![]() | এই নিবন্ধটির তথ্যসমূহের যথার্থতা সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। (নভেম্বর ২০২০) |
সূক্ষ্ম গঠন (ইংরেজি: Ultrastructure or ultra-structure) হচ্ছে কোষ এবং জৈবপদার্থের এমন নির্মাণকৌশল যা সাধারণ আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের বিবর্ধন মাত্রার চেয়েও উচ্চতর বিবর্ধন মাত্রায় দৃশ্যমান হয়। এটা দ্বারা গতানুগতিকভাবে, কোন জৈব নমুনা যেমন- কোষ, কলা কিংবা অঙ্গ দর্শনকালে, ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের (TEM) রেজোলিউশন ও বিবর্ধন সীমা বোঝানো হত। স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং সুপার-রেজোলিউশন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও সূক্ষ্ম গঠন দেখা সম্ভব, যদিও কলাস্থানবিদ্যার ক্রিয়াকৌশলগুলোতে TEM এর ব্যবহারই প্রচলিত। অঙ্গাণুর মত কোষীয় গঠনের ক্ষেত্রে, যা সুনির্দিষ্ট পরিবেশের ভেতর কোষকে যথাযথভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, তার সূক্ষ্ম-গাঠনিক নিরীক্ষা করা সম্ভব।
সূক্ষ্ম গঠন এবং আণবিক জাতিজনি (molecular phylogeny) একত্রে জীবের শ্রেণিবিন্যাসের একটি নির্ভরযোগ্য জাতিজনিগত পন্থা।[১] শিল্পক্ষেত্রে, পদার্থের গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ এবং জৈব-সামঞ্জস্য প্রসারে সূক্ষ্ম গঠনের বৈশিষ্ট্যাবলি ব্যবহৃত হয়।
১৯৩১ সালে, জার্মান প্রকৌশলী ম্যাক্স নল (Max Knoll) এবং আর্নস্ট রুস্কা (Ernst Ruska) প্রথম ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।[২] এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আবিষ্কার ও বিকাশের সাথে সাথে, অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করার জন্য পর্যবেক্ষণযোগ্য কাঠামোর বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়; জীববিজ্ঞানীরাও ক্রমশ কোষের অতি-আণুবীক্ষণিক (submicroscopic) বিন্যাস নিয়ে আগ্রহী হতে থাকেন। গবেষণার এই নতুন ক্ষেত্রটি ছিল অন্তর্নিহিত গঠন (substructure) সংশ্লিষ্ট, যা সূক্ষ্ম গঠন নামেও পরিচিত।[৩]
অনেক বিজ্ঞানী সূক্ষ্ম গাঠনিক পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে নানাবিধ বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন, যার মধ্যে রয়েছে:
(১) মানব টিউমার[৪]
(২) ক্লোরোপ্লাস্ট[৫]
(৪) অণুচক্রিকা[৭]
উদ্ভিদ কোষে পাওয়া যায় এমন একটি সাধারণ সূক্ষ্ম-গাঠনিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর কেলাস গঠন।[৯] তাত্ত্বিক ধারণা অনুসারে, উদ্ভিদের বৃদ্ধি বা বিকাশের কাজে ব্যবহারের আগ পর্যন্ত, এসব কেলাস কোষের মধ্যে ক্যালসিয়াম সঞ্চয় করে রাখার কাজ করে।[১০]
প্রাণিদেহেও ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর কেলাস গঠিত হতে পারে; বৃক্কীয় পাথর এক ধরনের সূক্ষ্ম-গাঠনিক বৈশিষ্ট্যেরই দৃষ্টান্ত। তাত্ত্বিকভাবে, ন্যানোব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে ক্যালসিয়াম অক্সালেট বৃক্ক পাথরের গঠন হ্রাস করা যেতে পারে।[১১]
কোষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকৌশলবিদ্যায় সূক্ষ্ম গঠন নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রয়েছে। বহিঃকোষীয় ম্যাট্রিক্স (extracellular matrix, ECM) এর যেকোন পরিবর্তনে কোষ তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়, সুতরাং ইসিএম এর অণুকরণে তৈরি পদার্থ কোষ চক্র এবং প্রোটিন অভিব্যক্তির ওপর বর্ধিত নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।[১২]
অনেক কোষ, যেমন- উদ্ভিদ, ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর কেলাস উৎপন্ন করে এবং এগুলোকে সাধারণত উদ্ভিদ কোষের সূক্ষ্ম-গাঠনিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্যালসিয়াম অক্সালেট এমন একটি পদার্থ যা সিরামিকের চকচকে প্রলেপ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়[৬], এবং এর মধ্যে জৈবপদার্থের গুণাগুণ-ও রয়েছে। কোষের কালচার এবং কলা প্রকৌশলে (tissue engineering) এই কেলাস পাওয়া যায় গবাদি ভ্রূণের রক্তরস (fetal bovine serum) থেকে, এবং কোষ কালচারের বহিঃকোষীয় ম্যাট্রিক্সের জন্য তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।[১৩]
দন্ত প্রতিস্থাপক প্রস্তুতিতে সূক্ষ্ম গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এসব যন্ত্র যেহেতু প্রত্যক্ষভাবে হাড়ের সাথে সংস্পর্শে থাকে, সন্তোষজনক কার্যকারিতার জন্য এর চারপাশের টিস্যুর সাথে এদের আত্মীকরণ জরুরী। দেখা গেছে যে, নিরাময়রত প্রতিস্থাপিত দন্তের ওপর ভার প্রয়োগ করলে, মুখের হাড়ের সাথে অস্থিগত-সংযোজন (Osseointegration) বর্ধিত মাত্রায় ঘটে।[১৪] কোন প্রতিস্থাপকের চারপাশের সূক্ষ্ম গঠন পর্যালোচনা করে, সেটা কতটা জৈবসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দেহ এর প্রতি কীভাবে সাড়া দিচ্ছে, তা নির্ণয় করা যায়। এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, শূকরের অস্থিজাত একটি জৈবপদার্থের কণিকা প্রতিস্থাপন করলে মানবদেহ ঐ পদার্থকে নিজ সূক্ষ্ম গঠনের সাথে একীভূত করে ফেলে এবং নতুন অস্থি গঠন করে।[১৫]
হাইড্রক্সিঅ্যাপেটাইট হচ্ছে একটি জৈবপদার্থ যা সূক্ষ্ম গঠনের মাধ্যমে চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রাদি সরাসরি অস্থিতে বসাতে ব্যবহৃত হয়। ট্রাইক্যালসিয়াম ফসফেট এর সাহায্যে গ্রাফ্ট (শল্যচিকিতসায়, শরীরের এক স্থান হতে দেহকলা অপসারণ করে শরীরের আরেক সাথে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া) তৈরি করা যায় এবং দেখা গেছে যে, অস্থি কলা এই নতুন পদার্থকে নিজের বহিঃকোষীয় ম্যাট্রিক্সের সাথে একীভূত করে নেয়।[১৬] হাইড্রক্সিঅ্যাপেটাইট একটি উচ্চ জৈবসামঞ্জস্যপূর্ণ পদার্থ, এবং সন্তোষজনক জৈবসামঞ্জস্য নিশ্চিত করার জন্য, এর সূক্ষ্ম-গাঠনিক বৈশিষ্ট্যাবলি, যেমন- কেলাসের দিকবিন্যাস, সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।[১৭] যথাযথ কেলাস তন্তু দিকবিন্যাস, প্রবিষ্ট খনিজকে (যেমন- হাইড্রক্সিঅ্যাপেটাইট) প্রতিস্থাপনীয় জৈবিক পদার্থের সাথে আরও সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলতে পারে। সূক্ষ্ম-গাঠনিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ কোন পদার্থের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অর্জনকে সম্ভবপর করে।
|name-list-style=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)