সেম্বিয়ান মহাদেবী মহারাজ গন্ধরাদিত্য চোলের স্ত্রী হিসাবে ৯৪৯ খ্রী - ৯৫৭ খ্রী পর্যন্ত চোল সাম্রাজ্যের রাণী অথবা সম্রাজ্ঞী পদে অভিষিক্ত ছিলেন। তিনি চোল সম্রাট উত্তম চোলের মাতা ছিলেন। [১] চোল সাম্রাজ্যের অন্যতম শক্তিশালী সম্রাজ্ঞী হিসাবে তিনি শাসণ করেছিলেন ও ষাট বছর ধরে তৎকালীন চোল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করেছিলেন এবং দক্ষিণ ভারতের অসংখ্য মন্দিরে দান-ধ্যান দিয়েছিলেন। ৯৪১ খ্রীস্টাব্দের একটি শিলালিপি থেকে শিব দেবতার মন্দির ও স্থানীয় দেবালয়ে সেম্বিয়ান মহাদেবীর বিশেষ দানের কথা বিশদভাবে জানা যায়। [২] [৩] [৪]
তার স্বামী গন্ধরাদিত্য চোলের মৃত্যুর পর অবিলম্বে তিনি তার সম্রাজ্ঞী -এর খেতাব হারান এবং পরে তিনি তাঞ্জাভুরের বিধবা (রাণী ডোয়াগার) নামে পরিচিত হন। তিনি তখন শুধুমাত্র সাদা বস্ত্র পরিধান করতেন। সাদা যা শোকের রঙ হিসাবে সর্বত্র পরিচিত। তিনি সারা জীবন শোকপালনের মধ্যে ব্যতীত করেছিলেন। [৫]
অনেকে বিশ্বাস করতেন তিনি দেবী পার্বতীর মানবী অবতার। [৬]
ইতিহাসে গন্ধরাদিত্য চোলের ( শ্রী-গন্দারদিত্ত দেবতা তম-পিরাত্তিয়ার ) স্ত্রী এবং রাজা উত্তম চোলের মাতা হিসাবে তার উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন শিলালিপি থেকে আমরা জানি যে তিনি একজন মাজভরায়ার সর্দারের কন্যা ছিলেন। বিশ্বস্ত তথ্য থেকে জানা যায় তিনি সর্বদা নিজেকে শ্রী সেম্বিয়ান মাদেইয়ারের কন্যা হিসাবে উল্লেখ করতেন। [৭] [৮]
তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করেছিলেন যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দির কুটরালাম, বিরুধাচালাম, আদুথুরাই, ভাক্কারাই, আনাঙ্গুর ইত্যাদি স্থানে অবস্থিত [৯] তিনি চোল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত স্থাপত্য ও ভাস্কর্য রচনার এক প্রধান পৃষ্ঠপোষ্ক ছিলেন। [১০] তার নির্মিত প্রাচীনতম মন্দিরগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল বিখ্যাত তিরু-আরা-নেরি-আলভার মন্দির। তিনি ৯৬৭-৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে নল্লুর কান্দাস্বামী মন্দিরে ব্রোঞ্জ এবং গহনা উপহার দিয়েছিলেন। তার দান করা দেবীর ব্রোঞ্জ মূর্তি আজও নল্লুর মন্দিরে পূজিত হয়। সেই মূর্তি ব্রোঞ্জ নির্মিত এবং এই মুর্তির অনন্য শৈলী চোল সাম্রাজ্যের শিল্পের পরিচায়ক। [১১]
পরকেশরীবর্মণ উত্তম চোলের একটি শিলালিপি থেকে আমরা জানতে পারি যে প্রত্যেক বছরে কোনেরিরাজপুরমের উমামহেশ্বরস্বামীর মন্দিরে জ্যৈষ্ঠ মাসে, রাণীর জন্মদিনে একটি নিয়মিত বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত যা শ্রীবালি অনুষ্ঠান নামে পরিচিত ছিল।[১২]
সেম্বিয়ান মহাদেবী ছিলেন মন্দির নির্মাতা [১৩] এবং শিল্পকলার একজন অত্যন্ত সম্মানিত পৃষ্ঠপোষক। শহরের একটি শিব (শিব) মন্দির তার নামে নামাংকিত করা হয়েছিল যেখানে তিনি তার জন্মদিন পালন করতেন। তার সম্মানে তার একটি ধাতব প্রতিকৃতি মন্দিরে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সম্ভবত তার পুত্র এই মুর্তির নির্মান করেছিলেন। এই উচ্চ শৈলীযুক্ত ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটি প্রাচীন ভারতীয় শিল্পে রাজকীয় এবং ঐশ্বরিক প্রতিকৃতির একটি বিশিষ্ট উদাহরণ। মূর্তিটি দেবী পার্বতীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।