সেন্ট মেরিস নদী Rivière Sainte-Marie | |
---|---|
অবস্থান | |
দেশসমূহ | |
প্রদেশ/অঙ্গরাজ্য | |
শহরসমূহ | Canada: United States: |
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য | |
উৎস | হোয়াইটফিশ উপসাগর (সুপিরিয়র হ্রদ) |
• স্থানাঙ্ক | ৪৬°৩০′০২″ উত্তর ৮৪°৩৬′১৪″ পশ্চিম / ৪৬.৫০০৫৬° উত্তর ৮৪.৬০৩৮৯° পশ্চিম |
• উচ্চতা | ৬০০ ফু (১৮০ মি) |
মোহনা | নর্থ চ্যানেলl (লেক হুরন) |
• স্থানাঙ্ক | ৪৬°০৩′২০″ উত্তর ৮৩°৫৪′৩৪″ পশ্চিম / ৪৬.০৫৫৫৬° উত্তর ৮৩.৯০৯৪৪° পশ্চিম |
• উচ্চতা | ৫৭৭ ফু (১৭৬ মি) |
দৈর্ঘ্য | ৭৪.৫ মা (১১৯.৯ কিমি) |
নিষ্কাশন | |
• গড় | ২,১৩৫ মি৩/সে (৭৫,৪০০ ঘনফুট/সে) |
সেন্ট মেরিস নদী (ফরাসি ভাষায়: রিভিয়েরে স্যান্তে-মেরি) কখনো কখনো যাকে সেন্ট মেরি নদী হিসাবে লেখা হয়, সুপিরিয়র হ্রদ থেকে নিষ্কাশিত হয়ে হোয়াইটফিশ উপসাগরের শেষে শুরু হয়ে ৪.৫ মাইল (১১৯.৯ কিমি) দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হুরন লেকে প্রবাহিত হয়। এর জলধারা ২৩ ফুট (৭.০ মি) উঁচু । [১] নদীটির পুরো দৈর্ঘ্যই একটি আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে কাজ করে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানকে কানাডার অন্টারিও থেকে পৃথক করে। সল্ট সেন্ট মেরি, অন্টারিও, এবং এর ভ্রাতৃশহর সল্ট সেন্ট মেরি, মিশিগান সল্ট সেন্ট মেরি আন্তর্জাতিক সেতু দ্বারা সেন্ট মেরি নদীর দুই তীরে সংযুক্ত রয়েছে। সেন্ট মেরি র্যাপিডের অবস্থান সুপিরিয়র হ্রদ থেকে নদীর বহির্গমনস্থানের ঠিক নিচেই । মনুষ্যনির্মিত সু লকসমূহ এবং সল্ট সেন্ট খালের মাধ্যমে বিশাল মালবাহী জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। এই নদীটির দুটি উপনদী রয়েছে। এগুলো হল গার্ডেন নদী এবং বার নদী। অন্যান্য কানাডীয় উপনদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফোর্ট ক্রিক, রুট নদী, ছোট কার্প নদী, বড় কার্প নদি,লোয়ার ইকো নদী,ডেসবারাটস নদী এবং টু ট্রি নদী। অপরদিকে আমেরিকান উপনদীগুলোর মধ্যে গোগোমেইন নদী, মুনুস্কং নদী ,ছোট মুনুস্কং নদী, শার্লট নদী এবং ওয়াইস্কা নদী উল্লেখযোগ্য।
ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে ওজিবওয়ে (চিপ্পিওয়া) নামক আমেরিকার আদিবাসীরা সেখানে বসবাস করত। তারা সেখানে সেন্ট মেরিস নদীর র্যাপিডের আশেপাশে মাছ ধরত, ব্যবসা করত এবং একটি নৌযান সামগ্রী বহন করত, যেটাকে তারা বাওউইতিগং বলে অভিহিত করত, যার অর্থ ছিল "র্যাপিডের নির্ঝর"। আনুমানিক ১৬২১ সালের দিকে ফরাসী অভিযাত্রিক আতিয়েন ব্রুলে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে র্যাপিডের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করেন । ১৬৪১ সালে জেসুইট পুরোহিত আইজাক জোগস এবং চার্লস রেম্বল্ট ব্র্যালির পথ অনুসরণ করেছিলেন এবং র্যাপিডগুলোতে বেশ কিছু ওজিবওয়েদের খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তারপরই সে স্থানের নামকরণ করেন সেল্ট সেন্ট মেরি। মেরি সল্ট (মাঝের এবং প্রথমদিকে আধুনিক ফরাসি বানান সটের) অর্থ "লাফানো"; অতএব, গৌণ অর্থ "র্যাপিডস" কারণ জল 'লাফ দেয়।'মধ্য ও পূর্ব আধুনিক ফরাসি শব্দ 'সউট' এর অর্থ ছিল "লাফ" সুতরাং এর পরবর্তী অর্থ টি র্যাপিডকেই নির্দেশ করে কারণ সেখানে পানি লাফ দেয়। ১৭৯৬ সনে একটি বাণিজ্যিক ঘাঁটি রক্ষা করার জন্য কানাডীয় তীরে সেন্ট জোসেফ বন্দর স্থাপিত হয় এবং সে স্থানে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতকরণ এবং অব্যাহত রাখা হয়। ১৮১২ সালের যুদ্ধে এই ঘাঁটিটির বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সর্বপ্রথম আধুনিক লকের কাজ সম্পূর্ণ করা হয় ১৮৫৫ সালের মে মাস নাগাদ। ইরাস্তাস করনিং এর সেন্ট মেরি ফলস শিপ কোম্পানি দ্বারা এই কাজ সম্পাদিত হয়। এটি "আমেরিকান লক " নামেও পরিচিত ছিল। বর্তমানে আমেরিকার অংশে চারটি সমান্তরাল লক কার্যকর রয়েছে , যদিও এদের মধ্যে কেবল দুটি লক নিয়মিত ব্যবহৃত হয়। ১৯৫৯ সনের পরে পরেই সু লক গ্রেট লেকস ওয়াটারওয়ে সিস্টেমের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। আংশিকভাবে বিশেষকরে উলসলে অভিযান এর কারনবশত আমেরিকানদের সু লক ব্যবহার করে যাতায়াত করায় অস্বীকৃতি ছিল তাই ১৮৯৫ সনে একটি কানাডীয় লক প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে কানাডীয় লকটি প্রমোদ তরী যাতায়াত এবং কানাডার জাতীয় ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সু লকসমূহ এবং সেন্ট মেরিস নদীর জলপথ ছিল কঠোরভাবে সুরক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং কানাডীয় সেনাবাহিনী এটি পাহারা দিত এবং ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি এর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা কমান্ড ছিল এদের দিক নির্দেশক। মার্চ থেকে নভেম্বর মাস প্রজন্ত জলপথ ব্যবহারযোগ্য থাকত বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের শতকরা ৯০ ভাগ লৌহের আকরিক ১৯৩৯ সালে এ পথে চালান হত। আকরিকসমূহ সাধারণ গৃহের কাজের জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু এর ফলে সামরিক উৎপাদন হয়ে পড়ে সঙ্কটাপূর্ণ। ফোর্ট ব্র্যাডি এর কাছাকাছি স্থানে একদল পদাতিক বাহিনী ঘাঁটি গেড়েছিল এবং তাঁরা ১৯৩৯ সনের সেপ্টেম্বরে সঙ্ঘটিত ইউরোপীয় যুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের ঠিক শুরুর দিকে নিরাপত্তা প্রদান করেছিল। ১৯৪০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এটি একটি কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং ১৯৪১ সালের মে মাসে মিলিটারি পুলিশ বাহিনী কর্তৃক প্রতিস্থাপিত হয়। ১৯৪১ সনের ডিসেম্বরে পার্ল হারবারের পরেই সম্ভাব্য জার্মান প্যারাট্রুপার কর্তৃক অতর্কিত আকাশ আক্রমণের ভীতি থেকে সেখানে প্রতিরক্ষা অনেকাংশেই বৃদ্ধি করা হয়। এক্ষেত্রে জার্মান অধিকৃত নরওয়ের কথা কল্পনা করা হয় , যেখানে গ্রেট সার্কেল রাউট ধরে হাডসন উপসাগর এ ইউ বোটে অবাধ বিচরণ করত এবং যেগুলো দিয়ে আকাশ আক্রমণ পরিচালনার পাশাপাশি ওয়ান ওয়ে বোম্বিং আর প্যারাট্রুপ অভিযান সঙ্ঘটিত হত।১৯৪২ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিযুক্ত ইউনিটসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৩১ তম পদাতিক বাহিনী রেজিমেন্ট , বিমান বিধ্বংসী রেজিমেন্ট এবং প্রতিবন্ধক বেলুন বাহিনী । এতে আনুমানিক প্রায় ৭০০০ বাহিনী অংশগ্রহণ করেছিল। সেসময় কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রয়েল কানাডীয় মাউন্টেড পুলিশ এর অন্তর্ভুক্ত বিমান বিধ্বংসী বাহিনী, সেনা ছাউনি এবং প্রতিরক্ষা অবস্থান সরবরাহ করেছিল। তারা হাডসন উপসাগরের উত্তরে গমনকারী ২৬৬ টি আকাশযান পর্যবেক্ষণ পোস্টের প্রয়োজনে নিযুক্ত আকাশযান চিহ্নিতকরণ সংস্থার জন্য একটি সতর্কীকরণ সিস্টেমও তৈরি করে দিয়েছিল। এটিকে উত্তর অন্টারিও এর পাঁচটি যুক্তরাষ্ট্রীয় রাডার স্টেশনের মাধ্যমে উদ্দীপ্ত করা হয়েছিল। ১৯৪৩ সালের শেষ সময়ে লক নষ্ট হবার সময় যখন দেখা গেল যে কোনো ঝুঁকি নেই এবং অতিরিক্ত উপকরন মজুদ হয়ে গেছে , তখন যুক্তরাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ২৫০০ সেনাদলে হ্রাস করা হল। তার সাথে বিমান বিধ্বংসী এবং আকাশ সতর্কীকরণ প্রতিরক্ষাও পরিত্ত্যাক্ত ঘোষণা করা হল। ১৯৪৪ সনের জানুয়ারি মাসে দূর্গ রক্ষার্থে নিয়োজিত সেনাদলের পরিবর্তে একক মিলিটারি পুলিশ বাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়।[২]
সহজে যানবাহন চলাচলের উদ্দেশ্যে নদীর ওপর সল্ট সেন্ট মারি আন্তর্জাতিক সেতু , একটি ইস্পাতের ভারবাহী আর্চ সেতু নির্মিত হয়েছে। এর ঠিক পশ্চিম দিকে রয়েছে সল্ট সেন্ট মারি আন্তর্জাতিক রেল সেতু নামক সিঙ্গেল ট্র্যাক সংবলিত একটি রেলসেতু।
এডিসন সল্ট হাইড্রোইলেক্ট্রিক প্ল্যান্ট নামক একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র সেন্ট মেরি নদীর পূর্ব দিকের শেষ সীমানায় অবস্থিত। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী মারি খাল সুপিরিয়র হ্রদ এবং হুরন হ্রদের মাঝখানে অবস্থিত এবং আমেরিকান জলধারার দক্ষিণে অবস্থিত শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ১৩৪০ ফুট ( ৪১০ মিটার ) দীর্ঘ।[৩] প্ল্যান্টটিতে রয়েছে ৭৪ টি থ্রি ফেজ জেনারেটর যেগুলো ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এটির কাজ সম্পন্ন হয় ১৯০২ সালে। হাইড্রো প্যান্টটিতে নদী খননকালে কিছু পাথর পাওয়া গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীদের মালিকানাধীন রয়েছে একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র যেটি সরাসরি পরিচালনা করা হয় এবং তা আমেরিকান জলধারার উত্তর দিকে অবস্থিত। সর্বশেষ ফ্রাঞ্চিস এইচ. ক্লেরগু উৎপাদন কেন্দ্র যেটি ব্রুকফিল্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ইনকর্পোরেশনের মালিকানাধীন এবং নিয়মিত পরিচালনা করা হয়। এটিও একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট যা কানাডীয় লকের ঠিক উত্তর দিকে অবস্থিত ।[৪] এটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫২ মেগাওয়াট । এই বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের কাজ শেষ হয় ১৯৮১ সালে।
এডিসন সল্ট পাওয়ার ক্যানেল পূর্বদিকের শেষ সীমানায় অবস্থিত সেন্ট মেরিস ফল কে শক্তি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হত। ক্যানেলটি মূল ভূখণ্ড থেকে মিশিগানের ডাউনটাউন এ অবস্থিত সল্ট সেন্ট মেরিকে দ্বীপের ন্যায় পৃথক করে। এটি ১৮৯৮ সনের সেপ্টেম্বরে মিশিগান লেক সুপিরিয়র পাওয়ার কোম্পানি ক্যানেল নামে যাত্রা শুরু করে , কিন্তু সম্পূর্ণ হয় ১৯০২ সালে এডিসন সল্ট ইলেকট্রিক কোম্পানির মাধ্যমে। হেডগেট থেকে পাওয়ার প্ল্যান্টের শেষ পর্যন্ত এটি প্রায় ২.২৫ মাইল(৩.৬২ কিমি) দীর্ঘ, ২০০ ফুট (৬১ মিটার) হতে ২২০ ফুট(৬৭ মিটার) চওড়া এবং ২৪ ফুত(৭.৩ মিটার ) গভীর।[৫] এখানে পানি ঘণ্টায় প্রায় ৭ মাইল (১১ কিমি) বেগে খালে নেমে আসে।
সেন্ট মেরিস র্যাপিডসমূহের চারদিকে আমেরিকার সু লকগুলো ছিল মুখ্য গমনপথ । তবে কানাডীয় সল্ট সেন্ট মেরি ক্যানেল এখনও ব্যবহৃত হয় প্রমোদতরী চলাচলের জন্য।
র্যাপিডসমূহের মুখে কিছু ক্ষতিপূরণীয় কাজ পরিলক্ষিত হয় যেগুলো লেক সুপিরিয়রের স্রোতের বহিঃপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে ১৬ টি গেট , যার অর্ধেক আমেরিকান অংশে রয়েছে। আর বাকি অর্ধেক রয়েছে কানাডীয় অংশে। এগুলোর কাজ সম্পূর্ণ হয় ১৯০১ এবং ১৯২১ সালের মাঝামাঝি।[৬] এই প্রবাহ আন্তর্জাতিক সংযোগ কমিশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। র্যাপিডের উত্তর দিকে একটি কনক্রিটের বার্ম রয়েছে যেটি নিম্ন বহিঃস্রোত হতে মাছের ডিম রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ হতে পানির বহিঃস্রোত বৃদ্ধির ফলে এ সমস্যা সৃষ্টি হত ।
সেন্ট মেরিস নদী যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে স্বাক্ষরিত গ্রেট লেক এগ্রিমেন্ট চুক্তিতে উদ্বেগের এলাকা বা এরিয়া অব কনসার্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে।