সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান | |
---|---|
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৬ আগস্ট ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | জাহিদ ফারুক (প্রতিমন্ত্রী) |
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ৯ আগস্ট ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | সাবের হোসেন চৌধুরী (মন্ত্রী) |
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ৮ আগস্ট ২০২৪ | |
রাষ্ট্রপতি | মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | হবিগঞ্জ, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ১৫ জানুয়ারি ১৯৬৮
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | আবু বকর সিদ্দিক[১] |
সন্তান | ৩ |
পিতামাতা | সৈয়দ মহিবুল হাসান (পিতা), সুরাইয়া হাসান (মাতা) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
জীবিকা | আইনজীবী |
যে জন্য পরিচিত | জাহাজ ভাঙা শিল্পে অবদান বেলার প্রধান নির্বাহী |
পুরস্কার | দেখুন |
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (জন্ম: ১৫ জানুয়ারি ১৯৬৮) একজন বাংলাদেশী আইনজীবী, পরিবেশবিদ। তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা।[২] তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী।
একজন পরিবেশবিদ হিসেবে, তার কাজ বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য প্রবিধানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। ২০০৯ সালে এ কাজের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের "পরিবেশ পুরস্কার" এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কারে ভূষিত হন।[৩] ২০০৯ সালে তিনি টাইম সাময়িকীর "হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট" খেতাব লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি ফিলিপাইনভিত্তিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ১৯৬৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ঢাকার ধানমন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃনিবাস হবিগঞ্জের নরপতি হাভেলি নামক একটি বাঙালি মুসলিম জমিদার পরিবারে।[৪] তার বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসান,[৫] মা সুরাইয়া হাসান।
তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রথমে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থেকে পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন।[৫][৪] তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক এবং ১৯৯৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[৬][৭] ১৯৯৩ সালে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশকয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ লাভ করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩ সালের জুলাইয়ে তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতিতে (বেলা) যোগ দেন। এক বছর আগে বেলা ১৯৯২ সালে মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। এরপর ১৯৯৭ সালে বেলা'র সংগঠক ও প্রধান মহিউদ্দিন ফারুক মৃত্যুবরণ করলে রিজওয়ানা 'কমনওয়েলথ বৃত্তি'র সুযোগ হাতছাড়া করে বেলা'র প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। বেলা'র হয়ে তিনি পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।[৮] ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা পুরান ঢাকায় অন্যায়ভাবে ১৮৬০ সালের পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রচারকাজ চালাচ্ছিলেন। বেলা'র মাধ্যমে জনস্বার্থে আদালতে মামলা করে রিজওয়ানা একটি মাইলফলক তৈরি করেন। আদালত এই কাজকে জনস্বার্থের বিপরীত বলে রায় দেয়।[৮] এরপর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এজাতীয় কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এরপর তিনি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেন। তিনি বেলা'র মাধ্যমে ২০০৩ সালে জাহাজ ভাঙ্গা ইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তাহীনতা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাহীনতা, এ শিল্প থেকে যথেচ্চ বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে। এরপর শ্রমিকদের অধিকার আদায়, বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধে করেছেন আরও তিনটি মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের মার্চে আদালতের রায়ে 'পরিবেশগত ছাড়পত্র' ছাড়া জাহাজ ভাঙ্গার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।[৮] এছাড়াও জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরি, পলিথিনের যথেচ্চ ব্যবহার, পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, চিংডির ঘের, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যেখানেই পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই তিনি এবং তার নেতৃত্বে বেলা, পরিবেশ রক্ষায় আইনিভাবে এগিয়ে এসেছে।[৮] তিনি বেলা'র প্রধান নির্বাহী ছাড়াও ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশের সহসভাপতি এবং এনজিও এরডিআরএসের সভাপতি। এছাড়া তিনি "নিজেরা করি" সংগঠন ও এসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের একজন সদস্য। বেসরকারি এসব কাজ ছাড়াও তিনি সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেন্ডস অব আর্থ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী সদস্য; এনভায়রনমেন্টাল ল' এলায়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল' কমিশন অব দ্য আইইউসিএনের সদস্য। এছাড়া তিনি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব এনভায়রনমেন্টাল এক্টিভিস্ট-এ।[৭]
তিনি ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন[২] এবং ৯ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।[৯] ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান।[১০]
তিনি সহপাঠী আইনবিদ ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিকর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন সন্তানের জননী: মেয়ে নেহলা, দুই ছেলে যাবির ও জিদান।
২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল, রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকি অপহৃত হন।[১১] চাঞ্চল্যকর এই অপহরণের ৩৬ ঘণ্টা পরেই আবার অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেন। যদিও অপহরণের কারণ কিংবা জড়িতদের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।[১২]
রিজওয়ানার উদ্যোগে বেলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু পরিবেশ রক্ষা ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের ভূমিকা সংক্রান্ত প্রকাশনা। এছাড়াও তার ব্যক্তিগত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে:[৪]
২০০৩ সালে রিজওয়ানার পরিচালিত সংগঠন বেলা, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি কর্তৃক গ্লোবাল ৫০০ রোল অব অনার পুরস্কারে ভূষিত হয়।[৭]
বছর | সম্মাননা | সংগঠন | সূত্র |
---|---|---|---|
২০০৭ | পরিবেশ পুরস্কার | বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় | পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে অবদান |
২০০৮ | সেলিব্রেটিং উইমেনহুড পুরস্কার | নেপাল ভিত্তিক সৃজনশীল বিবৃতি এবং দক্ষিণ এশিয়া অংশীদারিত্ব | [৭] |
২০০৯ | গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কার | [১৩] | |
হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট | টাইম | [৮][১৪][১৫][৬][১৬] | |
২০১২ | রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার | রামোন ম্যাগসেসে এওয়ার্ড ফাউন্ডেশন | [১৭][১৮][১৯] |
২০২২ | আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার | মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর | [২০][২১] |
Syeda Rizwana Hasan, from Bangladesh, is being recognized for 'her uncompromising courage and impassioned leadership in a campaign of judicial activism in Bangladesh that affirms the people's right to a good environment as nothing less than their right to dignity and life.'