সিমো হাওহা | |
---|---|
ডাকনাম | শ্বেত মৃত্যু |
জন্ম | রউতইয়ার্ভি, ভিপুরি অঙ্গরাজ্য, ফিনল্যান্ড | ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৫
মৃত্যু | ১ এপ্রিল ২০০২ হামিনা, ফিনল্যান্ড | (বয়স ৯৬)
আনুগত্য | ফিনল্যান্ড |
সেবা/ | ফিনিশীয় সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯২৫–১৯৪০ |
পদমর্যাদা | আলিকেরসান্তি (কর্পোরাল) শীতকালীন যুদ্ধের সময় এবং ভানরিক্কি (সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট) পদে পদোন্নয়ন[১] |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | শীতকালীন যুদ্ধ |
পুরস্কার | ক্রস অব লিবার্টি, ৩য় শ্রেণী এবং ৪র্থ শ্রেণী মেডাল অব লিবার্টি, প্রথম শ্রেণী এবং দ্বিতীয় শ্রেণী কোলা যুদ্ধের ক্রস[১] |
সিমো ''সিমুনা'' হাওহা (ফিনীয় উচ্চারণ: simo̞ ˈhæy̯ɦæ; ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৫ - ১ এপ্রিল ২০০২) ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ ফিনিশ স্নাইপার যিনি যুদ্ধকালীন সময়ে তার ভয়ে আতংকগ্রস্থ লাল ফৌজদের (সোভিয়েত সৈন্য) কাছে "শ্বেত মৃত্যু"[২] (রুশ: Белая смерть, Belaja smert; ফিনীয়: Valkoinen kuolema; সুইডীয়: Vita döden) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৩৯ থেকে ৪০ পর্যন্ত চলা ফিনল্যান্ড ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে শীতকালীন যুদ্ধে সিমো হাওহা ফিনিশীয়-প্রস্তুত "এম/২৮-৩০" (যেটি আসলে মোসিন-নাগান্ত স্নাইপিং রাইফেলের একটি বৈকল্পিক সংস্করণ) নামক স্নাইপিং রাইফেল ও "সুয়োমি কেপি/-৩১" নামের ফিনিশ সাব-মেশিন বন্দুক দিয়ে প্রায় ৫০৫ থেকে ৫৪২ জনের মতো সোভিয়েত সেনা নিধন করেন, যেটি ছিল তৎকালীন সময়ে স্নাইপিং-যুদ্ধের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা।[৩][৪][৫] কিন্তু ডায়েরীতে লেখা সিমো হাওহার বিবরণ অনুযায়ী যুদ্ধে তিনি ৫০০ এর চাইতেও অধিক সংখ্যক সোভিয়েত সেনা হত্যা করেছিলেন বলে দাবী করেন।[৬]
সিমো হাওহা রাশিয়ান সীমান্তবর্তী ফিনল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যের রউতইয়ার্ভিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯২৫ সালে ফিনল্যান্ডের সেনাবাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে তার সামরিক জীবন শুরু করেন। ৮ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তার পরিবারের ২য় সন্তান।[৭] যুদ্ধে অংশগ্রহণের পূর্বে হাওহা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক ও শিকারি। ২০ বছর বয়সে তিনি ফিনল্যান্ড সেনাবাহিনীর বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবক শাখায় অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন শ্যুটিং প্রতিযোগীতায় তিনি তার প্রতিভার পরিচয় দেন।[৮]
১৯৩৯ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত চলা ফিনল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতকালীন যুদ্ধে হাঁড়-কাঁপানো মাইনাস ৪০ ডিগ্রীর তাপমাত্রায় সিমো হাওহা ফিনিশীয় সেনাবাহিনীর হয়ে স্নাইপার হিসেবে নিজ দেশের জন্য যুদ্ধে লড়েছিলেন। ১৯৩০ এর দশকে যোসেফ স্তালিনের শাসনামলে মহান শুদ্ধিকরণের নামে সোভিয়েত ইউনিয়নে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দরুণ লাল ফৌজদের মধ্যে বিশৃঙ্খলতার কারণে শীতকালীন যুদ্ধে পাঠানোর সময় সোভিয়েত সেনাদের কোনরূপ সাদা-পোশাক প্রদান করা নি। যার ফলে বরফাঞ্চলে চিরাচরিত লাল পোশাকে সোভিয়েত সেনাবাহিনী আরো সহজে স্নাইপারদের লক্ষ্যবস্তুর কেন্দ্র হয়ে উঠে।
হাওহা বেশিরভাগ সময়ে শীতের ক্ষীণ আলোকেই স্নাইপিং-শিকারের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিতেন। যার ফলে ১০০ দিনেরও কম সময়ে - দিনপ্রতি গড়ে ৫ জন করে সোভিয়েত সেনা তিনি নিধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৯][১০][১১]
সাধারণত যুদ্ধে স্নাইপারদের লক্ষ্যবস্তুর শিকার হওয়া সোভিয়েত সেনাদের সংখ্যা একজন স্নাইপার এবং যুদ্ধে তার সঙ্গীরা গুণে রাখতো এবং শুধুমাত্র মৃত সৈনিকদের সংখ্যাই ছিল স্নাইপারদের কৃতিত্ত্বের মানদন্ড। আর এভাবেই সিমো হাওহার হাতে শহীদ হওয়া সোভিয়েত সেনার সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছিল। তবে কিছু বিরোধী তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় "শ্বেত মৃত্যু" (মানে সিমো হাওয়া) ছিলো ফিনিশ অপপ্রচারণার অন্যতম একটি অংশ।[১২] আর ফিনিশীয় সেনাবাহিনীকে প্রেরণা যোগাতে এবং লাল ফৌজদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতেই ফিনিশ সংবাদমাধ্যমগুলো এই অপপ্রচারকে হাতিয়ার করে সিমো হাওহাকে একটি অদৃশ্য সৈনিকের রূপ দান করেছিল।[১৩][১৪]
তবে হাওহার বিভাগের কমান্ডার 'স্ভেনসন' ১৯৪০ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তারিখে সিমো হাওহাকে সম্মানসূচক রাইফেল পুরস্কার হিসেবে ভূষিত করার সময় হাওহার ভূয়সী প্রশংসা করতে গিয়ে তার স্নাইপিং রাইফেল দ্বারা মারা যাওয়া ২১৯ জন এবং মেশিন-বন্দুক দিয়ে হত্যা করা ২০০ এরও অধিক সংখ্যক রাশিয়ান সৈন্যর প্রসঙ উল্লেখ করেন। আর অন্যদিকে শীতকালীন যুদ্ধের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং ফিনিশ পার্লামেন্টের সদস্য আনত্তি রানতামা তার লিখে যাওয়া দিনলিপিতে উল্লেখ করেছিলেন, শীতকালীন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৯৪০ সালের মার্চের ৭ তারিখ আহত হওয়ার আগ পর্যন্ত হাওহার স্নাইপিং রাইফেল দ্বারা হত্যা হওয়া সোভিয়েত সেনার সংখ্যা ছিল ২৫৯ জন এবং আর বাকি ২০০ এর কিছু অধিক সেনা হাওহা হত্যা করেছিলেন তার সাব-মেশিন বন্দুক দিয়ে।[১৫]
ফিনিশ সেনাবাহিনীর দস্তাবেজ থেকে পাওয়া হাওহা কর্তৃক হত্যা হওয়া সোভিয়েত সৈন্য সংখ্যার তালিকা (৩০ নভেমবর ১৯৩৯ সালে যুদ্ধের শুরু থেকে):