যৌন অভিমুখিতা |
---|
যৌন অভিমুখিতাসমূহ |
যৌনদ্বৈততা-বিহীন বিষয়শ্রেণী |
গবেষণা |
অ-মানব প্রাণী |
যৌন অভিমুখিতা হচ্ছে বিপরীত যৌনতা বা লিঙ্গ, সমলিঙ্গ অথবা উভয় লিঙ্গের প্রতি রোমান্টিক অথবা যৌন আকর্ষণের (অথবা দুইটাই) একটি স্থায়ী বিন্যাস।[১][২] মানুষে যৌন অভিমুখিতার সর্বশেষ কারণ এবং গঠন কৌশল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা পরিপুর্ণভাবে নিশ্চিত নন। বেশ কিছু তত্ব যদিও আছে তবে তা বিতর্কিত এবং অনিশ্চিয়তায় ভরা। যাইহোক, অগ্রগতি হওয়া স্নায়ুবিজ্ঞানের বর্ণনা, যৌন অভিমুখিতার সাথে চারিত্রিক সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেছে। গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে মানুষের যৌন অভিমুখিতার সাথে স্নায়ুর গঠনে, কাজে ও বোধগত সম্পর্ক আছে।
যৌন অভিমুখিতার এই ক্রমবিকাশ কীভাবে হয় তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে, যেখানে ভ্রুণীয় নিউরাল ক্রমবিকাশ; জন্মপুর্ব হরমোনের বহিঃপ্রকাশ, মায়ের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এসবকিছুই সমকামিতার জন্য দায়ী এরকম তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যান্য ফ্যাক্টর; যা জিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাও সমকামিতারব্জন্য দায়ী, এরকম প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এমন কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় নি যে; যা থেকে বলা যায় পরিবেশ বা অর্জিত ব্যবস্থাই সমকামিতার ক্রমবিকাশের জন্য দায়ী।[৩]
সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা যৌন অভিমুখিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে কর্মগত ও জ্ঞানীয় উপাদান গুলো উন্মোচন করতে শুরু করেছে। প্রতেকের যৌন অভিমুখিতার সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে; স্নায়বিক প্রক্রিয়া ও যৌন বায়াসড কগনিটিভ টাস্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
মানুষের ২ টি ফেরোমনকে প্রস্তাবনা করা হয়েছে। প্রজেস্টেরণ ডেরাইভেটিভ ৪,১৬- এন্ড্রোস্টাডিন-৩-ওয়ান (এন্ড) এবং এস্ট্রোজেন-লাইক স্টেরয়েড এস্ট্রা-১,৩-৫ (১০), ১৬-টেট্রায়েন-৩-অল (ইএসটি)- নামক ফেরোমনদ্বয়; সমকামী ও বিষমকামীদের এন্টেরিয়র হাইপোথ্যালামাসের স্নায়বিক সার্কিটে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। এন্টেরিওর হাইপোথ্যালামাস প্রজননগত কার্যক্রমের সাথে জড়িত এবং সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে যে; এটা হরমোনাল ও সংবেদী কিউকে একত্র করে যৌন স্বভাব ও যৌন আসক্তি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।[৪]
সাম্প্রতিক সময়ের নিউরো-ইমেজিং পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গিয়েছে যে, AND পুরুষের ঘামে পাওয়া গিয়েছে; অলফ্যাক্টরী স্টিমুলস; সমকামী পুরুষ ও বিষমকামী নারীর এন্টিরিওর হাইপোথ্যালামাসকে সক্রিয় করে এবং বিষমকামী পুরুষ ও সমকামী নারীতে সাধারণ অলফ্যাক্টরী প্রতিক্রিয়া তৈরী করে।[৫] ইএসটি নামক অপর ফেরোমন; পাওয়া যায় গর্ভবতী নারীর ইউরিনে; যা সমকামী পুরুষ ও বিষমকামী নারীতে সাধারণ অলফ্যাক্টরী সক্রিয়তা তৈরী করে যখন সমকামী নারী ও বিষমকামী পুরুষে যৌন-সংগতিপুর্ণ হাইপোথ্যালামিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।[৪]
সমকামী পুরুষরা এই স্টিমুলির প্রতি বিষমকামী নারীদের ন্যায় একইরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। ঠিক একইরকমভাবে সমকামী নারী ও বিষমকামী পুরুষরা একইরুপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই গবেষণা বার্গল্যান্ড ও সেভিক করেছেন। তাদের এ গবেষণা থেকে এটাই সুচিত হয়েছে যে, এন্ড এবং ইএসটি নামক ফেরোমনদ্বয় মোটাদাগে "স্বয়ংক্রিয় স্নায়বিক ব্যবস্থার উপর সুনির্দিষ্ট যৌন প্রভাব ফেলে" এবং এই স্টিমুলি যে ভাবে সাড়া দেয়, তা দেখে বুঝা যায়, তা জীবের ফেনোটাইপিক সেক্সের প্রতি নয় বরং তার যৌন অভিমুখিতার উপর নির্ভরশীল।[৫]
কেন্দ্রীয় স্নায়ুব্যবস্থায় পাওয়া যাওয়া সেরাটোনিন হচ্ছে একপ্রকার নিউরোট্রান্সমিটার। যৌন স্বভাব নিয়ন্ত্রণে এর বিভিন্ন ভুমিকা আছে। সেরাটোনিন এগোনিষ্ট ও এন্টাগোনিষ্টের মস্তিষ্কের এলাকায় প্রয়োজনমত সক্রিয় ও নিবারকের ভূমিকা পালন করে। ফ্লুরোটক্সিন হচ্ছে নির্বাচিত সেরাটোনিন reuptake inhibitor; যা স্নায়ুতে সেরাটোনিনের প্রভাব সম্প্রসারিত করে।[৬] কিনুয়িন এবং তার সহযোগীরা (২০০৪) সমকামী ও বিষমকামী মানুষের মস্তিষ্কে সেরাটোনিনের ক্রিয়া ভিন্ন হয় কিনা, তা দেখার জন্য ফ্লুরোটক্সিন কে ব্যবহার করেন।[৬][৭] ফ্লুরোটক্সিন প্রয়োগ করার পর; ফ্লুরোডেক্সোগ্লুকোজ পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (FDG-PET) ব্যবহার করে; তারা মস্তিষ্কে গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া পরিমাপ করেন। তারা দেখতে পান, সমকামী ও বিষমকামী পুরুষে ফ্লুরোটক্সিনের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন রকম হয়। আর তা হলো, সমকামীদের হাইপোথ্যালামাসে বিষমকামীদের তুলনায় খানিকটা কম গ্লুকোজ বিপাক পরিলক্ষিত হয়। অধিকন্ত, মস্তিষ্কের অন্যান্য এলাকা ভিন্ন ভাবে সক্রিয় হয়; ফ্লুরোটক্সিন প্রয়োগ করে সমকামী পুরুষে দেখা গেছে; তাদের সম্মুখভাগের সংযুক্ত কর্টেক্সে সক্রিয়তা বেড়ে যায়; কিন্তু বিষমকামী পুরুষে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। বিষমকামীদের কানেট জাইরাস , ল্যাটেরাল এন্টেরিওর সিনগুলেট এবং দ্বিপার্শ্বিক হিপ্পোক্যাম্পাস/প্যারাহিপ্পোক্যাম্পাল জাইরাসে সক্রিয়তা বাড়ে এবং সিনগুলেট কর্টেক্সের অংশে সক্রিয়তা কম দেখা যায়।[৭] এই অন্বেষণ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সমকামী ও বিষমকামীদের কেন্দ্রীয় স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের নিউরনের সংখ্যায় শুধুমাত্র পার্থক্য নেই বরঞ্চ কিছু নিউরন যেমন সেরেটোনার্জিক ও ডোপামিনার্জিক নিউরনের কার্যাবলীতেও পার্থক্য আছে।[৬]
বিভিন্ন প্রাণী এবং পতঙ্গের যৌন অভিমুখিতা ও মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। একটি পরীক্ষা করা হয়েছে। ড্রসোফিলার জিনগত পরিবর্তন করে তার ব্রেইনের গঠনে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেসব পুরুষে এই পরিবর্তন করা হয়েছে; তাদের মধ্যে বুনো পুরুষ পতঙ্গের প্রতি সমকামিতা সম্পর্ক দেখা গিয়েছে এবং এইরকম আচরণের সাথে মস্তিষ্কে সক্রিয় সেই সব পরিবর্তিত জিনের অভিব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।[৮]
যৌন অভিমুখিতা সংক্রান্ত গবেষণা সম্পুর্ণভাবে সমাপ্ত হতে আর খুব বেশি দেরি নেই। স্নায়ুবিজ্ঞান পুনঃপুন গবেষণার মাধ্যমে মানুষের যৌন অভিমুখিতার সাথে মস্তিষ্কের সংযোগ নিয়ে যে ধোয়াশা ছিল, তাকে কাটাতে সাহায্য করেছে। তবে এখানে আরো গবেষণা হবে; তা নিশ্চিতভাবে বলাই যায়।
পরবর্তী গবেষণার ক্ষেত্রগুলোঃ[৩]