সুবাসিনী মিস্ত্রী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৩ |
পরিচিতির কারণ | হিউম্যানিটি হসপিটাল |
দাম্পত্য সঙ্গী | সাধনচন্দ্র মিস্ত্রী |
সন্তান | ড.অজয় মিস্ত্রীসহ চার সন্তান |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী (২০১৮) |
সুবাসিনী মিস্ত্রী (জন্ম – ১৯৪৩ ) হলেন একজন ভারতীয় বাঙালি সমাজকর্মী। তিনি তার স্বামীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর পর দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে, গৃহ পরিচারিকার কাজ, সব্জি বিক্রিসহ নানাবিধ কায়িক পরিশ্রমে স্বল্পার্জিত আয়ের সামান্য অংশ সঞ্চয় করে বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য হিউম্যানিটি হসপিটাল নামে এক দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।[১][২][৩][৪][৫][৬] ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তার এই সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রদান করে। [৭] তিনি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের 'উইমেন ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ড'এর বারোজন ভারতীয় প্রাপকের একজন ছিলেন।
সুবাসিনী মিস্ত্রী ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মহানগর কলকাতার উপকণ্ঠে জোকার সন্নিহিত কালুয়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বারো বৎসর বয়সে তার বিবাহ হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার হাঁসপুকুর গ্রামের এক কৃষিশ্রমিক যুবক সাধন চন্দ্রের সঙ্গে।[৮]বিবাহের পর তারা সবজি বিক্রি করে কষ্টের জীবনযাপন করতেন। কিন্তু অকস্মাৎ তার স্বামী পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহে সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হন। অর্থের অভাবের কারণে সেখানে সুচিকিৎসা না পাওয়ায় তার মৃত্যু হয়। তখন সুবাসিনীর বয়স তেইশ এবং চার সন্তানের ( দুই পুত্র, দুই কন্যা) জননী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সংকল্প করেছিলেন আর কোনও গরিব, অসহায় ব্যক্তিকে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেবেন না। এর পর শুরু হয় অর্থ সংগ্রহের কাজ। নিজে অর্থ সঞ্চয় করতে শুরু করেন কখনও বাড়ি বাড়ি গৃহ পরিচারিকার কাজ করে, কখনও বা কলকাতার ধাপার মাঠের পার্শ্ববর্তী রাস্তায় সবজি ফলিয়ে আর সেই সবজি পার্ক সার্কাসের ৪ নম্বর ব্রীজের পাশে রাস্তায় বিক্রি করে। তার মেজো ছেলে অজয় ছিলেন মেধাবী। ছেলেমেয়েদের অর্থের অভাবে পড়াশোনা করাতে না পেরে, অজয়কে রেখে আসেন অনাথ আশ্রমে।[৯]পরবর্তীতে সেখানেই পড়াশোনা করে চিকিৎসক হন অজয়। এর পর স্বপ্ন সার্থক করতে সমস্ত রকমের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। বিশ বছর পর স্বল্প সঞ্চয়ের অর্থে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে স্বামীর গ্রাম হাঁসপুকুরের এক একর জায়গা কেনেন মাত্র দশ হাজার টাকায়। তারপর ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দেহিউম্যানিটি ট্রাস্ট গঠন করে স্থানীয় মানুষের ৯২৬ টাকার আর্থিক সাহায্যে আর গরীব মানুষের কায়িক পরিশ্রমে টালি, বাঁশ, দরমা দিয়ে ৪০০ বর্গফুটের একচালার অস্থায়ী ছাউনিতে গড়ে তোলেন চিকিৎসা কেন্দ্র । সেখানে প্রথমে ডা রঘুপতি চট্টোপাধ্যায় ও পরে আরো পাঁচ জন চিকিৎসক বিভিন্ন মানুষের উদ্বৃত্ত ঔষধের উপর নির্ভর করে গরীব মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে তার পুত্র অজয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ হতে স্নাতক হওয়ার পর ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকের সহায়তায় সেই চিকিৎসা কেন্দ্র হিউম্যানিটি হসপিটাল হিসাবে পরিচিত হয়। [১০] তার পুত্র অজয়ের অনুরোধে স্থানীয় বিধায়ক এবং সংসদ সদস্য মালিনী ভট্টাচার্য্যের ঐকান্তিক সহযোগিতায় প্রথমে ১০০০ বর্গফুটের কংক্রিটের বাড়ি গড়ে তোলেন। পরে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিন একর জায়গা জুড়ে সর্বোত্তম চিকিৎসা সরঞ্জাম বিশিষ্ট ৪৫ শয্যার হাসপাতালে বিস্তৃত হয়। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কে ভি রঘুনাথ রেড্ডি স্থায়ী হাসপাতাল ভবনটি উদ্ঘাটন করেন।[৯] ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দরবনের বাসিন্দা চিরঞ্জীব মণ্ডল এবং করুণা মণ্ডল হিউম্যানিটি হাসপাতালকে জমি দান করলে তিনি গরীব মানুষের চিকিৎসার জন্য সেখানেই গড়ে তোলেন হিউম্যানিটি হাসপাতালের দ্বিতীয় শাখা।[৮] [৯]