সেরেন্দিপের তিন রাজকুমার হল পেরেগ্রিনাগিও ডি ট্রে জিওভানি ফিগলিউলি দেল রে ডি সেরেন্দিপ্পো (ইতালীয়: Peregrinaggio di tre giovani figliuoli del re di Serendippo) গল্পের ইংরেজি সংস্করণ।[১] ইতালীয় সংস্করণটি ১৫৫৭ সালে ভেনিসে মিশেল ট্রামেজিনো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। ট্রামেজিনো দাবি করেছিলেন যে তিনি ক্রিস্টোফোরো আর্মেনোর কাছ থেকে গল্পটি শুনেছিলেন। ক্রিস্টোফোরো ১৩০২ সালের আমির খসরুর ফার্সি রূপকথা হাশত-বিহিশত-এর[২] প্রথম বইকে ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। গল্পটি প্রথমে একটি ফরাসি অনুবাদের মাধ্যমে ইংরেজিতে এসেছিল এবং এখন বেশ কিছু অনুদিত বইয়ের ছাপানো সংস্করণ পাওয়া যায়না।[৩][৪][৫] সেরেন্দিপ হল শ্রীলঙ্কার (সিলন) শাস্ত্রীয় ফার্সি নাম।[৫]
গল্পটি ইংরেজি-ভাষী বিশ্বে সেরেন্দিপিটি (ইংরেজি: serendipity) শব্দের উৎস হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হোরেস ওয়ালপোল তাঁর "সিলি ফেয়ারি টেল"-এর এক অংশে এই শব্দটি এনেছেন, যেখানে "অপ্রত্যাশিত ঘটনা ও বিচক্ষণতা" দ্বারা তিন রাজপুত্র হারিয়ে যাওয়া উটের প্রকৃতি বুঝতে পেরেছিল।[৬] উৎসের একটি পৃথক ধারায়, গল্পটি ভলতেয়ার তার ১৭৪৭ সালেরজাদিগ বইতে ব্যবহার করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে গোয়েন্দা কথাসাহিত্যের বিবর্তন ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্ব-উপলব্ধি, উভয় ক্ষেত্রেই অবদান ছিল।
"প্রাচীন কালে দূর প্রাচ্যের সেরেন্দিপ্পো দেশে, গিয়াফার নামে একজন বিশিষ্ট ও শক্তিশালী রাজা ছিলেন। তার তিনজন ছেলে ছিল যারা তার খুব প্রিয় ছিল। একজন ভাল পিতা হিসাবে তাদের শিক্ষার বিষয়ে তিনি খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পুত্রদের কেবলমাত্র দুর্দান্ত শক্তিই নয়, তাদের এমন সব ধরণের গুণাবলীর শিক্ষাও দিতে হবে বিশেষভাবে রাজকুমারদের যার প্রয়োজন রয়েছে।"
তিনি সম্ভাব্য সেরা গৃহশিক্ষকদের সন্ধান করেন। "এবং তাদের কাছে তিনি নিজের ছেলেদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, তাঁর এই বিশ্বাস ছিল যে প্রশিক্ষকেরা তার পুত্রদের সর্বোত্তম শিক্ষা দিতে পারবে যাতে তারা অবিলম্বে তার নিজের পুত্র হিসাবে স্বীকৃত হতে পারে।"
গৃহশিক্ষকগণ কলা ও বিজ্ঞানে তিন রাজপুত্রের চমৎকার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয়ে রাজাকে তা অবহিত করেন। তবে, তিনি তখনও তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন এবং প্রত্যেককে পালাক্রমে ডেকে ঘোষণা করেন যে তিনি তাদের রাজা হিসাবে রেখে মননশীল জীবনে অবসর নেবেন। প্রত্যেকেই বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে, পিতার উচ্চতর প্রজ্ঞা এবং শাসন করার যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস পোষণ করে।
রাজা সন্তুষ্ট হন, কিন্তু তার ছেলেরা খুব সুখ ও সুযোগ-সুবিধার মধ্যে শিক্ষা পাচ্ছে এই ভয়ে সিংহাসন প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের উপর ক্রোধের ভান করেন এবং তাদের দেশ থেকে দূরে পাঠিয়ে দেন।
তিন রাজকুমার বিদেশে পৌঁছানোর সাথে সাথেই তারা এমন একটি উটকে চিহ্নিত করার জন্য রহস্যের সূত্র খুঁজে পায় যাকে তারা কখনও দেখেনি। তারা শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে উটটি খোঁড়া, এক চোখে অন্ধ, তার একটি দাঁত নেই, সে একজন গর্ভবতী মহিলাকে পিঠে নিয়ে যাচ্ছে এবং তার একদিকে মধু ও অন্য দিকে মাখন বহন করছে।