সৌম্যা | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ ত্রিশূর শহর |
পেশা | সেলস গার্ল |
সৌম্যা হত্যা মামলা ভারতের শোরানুরের নিকটস্থ মঞ্জাক্কড়ের ২৩ বছর বয়সী মহিলা সৌম্যার ধর্ষণ ও খুন সম্বন্ধীয় একটি পুলিশী মামলা। ২০১১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি যখন তিনি একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে এর্নাকুলাম থেকে শোরানুরে ভ্রমণ করছিলেন তখন এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল। ধর্ষণ ও হত্যার এই নির্মম ঘটনা সারা ভারতে আলোড়ন তুলেছিল।[১]
ঘটনাটি ঘটেছিল, ট্রেন নম্বর ৫৬৬০৮, এর্নাকুলাম জংশন-শোরানুর জংশন যাত্রীবাহী ট্রেনটি ভাল্লাথল নগর রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ার পরপরই। ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী,[২][৩] ২৩ বছর বয়সী মৃতা, শোরানুরের একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন, তিনি এর্নাকুলামের একটি প্রতিষ্ঠানে একটি ছোট চাকরি পেয়েছিলেন। মা এবং ভাইকে নিয়ে তাঁদের তিনজনের সংসারটি তাঁর রোজগারের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল। ছুটি পেলে সন্ধ্যায় এর্নাকুলাম থেকে বেরিয়ে তিনি বাড়ি আসতেন। চাকরি চলাকালীন, তিনি এর্নাকুলামে চাকরিরত এক যুবকের সাথে পরিচিত হন, যিনি তাঁর এক সহকর্মীর বন্ধু। ঘনিষ্ঠতা বাড়ার পর দুই বাড়ির সম্মতিতে তাঁদের বিবাহ ঠিক হয় এবং ২০১১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি মৃতার বাড়িতে বাগদানের অনুষ্ঠান ছিল। তিনি সন্ধ্যা ৫.৩০ এর ট্রেনের শেষ বগির মহিলা কামরায় উঠেছিলেন বাড়ি পৌঁছোনোর উদ্দেশ্যে। ট্রেনটি মুল্লুরকারা পৌঁছোলে, সেই মহিলা কামরাটি খালি হয়ে গিয়েছিল। তিনি আগেই লক্ষ্য করেছিলেন, বগির বাইরে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত লালসা ভরা দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিল। তাই তিনিও নেমে সামনের মহিলা কামরায় চলে গিয়েছিলেন। ট্রেনটি ভাল্লাথল নগর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।[২]
অভিযুক্ত গোবিন্দস্বামী, যে একজন অভ্যাসগত অপরাধী, সে লক্ষ্য করেছিল যে তার শিকার বগিতে একা আছে। যখন ট্রেনটি ভাল্লাথল নগর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে শোরনুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অভিযুক্ত দ্রুত সেই মহিলা বগিতে ঢুকে পড়ে এবং মৃতার কাছে ছুটে যায়। মৃতা বাধা দেবার এবং পালাবার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে ধরে তাঁর মাথা জোর করে বগির দেয়ালে বারবার আঘাত ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। মারাত্মক আঘাত সহ্য করে তিনি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েন। তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। [২]
অভিযুক্ত, এই কাজে অভিজ্ঞ ছিল, সে চলমান ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তাঁর কাছে ছুটে যায় এবং তাঁকে লাইনের পাশে একটি স্থানে তুলে আনে। এরপর সে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত সৌম্যাকে ধর্ষণ করে। তার ব্যবহার ছিল নেক্রোফাইলের (মৃতদেহের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন) মত। এরপর সে মৃতার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে তাকে চিৎ করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।[২]
ওই মহিলা কামরার সামনের বগিতে থাকা ট্রেনের দুইজন পুরুষ যাত্রী মৃতার আর্তনাদ শুনেছিলেন। কিন্তু তাঁরা সাহায্য করতে যাননি কারণ তাঁরা সৌম্যাকে ট্রেন থেকে পড়তে দেখে ভেবেছিলেন তিনি পালাতে সক্ষম হয়েছেন।[২]
দশ মিনিটের মধ্যে ট্রেন শোরানুর পৌঁছেছিল। পুরুষ যাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের গার্ডকে ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন এবং স্থানীয় মানুষজনের সহায়তায় অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল। অবশেষে, রাত প্রায় ৯.৩০ টা নাগাদ, সৌম্যার বিকৃত এবং ক্ষতবিক্ষত প্রায় নগ্ন ধর্ষিত দেহ রেললাইনের পাশে পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর দেহে তখনও প্রাণ ছিল। তাঁকে ত্রিশূর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।[২]
গোবিন্দস্বামী ওরফে চার্লিকে[২][৩] (৩০ বছর বয়সী, বিরুধাচলম, কুড্ডালোর জেলা, তামিলনাড় রাজ্যের অধিবাসী)[২] ২০১১ সালের ৩১শে অক্টোবর ত্রিশূর ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক কে এন রবীন্দ্র বাবু সৌম্য ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন।[৪] আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। [৫]