সুদেষ্ণা | |
---|---|
![]() সিংহাসনে উপবিষ্ট সুদেষ্ণা (বামে) এবং দ্রৌপদী ও অন্যান্য সৈরিন্ধ্রীরা তাকে সম্মান জানাচ্ছে | |
দাম্পত্য সঙ্গী | বিরাট |
সন্তান |
|
আত্মীয় |
সুদেষ্ণা (দেবনাগরী: सुदेष्णा) মহাভারতে বর্ণিত রাজা বিরাটের পত্নী ও মৎস্যদেশের রানি। তিনি অভিমন্যুর পত্নী উত্তরার মাতা ছিলেন৷ মৎস্যদেশের সেনাপতি কীচক সুদেষ্ণার ভ্রাতা ছিল৷ তিনি কেকয় দেশের রাজার কন্যা ছিলেন বলে তার নাম কেকেয়ী৷[১][২] অজ্ঞাতবাসের সময় দ্রৌপদী নিজের পরিচয় গোপন করে সুদেষ্ণার কেশসংস্কারের কাজ করতেন।
মহাভারতের বিরাটপর্বে মূলত সুদেষ্ণা সম্পর্কে অধিকতর বর্ণনা রয়েছে। সুদেষ্ণাকে মহৎ চরিত্রের বলা যায় না। তিনি নিজ স্বার্থে দ্রৌপদীকে কীচকের কবলে ফেলতে সম্মত হয়েছিলেন। বিরাটপর্বের পাণ্ডবপ্রবেশপর্বাধ্যায়ে আছে, একদিন দ্রৌপদীকে বিচরণ করতে দেখে সুদেষ্ণা তাকে ডেকে পাঠালেন। সুদেষ্ণার কাছে এসে দ্রৌপদী সৈরিন্ধ্রী রূপে নিজের পরিচয় দিলেন। যে নারী পরগৃহে স্বাধীনভাবে দাসীর কর্ম করে তাকে সৈরিন্ধ্রী বলে।[৩] দ্রৌপদীর রূপ দেখে সুদেষ্ণা অভিভূত হয়ে গেলেন। সুদেষ্ণা বললেন, তুমি অন্য দাস-দাসীদের আদেশ করার যোগ্যতা রাখ। সুদেষ্ণা পরে আরও বললেন, তুমি যক্ষী, দেবী, গন্ধর্বী না অপ্সরা? দ্রৌপদী অজ্ঞাতবাস যাপন করছেন বলে নিজের পরিচয় গোপন করলেন। তিনি বললেন, আমি পূর্বে পাণ্ডবদের পত্নী দ্রৌপদীর পরিচর্যা করতাম। কৃষ্ণের পত্নী সত্যভামারও পরিচর্যা করতাম। সুদেষ্ণা ছদ্মবেশী দ্রৌপদীকে সৈরিন্ধ্রী রূপে রাখতে চাইলেন কিন্তু এই ভেবে ভয় পেলেন যে তার স্বামী মহারাজ বিরাট এর রূপ দেখে এর প্রতি আসক্ত হতে পারেন। দ্রৌপদী বললেন, বিরাট রাজা বা অন্য কেউ আমাকে পাবেন না, কারণ পাঁচজন গন্ধর্ব যুবা আমার স্বামী।[৪] এরপর সুদেষ্ণা দ্রৌপদীকে সৈরিন্ধ্রী রূপে রাখলেন। পরবর্তীতে সুদেষ্ণার ভ্রাতা কীচক দ্রৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হলো। সুদেষ্ণার স্বামী রাজা বিরাট দ্রৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হন তার পূর্বেই দ্রৌপদী কীচকের কাছে যাক এমনটাই সুদেষ্ণা চাইলেন। তাহলে এতে সুদেষ্ণারও স্বার্থসিদ্ধি হবে।[৫] কিন্তু দ্রৌপদী এ কাজে অনিচ্ছা জানালেন। তবুও সুদেষ্ণা একটি ঢাকনিযুক্ত স্বর্ণময় পানপাত্র দিয়ে দ্রৌপদীকে কীচকের কাছে পাঠালেন।[৬][৭] কীচক দ্রৌপদীকে পাননি। পরবর্তীতে ভীম তাকে বধ করেছিল। এ ঘটনার পর বিরাট সুদেষ্ণাকে বললেন, সৈরিন্ধ্রীকে এখান থেকে চলে যেতে বল। কারণ রাজা বিরাট আশঙ্কা করছিলেন যে, দ্রৌপদীর রূপ দেখে অন্য পুরুষেরা তাকে কামনা করবেই। এতে রাজধানীতে বিশৃঙ্খলা হবে। সুদেষ্ণা রাজা বিরাটের কথামতো সৈরিন্ধ্রীকে চলে যেতে বললেন কিন্তু দ্রৌপদী না যাওয়ার জন্য অনুনয় করলেন। তিনি বললেন, আমাকে আর তেরো দিনের জন্য থাকতে দিন।[৮] এরপর দ্রৌপদী অজ্ঞাতবাস পূর্ণ করে নিজের প্রকৃত পরিচয় সবার সামনে প্রকাশ করেছিলেন।
সুদেষ্ণা সম্রাট পরীক্ষিতের মাতামহী ছিলেন। তার কন্যা রাজকুমারী উত্তরার বিবাহ অর্জুনপুত্র অভিমন্যুর সাথে হয়। পরবর্তীতে উত্তরার সন্তান পরীক্ষিৎ সম্রাট হন। তবে পরীক্ষিতের জন্মের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন এমন কোনো উল্লেখ মহাভারতে নেই।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রথমদিনে সুদেষ্ণার দুই পুত্র উত্তর ও শ্বেতের মৃত্যু হয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পঞ্চদশ দিনে সুদেষ্ণা বিধবা হন। এ দিন মহারাজ বিরাটের মৃত্যু হয়।
১৯৮৮ সালের বলদেব রাজ চোপড়ার মহাভারতে সুদেষ্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন চান্দনী শর্মা।২০১৩ সালের স্টার প্লাসের মহাভারতে সুদেষ্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মল্লিকা নায়ক।[৯][১০]