সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ বা সৌরকেন্দ্রিকতাবাদ (ইংরেজি ভাষায়: Heliocentrism বা heliocentricism)[১] এমন একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক মডেল যাতে ধরে নেয়া হয় যে, স্থির সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ আবর্তিত হয়। ইংরেজি শব্দ হেলিওসেন্ট্রিসিজম-এর উৎপত্তি গ্রিক মূল থেকে, গ্রিক ভাষায় ἥλιος (হেলিওস) অর্থ সূর্য এবং κέντρον (কেনত্রোন) অর্থ কেন্দ্র। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ ছিল ভূকেন্দ্রিক মডেলের বিরোধী যাতে পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র বিবেচনা করা হতো। পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয় এটি প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন গ্রিসের সামোস দ্বীপে জন্মগ্রহণকারী জ্যোতির্বিদ ও গণিতজ্ঞ আরিস্তারাকস, সেই তৃতীয় খিস্টপূর্বাব্দে। অবশ্য তার এই মতবাদ প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের তেমন কোন সমর্থনই পায়নি।[২]
এর দীর্ঘকাল পর মাত্র ১৬শ শতকে সৌরকেন্দ্রিক জগতের একটি যুক্তিযুক্ত ও সঠিক গাণিতিক মডেল উপস্থাপন করেন ইউরোপীয় রেনেসাঁ যুগের গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং ক্যাথলিক ধর্মবেত্তা পোল্যান্ডের নিকোলাউস কোপের্নিকুস। তার মাধ্যমেই জন্ম হয় কোপের্নিকুসীয় বিপ্লবের। কোপের্নিকুসের পর তার মডেলটির আরও উন্নতি সাধন করেন জার্মান জ্যোতির্বিদ ইয়োহানেস কেপলার এবং ইতালীয় বিজ্ঞানী গালিলেও গালিলেই সর্বপ্রথম একটি দুরবিন ব্যবহার করে তত্ত্বটির পক্ষে শক্ত পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ হাজির করেন।
উইলিয়াম হার্শেল, ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম বেসেল এবং অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় পরবর্তীতে এই মডেলটিও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছিলেন, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলো আবর্তিত হলেও সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। ১৯২০ সালে মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হাবল আরও পর্যবেক্ষণ করেন যে, সৌরজগৎ যে ছায়াপথের (আকাশগঙ্গা) অভ্যন্তরে অবস্থিত তা মহাবিশ্বের অসংখ্য ছায়াপথের একটি কেবল। এমনকি সূর্য আকাশগঙ্গারও কেন্দ্রে নয় বরং এর কেন্দ্র থেকে আনুমানিক ৮ কিলো পারসেক দূরে অবস্থিত।[৩]