সৈন্য বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৫৮ (ইংরেজি: Armed Forces (Special Powers) Act (AFSPA)) হচ্ছে ভারতীয় সংসদের আইন যেটি ১৯৫৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পাস হয়।[১] এটির মাত্র ছয়টি ধারা ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে অশান্ত এলাকায় ("disturbed areas") আইন প্রয়োগের অনুমোদন দেয়।
ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭ রাজ্য—অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম ও ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে গঠিত হয় । গত শতকের আশির দশকে পঞ্জাবে খলিস্তান আন্দোলন এবং পরে ৯০ দশকে জম্মু ও কাশ্মীরে এই আইন প্রয়োগ করা হয়। তখন থেকে সেখানেও এই আইন বলবৎ রয়েছে।
এই আইন অনুযায়ী, সেনাবাহিনী যে কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গুলি করতে পারবে। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারবে। বিনা ওয়ারেন্টে যে কোন জায়গায়, যে কারও বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে। কোথাও জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে বলে সন্দেহ হলে, তা নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দিতে পারবে। রাস্তায় কোনও যানবাহনের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ করলে, তা থামিয়ে তৎক্ষণাৎ তল্লাশি চালানো যাবে। এবং সর্বোপরি এই আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সেনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।
আইনটি দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে অনবরত সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে এই বলে যে, আইন প্রয়োগকারী এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেসব জায়গায় হত্যা, অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা, অপহরণ, হারিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী বাহিনী জড়িত থেকেছে।[২] ৬ডিসেম্বর ২০২১ নাগাল্যান্ডে সেনাকর্তৃক সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পর এই আইন বাতিলের দাবি উঠেছে।
২০০০ সালে এই আইনের অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে মণিপুরে ১০০ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল অসম রাইফেলসের সেনাবাহিনী। এই ঘটনার প্রতিবাদেই মণিপুরের বিখ্যাত সমাজসেবী ইরম শর্মিলা চানু দীর্ঘ ১৬ বছর অনশন করেন। এছাড়াও কাশ্মীরবাসীদের উপর এই আইন চাপিয়ে তাঁদের সাংবিধানিক প্রতিকার চাওয়ার ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে নিন্দার ঝড় দেখা দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।