সুধা মূর্তি | |
---|---|
জন্ম | সুধা কুলকার্নি ১৯ আগস্ট ১৯৫০ |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | বিভিবি কলেজ অফ ইঞ্জিনীয়ারিং ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা |
পেশা | চেয়ারপার্সন, ইনফোসিস ফাউন্ডেশন, লেখক (কন্নড়/ইংরাজি) |
দাম্পত্য সঙ্গী | এন আর নারায়ণ মূর্তি |
সুধা মূর্তি বিবাহের পূর্বে সুধা কুলকার্নি, একজন ভারতীয় প্রকৌশল শিক্ষক এবং কন্নড় ও ইংরেজিতে ভারতীয় বিখ্যাত লেখক।
মুর্তি কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী হিসাবে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এবং গেটস ফাউন্ডেশনের জনস্বাস্থ্য সেবা উদ্যোগের সদস্য[১][২] । তিনি গ্রামীণ উন্নয়নের প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে বেশ কয়েকটি অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছেন, কর্ণাটকের সমস্ত সরকারি স্কুলে কম্পিউটার ও লাইব্রেরির সুবিধা প্রদানের আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ভারতের মূর্তি শাস্ত্রীয় গ্রন্থাগারের' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৩][৪][৫] কর্ণাটকের সকল স্কুলের কম্পিউটার ও লাইব্রেরী সুবিধা চালু করার জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞান শিখিয়ে মুর্তি একটি সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে ব্যাঙ্গালোরের রোটারি ক্লাব থেকে তিনি "সেরা শিক্ষক পুরস্কার" পান। মূর্তি তার সামাজিক কাজ এবং কন্নড় ও ইংরেজিতে সাহিত্যে তার অবদানের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তারডলার বহুএকটি বিখ্যাত উপন্যাস; ২০০১ সালে জী টিভিতে এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে, একটি টেলিভিশন সিরিজ প্রদর্শিত হয়েছিল।[৬] মূর্তি মারাঠি চলচ্চিত্র পিতৃঋণ এবং কন্নড চলচ্চিত্র প্রার্থনা-তে অভিনয়ও করেছেন।
সুধা মূর্তি ১৯২১ সালের ১৯শে আগস্ট কর্ণাটকের শিগগাঁওতে একটি মাধওয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন সার্জন ডা। আর এইচ। কুলকার্নি এবং তার মা বিমলা কুলকার্নি। তিনি এবং তার ভাইবোনেরা তার বাবা-মা এবং দাদু-দিদিমার কাছে বড় হয়েছিলেন।।এই শৈশব অভিজ্ঞতা এই শৈশব অভিজ্ঞতাগুলি তার প্রথম সাহিত্য কর্তি "হাউ আই টট মাই গ্রান্ডমাদার টু রীড আন্ড আদার স্টোরিস"-এ উঠে এসেছে।[৭] মূর্তি বি ভি বি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বর্তমানে কেএল ই টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত) থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারিং-এ ক্লাসে প্রথম হয়ে, বি ই সম্পন্ন করেন এবং কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন।মুর্তি ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন এবং ইনস্টিটিউট অফ এঞ্জিনিয়ার্স থেকে স্বর্ণ পদক লাভ করেন.[৮]
ভারতের বৃহত্তম অটোমোবাইল কারখানা, টাটা প্রকৌশল ও লোকোমোটিভ কোম্পানি (টেলকো) -এ নিয়োগকৃত প্রথম মহিলা কর্মী ছিলেন সুধা মুর্তি।টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চারী কোম্পানি (TELCO)। তিনি পুণেতে একজন ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কোম্পানির সাথে যোগ দেন এবং তারপর মুম্বাই ও জামশেদপুরেও কাজ করেন। টেলকোতে "শুধুমাত্র পুরুষদের"- এই শর্তের বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগে তিনি কোম্পানির চেয়ারম্যানকে একটি পোস্টকার্ডে চিঠি লিখেছিলেন।ফলস্বরূপ, তাকে একটি বিশেষ ইন্টারভিউ-এর সুযোগ দেওয়া হয় এবং অবিলম্বে নিয়োগ করা হয়। পরে তিনি ওয়ালচাঁদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সিস্টেম বিশ্লেষক হিসাবে যোগ দেন।
১৯৯৬ সালে তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশন শুরু করেন এবং আজ পর্যন্ত তিনি ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এবং ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিজি সেন্টারে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে রয়েছেন। তিনি ক্রাইস্ট ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষিকা ছিলেন।[৯] তিনি অনেক বই লিখেছেন এবং প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে দুটি ভ্রমণকাহিনী, দুটি কারিগরি বই, ছয়টি উপন্যাস এবং তিনটি শিক্ষামূলক বই।
সুধা মূর্তি বিয়ে করেন এন আর নারায়ণ মূর্তিকে, পুণেতে টেলকো তে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত অবস্থায়।[১০] এই দম্পতির দুটি সন্তান আছে অক্ষতা এবং রোহন। তার মেয়ে অক্ষতা স্ট্যানফোর্ডের সহপাঠী, এক ব্রিটিশ ভারতীয়, ঋষি সুনাককে বিয়ে করেছিলেন।ঋষি যুক্তরাজ্যের দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হেজ-ফান্ডে তিনি একজন অংশীদার। [১১]
িল্মফেয়ার পত্রিকার সাথে একটি সাক্ষাত্কারে, মিসেস মুর্তি বলেন, "আমার হোম থিয়েটারে আমার ৫০০টি ডিভিডি রয়েছে। আমি সামগ্রিকভাবে একটি ফিল্ম দেখি - তার পরিচালনা, সম্পাদনা ... সব দিক। সবাই আমাকে একজন লেখক হিসেবে, একজন সমাজকর্মী হিসেবে চেনে, কিন্তু কেউ আমাকে মুভি বাফ হিসাবে জানেন না। এ কারণে আমি ফিল্মফেয়ারের সাথে এই সাক্ষাত্কারে আনন্দিত।[১২] ফিকি লেডিস অর্গানাইজেশন (এফএলও) এর চেয়ারপার্সনের একটি প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে মুর্তি বলেন, তার স্বামী নারায়ণ মূর্তিকে ইনফোসিস শুরু করতে সহায়তা করার জন্য যখন তিনি টেলকো থেকে ইস্তফা দেন, জে.আর.ডি.টাটার থেকে প্রাপ্ত পরামর্শটি তার জীবনকে বদলে দেয়। তিনি বলেছেন, "সর্বদা মনে রাখা উচিত, যে টাকার কোন মালিক হয় না এবং এটি সবসময় হাত ঘুরতে থাকে; যদি তুমি সফল হও, তাহলে কিছু অংশ সমাজকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো, যে সমাজ তোমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। [১৩]
মুর্তি নানারকম সমাজসেবা করেন যার মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জনস্বাস্থ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি, এবং তৃণমূল পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন। 'প্রতিটি স্কুলের জন্য একটি গ্রন্থাগার' তার এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে এখন পর্যন্ত ৫০,০০০টি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে।তিনি ব্যাঙ্গালোর শহরে কয়েকশ টয়লেট এবং গ্রামীণ এলাকায় ১০,০০০ টি টয়লেট নির্মাণ করে গ্রামীণ এলাকায় সাহায্য করছেন। ইনফোসিস ফাউন্ডেশন 1996 সালে প্রতিষ্ঠিত একটি পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং মুর্তি ট্রাস্টিদের মধ্যে একজন।ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ২300 টি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি তামিলনাড়ুতে এবং আন্দামানে সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ , গুজরাত কচ্ছ অঞ্চলে ভূমিকম্প , ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশের বন্যা ও হারিকেন এবং কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রে খরা তেও সেবাকার্য চালিয়েছেন। ২০১১-১২ অর্থ বছরে তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য কর্ণাটক সরকার তাঁকে সম্মানিত সাহিত্য পুরস্কার, 'আতিমাববে পুরস্কার' প্রদান করেছিল।.[১৪]