স্ক্লেরাইট (গ্রীক σκληρός, sklēros, মানে “শক্ত) হল দেহের কঠিনীভূত অংশ। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এই শব্দটি নানান কাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও সাধারণ মেরুদণ্ডী প্রাণীর শারীরবিদ্যাসংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য, যেমন হাড় ও দাঁত, বুঝাতে একে ব্যবহার করা হয় না। বরং, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থ্রোপড বহিঃকঙ্কালের শক্ত অংশ এবং স্পঞ্জ ও নরম কোরালের মতো অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের অভ্যন্তরীণ স্পিকিউলকে বুঝায়। স্ক্লেরিটোম শব্দটি প্রত্নজীববিদ্যায় কোনো জীবের প্রাপ্ত পুরো সেট স্ক্লেরাইটকে বুঝায়।
আর্থ্রোপড প্রাণীতে স্ক্লেরাইট উৎপাদনকারি কঠিনীভবন প্রক্রিয়াটি হয় বহিঃকৃত্তিকে প্রোটিন শিকলের ক্রস-লিংকিং (প্রক্রিয়াটিকে স্ক্লেরোটাইজেশন বলে), অথবা বহিঃকঙ্কাল অঞ্চলে ক্যালসিয়াম কার্বোনেটের মতো খনিজের অন্তর্ভুক্তি, নতুবা উভয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। এভাবেই, আর্থ্রোপডের বহিঃকঙ্কাল অনেক ধরনের স্ক্লেরাইটে ভাগ হয়ে যায় যেখানে অংশগুলো একে অপরের সাথে নানান প্রকার কম স্ক্লেরোটিনময়, ঝিল্লীবৎ অঞ্চল বা সুচার দিয়ে সংযুক্ত থাকে।
দেহ খন্ডের ফলকের মতো পৃষ্ঠীয় স্ক্লেরাইটগুলোকে টার্গাইট বলে। একইভাবে দেহের অঙ্কীয় স্ক্লেরাইটকে স্টার্নাইট বলা হয়। আবার, দেহ খন্ডের পার্শ্বীয় স্ক্লেরাইটগুলো প্লিউরাট হিসেবে অভিহিত করা হয়।[১]
অনেক অমেরুদণ্ডী প্রাণী কিছু শক্ত অংশের জন্ম দেয় যেগুলো খনিজসমৃদ্ধ, স্ট্যাটোলিথের মতো, অনুরূপ কাঠামোসহ হয়, কিন্তু এরপরেও সেগুলোকে স্ক্লেরাইট বলা হয় না। পলিকিটা ও মলাস্কাসহ অনেক পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণীতে নানান ধরনের স্ক্লেরাইট দেখা যায়। যে দুইটি ট্যাক্সার ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল নরম কোরাল এবং পরিফেরা। উভয় দলের কিছু কাঠামো রয়েছে যেগুলো সিলিকা বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট খনিজসমৃদ্ধ স্পিকিউল ধারণ করে। এসব কাঠামো কাঠামোগতভাবে এবং আত্মরক্ষা, উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
পলিঅফিস্থোকটিলেয়ান মনোজেনেয়ান নামক পরজীবী চ্যাপ্টাকৃমির গায়ের সংযুক্ত প্রধান একটি কাঠামো থাকে যাকে ক্ল্যাম্প বলে।[২][৩] প্রাণীটির হ্যাপ্টর নামক পশ্চাৎ অঙ্গে অবস্থিত এই ক্ল্যাম্প বিভিন্ন প্রকার স্ক্লেরাইট ও সংশ্লিষ্ট পেশীতন্ত্র নিয়ে গঠিত।
স্ক্লেরিটোম হল একটি কঙ্কাল যা হালওয়াক্সিডের মতো জীবের আঁশ, রাডুলার দাঁত,[৪] স্পঞ্জ কঙ্কালের স্পিকিউল, বা কনোডোন্ট যন্ত্রের উপাদানের মতো বিচ্ছিন্ন উপাদান নিয়ে তৈরী হতে পারে।[৫] এই শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন জীবাশ্মবিদ স্টেফান বেংস্টন।[৫]
যদিও জীবিত প্রাণীদের অধ্যয়নের ক্ষেত্রে স্ক্লেরাইটের ভূমিকা বেশ উল্লেখযোগ্য রকমের, তারপরেও প্রত্নজীববিদ্যায় তুলনামূলকভাবে এর গুরুত্ব অনেক বেশি কারণ অনেক সময় দেখা যায় কোনো প্রাণীর এই স্ক্লেরাইটই একমাত্র জীবাশ্মে পরিণত হয়েছে, অন্য অংশ ভালোভাবে বা স্পষ্টভাবে পাওয়া তো অনেক দূরের কথা। অনেক বিলুপ্ত প্রাণীদল সম্পর্কে এই স্ক্লেরাইট থেকেই আমরা জানতে পেরেছি যা তাদের আসল শারীরিক গঠনের বিষয়টিকে একটি ধাঁধার মধ্যে ফেলে রেখেছে।
আদিম ক্যামব্রিয়ান যুগে অনেক প্রাণীর গায়ের ঢাল হিসেবে গজিয়ে ওঠা ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম সালফেট, বা ক্যালসিয়াম ফসফেটের ফাঁপা ফলককে বর্ণনা করতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয় যা প্রত্নজীববিদ্যায় এই পরিভাষাটির ব্যবহারের একটি উদাহরণ। স্পঞ্জের স্পিকিউলের সাথে আদিম ক্যামব্রিয়ান যুগের প্রাণীদের স্ক্লেরাইটের পার্থক্য হচ্ছে, সেসব প্রাণীদের স্ক্লেরাইট স্পঞ্জের স্পিকিউলের মতো অভ্যন্তরীণ কোন কাঠামো নয়, বরং বাহ্যিক এক ধরনের ঢালের মতো আবির্ভূত হয়েছিল। আদিম অনেক প্রাণীতে স্ক্লেরাইটের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ স্পঞ্জের মতো প্রাণী কানচেল্লোরিয়া, ঢালসম্পন্ন স্লাগের মতো উইওয়াক্সিয়া, ব্রাকিওপডের মতো একজোড়া শেল যুক্ত, ঢালসমৃদ্ধ কৃমি হালকিয়েরিয়া, আরেকটি ঢালসমৃদ্ধ কৃমি মিক্রডিকটিওন যা লবোপড বা অনিকোফোর হিসেবে বিবেচিত।
ক্যামব্রিয়ান উইওয়াক্সিয়ার স্ক্লেরাইটকে অ্যানেলিড কৃমির শক্ত লোম বা কাঁটার সাথে তুলনা করা হয়।[৬] গভীর সমুদ্রের হাইড্রোথার্মাল ভেন্টে বসবাসকারি অন্ততপক্ষে একটি আধুনিক গ্যাস্ট্রোপড মলাস্কের আয়রন সালফাইড দিয়ে তৈরী এমন একটি কাঠামো আছে যা ক্যামব্রিয়ান স্ক্লেরাইটের অনুরূপ।[৭]
|title=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)