গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক পরিবর্তনের সময় স্তন দুগ্ধক্ষরণের জন্য প্রস্তুত হয়। গর্ভধারণের আগে স্তনটি মূলত এডিপোজ (চর্বি) টিস্যু দ্বারা গঠিত কিন্তু ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, প্রোল্যাক্টিন এবং অন্যান্য হরমোনের প্রভাবের অধীনে , স্তনগুলি শিশুর জন্য দুধ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয়। স্তনে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও স্তনবৃন্ত এবং এরোলার রং বৃদ্ধি পায়। আকারও বাড়ে, কিন্তু স্তনের আকার, শিশুর জন্মের পরে দুধের পরিমাণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অবধি, কোলস্ট্রাম, একটি পুরু হলুদ তরল, আলভোলোতে উৎপাদিত হতে শুরু করে এবং প্রসবের ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টার মধ্যে দুধ আসা পর্যন্ত প্রথম কয়েক দিনের জন্য উৎপাদিত হতে থাকে। [৯][১০] স্তন্যদাত্রী মায়ের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাড়তি তরল গ্রহণের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। [১১]অক্সিটোসিন শিশুর জন্মের সময় এবং প্রসবের পর যা প্রসব পরবর্তী সময়কাল বলা হয়, যখন বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তখন জরায়ুর মসৃণ পেশীকে সংকুচিত করে। অক্সিটোসিন নালিকাতন্ত্রে নতুন উৎপাদিত দুধ নিঃসরণ করতে আলভোলি পার্শ্ববর্তী ব্যান্ডের ন্যায় কোষগুলির মসৃণ পেশী স্তরকেও সংকুচিত করে। স্তন্যপানের প্রতিক্রিয়ায়, দুগ্ধ নির্গমন প্রতিক্রিয়া অথবা দুধের নিঃসরণ ঘটাতে, অক্সিটোসিন প্রয়োজন হয়।[১২]
বুকের দুধের সমস্ত বৈশিষ্ট্য বোঝা যায় না, তবে এর পুষ্টির সামগ্রী তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মাতার রক্ত প্রবাহ এবং শারীরিক সঞ্চয়ের পুষ্টি থেকে স্তন্য দুগ্ধ তৈরি হয়। এটিতে একটি শিশুর বৃদ্ধির এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি, চিনি, জল এবং প্রোটিন এর সর্বোত্তম ভারসাম্য রয়েছে। [১৪] স্তন্যদান জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াগুলিকে উদ্দীপিত করে তোলে যাতে এনজাইম, হরমোন, বৃদ্ধির উপাদানগুলি এবং প্রতিরোধমূলক উপাদানগুলি শিশুকে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে রক্ষার জন্য সাহায্য করে। স্তন্যদুগ্ধে দীর্ঘশৃঙ্খল পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে যা রেটিনার এবং স্নায়ুর স্বাভাবিক বিকাশে সহায়তা করে। [১৫]
ডাক্তারদের মতে শিশু জন্মাবার পর ১ ঘণ্টার সময়ের ভিতর শিশুকে দুধ পান করান উচিত যতক্ষণ পর্যন্ত শিশু দুধ পান করতে চাইছে। জন্মাবার প্রথম কয়েক সপ্তাহ শিশুকে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা তাকে ভালো করে নার্সিং করা আর ১০ থেকে ১৫ মিনিট প্রতি স্তনের দুধ পান করান আব্যশিক। একটু বড় হওয়ার পর ক্রমশ স্তনপানের পরিমান কমাতে হয়।
স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি জন্মের পর ছয় মাসের জন্য সমানে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। [১৬][১৭][১৮][১৯][২০][২১][২২][২৩][২৪] "ভিটামিন, খনিজ ও ঔষধ ব্যতীত কোন ধরনের সম্পূরক (কোন জল, রস, কোন অন্য দুধ এবং অন্য কোন খাবার ) বাদ দিয়ে কোনও শিশুর মাতৃদুগ্ধপান " বিশেষভাবে স্তন্যদান হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। [২৫] কিছু দেশে, যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে এবং কানাডায়, সকল স্তন্যপায়ী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ভিটামিন ডি পরিপূরক সুপারিশ করা হয়। [২৬][২৭][২৮]
প্রায় ছয় মাস বয়সে শক্ত খাবারের সূচনা হওয়ার পরে, বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এএপি সুপারিশ করে যে শিশু ও মাতার উভয়ের ইচ্ছানুসারে যদি অন্তত নিতান্তপক্ষ্যে ১২ মাস বা তার বেশি সময় বুকের দুধ খাওয়ান হয়। [২১] ডাব্লুএইচওর নির্দেশিকাগুলি পরামর্শ দেয় "দুই বছর বা তার বেশি বয়স পর্যন্ত চাহিদা অনুসারে ক্রমাগত, বারবার দুধ খাওয়ানোর জন্য ।" [২৯][৩০]
বেশীরভাগ মায়েরা ছয় মাস অবধি বাচ্চাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট পরিমাণে দুধ উত্পাদনে সক্ষম। শিশুর দুধের চাহিদার প্রতিক্রিয়ায় স্তন দুধ সরবরাহ বৃদ্ধি পায়, এবং স্তনগুলিতে দুধ থাকলে হ্রাস পায়। [৩১]সাধারণত দীর্ঘ সময়ের জন্য স্তনে দুধ রাখলে, বা স্তন্যদানের সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ নিঃসৃত করলে স্তনগুলিতে দুধ সরবরাহ হ্রাস হয়। এটি সাধারণত প্রতিরোধযোগ্য, যদি না চিকিৎসা পরিস্থিতির কারণে হয় যাতে আনুমানিক ৫ % মহিলা প্রভাবিত।[৩২] যদিও কিছু মা মনে করেন যে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাদ্যে, দুধ সরবরাহ বাড়ায়, প্রকৃতপক্ষে তরল খাদ্যগ্রহণের ফলে দুধের পরিমাণ প্রভাবিত হয় না। "তৃষ্ণার্ত হলে পান কর" পরামর্শ দেওয়া হয়। [৩৩] বাচ্চা যদি স্তন্যপান করছে, কিন্তু প্রত্যাশিত ওজন বৃদ্ধি হচ্ছে না বা ডিহাইড্রেসানের লক্ষণ দেখাচ্ছে, তবে মায়ের কম দুধের সরবরাহ আশঙ্কা করা যেতে পারে। [৩২]
প্রথম দিকে স্তন্যপান করানো কম রাতে খাওয়ানোর সমস্যার সাথে যুক্ত।[৩৪] মা এবং শিশুর মধ্যে প্রাথমিক ত্বক থেকে চামড়ার যোগাযোগ স্তন্যপান করানোর ফলাফলগুলিকে উন্নত করে এবং কার্ডিও-শ্বাস প্রশ্বাসের স্থায়িত্ব বাড়ায়।[৩৫] ২০০৭ এর পর্যালোচনাগুলিতে অসংখ্য সুবিধার কথা পেয়েছে। বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর সাধারণ স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি এবং বিকাশকে সহায়তা করে। যে সকল শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না তারা তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, কানের সংক্রমণ, ব্যাকেরেমিয়া, ব্যাকটিরিয়া মেনিনজাইটিস, বোটুলিজম, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং নেক্রোটাইজিং এন্টারোকলাইটিস।[৩৬][৩৭]
↑Ndikom, Chizoma M.; Fawole, Bukola; Ilesanmi, Roslyn E. (২০১৪-০৬-১১)। "Extra fluids for breastfeeding mothers for increasing milk production"। The Cochrane Database of Systematic Reviews (6): CD008758। আইএসএসএন1469-493X। ডিওআই:10.1002/14651858.CD008758.pub2। পিএমআইডি24916640।
↑Cattaneo A, Burmaz T, Arendt M, Nilsson I, Mikiel-Kostyra K, Kondrate I, Communal MJ, Massart C, Chapin E, Fallon M (জুন ২০১০)। "Protection, promotion and support of breast-feeding in Europe: progress from 2002 to 2007"। Public Health Nutrition। 13 (6): 751–9। ডিওআই:10.1017/S1368980009991844। পিএমআইডি19860992।
↑উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Gartner_2005 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি