সোনাল

সোনাল
(Common Birdwing)
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Papilionidae
গণ: Troides
প্রজাতি: T. helena
দ্বিপদী নাম
Troides helena
(Linnaeus, 1758)

সোনাল[] (বৈজ্ঞানিক নাম: Troides helena) এক প্রজাতির বড় আকারের প্রজাপতি, যাদের মূল শরীরটা উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের, ডানা কালো এবং তার উপর উজ্জ্বল হলুদ রঙের নকশাযুক্ত। এই প্রজাপতির সামনের ডানার উভয় পিঠ কুচকুচে কালো বর্ণের হয়, শিরার ধার বরাবর ধূসর আভা দেখা যায়। পিছনের ডানা উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের কিন্তু তার প্রতিটি প্রান্ত কালো রঙ দিয়ে ঘেরা। স্ত্রী প্রজাপতির ডানায় এই কালো ঢেঊএর পরে, বার আঁচলে বড়বড় কালচে ফোঁটার সারি দেখা যায়। সোনাল ওড়ে নিরুদবেগ ভঙ্গিতে এবং এদের বিশাল আকারের জন্য একটা রাজকীয় ভাব দেখা যায়।[] এরা ‘প্যাপিলিওনিডি’ পরিবারের এবং 'প্যাপিলিওনিনি' উপগোত্রর সদস্য। এদের ১৭টি উপপ্রজাতি রয়েছে।

প্রসারিত অবস্থায় সোনালের ডানার আকার ১৪০-১৯০মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[]

উপপ্রজাতি

[সম্পাদনা]

সোনালের প্রজাতিগুলো হলো:[]

  • T. h. antileuca Rothschild, 1908
  • T. h. bunguranensis Ohya, 1982
  • T. h. cerberus (C. & R. Felder, 1865)
  • T. h. demeter Rumbucher & Schäffler, 2005
  • T. h. dempoensis Deslisle, 1993
  • T. h. euthycrates Fruhstorfer, 1913
  • T. h. ferrari Tytler, 1926
  • T. h. hahneli Rumbucher & Schäffler, 2005
  • T. h. heliconoides (Moore, 1877)
  • T. h. hephaestus (Felder, 1865)
  • T. h. hermes Hayami, 1991
  • T. h. hypnos Rumbucher & Schäffler, 2005
  • T. h. isara Rothschild, 1908
  • T. h. mopa Rothschild, 1908
  • T. h. mosychlus Fruhstorfer, 1913
  • T. h. neoris Rothschild, 1908
  • T. h. nereides Fruhstorfer, 1906
  • T. h. nereis (Doherty, 1891)
  • T. h. orientis Parrott, 1991
  • T. h. propinquus Rothschild, 1895
  • T. h. rayae Deslisle, 1991
  • T. h. sagittatus Fruhstorfer, 1896
  • T. h. spilotia Rothschild, 1908
  • T. h. sugimotoi Hanafusa, 1992
  • T. h. typhaon Rothschild, 1908
  • T. h. venus Hayami, 1991

ভারতে প্রাপ্ত সোনালের উপপ্রজাতি

[সম্পাদনা]

ভারতে সাধারণত সোনালের যে তিনটি উপপ্রজাতি দেখা যায় তা হলঃ-[][]

বিস্তার

[সম্পাদনা]

সাধারণত এই জাতীয় প্রজাপতিটি ভারতে মুসৌরি থেকে আসাম, সিকিম, নেপাল এবং তরাই অঞ্চলে ৪৭০০ফুট অবধি দেখা যায়। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াতেও প্রচুর পরিমানে দেখা যায়।

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

পুরুষ

[সম্পাদনা]

সামনের ডানার উপরিতল ঘন ভেলভেট কালো। সেল এর বাইরে শিরাগুলির উভয় পার্শ্বে হালকা চকচকে লম্বা সাদা দাগ চোখে পড়ে। সিলিয়া ছোট এবং কালো এবং প্রতীতি ইন্টারস্পেসের মধ্যভাগে হালকা হলুদের ছোঁয়াযুক্ত ফ্যাকাসে সাদা।

পিছনের ডানার উপরিতলে উদর লাগোয়া অংশ, এপিকাল অর্দ্ধ, টার্মেন, টর্নাস, সেল এর গোড়ার দিক এবং ইন্টারস্পেস ৭ এ বেসাল অর্দ্ধ অবধি কোস্টাল অংশ ভেলভেট এর ন্যায় কালো। ডানার বাকী অংশ উজ্জ্বল রেশম হলুদ। টর্নাস অবধি টার্মিনাল অংশ চওড়াভাবে ভেলভেট এর ন্যায় কালো ও ভিতরের দিকে প্রায় শঙ্কুর ন্যায় ঢেউ খেলানো। শিরাগুলি সুস্পষ্ট তবে সরু কালো। সমস্ত পুরুষ নমুনাতেই পোষ্টডিসকাল অংশে একটি অথবা একাধিক কালো ছোপ বর্তমান। ১,২ অথবা ৩ নং ইন্টারস্পেসে, তবে কোনো ক্ষেত্রেই এই জাতীয় পোষ্টডিসকাল ছোপ একটি সম্পূর্ণ সারি সৃষ্টি করে না। ২ নং ইন্টারস্পেসে এবং কখনো কখনো ৩ নং ইন্টারস্পেসের কালো পোস্টডিসকাল ছোপ (যদি অবস্থিত থাকে) প্রায় শঙ্কু আকৃতির।

সামনের ডানার নিম্নতল উপরিতলেরই অনুরূপ, তবে নিম্নতলে শিরাগুলির পাশে থাকা চক্‌চকে লম্বা সাদা দাগগুলি অধিকতর চওড়া এবং সুস্পষ্ট।

পিছনের ডানার নিম্নতলে ডরশাল প্রান্তরেখা চওড়া ভাবে কালো এবং কিনারায় লম্বা নরম কালো রোয়াযুক্ত। ১ নং ইন্টারস্পেসে একটি বড় কালো ডিম্বাকৃতি পোস্টডিসকাল ছোপ এবং একটি টার্মিনাল কালো ছোপ বর্তমান। ২ নং ইন্টারস্পেসের পোস্টডিসকাল ছোপটি (যদি অবস্থিত থাকে) কালো এবং শঙ্কু আকৃতি। ইন্টারস্পেস ২ থেকে ৬ পর্যন্ত এপিকাল এবং ল্যাটারাল প্রান্তরেখা ফ্যাকাসে হলুদ যাতে কালো আঁশ ছিটানো। উদর লাগোয়া ডানার অংশে (abdoinal fold) প্রান্তরেখা বরাবর সরু অংশ ঘন হালকা হলদে সাদা তুলোর মত আঁশে পূর্ণ।

শুঙ্গ, মাথা, বক্ষদেশ এবং উদর উপরিপৃষ্ঠে কালো। মাথা এবং বক্ষদেশ এর নিম্নতল এবং কালো এবং প্বার্শভাগে সিঁদুরে লাল লম্বাটে ছোপযুক্ত। উদরের নিম্নতল হলুদ এবং প্রতীতি দেহখণ্ডে একটি করে গোল কালো ছোপযুক্ত। উক্ত ছোপগুলি সারিবদ্ধ। অ্যানাল দেহখণ্ডেটি ফ্যাকাসে সাদা।

স্ত্রী

[সম্পাদনা]

স্ত্রী নমুনায় ডানার উপরি এবং নিম্নতল পুরুষ নমুনার অনুরূপ তবে কয়েকটি পার্থক্য চোখে পড়ে, যেমন-

  • সামনের ডানার উপরিতলে শিরাগুলির উভয় প্বার্শস্থ ফ্যাকাসে সাদা লম্বা দাগগুলি অধিকতর চওড়া এবং সুস্পষ্ট।
  • নিচের ডানায় কালো অংশে ডানার অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে থাকে। সেল এর এক তৃতীয়াংশ কালো। ৭ নং ইন্টারস্পেসে অ্যাপেক্স এর কাছে একটি তীর্যক হলুদ দাগ বর্তমান, যেটি কখনো কখনো প্রায় অদৃশ্য অথবা লুপ্তপ্রায় । উভয় তোলেই পোস্টডিসকাল অংশে বড় ডিম্বাকৃতি কালো ছোপের একটি সম্পূর্ণ সারি দেখা যায় যার অধঃয়ে ২ এবং ৩ নং ইন্টারস্পেসে অবস্থিত ছোপ দুটি প্রায় শঙ্কু আকৃতির। ডরসাল্প্রান্তরেখা পুরুষ অপেক্ষা অধিকতর চওড়া কালো।
  • উদরদেশের উপরিপৃষ্ঠ কালচে বাদামী।

ফুলের মধু এদের খুব প্রিয় বিশেষত পুটুস(Lantana camara) ফুলের ওপর বসে থাকতে দেখা যায়। এদের মধু পানের সময় হল খুব সকালে এবং বিকালে।[]

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

সোনালের ডিম ফিকে হলুদ বর্ণের এবং গোল আকৃতির হয়।[]

শূককীট

[সম্পাদনা]

শূককীট গুলি লম্বাটে এবং কালচে মেরুন বা কালো রঙের হয়। ত্বক মখমলের মত হয়, দেহের সপ্তম এবং অষ্টম খণ্ডে গোলাপী-সাদা রঙের একটা সাদা পটি লক্ষ্য করা যায়। পাতার ওপর পিঠে অথবা গাছের কান্ডে ডিম পাড়ে।

আহার্য উদ্ভিদ

[সম্পাদনা]

শূককীট Aristolochia ও তাদের সমগোত্রীয় কিছু Aristolochia tagala, Thottea siliquosa, Aristolochia griffithi গাছের পাতার রসালো অংশ আহার করে।

মূককীট

[সম্পাদনা]

মূককীট এর রঙ বাদামি বা সবুজ হয়, তার উপর গাঢ় খয়েরি রঙের সূক্ষ নকশাঁ করা থাকে। পিঠের দিক কমলা বা গাঢ় হলুদ রঙের হয়।

জীবনচক্রের চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Dāśagupta, Yudhājit̲̲̲̲̲̲a (২০০৬)। Paścimabaṅgera prajāpati (1. saṃskaraṇa. সংস্করণ)। Kalakātā: Ānanda। পৃষ্ঠা 38। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  2. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies। New Delhi: Oxford University Press। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  3. Collins, N. M. & M. G. Morris. (1985) Threatened Swallowtail Butterflies of the World. IUCN. আইএসবিএন ২-৮৮০৩২-৬০৩-৬
  4. Cotton, Adam; Fric, Zdenek Faltynek; Smith, Colin & Smetacek, Peter (মার্চ ২০১৩)। "Subspecies catalogue of the butterflies of India (Papilionidae): A Synopsis"। Bionotes15 (1): 5–8। 
  5. "Troides helena Linnaeus, 1758 – Common Birdwing"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  6. Bingham, C. T. 1907. Fauna of British India. Butterflies. Volume 2

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]