সেরিব্রোস্পাইনাল তরল

সেরিব্রোস্পাইনাল তরল যা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (ইংরেজি: Cerebrospinal fluid) বা সিএসএফ নামেও পরিচিত হচ্ছে মস্তিষ্কসুষুম্নাকাণ্ডে থাকা এক প্রকার স্বচ্ছ ও বর্ণহীন বহিঃকোষীয় তরল। মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠের ক্লোরয়েড প্লেক্সাসে থাকা বিশেষ ধরনের এপেন্ডাইমাল কোষের থেকে এই তরল উৎপন্ন হয় এবং নিঃসরিত তরল পরবর্তীতে অ্যানারকয়েড গ্র্যানুলেশনে শোষিত হয়। যে-কোনো সময় শরীরে প্রায় ১২৫ মিলিলিটার সেরিব্রোস্পাইনাল তরল জমা থাকে, এবং প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মিলিলিটার সিএসএফ উৎপন্ন হয়। সিএসএফ খুলির মধ্যে থাকা মস্তিষ্কের জন্য অনেকটা ধাক্কারোধী গদির মতো কাজ করে যা মস্তিষ্ককে মেকানিক্যাল এবং অনাক্রম্যগত প্রতিরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের স্বনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের আওতাভুক্ত মস্তিষ্কের রক্তসংবহন নিয়ন্ত্রণেও সেরিব্রোস্পাইনাল তরলের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।

মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড অংশ (অ্যারাকনয়েড ম্যাটারপিয়া ম্যাটারের মধ্যবর্তী অংশ), মস্তিষ্ক ঘিরে ও অভ্যন্তরে থাকার প্রকোষ্ঠীয় তন্ত্র, এবং সুষুম্নাকাণ্ড জুড়ে সেরিব্রোস্পাইনাল তরলের উপস্থিতি রয়েছে। মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠ, সাবঅ্যারাকনয়েড সিস্টার্ন, সাল্কাস, এবং সুষুম্নাকাণ্ডের কেন্দ্রীয় নলও সিএসএফ দ্বারা পূর্ণ থাকে।

রোগনির্ণয় বা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে সিএসএফ-এর নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজন হলে লাম্বার পাংচারের মাধ্যমে তা করা হয়। এর মাধ্যমে অন্তঃকরোটি চাপ যেমন নির্ণয় করা সম্ভব তেমনি মস্তিষ্কের বিভিন্ন সংক্রমণ বা মেনিনজেসের সংক্রমণজনিত রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিসের নথিতে সেরিব্রোস্পাইনাল তরলের উপস্থিতির কথা জানা গেলেও আঠারো শতকে সুইডিশ বিজ্ঞানী ইমানুয়েল শয়েডবর্গকে এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। আর ১৯১৪ সালে মার্কিন স্নায়ুশল্যচিকিৎসক হার্ভি কাশিং এটি প্রমাণ করে দেখান যে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল মস্তিষ্কের ক্লোরয়েড প্লেক্সাস থেকে নিঃসরিত হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]