সুশান্ত সিং রাজপুত | |
---|---|
জন্ম | [১] | ২১ জানুয়ারি ১৯৮৬
মৃত্যু | ১৪ জুন ২০২০[৩] | (বয়স ৩৪)
মৃত্যুর কারণ | ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা[৪] |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা |
|
কর্মজীবন | ২০০৮–২০২০ |
উচ্চতা | ১.৮৩ মিটার (৬ ফুট ০ ইঞ্চি) |
সুশান্ত সিং রাজপুত (হিন্দি: सुशांत सिंह राजपूत; ২১ জানুয়ারি ১৯৮৬ – ১৪ জুন ২০২০) একজন সুখ্যাতিমান, দক্ষ, প্রতিভাবান ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব,[৫] উদ্যোক্তা[৬] এবং একজন লোকহিতৈষী ছিলেন।[৭][৮][৯] সুশান্ত, টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাজ করার মধ্যে দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন। ২০০৮ সালে স্টার প্লাস চ্যানেলে প্রচারিত প্রণয়ধর্মী টেলিভিশন ধারাবাহিক কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল-এ প্রীত জুনেজা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে টেলিভিশন জগতে অভিষেক করেছিলেন। অতঃপর তিনি জি টিভিতে প্রচারিত জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক পবিত্র রিস্তা-তে মানব দেশমুখ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন; যার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার জয়লাভ করেছিলেন। মৃত্যুর আগে তার শেষ করা মুভি ছিলো দিল বেচারা। যা তার মৃত্যুর পর মুক্তি পায়।
২০১৩ সালে, সুশান্ত বন্ধুকেন্দ্রিক নাট্য-চলচ্চিত্র কাই পো চে!-তে ইশান ভট্ট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে জগতে পদার্পণ করেছিলেন; যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে জি সিনে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর ২০১৩ সালে, তিনি প্রণয় ও কৌতুকধর্মী চলচ্চিত্র শুধ দেশী রোমান্স রঘু রাম এবং ২০১৫ সালে অ্যাকশন ও গোয়েন্দা ভিত্তিক চলচ্চিত্র ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী-তে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বাধিক অর্থ-উপার্জন করা চলচ্চিত্র, ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পিকে; যেখানে তিনি আমির খান, অনুষ্কা শর্মা এবং বোমান ঈরানীর মতো অভিনয়শিল্পীদের সাথে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অতঃপর ২০১৬ সালে, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জীবনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি-তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন; যার জন্য তিনি প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন।[১০][১১] অতঃপর সুশান্ত ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কেদারনাথ এবং ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছিছোড়ের মতো বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।[১২][১৩][১৪]
ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ধারণা নীতি আয়োগ, মহিলা উদ্যোক্তা মাধ্যম (ডাব্লিউইপি) প্রচার করার জন্য তার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।[১৫][১৬] অভিনয় এবং চলমান ইনসায়েই উদ্যোগ ছাড়াও,[১৭] তরুণ শিক্ষার্থীদের সহায়তার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি সুশান্ত৪এডুকেশন-এর মতো বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।[১৮][১৯]
সুশান্ত ১৯৮৬ সালের ২১শে জানুয়ারি তারিখে ভারতের বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন,[২] সেখানে তার বাবা সরকারি কর্মচারী ছিলেন।[২০][২১][২২][২৩] তাঁর পৈতৃক বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় অবস্থিত।[২৪][২৫] তার এক বোন, মিতু সিং রাজ্য পর্যায়ের একজন ক্রিকেটার।[২][২৬] ২০০২ সালে তার মায়ের মৃত্যু ঘটে। সে বছরই তিনি তার পরিবারের সাথে পাটনা থেকে নতুন দিল্লিতে চলে আসেন।[২][২৭]
সুশান্ত পাটনার সেন্ট কারেন উচ্চ বিদ্যালয় এবং নতুন দিল্লির কুলাচি হাঁসরাজ মডেল স্কুল হতে তার স্কুল জীবনের শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন।[২৮] তিনি ২০০৩ সালে ডিসিই প্রবেশিকা পরীক্ষায় সপ্তম স্থান অর্জন করেছিলেন[২৯] এবং তিনি দিল্লি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন।[২] এছাড়াও তিনি পদার্থবিজ্ঞানে জাতীয় অলিম্পিয়াড বিজয়ীও ছিলেন।[৩০] সর্বোপরি তিনি ভারতীয় খনি বিদ্যাপীঠের জন্য প্রায় ১১টি প্রকৌশল প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন; যার সবগুলোতে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।[২] মঞ্চ এবং নৃত্যে অংশগ্রহণ করার ফলে, তিনি তার পড়াশুনার জন্য খুব কমই সময় পেতেন, যার ফলস্বরূপ তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাকব্লগের সম্মুখীন হয়েছিলেন, যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে ডিসিই ছেড়ে দিতে হয়েছিল।[২৯] অভিনয়ের জীবনে প্রবেশ করার পূর্বে, তিনি তার চার বছরের কোর্সের শুধুমাত্র তিন বছর পূর্ণ করেছিলেন।[২] তিনি নাট্যপরিচালক ব্যারি জনের নাটকের ক্লাসেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২৩]
সুশান্ত সিং রাজপুত দিল্লী কলেজ অফ ইঞ্জিনীয়ারিং-এ পড়তে থাকা অবস্থায় শ্যামক দাবরের নৃত্যদলে যোগদান করেছিলন। পরিচালক বেরী জনের নাটকের দলে তিনি অভিনয়ের প্ৰতি আগ্রহী হন ও অভিনয়ে যোগদান করে।
২০০৮ সালে রাজপুত বালাজি টেলিফিল্মস প্রযোজিত কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল ধারাবাহিকে প্রিত জুনেজার চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে তিনি পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে মানব দেশমুখের চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১০ সালে তিনি ড্যান্স আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান ঝলক দিখলা জা ২-এ মস্ত কলন্দর বয়েজ টিমে অংশগ্রহণ করেন।[৩১]
২০১০ সালে তিনি ঝলক দিখলা যা ৪-এ অংশগ্রহণ করে “মোস্ট কনসিস্টেন্ট পারফর্মার” পুরস্কার পান।[৩২] ২০১১ সালে তিনি পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকের কাজ ছেড়ে দেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন বলে।[৩৩]
২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া অভিষেক কাপুর পরিচালিত কাই পো চে! রাজপুতের প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবিটি সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়।[৩৪] এরপর রাজপুত মনীষ শর্মা পরিচালিত শুধ দেশী রোমান্স ছবিতে পরিণীতি চোপড়া ও বাণী কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই ছবিটিও বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়।[৩৫] রাজকুমার হিরানী পরিচালিত পিকে চলচ্চিত্রে রাজপুত একটি ছোটো চরিত্রে অভিনয় করেন।[৩৬][৩৭]
দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী! ছবিতে রাজপুত বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত গোয়েন্দা রচিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।[৩৮]
রাজপুত তার সহশিল্পী অঙ্কিতা লোখন্ডের সাথে ৬ বছর ধরে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন, যার সমাপ্তি ঘটে ২০১৬ সালে তাদের বিচ্ছেদের মাধ্যমে।[৩৯][৪০]
বছর | চলচ্চিত্র | চরিত্র | টীকা |
---|---|---|---|
২০১৩ | কাই পো চে! | ঈশান ভাট | ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত |
শুধ দেশী রোমান্স | রঘু রাম | মুক্তিপ্রাপ্ত | |
২০১৪ | পিকে | সরফরাজ ইউসুফ | সহশিল্পী |
২০১৫ | ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী! | ব্যোমকেশ বক্সী | মুক্তিপ্রাপ্ত |
২০১৬ | এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি | মহেন্দ্র সিং ধোনি | ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সেরা অভিনেতার জন্য মনোনয়নপ্রাপ্ত |
২০১৭ | রাবতা | জিলান/শিব কাক্কার | মুক্তিপ্রাপ্ত |
২০১৮ | ওয়েলকাম টু নিউ ইয়র্ক | বিশেষ চরিত্রে | মুক্তিপ্রাপ্ত |
কেদারনাথ | মনছুর খান | মুক্তিপ্রাপ্ত | |
২০১৯ | সোনচিড়িয়া | লক্ষণ সিং/লাকনা | মুক্তিপ্রাপ্ত |
ছিছোড়ে | অনিরুদ্ধ পাঠক/আন্নি | মুক্তিপ্রাপ্ত | |
ড্রাইভ | সমর কাপুর | মুক্তিপ্রাপ্ত | |
২০২০ | দিল বেচারা | ম্যানি | সর্বশেষ চলচ্চিত্র |
বছর | শিরোনাম | চরিত্র | টীকা | সূত্র |
---|---|---|---|---|
২০০৮-২০০৯ | কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল | প্রীত জুনেজা | ||
২০০৯-২০১১ | পবিত্র রিস্তা | মানব দেশমুখ | ||
২০১০ | জারা নাচকে দিখা | প্রতিযোগী | টিম মাস্ত কালান্দার বয়েজ | |
২০১০-২০১১ | ঝলক দিখলা যা ৪ | রানার-আপ | ||
২০১৪ | পবিত্র রিস্তা | মানব দেশমুখ | শেষ উপস্থিতি | |
২০১৫ | সি.আই.ডি. | ব্যোমকেশ বক্সী | বিশেষ উপস্থিতি |
বছর | শিরোনাম | শিল্পী | টীকা | সূত্র |
---|---|---|---|---|
২০১৭ | পাস আও | আরমান মালিক ও আমাল মালিক |
বছর | পুরস্কার | বিভাগ | কাজ | ফল |
---|---|---|---|---|
২০০৯ | ইন্ডিয়ান ট্যালি অ্যাওয়ার্ডস | সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা | পবিত্র রিস্তা | মনোনীত[৪১] |
২০১০ | জি গোল্ড পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | বিজয়ী [৪২] | |
ইন্ডিয়ান ট্যালি অ্যাওয়ার্ডস | সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা | বিজয়ী [৪২] | ||
এক্সপ্লোর ইন্টারন্যাশানাল অ্যাওয়ার্ডস | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | বিজয়ী [৪২] | ||
বিগ স্টার এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস | বিগ স্টার টেলিভিশন অ্যাক্টর (মেল) | বিজয়ী [৪২] | ||
জি রিস্তে পুরস্কার | অঙ্কিতা লোখণ্ডের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ জুড়ি | বিজয়ী [৪২] | ||
মোস্ট পপুলার ফেস (মেল) | মনোনীত[৪২] | |||
২০১১ | লাওনস গোল্ড অ্যাওয়ার্ডস[৪২] | ফেভারিট পপুলার টেলিভিশন অ্যাক্টর (মেল) | বিজয়ী | |
দ্য গ্লোবাল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন অনরস অ্যাওয়ার্ডস | শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন অভিনেতা | বিজয়ী[৪২] | ||
এফআইসিসিআই ফ্রেমস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস | শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন অভিনেতা | বিজয়ী[৪৩] | ||
২০১৩ | স্টার গিল্ড পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রথম অভিনয়) | কাই পো চে! | বিজয়ী[৪৪] |
স্টার গিল্ড পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রধান চরিত্র) | মনোনীত[৪৫] | ||
স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রথম অভিনয়) | বিজয়ী[৪৬] | ||
জি সিনে পুরস্কার | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রথম অভিনয়) | মনোনীত[৪৭] | ||
আইবিন-লাইভ মুভি অ্যাওয়ার্ডস | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | মনোনীত[৪৮] | ||
আইআইএফএ পুরস্কার | প্রধান চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা | মনোনীত[৪৯] |
৩৪ বছর বয়সী সুশান্ত সিং রাজপুতকে ২০২০ সালের ১৪ জুন মুম্বাই এর বান্দ্রা তে তাঁর বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।[৫০][৫১][৫২] পুলিশের দাবি যে ইতোপূর্বে তিনি প্রায় ছয় মাস ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এবং সে কারণে তার চিকিৎসা চলছিল।যদিও সুশান্তের অগণিত ভক্তগণ এই তথ্য মানতে নারাজ।[৫৩]