সিয়াসাতনামা (ফার্সি: سياست نامه, "সরকারের গ্রন্থ") সিয়ারুল মুলুক (আরবি:سیرالملوك, i.e.: "রাজাদের জীবন") নামেও পরিচিত, হল সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতান আল্প আরসালান ও প্রথম মালিক শাহের উজির, নিজামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা নিজামুল মুলকের লেখা বই। সেলজুক সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে নিজামুল মুলক দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত বিপুল ক্ষমতা ভোগ করেন।[১] মজবুত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলায় তিনি দায়িত্বশীল ছিলেন।[২] শাসনের ক্ষেত্রে তার মতামত সিয়াসাতনামায় উল্লেখিত হয়েছে।
বইটি একাদশ শতকে ফারসি ভাষায় লেখা হয়েছে। সরকার, প্রশাসন ও জাতি কর্তৃক সম্মুখীন হওয়া সমস্যা নিয়ে বই লেখার জন্য মালিক শাহের অনুরোধে এই বই লেখা হয়। এই বই আইন ও সংবিধান এর মর্যাদা পায়।[৩] এতে ধর্ম, রাজনীতি নিয়ে ৫০টি অধ্যায় ও অন্যান্য বিষয়ে ১১টি অধ্যায় রয়েছে যা নিজামের হত্যার পূর্বে সংক্ষিপ্তরূপে লেখা হয়।[৪] একে সরকারের বাস্তবতা ও একে কীভাবে চালিত করতে হবে সে বিষয়ে শাসকের জন্য নির্দেশনা স্বরূপ দেখা হয়। এতে সৈনিক, পুলিশ, গোয়েন্দা ও অর্থ কর্মকর্তার কাজ তুলে ধরা হয়েছে।[৫] শাসকের জন্য ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নৈতিক উপদেশ এতে উল্লেখ রয়েছে। নিজামুল মুলক ন্যায়বিচার নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি এতে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন যে সব শ্রেণীকেই তাদের প্রাপ্য দিতে হবে এবং দুর্বলদের রক্ষা করতে হবে। যখন সম্ভব ন্যায়বিচার সাধারণ ও মুসলিম আইনের দ্বারা অস্বীকার করা হবে শাসক আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবে।
এর মূল ইসলামে প্রোথিত, কিছু ক্ষেত্রে ইসলামপূর্ব পারস্যেও এর উৎস রয়েছে।[৬] সিয়াসাতনামাকে ১২ শতকের পারস্যের অভিজাতদের তাদের পূর্ব সভ্যতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও আমলাতন্ত্রের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোকপাতকারী হিসেবে দেখা হয়। এটি ইসলামপূর্ব বিষয় থেকেও উপাদান লাভ করেছে।[৬]
এর সর্বপ্রাচীন পান্ডুলিপি ইরানের তাব্রিজ জাতীয় গ্রন্থাগারে রক্ষিত রয়েছে। ১৮৯১ সালে এটি সর্বপ্রথম ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয়।