিথিক গ্রাফিতি প্রতীক এর মধ্যেও সিন্ধু ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার সম্ভাবনা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে হয়তো কোন ভাষাগত লিপি নেই, তবে সিন্ধুলিপির সংকলনের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য দেখা যায়।[১৬][১৭] ইরাভাতাম মহাদেব, কামিল ভেলেবিল, এবং আসকো পারপোলা এর মতো ভাষাবিদগণের মতে সিন্ধুলিপির সাথে দ্রাবিড়িয়ান ভাষার সম্পর্ক ছিলো।[১৮][১৯]
আরও দেখুনঃ সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল
১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২,৯০৬ টি পাঠযোগ্য শিলালিপি খুঁজে পাওয়া গেছে[২০] এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা প্রায় ৪,০০০ এ গিয়ে দাঁড়ায়।[৮] প্রাথমিকভাবে সিন্ধু লিপির প্রতীকগুলি স্ট্যাম্প সিল, মৃৎপাত্র, ব্রোঞ্জ এবং তামার প্লেট, সরঞ্জাম এবং অস্ত্রগুলিতে পাওয়া গেছে।[২১] এসব লেখার সংকলন এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিলো সীলমোহর, সীলমোহরের ছাপ, এবং মৃৎপাত্রে খোদাই করা গ্রাফিতি। সীলমোহর এবং তাদের ছাপগুলো সাধারণত আকারে ছোট এবং সহজে বহনযোগ্য, যার বেশিরভাগ মাত্র ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের। প্যাপিরাস, কাগজ, বস্ত্র, পাতা, কাঠ বা বাকলের মতো পচনশীল জৈব পদার্থে সিন্ধু লিপির কোনো বিদ্যমান উদাহরণ পাওয়া যায়নি।
মৃৎপাত্রে খোদাই করা এবং মাটির মধ্যে হরপ্পান সীলমোহরের ছাপ আকারে সিন্ধুলিপির প্রাথমিক উদাহরণগুলো পাওয়া যায়, যা আনু. ২৮০০–২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বে প্রারম্ভিক হরপ্পান সময়কালের।[১] এগুলো কোট ডিজি পর্বের[২২] প্রশাসনিক বস্তু, যেমন- প্রমিত ওজন এবং সীলমোহরের পাশাপাশি খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে আনু. ৩৫০০-২৮০০ খ্রিষ্টপূর্বের রবি সময়কালের কিছু কুমোরদের আঁকা চিহ্ন ও গ্রাফিতির নিদর্শনও খননের সময় পাওয়া যায়।[১][২]
পরিণত হরপ্পা যুগে, আনু. ২৮০০–২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বে, সিন্ধু চিহ্নের স্ট্রিংগুলি সাধারণত সমতল, আয়তাকার স্ট্যাম্প সিলের পাশাপাশি মৃৎপাত্র, সরঞ্জাম, ট্যাবলেট এবং অলঙ্কার সহ অন্যান্য অনেক বস্তুতে লিখিত বা খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া যায়। টেরাকোটা, বেলেপাথর, সাবানপাথর, হাড়, খোল, তামা, রৌপ্য এবং সোনার মতো বিভিন্ন উপকরণে প্রয়োগ করা খোদাই, চিসেলিং, এমবসিং এবং পেইন্টিং সহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে চিহ্নগুলি লেখা হয়েছিল।[২৩] ১৯৭৭-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ইরাভাতাম মহাদেব বলেন, ৯০ শতাংশ সিন্ধুলিপির সীলমোহর ও খোদাই করা বস্তু পাকিস্তানের সিন্ধু নদী এবং এর উপনদীগুলোর, যেমন মহেঞ্জোদাড়ো এবং হরপ্পা এর আশেপাশে পাওয়া যায়। অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায় ১০ শতাংশের মতো।[২৪][২৫] বিভিন্ন প্রাণী, যেমন ষাঁড়, জল মহিষ, হাতি, গণ্ডার এবং পৌরাণিক "ইউনিকর্ন" [খ] এর প্রতিকৃতি সীলের লেখার সাথে থাকতো, যা খুব সম্ভবত নিরক্ষরদের একটি নির্দিষ্ট সীলমোহরের উত্স সনাক্ত করতে সহায়তা করার জন্য।[২৭]
লিপিটি ডান থেকে বামে লেখা হয় [২৮] এবং কখনও কখনও বুস্ট্রফেডন ধাঁচে লেখা। মূল প্রতীকের সংখ্যা প্রায় ৪০০-৬০০[২৯], যা সাধারণ লোগোভিত্তিক ও সিলেবলভিত্তিক লিপিগুলির প্রতীকসংখ্যার মাঝামাঝি। বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ তাই লিপিটিকে লোগো-সিলেবলীয় হিসেবে মেনে নিয়েছেন।[৩০] অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে লিপিটির গাঠনিক বিশ্লেষণ একটি সংশ্লেষণাত্মক (agglutinative) ভাষা নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকগুলি লিপি উপসর্গ বা প্রত্যয়ের মত শব্দের শুরুতে বা মাঝে দেখতে পাওয়া যায়।
After a century of failing to crack an ancient script, linguists turn to machines.
most scholars have taken the 'Dravidian hypothesis' seriously