স্পার্মাটোজেনেসিস

স্পার্মাটোজেনেসিস
পরিপক্ব শুক্রাণুসহ সেমিনিফেরাস নালিকা।
একটি পরিপক্ব মানব শুক্রাণু।
শনাক্তকারী
মে-এসএইচD013091
শারীরস্থান পরিভাষা
স্বাভাবিক শুক্রাণু গঠন প্রক্রিয়া, টেস্টিস বায়োপসি।
সেমিনিফেরাস নালিকায় স্বাভাবিক শুক্রাণু গঠন প্রক্রিয়ার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আণুবীক্ষণিক চিত্র।

স্পার্মাটোজেনেসিস(ইংরেজি: Spermatogenesis)হলো এমন একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অণ্ড বা টেস্টিসের সেমিনিফেরাস নালিকায় বীজ কোষ থেকে হ্যাপ্লয়েড স্পার্মাটোজোয়া বা শুক্রাণু উৎপন্ন হয়।এই প্রক্রিয়া শুরু হয় নালিকাসমূহের ভিত্তিপর্দার নিকটে অবস্থিত স্টেম সেল বা উৎস কোষের মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে। এই কোষগুলোকে বলা হয় স্পার্মাটোগোনিয়াল স্টেম সেল।মাইটোটিক বিভাজনে টাইপ ও টাইপ বি নামে দুধরনের কোষ উৎপন্ন হয়। টাইপ স্টেম কোষে পরিবর্তিত হয় এবং টাইপ বি আরও বিভাজিত হয়ে স্পার্মাটোসাইটে পরিণত হয়। প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট মিয়োসিস-১ বিভাজনের মাধ্যমে দুটি সেকেন্ডারি বা গৌণ স্পার্মাটোসাইটে পরিণত হয়। আবার প্রত্যেক গৌণ স্পার্মাটোসাইট মিয়োসিস-২ বিভাজনের মাধ্যমে দুটি সমান স্পার্মাটিডে পরিণত হয়। উৎপন্ন স্পার্মাটিডগুলো স্পার্মিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় স্পার্মাটোজোয়া কোষে পরিণত হয়। এগুলো যখন পরিপক্বতা লাভ করে তখন তাদেরকে স্পার্ম বা শুক্রাণু বলে।[] ফলে দেখা যাচ্ছে একটি প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট থেকে ধাপে ধাপে চারটি হ্যাপ্লয়েড স্পার্মাটোজোয়া উৎপন্ন হচ্ছে।[] স্পার্মাটোজোয়াকে পুংগ্যামিট বলা হয়, অনুরূপভাবে স্ত্রী-গ্যামিট হলো উওসাইট। সুতরাং স্পার্মাটোজেনেসিস হলো গ্যামিটোজেনেসিসের পুংদশা। স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া খুবই নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সংগঠিত হয়। যৌনজননের জন্য এটি একটি অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া। ডিএনএ মিথাইলেশন ও হিস্টোন মডিফিকেশন প্রক্রিয়া দুটি এটাকে নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত।[] এটি বয়ঃসন্ধি কালে শুরু হয়ে অব্যাহতভাবে মৃত্যু অবধি চলতে থাকে, তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদিত শুক্রাণুর পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে।

উদ্দেশ্য

[সম্পাদনা]

স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিপক্ব পুংজনন কোষ শুক্রাণু তৈরি করে যা স্পার্মাটোজোয়া নামে পরিচিত। এটি স্ত্রী জননকোষ উওসাইট এর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক প্রক্রিয়ায় জাইগোট উৎপন্ন করে। এটিই যৌন জননের প্রধান বিষয় যেখানে দুটি হ্যাপ্লয়েড পুং ও স্ত্রী জনন কোষ মিলে ডিপ্লয়েড জাইগোট তৈরি করে। সন্তানের ক্রোমোসোম সংখ্যা (যা প্রজাতি অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে) ঠিক রাখার জন্য জননকোষের প্রতিটির ক্রোমোসোম সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেক হওয়া বাধ্যতামূলক নতুবা সন্তানের ক্রোমোসোম সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে মারাত্মক জন্মত্রুটি দেখা দিতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ স্পার্মাটোজেনেসিস হলে সন্তানের ক্রোমোসোম সংখ্যা পরিবর্তিত হয়ে নানা জন্মগত ত্রুটি হতে পারে যেমন ডাউন সিনড্রোম, ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম ইত্যাদি। অনেক সময় স্বতস্ফূর্ত গর্ভপাত ঘটে যেতে পারে।

সংঘটন স্থান

[সম্পাদনা]

পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের কিছু অঙ্গে শুক্রাণুৎপাদন হয়। এর প্রাথমিক পর্যায়গুলো শুক্রাশয়ে হয় এবং পরবর্তী পর্যায়গুলো হয় এপিডিডিমিসে যেখানে উৎপন্ন জননকোষগুলো পরিপক্ব হয় ও বীর্যস্খলন পর্যন্ত জমা থাকে। শুক্রাশয়ের সেমিনিফেরাস নালিকা থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় যেখানে স্পার্মাটোগোনিয়াল স্টেম সেল বিভাজিত হয়ে অপরিপক্ব শুক্রাণু উৎপন্ন হয়।[] পরিপক্বতা ঘটে এপিডিডিমিসে।শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ °সে.(৯৮.৬ °ফা.)থেকে ১°-৮ °সে. কম তাপমাত্রা প্রয়োজন। অণ্ডকোষ এই তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।[] তবে বাস্তবক্ষেত্রে তাপমাত্রার কিঞ্চিৎ তারতম্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মানে কোনো সমস্যা হয় না।[]

স্থিতিকাল

[সম্পাদনা]

মানব দেহে স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণশেষ হতে প্রায় ৭৪ দিন [][](ট্রিটিয়াম লেবেলকৃত বায়োপসি অনুসারে) বা ১২০ দিন [](ডিএনএ ঘড়ি পরিমাপ অনুসারে)সময় লাগে। শুক্রাশয়ে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ কোটি স্পার্মাটোজোয়া উৎপন্ন হয়।[] তবে কেবল এর প্রায় অর্ধেক বা ১০ কোটি টেকসই শুক্রাণুতে পরিণত হয়।[১০]

পর্যায়সমূহ

[সম্পাদনা]

স্পার্মাটোজেনেসিসের পুরো প্রক্রিয়াকে কয়েকটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। নিচের সারণিতে প্লয়ডি, অনুলিপি সংখ্যা ও ক্রোমোসোম/ক্রোমাটিড সংখ্যা একটি কোষের জন্য দেখানো হয়েছে।

কোষের ধরন প্লয়ডি/মানব ক্রোমোসোমগুচ্ছ ডিএনএ অনুলিপি সংখ্যা /মানব ক্রোমাটিডসমূহ কোষের বিভাজন প্রক্রিয়া
স্পার্মাটোগোনিয়াম (types Ad, Ap and B) ডিপ্লয়েড (২N) / ৪৬ ২C / ৪৬ স্পার্মাটোসাইটোজেনেসিস (মাইটোসিস)
প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট ডিপ্লয়েড(২N) / ৪৬ ৪C / ২x৪৬ স্পার্মাটিডোজেনেসিস (মিয়োসিসI)
দুটি গৌণ স্পার্মাটোসাইট হ্যাপ্লয়েড (N) / ২৩ ২C / ২x২৩ স্পার্মাটিডোজেনেসিস(মিয়োসিস II)
চারটি স্পার্মাটিড হ্যাপ্লয়েড (N) / ২৩ C / ২৩ স্পার্মিওজেনেসিস
চারটি কার্যক্ষমশুক্রাণু(স্পার্মাটোজয়েড) হ্যাপ্লয়েড (N) / ২৩ C / ২৩ স্পার্মিয়েশন

স্পার্মাটোসাইটোজেনেসিস

[সম্পাদনা]
স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া যেখানে কোষগুলো ক্রমান্বয়ে প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট, গৌণ স্পার্মাটোসাইট, স্পার্মাটিড ও স্পার্মে পরিণত হয়।
মানব স্পার্মাটোজেনেসিসের পূর্ণাঙ্গ ছক।

স্পার্মাটোসাইটোজেনেসিস হলো গ্যামিটোসাইটোজেনেসিসের পুংদশা। এখানে যে স্পার্মাটোসাইট তৈরি হয় তাতে মাতৃকোষের তুলনায় অর্ধেক জেনেটিক বস্তু বিদ্যমান। সেমিনিফেরাস নালিকার একটি ডিপ্লয়েড স্পার্মাটোগোনিয়াম মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে দুটি প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট উৎপন্ন করে।প্রতিটি প্রাথমিক স্পার্মাটোসাইট সেমিনিফেরাস নালি গহ্বরের নিকটে এসে ডিএনএ অনুলিপি তৈরি করে মায়োসিস Iবিভাজনের মাধ্যমে দুটি হ্যাপ্লয়েড গৌণ স্পার্মাটোসাইটে পরিণত হয় যা পরবর্তীতে পুনরায় আরও একবার বিভাজিত হয়ে হ্যাপ্লয়েড স্পার্মাটিডে পরিণত হয়। স্পার্মাটোগোনিয়াম থেকে স্পার্মাটিড পর্যন্ত প্রত্যেক কোষ বিভাজন অসম্পূর্ণ; কোষসমূহ সাইটোপ্লাজমের সেতুর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে ফলে তাদের যুগপৎবৃদ্ধি ঘটে। লক্ষণীয় বিষয় হলো সকল স্পার্মাটোগোনিয়াম বিভাজিত হয়ে স্পার্মাটোসাইট উৎপন্ন করে না। এরূপ হলে সকল স্পার্মাটোগোনিয়াম নিঃশেষ হয়ে যেত। বরং স্পার্মাটোগোনিয়াল স্টেম কোষ মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে নিজেদের অনুলিপি তৈরি করে, ফলে স্পার্মাটোসাইট তৈরির জন্য স্পার্মাটোগোনিয়াম সরবরাহ ঠিক থাকে।[১১]

স্পার্মাটিডোজেনেসিস

[সম্পাদনা]

গৌণ স্পার্মাটোসাইট থেকে স্পার্মাটিড তৈরির প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটিডোজেনেসিস বলে।গৌণ স্পার্মাটোসাইট দ্রুত মায়োসিস-২ বিভাজনের মাধ্যমে হ্যাপ্লয়েড স্পার্মাটিড উৎপন্ন করে। এই পর্যায়টি এতই সংক্ষিপ্ত যে গৌণ স্পার্মাটোসাইটসমূহ কলাস্থানিক স্টাডিতে দেখা পাওয়া দুষ্কর।

স্পার্মিওজেনেসিস

[সম্পাদনা]

স্পার্মিওজেনেসিসের সময় স্পার্মাটিডসমূহ সেন্ট্রিওলসমূহের একটির মাইক্রোটিবিউলসমূহের বৃদ্ধির মাধ্যমে লেজ তৈরি শুরু করে। সেন্ট্রিওলসমূহ ভিত্তি দেহে রূপান্তরিত হয়। এসকল মাইক্রোটিবিউলসমূহ একটি অ্যাক্সোনিম তৈরি করে। পরবর্তীতে সেন্ট্রোসোম হ্রাসকরন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেন্ট্রিওলটি রূপান্তরিত হয়।[১২] লেজের সম্মুখ অংশ(যাকে মধ্যখণ্ড বলে) পুরু হয় কারণ শক্তি সরবরাহের জন্য অ্যাক্সোনিমের চতুষ্পার্শ্বে মাইটোকন্ড্রিয়া সংগঠিত হয়।স্পার্মাটিড ডিএনএ প্যাকেজিং প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত ঘনসন্নিবিষ্ট হয়। ডিএনএ প্যাকেজিং প্রথমত সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়ার বেসিক প্রোটিন দ্বারা হয় যা পরবর্তীতে স্পার্মাটিড দীর্ঘায়নের সময় প্রোটামিন দ্বারা পরিবর্তীত হয়।এভাবে উৎপন্ন ঘন সন্নিবিষ্ট ক্রোমাটিন ট্রান্সক্রিপশন করতে অক্ষম। ঘন নিউক্লিয়াসের চতুষ্পার্শ্বে গলজি বস্তু জমা হয়ে অ্যাক্রোসোম গঠন করে।[১৩] টেস্টোস্টেরন হরমোন অপ্রয়োজনীয় সাইটোপ্লাজম ও অঙ্গাণুসমূহ দূর করে পরিপক্বতা অর্জনে সাহায্য করে। শুক্রাশয়ে অবস্থিত সার্টোলি কোষ অতিরিক্ত সাইটোপ্লাজম ভক্ষণ করে ফেলে।এর ফলে উৎপন্ন শুক্রাণু বা স্পার্মাটোজোয়া পরিপক্ব হলেও চলনক্ষম নয়, ফলে তারা প্রজননে অক্ষম। স্পার্মিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা প্রদানকারী সার্টোলি কোষ থেকে পরিপক্ব শুক্রাণু সেমিনিফেরাস নালিকার গহ্বরে নির্মুক্ত হয়। সার্টোলি কোষ নিঃসৃত তরল পদার্থের মধ্য দিয়ে পেরিস্টাল্টিক সংকোচনের মাধ্যমে নিশ্চল শুক্রাণু এপিডিডিমিসে পৌঁছায়।সেখানে শুক্রাণু চলনক্ষমতা অর্জন করে এবং নিষেক ক্ষমতা লাভ করে।তবে সচল শুক্রাণু পুং প্রজনন তন্ত্রের বাকি পথ তার নিজস্ব চলনক্ষমতার মাধ্যমে নয় বরং পেশি সংকোচনের মাধ্যমে পাড়ি দেয়। ৬ মিটার দীর্ঘ এপিডিডিমিস নালিকা পাড়ি দিতে শুক্রাণুর কয়েকদিন সময় লেগে যায়।এপিডিডিমিসে ১৮ থেকে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত করার পর শুক্রাণু চলনক্ষম হয়। তবে এপিডিডিমিসের তরলে কিছু নিবৃত্তকারী প্রোটিন থাকে যা বীর্যস্খলনের পূর্ব পর্যন্ত শুক্রাণুকে পূর্ণ চলনক্ষম হতে দেয় না। দুটি মানব শুক্রাশয় দৈনিক প্রায় ১২ কোটি শুক্রাণু উৎপাদন করতে পারে।এসব শুক্রাণুর অধিকাংশই এপিডিডিমিসে সঞ্চিত থাকে, তবে অল্প পরিমাণ ভাস ডিফারেন্সে সঞ্চিত থাকে। কমপক্ষে প্রায় এক মাস নিষেক ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রেখে সেখানে অবস্থান করতে পারে।এই সময়ে তারা সেখানে অত্যন্ত চাপাচাপি করে থাকে এবং নালি নিঃসৃত কিছু নিবৃত্তকারী পদার্থের কারণে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। অপরদিকে অত্যধিক যৌনক্রিয়া ও বীর্যস্খলনের ফলে শুক্রাণু কয়েকদিনের বেশি জমা থাকে না। বীর্যস্খলনের পর শুক্রাণু পুরোপুরি চলনক্ষম হয় এবং ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার ক্ষমতা অর্জন করে। সার্টোলি কোষ ও এপিডিডিমিসের আবরণী কলা থেকে বিশেষ ধরনের তরল নিঃসৃত হয় যা শুক্রাণুর সাথেই স্খলিত হয়। এই তরলে হরমোন(টেস্টোস্টেরন ও এস্ট্রোজেন), উৎসেচক ও বিশেষ পুষ্টি থাকে যা শুক্রাণুর পূর্ণতাপ্রাপ্তির জন্য আবশ্যক।

স্বাভাবিক চলনক্ষম, প্রজননে সক্ষম শুক্রাণু ফ্লাজেলার সাহায্যে চলতে সক্ষম। তরল মাধ্যমে তাদের গতি প্রতি মিনিটে ১ থেকে ৪ মিলিমিটার। নিরপেক্ষ ও কিঞ্চিৎ ক্ষারীয় মাধ্যমে শুক্রাণুর কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পায় কিন্তু কিঞ্চিৎ অম্লীয় মাধ্যমে বেশ কমে যায়। অত্যধিক অম্লীয় মাধ্যম দ্রুত শুক্রাণুর মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাপমাত্রা বাড়লে শুক্রাণুর সক্রিয়তা বাড়ে তবে এতে শুক্রাণুর বিপাক হারও বাড়ে ফলে তার আয়ুও কমে যায়।যদিও শুক্রাণু শুক্রাশয়ের নালিকাসমূহে চাপাচাপি অবস্থায় কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তবে স্ত্রী জনন নালিকায় কেবল ১ থেকে ২ দিন পর্যন্ত বাঁচে।

সার্টোলি কোষের ভূমিকা

[সম্পাদনা]
শুক্রাশয়ে সার্টোলি কোষ (লাল) ও শুক্রাণুর (নীল) গঠনের দাগাঙ্কিত রেখাচিত্র। যেসকল স্পার্মাটিডগুলো এখনও স্পার্মিয়েশন পর্যায়ে যায় নি তারা কোষের গহ্বরে সংযুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান

সার্টোলি কোষ শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনেক কাজ করে থাকে, যেমন:

  • রক্ত-শুক্রাশয় প্রাচীর তৈরির মাধ্যমে শুক্রাণু বৃদ্ধি ও পরিপক্বতার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।
  • মায়োসিস আরম্ভকারী প্রয়োজনীয় পদার্থ ক্ষরণ করে।
  • শুক্রাশয় তরল ক্ষরণ করে।
  • অ্যান্ড্রোজেন বাঁধাইকারী প্রোটিন ক্ষরণ করে যা বর্ধনশীল জনন কোষের নিকটে টেস্টোস্টেরন ঘনত্ব বাড়ায়।
    • জননতন্ত্রের কাজের জন্য বেশি মাত্রার টেস্টোস্টেরন প্রয়োজন।
  • ইনহিবিন নামক হরমোন ক্ষরিত হয় যা শুক্রাণু উৎপাদনে পিটুইটারি গ্রন্থির নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে।
  • অ্যান্টি মুলেরিয়ান হরমোন ক্ষরণ করে যা মুলেরিয়ান নালির অবনতি ঘটায়।[১৪]
  • রক্ত-শুক্রাশয় প্রাচীরের সাহায্যে পুরুষের রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রের হাত থেকে স্পার্মাটিড কে রক্ষা করে।[১৫]

প্রভাবক বিষয়সমূহ

[সম্পাদনা]

স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া পরিবেশের অস্থিতির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিশেষ করে হরমোন ও তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্পার্মাটোগোনিয়ামসহ সেমিনিফেরাস নালিকার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায় ফলে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত হয়। শুক্রাশয় অণ্ডকোষে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য যদিও এর পার্থক্য ২° সে. এর বেশি নয়। শীতকালে বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা দেহের তুলনায় অনেক কমে যায় তখন সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য অণ্ডকোষের মাংসপেশির সংকোচন হয়ে শুক্রাশয় দেহের কাছাকাছি চলে আসে। এভাবে স্ক্রোটাম বা অণ্ডকোষ শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে যা ছাড়া গ্রীষ্মকালে স্পার্মাটোজেনেসিস সম্ভব হতো না।[১৬]

পুরুষ ভ্রুণের বৃদ্ধির সময় শুক্রাশয় উদরের জেনিটাল রিজ থেকে উৎপত্তি হয়। বাচ্চা জন্মের ৩ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পূর্বে শুক্রাশয় স্বাভাবিকভাবেই কুঁচকিতে অবস্থিত ইনগুইনাল নালিকা দিয়ে অণ্ডকোষে অবরোহণ করে।মাঝেমধ্যে এই অবরোহণ ঘটে না বা অসম্পূর্ণ হয় ফলে এক বা উভয় শুক্রাশয় উদরে, ইনগুইনাল নালি বা অবরোহণ পথের যে কোনো জায়গায় থেকে যায়। এই অবস্থাকে বলে ক্রিপ্টোর্কিডিজম। যে শুক্রাশয় সারা জীবন উদর অভ্যন্তরে থাকে তা শুক্রাণু উৎপাদন করতে পারে না। অণ্ডকোষের তুলনায় উদরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় শুক্রাশয় নালিকার আবরণী কলা নষ্ট হয়ে যায় ফলে বন্ধ্যত্ব দেখা দেয়। এজন্য অল্প বয়সেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শুক্রাশয় উদর থেকে অণ্ডকোষে স্থানান্তর করতে হয়।

প্রতিবার যৌনসঙ্গমে গড়ে ৩.৫ মিলিলিটার বীর্য স্খলিত হয় এবং প্রতি মিলিলিটার বীর্যে গড়ে প্রায় ১২ কোটি শুক্রাণু থাকে, যদিও স্বাভাবিক পুরুষে এর পরিমাণ ৩.৫ কোটি থেকে ২০ কোটি পর্যন্ত হতে পারে।সুতরাং বলা যেতে পারে প্রতিবার বীর্যস্খলনে গড়ে সর্বমোট ৪০ কোটি শুক্রাণু থাকতে পারে।কোনো ব্যক্তির শুক্রাণুর পরিমাণ প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ২ কোটির নিচে নামলে তার বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে।[১৭] ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করতে একটি মাত্র শুক্রাণুর প্রয়োজন হলেও বীর্যে এত বিশাল সংখ্যক শুক্রাণু থাকা কেন প্রয়োজন এর কারণটি সুস্পষ্ট নয়।কখনো কখনো দেখা যায় শুক্রাণু সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও শুক্রাণুর দেহের গাঠনিক ত্রুটির জন্য পুরুষরা বন্ধ্যা হয়।কখনো কখনো প্রায় অর্ধেক শুক্রাণুই অস্বাভাবিক শারীরিক গঠনবিশিষ্ট হয়ে থাকে।দুটি মস্তক, অস্বাভাবিক আকৃতির মস্তক বা অস্বাভাবিক লেজবিশিষ্ট শুক্রাণু দেখা যায়। আবার এমনও দেখা যায় শুক্রাণুসমূহ গাঠনিক দিক দিয়ে স্বাভাবিক কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তারা সম্পূর্ণরূপে বা আপেক্ষিকভাবে নিশ্চল।যখন অধিকাংশ শুক্রাণু আকৃতিগত দিক দিয়ে অস্বাভাবিক বা নিশ্চল তখন বন্ধ্যত্ব দেখা দেয় এমনকি বাকি শুক্রাণুগুলো স্বাভাবিক থাকলেও।

হরমোনের প্রভাব

[সম্পাদনা]

বয়ঃসন্ধিকালে হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্রন্থি ও লেডিগ কোষের মিথস্ক্রিয়ার ফলে স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া শুরু হয়।[১৮] ফলিকল উদ্দীপক হরমোন ও লুটিনাইজিং হরমোন জনন কোষের টেস্টোস্টেরন ক্ষরণকে উদ্দীপ্ত করে।[১৮][১৯] নিচে স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী গুরুত্বপূর্ণ কিছু হরমোনের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

  • শুক্রাশয়ের ইন্টারস্টিশিয়ামে অবস্থিত লেডিগ কোষ থেকে টেস্টোস্টেরন ক্ষরিত হয় যা জনন কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজনের জন্য আবশ্যক।এটাই শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য প্রথম ধাপ।[২০]
  • সম্মুখ পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে লুটিনাইজিং হরমোন ক্ষরিত হয় যা লেডিগ কোষকে উদ্দীপ্ত করে ফলে সেখান থেকে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ হয়।
  • সম্মুখ পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত ফলিকল উদ্দীপক হরমোন সার্টোলি কোষকে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে স্পার্মাটিড থেকে পরিণত শুক্রাণু উৎপাদন (স্পার্মিওজেনেসিস) প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।[২১]
  • ফলিকল উদ্দীপক হরমোন কর্তৃক উদ্দীপ্ত হয়ে সার্টোলি কোষ টেস্টোস্টেরন থেকে এস্ট্রোজেন উৎপাদন করে যা স্পার্মিওজেনেসিস প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন।[২২][২৩][২৪][২৫]
  • বৃদ্ধি হরমোন শুক্রাশয়ের বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকার।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Sharma S, Hanukoglu A, Hanukoglu I (২০১৮)। "Localization of epithelial sodium channel (ENaC) and CFTR in the germinal epithelium of the testis, Sertoli cells, and spermatozoa."। Journal of Molecular Histology49 (2): 195–208। ডিওআই:10.1007/s10735-018-9759-2পিএমআইডি 29453757  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. "The Spermatozoön, in Gray's Anatomy"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-০৭ 
  3. Song, Ning; Liu, Jie; An, Shucai; Nishino, Tomoya; Hishikawa, Yoshitaka; Koji, Takehiko (২০১১)। "Immunohistochemical Analysis of Histone H3 Modifications in Germ Cells during Mouse Spermatogenesis"Acta Histochemica et Cytochemica44 (4): 183–90। ডিওআই:10.1267/ahc.11027পিএমআইডি 21927517পিএমসি 3168764অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  4. "scrotum". Encyclopædia Britannica. Encyclopædia Britannica Online. Encyclopædia Britannica Inc., 2015. Web. 14 Jan. 2015 <http://www.britannica.com/EBchecked/topic/530078/scrotum>.
  5. Wang C, McDonald V, Leung A, Superlano L, Berman N, Hull L, Swerdloff RS (১৯৯৭)। "Effect of increased scrotal temperature on sperm production in normal men"। Fertil. Steril.68 (2): 334–9। ডিওআই:10.1016/s0015-0282(97)81525-7পিএমআইডি 9240266 
  6. টেমপ্লেট:Citejournal
  7. টেমপ্লেট:Citejournal
  8. টেমপ্লেট:Citejournal
  9. Padubidri, VG; Daftary, SN, সম্পাদকগণ (২০১১)। Shaw's Textbook of Gynaecology (15th সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন 978-81-312-2548-6 
  10. Johnson L, Petty CS, Neaves WB (১৯৮৩)। "Further quantification of human spermatogenesis: germ cell loss during postprophase of meiosis and its relationship to daily sperm production"। Biol. Reprod.29 (1): 207–15। ডিওআই:10.1095/biolreprod29.1.207পিএমআইডি 6615966 
  11. Fishelson, Lev; Gon, Ofer; Holdengreber, Vered; Delarea, Yakob (২০০৭)। "Comparative spermatogenesis, spermatocytogenesis, and spermato-zeugmata formation in males of viviparous species of clinid fishes (Teleostei: Clinidae, Blennioidei)"। The Anatomical Record290 (3): 311–23। ডিওআই:10.1002/ar.20412পিএমআইডি 17525946 
  12. Atypical centrioles during sexual reproduction Tomer Avidor-Reiss*, Atul Khire, Emily L. Fishman and Kyoung H. Jo Curr Biol. 2015 Nov 16;25(22):2956-63. doi: 10.1016/j.cub.2015.09.045. Epub 2015 Oct 17. http://journal.frontiersin.org/article/10.3389/fcell.2015.00021/full
  13. কিম ই ব্যারেট; সুসান এম বারমান; হেডওয়েন এল ব্রুকস; স্কট বইটানো। "২৫- দা গোনাডসঃ ডিভেলাপমেন্ট অ্যান্ড ফাংশন অব দা রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম"। গ্যানংস রিভিউ অব মেডিকেল ফিজিওলজি (ইংরেজি ভাষায়)। ল্যানজ। পৃষ্ঠা ৪০২-৪০৫। আইএসবিএন ৯৭৮-০-০৭-১৬০৫৬৭-০ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  14. Hadley, Mac E.; Levine, Jon E. (২০০৭)। Endocrinology (6th সংস্করণ)। Upper Saddle River, NJ: Prentice Hall। পৃষ্ঠা 369। আইএসবিএন 0-13-187606-6 
  15. কে সেমবুলিংগাম; প্রেমা সেম্বুলিংগাম। "৭৪-মেল রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম"। এসেন্শিয়ালস অব মেডিকেল ফিজিওলজি (ইংরেজি ভাষায়) (৬ সংস্করণ)। জেপি ব্রাদার্স মেডিকেল পাবলিশার্স লিঃ। পৃষ্ঠা ৪৫৫-৪৬৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৩-৫০২৫-৯৩৬-৮ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  16. Harrison, RG; Weiner, JS (১৯৪৯)। "Vascular patterns of the mammalian testis and their functional significance"। The Journal of Experimental Biology26 (3): 304–16, 2 pl। পিএমআইডি 15407652 
  17. গাইটন, আর্থার সি; হল, জন ই। "৮০ঃ রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ড হরমোনাল ফাংশন্স অব দা মেল"। টেক্সটবুক অব মেডিকেল ফিজিওলজি (ইংরেজি ভাষায়) (১১ সংস্করণ)। এলসেভিয়ার সন্ডার্স। পৃষ্ঠা ৯৯৬-১০০১। আইএসবিএন ০-৭২১৬-০২৪০-১ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  18. William J. Kraemer; A. D. Rogol (১৫ এপ্রিল ২০০৮)। The Encyclopaedia of Sports Medicine: An IOC Medical Commission Publication, The Endocrine System in Sports and Exercise। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 286–। আইএসবিএন 978-0-470-75780-2 
  19. Fody EP, Walker EM (১৯৮৫)। "Effects of drugs on the male and female reproductive systems"। Ann. Clin. Lab. Sci.15 (6): 451–8। পিএমআইডি 4062226 
  20. Eberhard Nieschlag; Hermann M. Behre; Susan Nieschlag (২৬ জুলাই ২০১২)। Testosterone: Action, Deficiency, Substitution। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 130–। আইএসবিএন 978-1-107-01290-5 
  21. Wolf-Bernhard Schill; Frank H. Comhaire; Timothy B. Hargreave (২৬ আগস্ট ২০০৬)। Andrology for the Clinician। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 76–। আইএসবিএন 978-3-540-33713-3 
  22. O'Donnell L, Robertson KM, Jones ME, Simpson ER (২০০১)। "Estrogen and spermatogenesis"। Endocr. Rev.22 (3): 289–318। ডিওআই:10.1210/edrv.22.3.0431পিএমআইডি 11399746 
  23. Carreau S, Bouraima-Lelong H, Delalande C (২০১২)। "Role of estrogens in spermatogenesis"। Front Biosci4: 1–11। পিএমআইডি 22201851 
  24. Smith, Eric P.; Boyd, Jeff; Frank, Graeme R.; Takahashi, Hiroyuki; Cohen, Robert M.; Specker, Bonny; Williams, Timothy C.; Lubahn, Dennis B.; Korach, Kenneth S. (১৯৯৪)। "Estrogen Resistance Caused by a Mutation in the Estrogen-Receptor Gene in a Man"। New England Journal of Medicine331 (16): 1056–1061। আইএসএসএন 0028-4793ডিওআই:10.1056/NEJM199410203311604পিএমআইডি 8090165 
  25. Edmund S. Sabanegh, Jr. (২০ অক্টোবর ২০১০)। Male Infertility: Problems and Solutions। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 83–। আইএসবিএন 978-1-60761-193-6 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]