Spinner shark | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Chondrichthyes |
উপশ্রেণী: | Elasmobranchii |
বর্গ: | Carcharhiniformes |
পরিবার: | Carcharhinidae |
গণ: | Carcharhinus |
প্রজাতি: | C. brevipinna |
দ্বিপদী নাম | |
Carcharhinus brevipinna (J. P. Müller & Henle, 1839) | |
Range of the spinner shark | |
প্রতিশব্দ | |
Aprionodon caparti Poll, 1951 |
স্পিনার হাঙর (ইংরেজি: Spinner shark, বৈজ্ঞানিক নাম:Carcharhinus brevipinna) হলো রেকিয়াম হাঙরের একটা প্রজাতি এবং এরা কার্কারিনিডি পরিবারের একটা হাঙর। এই প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী ক্রান্তীয়, নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণ জলযুক্ত উপকূলবর্তী এলাকা ও খোলা সাগরে ১০০ মিটার (৩৩০ ফুট) গভীরতায় পাওয়া যায় যদিও এটি অগভীর জল পছন্দ করে। এদেরকে ব্লাকটিপ রীফ হাঙরের বড় সংস্করণ বলা যেতে পারে তবে এদের শরীর খুবই পাতলা হয় এদের লম্বা চঞ্চুর, এবং পাখনায় কালো চিহ্নিত থাকে এ কারণে অনেকে এটিকে ব্লাকটিপ হাঙরের সাথে মিলিয়ে ফেলেন।
১৮৩৯ সালে পিটার মুলার এবং ফ্রেদরিখ গুস্তাভ জ্যাকব হেনলি প্রথম স্পিনার হাঙর চিহ্নিত করেন। যে নমুনাটি তারা ধরেছিল সেটি ছিলো ৭৯ সেমি (৩১ ইঞ্চি) দীর্ঘ একটা স্পিনার হাঙর। এটি তারা সংগ্রহ করেছিলো জাভা থেকে। এটি ধরা পড়ার পর বেশ কয়েকবার এদের নাম পরিবর্তন করা হয় যেমন-Squalus brevipinna, Aprionodon brevipinna যদিও এই নামের ভিতরে কোনোটাই স্থায়ী ছিলো না। পরিশেষে এটির নাম দেওয়া হয় "Carcharhinus brevipinna" যেটি বর্তমানে এই হাঙরের বৈধ বৈজ্ঞানিক নাম। এদের গোত্রের নাম Carcharhinus । এটি এসেছে "karcharos" থেকে যার মানে "তীক্ষ্ণ" এবং "rhinos" যার মানে "নাক"। তাছাড়া এদের চঞ্চল স্বভাবের কারণে এটিকে স্পিনার হাঙর বলে ডাকা হয়। এদের নামের বেশ কিছু প্রতিশব্দ আছে যেগুলি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখকরা দিয়েছিলেন। যেমন- ১৮৩৯ Aprionodon caparti- পল, ১৯৫১ Carcharias brevipinna- মুলার এং হেলেন, Isogomphodon maculipinnis- পয়, ১৮৬৫ Longmania calamaria -হয়াইটলি, ১৯৪৪ Uranga nasuta-হয়াইটলি, ১৯৪৩
এদের আরো যেসব নামে ডাকা হয়
এদের প্রায় সব সাগরেই বিচরণ করতে দেখা যায়। পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর ক্যারোলিনা, উত্তর মেক্সিকো উপসাগরসহ বাহামা এবং কিউবাতে এদের দেখা মেলে। তাছাড়া ব্রাজিল থেকে আর্জেন্টিনার ভিতরেও এদের বিচরণ স্থান। পূর্ব আটলান্টিক সাগরে, উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে নামিবিয়াতেও এদের দেখা মেলে। ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মাদাগাস্কার থেকে শুরু করে লোহিত সাগর পর্যন্ত এদের পাওয়া যায়। তাছাড়া জাভা এবং সুমাত্রা দ্বীপ এবং ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান ও নিকোবর এবং বঙ্গোপসাগরেও এটিকে দেখতে পাওয়া যায়। প্রশান্ত মহাসাগর, জাপান, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া সম্ভবত ফিলিপাইনেও এদের পাওয়া যায়।
এদের সাধারণত উপকূলবর্তী এবং মহাদ্বীপের সাগরমূখী এলাকাতে বেশি চোখে পড়ে। এরা মূলত ক্রান্তীয় অঞ্চলের ৪০° উত্তরে এবং ৪০° দক্ষিণে বাস করে থাকে। এদের বসবাসের রেঞ্জ সাধারণত ০-৩২৮ ফুট (০-১০০ মিটার) গভীরতার ভিতর। কিশোর স্পিনার হাঙর জোয়ারের সময় উপসাগরীয় অঞ্চলের নিম্ন অংশ দিয়ে ঘোরাফেরা করে এবং কম লবণাক্ত এলাকা এড়িয়ে চলাচল করে। এরা খুবই সক্রিয় হাঙর এবং খুব দ্রুত সাঁতার কাটে। এমনকি কখনো কখনো লাফ দিয়ে জলের উপরে উঠতে দেখা যায়।
এই হাঙর এর দৈহিক গঠন দীর্ঘাকার এবং কিছুটা পাতলা, এদের তুণ্ড খুবই সরু এবং এদের চোখ বেশ ক্ষুদ্র। এদের নিচের চোয়ালে অতিস্পষ্ট একটি খাঁজ বিদ্যমান। এদের চোখ বৃত্তাকার এবং খুবই ছোট। এদের প্রথম পৃষ্ঠীয় পাখনা ছোট এবং আধা কাস্তের মতো বাঁকা এবং এদের দ্বিতীয় পৃষ্ঠীয় পাখনা প্রথম পৃষ্ঠীয় পাখনার তুলনায় অকারে অনেকটাই ছোট তবে প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয় পৃষ্ঠীয় পাখনাতেই কালো ফোটা থাকে। একটা কালো রেখা এই দুই পাখনাকে একসাথে যোগ করে। এটির আন্তঃ-পৃষ্ঠদেশীয় বন্ধণ অবর্তমান। এদের বক্ষীয় পাখনা ছোট, কিছুটা সরু এবং পাখনার ডগা বৃত্তাকার। এদের লেজের পাখনাতেও কালো টিপ থাকে। তবে এদের পায়ু-পাখনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পাখনাই স্পিনার হাঙর ও ব্লাকটিপ হাঙরকে আলাদা করেছে। স্পিনার হাঙরের পায়ু পাখনায় একটা কালো টিপ থাকে যেটি ব্লাকটিপ হাঙরের থাকেনা এবং এই বৈশিষ্টের কারণে এই দুই হাঙরকে আলাদা করা যায় খুব সহজে। তাছাড়া এদের সব পাখনাতেই কালো টিপ থাকে। যদিও এই পার্থক্য শুধু মাত্র বড় হাঙরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এভাবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের পার্থক্য করা যায় না। তবে এই দুই হাঙরকে আলাদা করে চেনার জন্য আরো কিছু লক্ষণ অছে। যেমন পাখনার গঠন, কালো চিহ্নের ধরন বা অকৃতি কিছুটা আলাদা হয়।
স্পিনার হাঙর ধূসর এবং তামাটে রঙের হয়। এদের প্রথম এবং দ্বিতীয় পৃষ্ঠদেশীয়, পায়ূ, এবং বক্ষীয় পাখনায় কালো টিপ থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ধূসর টিপ থাকে। এদের শ্রেনী পাখনাতেও এই রকম টিপ থাকে তবে সব সময় নাও থাকতে পারে। এদের পৃষ্ঠদেশের রং খুবই গাঢ়তর এবং নিচের অংশ হালকা এবং শরীরের তলদেশ একদমই সাদা।
স্পিনার হাঙরের উপরের চোয়ালের দাঁত সংকীর্ণ চওড়া ও ত্রিকোণ আকারের সোজা ভাবে চূড়ার মতো দেখতে। এদের দাঁত ব্লাকটিপ হাঙরের দাঁত থেকে পৃথক হয়। ব্লাকটিপ হাঙরের দাঁত তুলনামূলকভাবে বড় হয়। স্পিনার হাঙরের প্রথম দিকের দাঁত গুলো বেশ খাড়া হয় এবং পরবর্তী দাঁত গুলো কিছুটা বাকা হয়। নিচের চোয়ালের দাঁত উপরের চোয়ালের দাঁতের চেয়ে চওড়া, যদিও উপর ও নিচে উভয় চোয়ালের দাঁতই কিছুটা বাঁকানো হয়। এদের দুটি ছোট দাঁত উপরের চোয়ালের ছাইমপাইছিস (symphysis) এ অবস্থিত এবং অনুরূপ ভাবে একটি দাঁত নিচের চোয়ালেও অবস্থিত। উভয় চোয়ালে দাঁতের সারির ভেতর তারতম্য থাকে ১৪/১৮ এর মধ্যে, কিন্তু তারতম্য এর সাধারণ সংখ্যা ১৬/১৫।
একটি স্পিনার হাঙরের মোট সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য্য ৯.৮ ফুট (৩ মিটার) এবং ওজন সর্বোচচ ১৯৮ পাউন্ডে (৮৯.৭ কেজি) পৌঁছায়। তবে এই হাঙরের গড় মাপ প্রায় ৬.৪ ফুট (১.৯৫ মিটার) এবং ওজন প্রায় ১২৩ পাউন্ড (৫৬ কেজি)। একটি স্ত্রী স্পিনার হাঙর ৫.৬-৬.৬ ফুট (১.৭-২.০ মিটার) হলেই পরিণত হয় এবং পুরুষদের ৫.২-৬.৭ ফুট (১.৬-২.০ মিটার) হলেই পরিপক্ব স্পিনার হাঙর হিসাবে ধরা হয়। পূর্ণতাপ্রাপ্তির পর একটি স্পিনার হাঙর আনুমানিক বছরে ২ ইঞ্চি (৫৫ সেমি) বৃদ্ধি পায়। ১০-২০ বছর বয়সের সময়ে স্পিনার হাঙর সর্বাধিক আকারে উপনীত হয়। এই প্রজাতি সাধারণত উত্তরপশ্চিমস্থ আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগর ও ইন্দো পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মধ্যে ক্ষুদ্রতম হাঙর প্রজাতির ভেতর একটা। এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গেছে, স্পিনার হাঙর জীবনের প্রথম ৬ মাস ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূলে বন্ধ জলের মধ্যে মাসে প্রায় ৮ ইঞ্চি (২০ সেমি) বৃদ্ধি পায়।
স্পিনার হাঙরের প্রধান খাদ্য হল সামুদ্রিক মাছ যার ভেতর আছে সার্ডিন, herrings, anchovies, ক্যাটফিস, lizardfish, মুলেট, ব্লুফিশ, টুনা মাছ, বোনিটো, croakers, জ্যাকস, mojarras, grunts, জিহ্বা-সোলিস, stingrays, কটল ফিশ, স্কুইড, এবং octopi । এদের একটি অপ্রত্যাশিত খাওয়ার পদ্ধতি আছে। এরা খুব দ্রুতভাবে সাঁতার কেটে শিকার ধরে এবং শিকার ধরার আগে শিকারকে কেন্দ্র করে বারবার ঘুরতে থাকে। এরা সব দিক দেখে খুব দ্রুত শিকার ধরে কখনও কখনও এরা শিকার তাড়া করে জলের উপরেও লাফিয়ে ওঠে। ব্লাকটিপ হাঙরও খাবার খোঁজা এবং খাওয়া জন্য একই আচরণ করে যদিও ব্লাকটিপ হাঙর এদের থেকে অনেক ছোট। খাবার খাওয়া এবং খোঁজার কাজ এরা কখনও কখনও সমষ্টিগত ভাবে করে। তাছাড়া এদের জাহাজ থেকে ফেলে দেওয়া বাতিল মাছ এবং ময়লা খেয়ে সাফ করে ফেলার রিপোর্ট আছে।
স্পিনার হাঙর "জরায়ু" বা সহজভাবে বললে এরা সরাসরি জন্মদান করে। স্পিনার হাঙরের ভ্রূণ নিউট্রিটিভ ইয়ক থেকে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। এদের গর্ভকাল সময়সীমা ১২-১৫ মাস ধরে চলে। তটভূমির কাছাকাছি অবস্থানকালে গ্রীষ্মে কালের শুরুর দিকে এরা বাচ্চা জন্ম দেয়। উত্তর আমেরিকার উপকূলীয় এলাকায় প্রজনন মৌসুমে এদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। তাছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী এলাকা ও উত্তর আফ্রিকান উপকূলেও প্রজনন মৌসুমে এদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।
মা হাঙর এক বারে ৩-১৫ টি হাঙর শাবকের জন্ম দেয়। জন্ম নেওয়ার পর এদের দৈর্ঘ্য হয় ২৪-৩০ ইঞ্চি (৬০-৭৫ সেমি) এর মধ্যে। জন্ম নেওয়ার পর অবিলম্বে ছোট বাচ্চাদের অগভীর জলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। এর কারণ সহজে খাদ্য খোজা ও অন্যান্য শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া। জীবনের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে মা হাঙর শিশুদের সাহায্য করে, যদিও বেশিরভাগ বাচ্চা তাদের প্রথম জন্ম দিনের আগেই মারা যায়।
স্পিনার হাঙরকে মানুষের জন্য খুব বিপজ্জনক মনে করা হয় না। তবুও এদের মানুষের উপর হামলা করার কথা শোনা যায়। এখানে একটা ঘটোনার উল্লেক করা জেতে পারে এক বেক্তি তার বোড়শি দিয়ে একটা স্পিনার হাঙর ধোরেছিলো হাঙরটিকে ডঙায় তুলে তার মুখ থেকে কাটা খুলে নেওয়ার সময় হাঙরটি তার হাত কামড়ে ধরে । এরা সাধারণত সাতারুদের হুমকি প্রদর্শন করে। আন্তর্জাতিক হাঙর আক্রমণ ফাইল এর হিসেবে ১৩ টা খুবই সাধারণ আক্রমণের কথা জানা যায়। এদের ক্ষীপ্র গতি ও চঞ্চল স্বভাবের কারণে এরা মানুষের জন্য কিছুটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এদের ছোট, সংকীর্ণ দাঁত ছোট মাছ খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং মানুষদের আক্রমণ করার জন্য এদের দাঁত খুবই অনুপযুক্ত। এদের বিরক্ত করলে অনেক সময় অনর্থক হামলা করে। এটুকু ছাড়া এরা কোনোভাবেই মানুষের উপর হামলা করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখায় না। চাইলে এদের আশেপাশে সাঁতার কাটা যায় এবং এদের ভয়ানক দানব ভাবার কোনো যুক্তিই নেই।
প্রাথমিকভাবে স্পিনার হাঙর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে জেলেরা ধরে থাকে। কিছু জেলে ছিপ দিয়ে এই হাঙ্গর ধরে থাকে। এই হাঙ্গরের পাখনা খুবই মূল্যবান। এশিয়াতে এই পাখনার চাহিদা ব্যাপক। এটি ধরা অনেকটা অনন্দদায়ক বিধায় অনেকে বিনোদনের জন্য এটি ধরে থাকে। তাছাড়া এরা সমুদ্রের ইকোসিস্টেম ঠিক রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
একথা সত্য শুধু মাত্র বাণিজ্যিক এবং বিনোদনমূলক মৎস্য শিকারের জন্য জেলেদের মধ্যে স্পিনার হাঙর খুবই জনপ্রিয় যার ফলে জেলেরা এটিকে শিকারের প্রধান নিশানা বানায়। এর ফলে হাঙরের এই প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে। ওয়ার্ল্ড কনসারভেশন ইউনিয়ন (IUCN) সাম্প্রতিক কালে এটিকে কাছাকাছি হুমকির ভেতর থাকা মাছের তালিকায় যোগ করেছে এবং উত্তর দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরে এদের অরক্ষিত বাসস্থান হিসাবে ঘোষণা করেছে। IUCN একটি বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয় ইউনিয়ন, কিছু সরকারি সংস্থা, এবং কিছু বেসরকারী সংস্থা অংশীদারত্বভাবে প্রজাতির সংরক্ষণ অবস্থা নির্ণয় করে এদের সংরক্ষণে হাত বাড়িয়েছে। এ কাজে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।