সিরীয় বিদ্রোহী

সিরীয় বিদ্রোহী

المعارضة السورية (আরবি)
আল-মুআরাদ আস-সুরিয়া
জাতীয় পতাকা
সিরিয়ার বিরোধী দলের পতাকা
অন্তর্বর্তী সরকার]] (জাতীয় সেনাবাহিনী)      মুক্তি সরকার (তাহরির আল-শাম)      আল-তানফ (বিপ্লবী কমান্ডো সেনাবাহিনী)      দক্ষিনী অপারেশন রুম      ইজরায়েল (ইসরায়েলি দখলকৃত গোলান হাইটস ব্যাখ্যার জন্য দেখানো হয়েছে, সিরিয়ান বিরোধিদের অংশ নয়)
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা
     [[ সিরিয়ান অন্তর্বর্তী সরকার|অন্তর্বর্তী সরকার]] (জাতীয় সেনাবাহিনী)
     মুক্তি সরকার (তাহরির আল-শাম)
     আল-তানফ (বিপ্লবী কমান্ডো সেনাবাহিনী)
     দক্ষিনী অপারেশন রুম
     ইজরায়েল (ইসরায়েলি দখলকৃত গোলান হাইটস ব্যাখ্যার জন্য দেখানো হয়েছে, সিরিয়ান বিরোধিদের অংশ নয়)
রাজধানীদামেস্ক
আযায (প্রকৃতপক্ষে এসআইজি এর)[][]
ইদলিব (প্রকৃতপক্ষে মুক্তি সরকার) এর
আল-তানফ ঘাঁটি (সিরিয়ান ফ্রি আর্মি ব্যবহার করে)
বৃহত্তম নগরীদামেস্ক
সরকারি ভাষাআরবি
জাতীয়তাসূচক বিশেষণসিরিয়ান
সরকারএকক অস্থায়ী সরকার
হাদি আল-বাহিরা
• অন্তর্বর্তী সরকার এর প্রধানমন্ত্রী
আবদুর রহমান মোস্তফা
আইন-সভাসাধারণ পরিষদ / সাধারণ শুরা কাউন্সিল
প্রতিষ্ঠিত
• সংগঠন
১৫ মার্চ ২০১১
মুদ্রাতুর্কি লিরা,[][] ইউরো, মার্কিন ডলার এবং সিরীয় পাউন্ড (SYP)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৩ (পূর্ব ইউরোপীয় সময়)
গাড়ী চালনার দিকডান
কলিং কোড+963
আইএসও ৩১৬৬ কোডSY
ইন্টারনেট টিএলডি.sy
سوريا.
পূর্বসূরী
সিরিয়ান আরব প্রজাতন্ত্র

সিরীয় বিদ্রোহী ( আরবি: المعارضة السورية, [almʊˈʕaːɾadˤɑt asːuːˈɾɪj.ja] ) হল রাজনৈতিক কাঠামো যা সিরিয়ার ন্যাশনাল কোয়ালিশন দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করে এবং সিরিয়ার আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে একটি বিকল্প অন্তর্বর্তী সিরিয়ার সরকার হিসাবে নির্দিষ্ট আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের সাথে যুক্ত করে। বাশার আল-আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে যে গোষ্ঠীগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাউদার্ন ফ্রন্ট, কমান্ডো আর্মি, জিহাদি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং তাহরির আল-শাম

সিরিয়ার বিদ্রোহী শক্তি সিরিয়া সংঘর্ষের শুরু থেকে বিকশিত হয়েছে, যা আসাদ সরকার উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে এবং বাথপন্থী সরকারের বিরোধিতা করে গড়ে উঠেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের আগে " বিদ্রোহী দল" (আরবি: المعارضة) শব্দটি সাধারণত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর জন্য ব্যবহৃত হতো, যেমন গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সমন্বয় কমিটি। এরা এমন গোষ্ঠী ও ব্যক্তি যারা দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণ করে আসছিল।

২০২৪ সালের শেষের দিকে, বিভিন্ন সিরীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী একযোগে আক্রমণ চালায়, যা আসাদ সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

সিরিয়া ১৯৪৬ সাল থেকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র। গত কয়েক দশক ধরে দেশটি আংশিকভাবে স্থিতিশীল ছিল, যদিও বেশ কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছিল। ১৯৬৩ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাথ পার্টি সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭১ সাল থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আসাদ পরিবারের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে আসছেন, যার শুরু হয় হাফেজ আল-আসাদ (১৯৭১–২০০০) এর নেতৃত্বে। সিরিয়া ১৯৬৩ সালের অভ্যুত্থানের সময় থেকে ২১ এপ্রিল ২০১১ সাল পর্যন্ত জরুরি আইনের আওতায় ছিল, যা হাফেজের বড় ছেলে ও সিরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাতিল করেন।[]

আসাদ পরিবারের শাসনকাল কঠোর দমনপীড়নের জন্য পরিচিত, বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে, যেমন আরব জাতীয়তাবাদী নাসেরপন্থী এবং উদারপন্থী গণতন্ত্রীদের ওপর। বাথ পার্টির শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে সিরিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুড, যারা সুন্নি জনগোষ্ঠীর মাঝে আলবীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে অসন্তোষকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। মুসলিম ব্রাদারহুড সিরিয়ার সালাফিয়া আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল, যা প্রখ্যাত সুন্নি ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদ মুহাম্মদ রশিদ রিদার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। রশিদ রিদার শিক্ষার আলোকে মুসলিম ব্রাদারহুড ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে, যেখানে একজন আমির নির্বাচিত মুসলিম প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন করবেন, যাদের বলা হয় ‘‘আহলে আল-হাল ওয়া আল-আকদ ’’। এই ইসলামি সরকার শরিয়া ভিত্তিক আইন কার্যকর করবে এবং উলামাদের পরামর্শে সমকালীন সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। শাসকের ক্ষমতা একটি ইসলামি সংবিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং শুরার (পরামর্শ) মাধ্যমে ‘‘আহলে আল-হাল ওয়া আল-আকদ’’ এর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আসাদ সরকার ১৯৮০ সালে আইন নম্বর ৪৯ চালু করে, যা মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে এবং সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রবর্তন করে। এর জবাবে, একই বছরে সিরিয়ান ইসলামিক ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে আসাদ সামরিক একনায়কতন্ত্রকে উৎখাত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। ঐতিহ্যবাহী সুন্নি উলামা ও রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর সমর্থনে, সিরিয়ান মুসলিম ব্রাদারহুড ১৯৮০-এর দশকে সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[]

২০১১ সালের শুরুর দিকে আরব বসন্ত নামে পরিচিত বিপ্লবী আন্দোলন শুরু হলে, সিরিয়ার বিক্ষোভকারীরা বিপ্লবী কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন, সিরিয়ার বিপ্লবী দলগুলোর প্রথম সম্মেলন "ইস্তানবুল মিটিং ফর সিরিয়া" অনুষ্ঠিত হয়। এরপরে ৩১ মে থেকে ৩ জুন ২০১১ পর্যন্ত তুরস্কের আনতালিয়াতে "সিরিয়ায় পরিবর্তনের জন্য আনতালিয়া সম্মেলন" নামে তিন দিনের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সিরিয়ার বিপ্লবী দলগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

এই সম্মেলনটি আম্মার আল-কুরাবির নেতৃত্বাধীন "ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস ইন সিরিয়া" কর্তৃক আয়োজিত এবং এবং ধনী সানকার পরিবারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। এর ফলাফল হিসেবে একটি চূড়ান্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, যেখানে আপস বা সংস্কারমূলক সমাধান প্রত্যাখ্যান করা হয়, এবং একটি ৩১ সদস্যের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।

আনতালিয়া সম্মেলনের পর, দুই দিন পর ব্রাসেলসে একটি পরবর্তী সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এরপর প্যারিসে আরেকটি সভা হয়, যেখানে ফরাসি লেখক এবং দার্শনিক বার্নার্ড অঁরি লেভি ভাষণ দেন। আরও বেশ কয়েকটি সভা ইস্তানবুল এবং দোহায় অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট ইস্তানবুলে আরেকটি সভায় সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল নামে একটি স্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিল গঠন করা হয়।

২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর বিদ্রোহী বাহিনী দামেস্ক এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর আগে হোমস এবং আলেপ্পোর মতো শহরগুলোরও নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীরা নিয়ে নেয়। বাশার আল-আসাদ রাজধানী থেকে পালিয়ে গেছেন। পরিস্থিতি এখনও চলমান।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Charles Lister (৩১ অক্টোবর ২০১৭)। "Turkey's Idlib Incursion and the HTS Question: Understanding the Long Game in Syria"War on the Rocks। ৪ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৯ 
  2. al-Khateb, Khaled (১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Idlib still wary of attack despite Turkish-Russian agreement"Al-Monitor। ৮ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০১৯ 
  3. Ashawi, Khalil (২৮ আগস্ট ২০১৮)। "Falling lira hits Syrian enclave supported by Turkey"Reuters 
  4. Ghuraibi, Yousef (১ জুলাই ২০২০)। "Residents of northwestern Syria replace Syrian pound with Turkish lira"Enab Baladi। Idlib। ৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০২২ 
  5. "Syria's state of emergency"Al Jazeera (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৯ 
  6. "The Muslim Brotherhood in Syria"। ২০১৯-০৯-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-০৯