স্ট্যানলি লয়েড মিলার | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ওকল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র | ৭ মার্চ ১৯৩০
মৃত্যু | মে ২০, ২০০৭ ন্যাশনাল সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা | যুক্তরাষ্ট্র |
মাতৃশিক্ষায়তন | ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাট বার্কলে |
পরিচিতির কারণ | অজৈবজনি |
পুরস্কার | ওপারিন পদক |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | রসায়ন |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ডিয়েগো |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | হ্যারল্ড উরি |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | জেফরি বাডা |
স্ট্যানলি লয়েড মিলার (৭ মার্চ ১৯৩০ - ২০ মে ২০০৭) একজন মার্কিন রসায়নবিদ ছিলেন। অজৈব যৌগ হতে কীভাবে অনায়াসে জৈব যৌগ আহরণ করা সম্ভব হয়, এটি দেখিয়ে তিনি জীবনের উৎপত্তি বিষয়ে অনবদ্য কিছু গবেষণা করেছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি মিলার-উরি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন, যার মাধ্যমে তিনি দেখান, অজৈব পূর্বসূচক হতে জটিল জৈব যৌগ আহরণ করা সম্ভব। তার এই পরীক্ষার কথা চতুর্দিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে; এবং প্রাণহীন অজৈব বস্তু হতে জীবন গঠনকারী রাসায়নিক উপাদানগুলোর সংশ্লেষণের মাধ্যমেই প্রাণের রাসায়নিক বিবর্তনের সূচনা হয়- এ ধারণার পক্ষে যুক্তি প্রদান করে।[১] তিনি সজীব রসায়নের অন্যতম জনক হিসেবে খ্যাত।[২][৩]
স্ট্যানলি মিলার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওকল্যান্ড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাথান ও এডিথ মিলারের দ্বিতীয় সন্তান। এডিথ স্কুলশিক্ষিকা হওয়ায় মিলার নিবাসে বরাবরই শিক্ষার আবহ বজায় ছিল। ওকল্যাণ্ড উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্ট্যানলি রসায়ন প্রতিভা হিসেবে নাম কুড়োতে সক্ষম হন। বড় ভাই ডোনাল্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলি শাখায় ভর্তি হন। এর প্রধান কারণ ছিল, স্ট্যানলি মনে করেছিলেন রসায়নে পড়লে লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি ডোনাল্ডের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সাহায্য পাবেন। তিনি ১৯৫১ সালের জুনে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে নাথান মিলারের পরলোকগমনের কারণে স্ট্যানলি লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে বার্কলে অনুষদের সহায়তায় মিলার ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে শিক্ষক সহযোগী পদ লাভ করেন। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পিএইচডি কোর্সের জন্য তালিকাভুক্ত হন। তিনি গবেষণা অভিসন্দর্ভের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে একটি বিষয় খুঁজে যাচ্ছিলেন। একের পর এক অধ্যাপকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেও উপযুক্ত বিষয় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একসময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ব্যবহারিক নয়, বরঞ্চ তাত্ত্বিক পরিসরেই তিনি গবেষণা করবেন, কেননা ব্যবহারিক প্রক্রিয়ার আলোকে পিএইচডি গবেষণা করা তুলনামূলক শ্রমসাধ্য। শুরুতে মৌলের সংশ্লেষণ বিষয়ে গবেষণা করতে তিনি পদার্থবিজ্ঞান এডওয়ার্ড টেলারের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি অনুসারে স্নাতক শিক্ষার্থীদের সেমিনারে যোগদান করতে হয়। স্ট্যানলি রসায়নে নোবেল বিজয়ী হ্যারল্ড উরির সেমিনারে যোগদান করেন। সেখানে উরি সৌরজগতের উৎপত্তি নিয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন এবং পরিবেশ প্রশমনের মাধ্যমে কীভাবে জৈব সংশ্লেষণ প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এক বছর স্ট্যানলি টেলারের সঙ্গে নিষ্ফল গবেষণা করেন। আবার, টেলার হাইড্রোজেন বোমা নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে শিকাগো ছেড়ে চলে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফলে মিলার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে উরির সাথে দেখা করেন। মিলারের জৈব সংশ্লেষণ বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ উরিকে তাৎক্ষণিকভাবে উৎসাহী করে তুলতে পারেনি। তিনি উল্কাপিণ্ডের থ্যালিয়াম নিয়েও কাজ করার ধারণা উত্থাপন করেন। তবে ইতোপূর্বে এ নিয়ে সফল কোনো গবেষণা সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু ক্রমাগত অধ্যবসায়ের ফলে মিলার উরিকে গ্যাসে তড়িৎ নির্গমন নিয়ে গবেষণাকার্য পরিচালনায় আগ্রহী করে তুলেন। ১৯৫৪ সালে মিলার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৪-১৯৫৫ সালে মিলার ক্যালিফোর্নিয়া প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে এফ.বি.জুলেট ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন বিভাগে পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান ডিয়েগো শাখার রসায়নের সহকারী অধ্যাপক, ১৯৬২ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৬৮ সালে অধ্যাপক নিযুক্ত হন।[৩]
১৯৫৩ সালের ১৫ মে মিলার বিজ্ঞান সাময়িকীতে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।[৪] জীবনের উৎপত্তি বিষয়ে তার দেওয়া তত্ত্ব পাঠ্যপুস্তকে স্থান পেয়েছে। এটি ওপারিন-হালডেনের "প্রিমোর্ডিয়াল সুপ" তত্ত্বের প্রথম পরীক্ষামূলকলক প্রমাণ বলে গণ্য হয়। মিলার জীবনের উৎপত্তি বিষয়ে পরীক্ষামূলক আলোচনা করেন এবং বলেন, মিথেন, অ্যামোনিয়া ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে মহাসাগরীয়/বায়ুমণ্ডল পরিবেষ্টিত পরিবেশে আদি প্রাণের উৎপত্তি ঘটে। এই গ্যাসীয় মিশ্রণ যখন নির্গত ইলেকট্রনের সংস্পর্শে আসে, তখনই রাসায়নিক বিক্রিয়ার উৎপত্তি হয়ে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে। মিলার গ্লাইসিন এবং আলফা ও বিটা অ্যালানিনের মত অ্যামিনো অ্যাসিডগুলোর গঠনপ্রকৃতি আবিষ্কার করেন। এর দরুন জীবন সৃষ্টিতে জৈব সংশ্লেষণের সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়।[৫][৬]
১৯৯৯ সালের নভেম্বরে মিলারের একাধিকবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। তিনি সান ডিয়েগো শহরের দক্ষিণে ন্যাশনাল সিটিতে বসবাস করছিলেন। ২০০৭ সালের ২০ মে তিনি প্যারাডাইস হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি সঙ্গিনী মারিয়া মরিস ও ভাই ডোনাল্ড ও তার পরিবারকে রেখে যান।[৫]