দেশ অনুযায়ী ইসলাম |
---|
ইসলাম প্রবেশদ্বার |
৯০–১০০% | |
৭০–৮০% | কাজাখস্তান |
৫০–৭০% | |
৩০–৫০% | উত্তর মেসেডোনিয়া |
১০–২০% | |
৫–১০% | |
৪–৫% | |
২–৪% | |
১–২% | |
< ১% |
ইবেরিয়ান উপদ্বীপে ইসলাম ছিল একটি প্রধান ধর্ম, যা উমাইয়াদের হিস্পেনিয়া বিজয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠে। ১৬ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আধুনিক স্প্যানিশ রাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইসলামের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ১৭ শতকের গোড়ার দিকে মরিস্কোসদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এর বিলুপ্তি সাধন করা হয়, যারা প্রায় ৫০০,০০০ জনসংখ্যার একটি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাস করছিলো।[২] যদিও মরিস্কোসদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্পেনে ফিরে আসে, অথবা তারা বহিষ্কার এড়াতে সক্ষম হয়, তবুও ১৯ শতকে এখানে ইসলামের অনুশীলন অস্পষ্ট দেখা যায়।[৩]
স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৩৬-১৯৩৯) জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে লড়াই করা মরক্কোর সামরিক বাহিনী একটি ভূমিকা পালন করে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন], যার মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন যার নাম মোহামেদ মেজিয়ান। তিনি ছিলেন জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি পরবর্তীতে সেউটা, গ্যালিসিয়ার ক্যাপ্টেন জেনারেল এবং তার যুদ্ধোত্তর জীবনে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের গভর্নর হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মরোক্কানদের স্পেনে প্রবেশের জন্য ভিসার প্রয়োজন ছিল না। যদিও স্পেনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের কারণে এটি বাতিল হয়ে যায়। এরপরই কঠোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ১৯৯০-এর দশকে স্পেনে অভিবাসনের জোয়ার দেখা যায়, মরোক্কানরা প্রচুর সংখ্যায় আসতে থাকে এবং স্পেনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অভিবাসী সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। ২০০০-এর দশকে, অভিবাসীরা অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে (এবং ল্যাটিন আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে) স্বল্প সংখ্যায় আসতে শুরু করে।
যদিও Centro de Investigaciones Sociológicas (CIS) এর ২০২২ সালের সরকারী হিসাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, স্পেনের জনসংখ্যার ২.৯% খ্রিস্টান ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারী,[৪] কিন্তু ইউনিয়ান অফ ইসলামিক কমিউনিটি অফ স্পেন (UCIDE) এর ২০২০ সালের একটি অনানুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালে স্পেনের মুসলিম জনসংখ্যা মোট স্প্যানিশ জনসংখ্যার ৪.৪৫% প্রদর্শন করেছে, যার মধ্যে ৪২% স্প্যানিশ নাগরিক (যাদের বেশিরভাগই বিদেশী পরিবারের বংশোদ্ভূত) এবং ৩৮% মরক্কো এবং ২০% অন্যান্য জাতীয়তাসম্পন্ন।[৫]
হিস্পানিয়া হল সমগ্র ইবেরিয় উপদ্বীপকে দেওয়া ল্যাটিন নাম, এবং পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর (৪৭৬), খ্রিস্টধর্ম গ্রহণকারী ভিসিগোথের টিউটনিক উপজাতি মুসলিম বিজয়ের আগ পর্যন্ত সমগ্র উপদ্বীপ শাসন করে। সে সময় তারা অন্য একটি টিউটনিক উপজাতি - ভ্যান্ডাল - কে বিতাড়িত করে এবং সুয়েভি উপজাতিদেরকে পরাজিত করে। প্রায়শই ঐতিহাসিক সূত্রে এটা বলা হয় যে, স্পেন ছিল প্রাচীন রোমান প্রদেশগুলির মধ্যে একটি, যেখানে ল্যাটিন ভাষা ও সংস্কৃতি গভীর শিকড় গেড়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, ভিসিগোথরা সম্ভবত সবচেয়ে রোমানীকৃত টিউটনিক উপজাতিতে পরিণত হয়ে ঐতিহ্য অব্যাহত রাখে। ভিসিগোথিক শাসনের অধীনে স্পেনের স্থানীয় স্প্যানিয়ার্ড এবং নতুন শাসকদের মধ্যে (যারা রাজত্বের জন্য জার্মানি ধারণা অনুসরণ করত) যোগাযোগের অভাবের কারণে স্পেন চরম অস্থিরতাপূর্ণ হয়ে পড়ে। ভিসিগোথিক রাজাদের সমপর্যায়ের সম্ভ্রান্তদের মধ্যে প্রথম কাতারে হিসাবে বিবেচনা করা হত, এবং তারা যদি বিভিন্ন দলকে খুশি করতে না পারত, তবে তাদেরকে সহজেই উৎখাত করা হত।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষ থেকে ৮ম শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার খবর শেষপর্যন্ত উত্তর আফ্রিকার উপকূলে বিদ্যমান ক্রমবর্ধমান ইসলামি সাম্রাজ্যের শাসকদের নজরে আসে। বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় যে, ন্যায়পরায়ণ ইসলামি খিলাফতের শাসকদের আসলে ভিসিগোথিক রাজ্য বিজয়ের লক্ষ্য ছিলো না, কিন্তু অঞ্চলটির রাজনৈতিক বিভাজন একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়। মুসলিম জেনারেল তারিক ইবনে-জিয়াদের নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনী সুযোগটি সফলভাবে কাজে লাগায়। স্প্যানিশ রাজ্যের বাসিন্দাগণ, শেষ ভিসিগোথ রাজা, রডারিককে বৈধ শাসক হিসাবে মানত না। তাছাড়া কিছু ভিসিগোথিক সম্ভ্রান্ত আধিকারিকগণ স্পেনে মুসলিম বিজয়ে সহায়তা করেছিলেন। একটি নাম প্রায়শই উল্লেখ করা হয়, যিনি তারিক ইবনে-জিয়াদকে দক্ষিণ স্পেন আক্রমণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তিনি হলেন সেউটার কাউন্ট, জুলিয়ান, কারণ তার মেয়েকে রাজা রডারিক ধর্ষণ করেন।
৩০ এপ্রিল, ৭১১-সালে, মুসলিম জেনারেল তারিক ইবনে-জিয়াদ জিব্রাল্টারে অবতরণ করেন এবং অভিযান শেষে বেশিরভাগ ইবেরিয়ান উপদ্বীপ (উত্তর-পশ্চিমের ছোট এলাকা যেমন আস্তুরিয়াস এবং বাস্ক অঞ্চল বাদে) ইসলামী শাসনের অধীনে চলে আসে।[৬] এই অভিযানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল গুয়াদালেতের যুদ্ধ, যেখানে শেষ ভিসিগোথিক রাজা রডারিক জেনারেল তারিক ইবনে-জিয়াদের কাছে পরাজিত হন। রডারিক ৭১১ সালে সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং তারিক ইবনে-জিয়াদ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রডারিকের পরাজয়ের পর, আইবেরিয়ান উপদ্বীপের উপর ভিসিগোথের আধিপত্যের পাতা বন্ধ হয়ে যায়। ভিসিগোথ শাসিত অঞ্চল ও সেপ্টিমেনিয়া প্রদেশ (ফ্রান্সের একটি এলাকা যা পাইরেনিস থেকে প্রোভেন্সে যায়) আইবেরিয় উপদ্বীপের উত্তর উপকূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এবং ভিসিগোথদের শাসনাধীন সমস্ত এলাকা ইসলামী শাসনের অধীনে চলে আসে। মুসলিম বাহিনী উত্তর-পূর্বে পাইরেনিস পর্বতমালা পেরিয়ে ফ্রান্সের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ৭৩২ সালে তুরের যুদ্ধে ফ্রাঙ্কিশ খ্রিস্টান চার্লস মার্টেলের কাছে পরাজিত হয়।
আইবেরিয়ান উপদ্বীপে ইসলামি শাসন বিভিন্ন সময় ধরে স্থায়ী ছিল, যা ৭৮১ সাল থেকে ২৮ বছর পর্যন্ত একদম উত্তর-পশ্চিমে (গ্যালিসিয়া) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যে সব এলাকা দক্ষিণ-পূর্বে গ্রানাডা শহরকে ঘিরে ছিল। মুসলিম সাম্রাজ্য স্পেনের সমাজে লাইব্রেরি, স্কুল, পাবলিক বাথরুম, সাহিত্য, কবিতা এবং স্থাপত্যের মতো সুবিশাল অবদান যুক্ত করে। মূলত সকল ধর্মের মানুষের ঐক্যের মাধ্যমে এটি গড়ে উঠে।[৭] আন্দালুসে তিন প্রধান একেশ্বরবাদী ধর্মীয় ঐতিহ্যে পারস্পরিক আদানপ্রদান, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দর্শন এবং বিজ্ঞানের প্রস্ফুটনের কল্যাণে এই উন্নতি সাম্প্রতিককালে একটি বৃত্তিমূলক ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। লা কনভিভেনসিয়া নামে পরিচিত মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের শান্তিপূর্ণ এই সহাবস্থানকে "বহুত্ববাদী" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।[৮] বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা এই সময় সমাজ ও সংস্কৃতিতে অবদান রাখতে পারে। মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসনের অধীনে এই সময় কোনো অমুসলিম জাতিগোষ্ঠীকে দাসত্বের বেড়ি পরানো হয়নি এবং তাদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেনি। মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীনে এত বড় সাফল্যের আরেকটি কারণ এই ছিল যে, জনসাধারণের জন্য প্রণয়নকৃত আইন ভিসিগোথদের বাস্তবায়িত আইন থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন ছিল।[৭]
তদুপরি, আইবেরিয়ান উপদ্বীপে সুফিবাদের উপস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সুফিবাদের "সর্বশ্রেষ্ঠ শায়খ" বা "শাইখে আকবর" নামে পরিচিত ইবনে আরাবি নিজেই স্পেনের মুরসিয়া থেকে আসেন। তাছাড়া বহু ইসলামি শ্রেষ্ঠ মনীষী যেমন ইমাম কুরতুবি স্পেনের কুরতুব তথা কর্ডোবাতে জন্মগ্রহণ করেন। নকশবন্দী সূফী তরিকা স্পেনে ব্যাপকভাবে অনুসৃত সুফি অনুশাসন।[৯]
কনভিভেনসিয়ার বিষয়টি পণ্ডিতদের মধ্যে একটি অত্যন্ত উত্তপ্ত বিতর্কিত বিষয়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, মুসলিম শাসনের অধীনে স্পেন ছিল নানাত্ববাদী। আর কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, অমুসলিমদের বসবাসের জন্য এটি ছিল খুবই কঠিন জায়গা। যারা বিশ্বাস করেন যে, মুসলিম শাসিত স্পেন ছিল নানাত্ববাদী, তারা কর্ডোবায় মিউজিয়াম অফ থ্রি কালচারের অডিও বর্ণনার দিকে ইঙ্গিত করে থাকেন, যেখানে অডিও বর্ণনায় বলা হয়েছে যে "প্রাচ্য যখন পশ্চিম থেকে আলাদা ছিল না, মুসলমানরাও তখন ইহুদি কিংবা খ্রিস্টানদের থেকে আলাদা ছিল না।"[১০] অন্য একজন পণ্ডিত যুক্তি দেখান যে "এটা এমন এক সাম্রাজ্যে পরিণত হয় যেখানে এমন ধার্মিক ইহুদি হওয়া সম্ভব হয়েছিল যে কিনা প্রাক-ইসলামি গাথা বা হোমোইরোটিক কাব্য পড়তে পারতেন কিংবা পেরিপেটেটিক ঐতিহ্যকে গুরুত্ব সহকারে নিতে পারতেন, কারণ ধার্মিক মুসলমানরা আরো বড় আকারে এসব করেতেন"।[১০] মুসলিম শাসক তৃতীয় আবদ-আল-রহমানের অধীনে মোজারাব-গণ সরাসরি কাজে অংশ নেন। মোযারাব একটি বিতর্কিত শব্দ যা সাধারণত মুসলিম শাসনের অধীনে বসবাস করা খ্রিস্টানদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। শাসক তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন পদে বসান। তাছাড়া, ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা কোনো প্রকার হয়রানি বা নিপীড়নের ভয় ছাড়াই তাদের ধর্ম পালন করতে পারত।”[১১] স্পেনের মুসলিম শাসকরা "কূটনীতি ও জনপ্রশাসন" এর জন্য ইহুদিদের উপর আস্থা রাখতেন। তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক পদে অভিষিক্ত ছিল এবং টলেডো এবং কর্ডোবার মতো শহরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ পেতেন।[১১]
বিতর্কের অন্য পার্শ্বের পণ্ডিতগণ বিশ্বাস করেন যে, স্পেনের মুসলিম শাসন ইউটোপিয়ান সমাজের ধারেও আসতে পারে নি, যেখানে সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার সহিত আচরণ করা হত। প্রকৃতপক্ষে, "গণহত্যা ও একটি শহরতলি ধ্বংসের মাধ্যমে ৮০৫ ও ৮১৮ সালের কর্ডোবায় বিদ্রোহের জবাব দেওয়া হয়"।[১০] উপরন্তু, আন্দালুসিয়ার ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের বাড়াবাড়ি ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ১১ শতকের একটি আইনী পাঠ্যে তাদেরকে "শয়তানের দোসর" বলে অভিহিত করা হয় এবং তাদের উপর "বিশেষ কর" ও "পোষাক আইন" জারী করা হয়।[১০] অনেক খ্রিস্টান মৌলবাদী পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে, কনভিভেনসিয়ার এই প্রগাঢ় সৌম্য দৃষ্টিভঙ্গি মধ্যযুগীয় স্পেনে প্রাতিষ্ঠানিক মৌলবাদ - জোরপূর্বক ধর্মান্তর, নির্বাসন, নাগরিকত্বের নিম্ন মান, উচ্চতর কর এবং সহিংস ইহুদি ও মুসলিমদের রূপের উপর মুখোশ পরিয়ে দিয়েছে।"[১১] ধারণা করা হয় যে, শ্রেণীবৈষম্যও কনভিভেনশিয়াতে ভূমিকা রেখেছিল। প্রকৃতপক্ষে, "ইহুদি এবং খ্রিস্টান সমাজের অনেক নিম্নস্তরের মানুষ তাদের ইব্রাহিমী প্রতিপক্ষদের সাথে বিচ্ছিন্ন ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে যায়।"[১১] অন্যান্য পক্ষপাতদুষ্ট পণ্ডিতরা মনে করেন যে, মুসলিম শাসনের অধীনে সর্বত্রই খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করা হত। বিশেষ করে আলমোরাভিড এবং আলমোহাদের আগমনের পরে খ্রিস্টান এবং ইহুদিদেরকে খুব কমই সহ্য করা হয়েছিল এবং সিদ্ধান্তমূলকভাবে তাদের ধর্মকে "নিকৃষ্ট" ধর্ম হিসাবে বিবেচিত করা হয়।[১২]
সময়ের সাথে সাথে উত্তর আফ্রিকার মতো বৈচিত্র্যময় স্থান,ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইরান থেকে মুসলিম অভিবাসীরা আইবেরিয়ান উপদ্বীপের অঞ্চলগুলিতে আক্রমণ করে। ইসলামী শাসকরা আইবেরিয়ান উপদ্বীপকে "আল-আন্দালুস" বলে অভিহিত করতেন।
একটা সময়, আল-আন্দালুস ছিল একটি মহান মুসলিম সভ্যতা, যেটি ১০ শতকে উমাইয়া খিলাফতের সাথে সাথে তার শীর্ষে পৌঁছে যায়। আল-আন্দালুস[৬] এর নিম্নলিখিত কালানুক্রমিক পর্যায়গুলি:
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: আলমোরাভিডস এবং আলমোহাদের দ্বারা বিভিন্ন তাইফা রাজ্যগুলিকে সংযুক্ত করার তারিখগুলি ভিন্ন)
গ্রানাডার মাদ্রাসাটি ১৩৪৯ সালে গ্রানাডার সুলতান নাসরি রাজবংশের সম্রাট প্রথম ইউসুফ প্রতিষ্ঠআ করেন এবং সেই সময়ের অনেক শ্রেষ্ঠ বিশিষ্ট পণ্ডিতের এখানে বসবাস ছিল।[১৩]
খিলাফতের বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর, খ্রিস্টান রিকনকুইস্টার কারণে ইসলামী নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। রিকনকুইস্টার (পুনর্দখল) মাধ্যমে উত্তর স্পেনের ক্যাথলিক রাজ্যগুলি অবশেষে ইবেরিয়ান উপদ্বীপের মুসলিম রাজ্যগুলিকে পরাজিত ও জয় করতে সফল হয়। ১০৮৫ সালে ক্যাথলিক শক্তির অধীন প্রথম প্রধান শহরটি ছিল টলেডো,[১৪] যা আলমোরাভিদের হস্তক্ষেপকে প্ররোচিত করেছিল। ১২১২ সালে লাস নাভাস দে টোলোসার যুদ্ধের পর, আল-আন্দালুসের বেশিরভাগ জমি ক্যাথলিক রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল গ্রানাডার নাসরি রাজবংশের আমিরাত। ১৪৮২ সালে গ্রানাডা আমিরাতের বিরুদ্ধে রিকনকুইস্টার গ্রানাডা যুদ্ধ (গুয়েরা ডি গ্রানাডা ) শুরু হয়। এটা ১৪৯২ সাল পর্যন্ত ছিল না যে গ্রানাডা শহর এবং আলহামব্রা এবং জেনারেলিফ প্রাসাদ সহ গ্রানাডার এমিরেট, আল-আন্দালুসের শেষ অবশিষ্ট মুসলিম অঞ্চল, গ্রানাডার যুদ্ধে ক্যাথলিক রাজতন্ত্রী (লস রেয়েস ক্যাটোলিকোস) বাহিনীর হাতে পড়ে। ক্যাস্টিলের রানী প্রথম ইসাবেলা এবং তার স্বামী আরাগনের রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ছিল এর হুকুমরান।
বিজয়ের সাথে সাথে গ্রানাডার আমির দ্বাদশ মুহাম্মাদ গ্রানাডা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এতে নতুন স্প্যানিশ মুকুটধারীর মুসলিম প্রজাদের ব্যাপারে ধর্মীয় সহনশীলতার একটি বড় পরিমাপের শর্ত উল্লেখিত হয়। ফলে মুসলিমদেরকে তাদের নিজস্ব ভাষা, স্কুল, আইন এবং রীতিনীতি অব্যাহত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কিন্তু রাজ আদেশের বিস্তারিত বিষয়টি মূলত স্থানীয় ক্যাথলিক কর্তৃপক্ষের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্যাথলিকদের বিজয়ের পর গ্রানাডার প্রথম আর্চবিশপ হার্নান্দো ডি তালাভেরা মোটামুটি সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছিলেন, যদিও তা নামকা ওয়াস্তে ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
যাইহোক, ১৪৯২ সালে আলহামব্রা ডিক্রির মাধ্যমে রাজতন্ত্রের স্বাধীনতার উলটপালট অবস্থা শুরু হয়। আর্চবিশপ তালাভেরার স্থলে অসহিষ্ণু ও রক্তখেকো কার্ডিনাল সিসনেরোস কে প্রতিস্থাপিত করা হলে এই অচলাবস্থা চলতে থাকে। সে অবিলম্বে ব্যাপকভাবে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের জন্য একটি অভিযানের আয়োজন করে এবং প্রকাশ্যে হাজার হাজার আরবি বিজ্ঞানের পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে দেয়।[১৫] বিশ্বাস ও চুক্তি লঙ্ঘনের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে, ১৪৯৯ সালে মুদেজাররা আল্পুজাররাসের প্রথম বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং তা ব্যর্থ হয়। এর ফলে ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলাকে সহনশীলতার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করার কথা উঠে। একই বছর, গ্রানাডার মুসলিম নেতাদের অবশিষ্ট সমস্ত আরবী বই হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়, যার বেশিরভাগ পুড়ে ফেলে। শুধুমাত্র চিকিৎসাবিষয়ক পান্ডুলিপিগুলিকে রক্ষা করা হয়; সেই পাণ্ডুলিপিগুলি এসকোরিয়াল লাইব্রেরিতে রয়েছে। ১৫০২ সালে ভ্যালেন্সিয়া থেকে শুরু করে, মুসলমানদের বাপ্তিস্ম অথবা নির্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। নির্বাসনের বিকল্পটি বাস্তবে সম্ভব ছিল না কারণ একজনের পরিবারকে উপড়ে ফেলা এবং উত্তর আফ্রিকার মুসলিম ভূমিতে যাত্রা করা কঠিন ছিল। কারণ নিরাপদ যাতায়াতের জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ফি দেওয়ার সক্ষমতা সবার ছিল না। আর কর্তৃপক্ষেরও নির্বাসনে বাধা দেওয়ার প্রবণতা ছিল।[১৬]
তাই সংখ্যাগরিষ্ঠরা "খ্রিস্টান" হিসাবে পরিচিত হয়ে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়। ধর্মান্তরিত অনেক মুসলমান (যাদের "মরিস্কোস" বলা হয়), যদিও বাহ্যিকভাবে ক্যাথলিক ছিলো, কিন্তু তারা ব্যক্তিগতভাবে ক্রিপ্টো-মুসলিম হিসাবে পুরানো বিশ্বাসকে মেনে চলত।[১৭] ১৫০৪ সালে সমধার্মিকদের একটি আবেদনের জবাবে, উত্তর আফ্রিকার একজন ইসলামিক পন্ডিত আহমদ ইবনে আবি জুমাহ একটি ফতওয়া জারী করেন। একে "ওরান ফতোয়া " বলা হয়। এই ফতওয়ায় উল্লেখ করা হয় যে, মুসলমানরা বাহ্যিকভাবে খ্রিস্টান ধর্ম পালন করতে পারবে। সেইসাথে যদি তাদেরকে বাধ্য করা হয় কিংবা নিপীড়ন করা হয় তাহলে প্রাণ বাচানোর তাগিদে ওয়াইন পান, শুয়োরের মাংস এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ জিনিস খেতে পারবে।[১৭] এর অবশ্য একটি ভালো দিক ছিল যে, ওয়াইন বা শুয়োরের মাংস থেকে বিরত থাকার কারণে স্প্যানিশ ইনকুইজিশনে লোকেদের নিন্দা করা হতে পারত।
গোপনে ইসলাম চর্চা ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ১৫৬৭ সালে, রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ অবশেষে আরবি ভাষার ব্যবহারকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং ইসলাম ধর্ম, পোশাক এবং রীতিনীতি নিষিদ্ধ করেন। এই পদক্ষেপটি আল্পুজাররাসের দ্বিতীয় বিদ্রোহের দিকে প্ররোচিত করে, যার মধ্যে বর্বরতা ছিল। এক ঘটনায় দেখা যায়, অস্ট্রিয়ার ডন জন তার সমস্ত সৈন্যদেরকে দিয়ে সমগ্র মানুষকে হত্যা করার পর গ্রানাডার পূর্ব গ্যালেরা শহরটি ধ্বংস করে দেয়। স্পেন জুড়ে গ্রানাডার মরিস্কোসদের একীভূত করা হয় এবং ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৬০৯ সালে অবশিষ্ট মুসলমান মরিস্কোসদের বহিষ্কারের জন্য ফিলিপ তৃতীয় 'বহিষ্কারনামা' জারি করে। আইনটি ভ্যালেন্সিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিশেষভাবে কার্যকর করা হয়, কারণ সেখানে মুসলমানগণ জনসংখ্যার ৩৩% গঠণ করে এবং মুসলিম-অমুসলিমদের মাঝে জাতিগত উত্তেজনা বেড়ে যায়। ক্যাস্টিল রাজ্য এবং আন্দালুসিয়া থেকে মুসলমানদের সংশ্লিষ্ট বহিষ্কার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয় ১৬১৪ সালে। যদিও আধুনিক পণ্ডিতদের কাছে এর সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ। আরাগন এবং ভ্যালেন্সিয়ার কিংডম থেকে ভিন্ন, মরিস্কোস স্পেনের বাকি অংশের মরিস্কোরা আরাগন ও ভ্যালেন্সিয়া রাজ্য থেকে যথেষ্ট সংহত ছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান অ-মরিস্কো প্রতিবেশী এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সুরক্ষায় বহিষ্কার এড়াতে বা ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
মুসলমানদের বিতাড়নের ফলে আরাগনের রাজস্ব হ্রাস পায় এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার যথেষ্ট ক্ষতি সাধন হয়। এর ফলে আরাগনের পতন ঘটে এবং ক্যাস্টিলের প্রাধান্য বেড়ে যায়। তাছাড়া, ভ্যালেন্সিয়া থেকে রাজস্ব এবং মেধাশক্তি হারানোর ফলে ভ্যালেন্সিয়া থেকে বার্সেলোনার আশেপাশের অঞ্চলগুলিতে কাতালান শক্তি বৃদ্ধি পায়, যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা অনেক কম ছিল এবং তারা প্রভাবিত হয়েছিল কম পরিমাণে।
তা সত্ত্বেও, "মোরোস কর্টাডোস" নামে পরিচিত মরিশ ক্রীতদাস সম্প্রদায়গুলি স্পেনের বিভিন্ন অংশে বিদ্যমান ছিল, যাদের মধ্যে অনেকগুলি সম্প্রদায় ১৭৬৭ সালে মরক্কোর সাথে পারস্পরিক চুক্তির ফলে মুক্তি পায়। এসব ক্রীতদাসদের যদিও ব্যাপ্টাইযড করা হয়েছিল, তবুও তারা কষ্টেআষ্টে নিজেদের ধর্ম পালন করত। ১৭৯৯ সালে মরক্কোর সাথে রাজা দ্বিতীয় চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেনে মরক্কানদেরকে তাদের ধর্ম পালনের অধিকারের নিশ্চয়তা দিবেন এবং বিনিময়ে স্প্যানিশ ক্যাথলিকদের মরক্কোতে একই অধিকার দেওয়া হবে বলে স্বাক্ষরিত হয়।[১৮]
১৯৭৮ সালের স্প্যানিশ সংবিধানের আর্টিকেল ১৬ তে উল্লেখ করা হয় যে, "কাউকে তার ধর্ম, বিশ্বাস বা মতাদর্শ সম্পর্কে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা যাবে না ",[১৯] যার অর্থ ধর্মীয় বিশ্বাসের সমস্ত তথ্যই আনুমানিক। ইউরোপীয় ইকোনোমিক কমিউনিটিতে স্পেনের প্রবেশ (১৯৮৬), অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং তৃতীয় দেশগুলিতে ইউরোপীয় সীমান্ত বন্ধ হওয়ায়, গত দুই দশকে অভিবাসন বৃদ্ধিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।[২০] Centro de Investigaciones sociológicas (CIS) এর সরকারী হিসাব বলছে যে, জনসংখ্যার ২.৯% বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী, যার মধ্যে প্রায় ২% মুসলমান।
বছর | জন. | ±% |
---|---|---|
2003 | ৫,২৫,০০০ | — |
2004 | ৮,০১,২৮৪ | +৫২.৬% |
2005 | ১০,৬৪,৯০৪ | +৩২.৯% |
2006 | ১০,৮০,৪৭৮ | +১.৫% |
2007 | ১১,৪৫,৪২৪ | +৬% |
2008 | ১৩,১০,১৪৮ | +১৪.৪% |
2009 | ১৪,৪৬,৯৩৯ | +১০.৪% |
2010 | ১৪,৯৮,৭০৭ | +৩.৬% |
2011 | ১৫,৯৫,২২১ | +৬.৪% |
2012 | ১৬,৭১,৬২৯ | +৪.৮% |
2013 | ১৭,৩২,১৯১ | +৩.৬% |
2014 | ১৮,৫৮,৪০৯ | +৭.৩% |
2015 | ১৮,৮৭,৯০৬ | +১.৬% |
2016 | ১৯,১৯,১৪১ | +১.৭% |
2017 | ১৯,৪৬,৩০০ | +১.৪% |
2018 | ১৯,৯৩,৬৭৫ | +২.৪% |
2019 | ২০,৯১,৬৫৬ | +৪.৯% |
মাত্রিভূমি | জনসংখ্যা |
---|---|
Spain</img> Spain | 879,808 |
Morocco</img> Morocco | 812,412 |
Pakistan</img> Pakistan | ৮৮,৭৮৩ |
Senegal</img> Senegal | 70,879 |
অন্যান্য | 63,286 |
Algeria</img> Algeria | ৬৩,০৫১ |
Nigeria</img> Nigeria | 39,241 |
Mali</img> Mali | 24,965 |
Gambia</img> Gambia | 20,354 |
Bangladesh</img> Bangladesh | 18,093 |
Guinea</img> Guinea | 10,784 |
মোট জনসংখ্যা | 2,091,656 |
স্বায়ত্তশাসিত </br> সম্প্রদায়গুলি |
পূজা </br> 2019 সালে স্থান |
কবরস্থান </br> 2019 সালে |
---|---|---|
Catalonia</img> Catalonia | 324 | 5 |
Andalusia</img> Andalusia | 271 | 11 |
Valencian Community</img> Valencian Community | 227 | 4 |
টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Community of Madrid</img>টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Community of Madrid | 131 | 1 |
টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Region of Murcia</img>টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Region of Murcia | 121 | 1 |
Castile-La Mancha</img> Castile-La Mancha | 109 | 0 |
Basque Country</img> Basque Country | 78 | 1 |
Aragon</img> Aragon | 75 | 1 |
Ceuta</img> Ceuta | 63 | 1 |
Balearic Islands</img> Balearic Islands | 57 | 1 |
Canary Islands</img> Canary Islands | 53 | 3 |
Castile and León</img> Castile and León | 51 | 3 |
Navarre</img> Navarre | 45 | 1 |
Extremadura</img> Extremadura | 28 | 0 |
La Rioja (Spain)</img> La Rioja (Spain) | 25 | 1 |
Galicia</img> Galicia | 23 | 0 |
Melilla</img> Melilla | 14 | 1 |
Asturias</img> Asturias | 10 | 1 |
Cantabria</img> Cantabria | 5 | 0 |
স্পেন | 1710 | 36 |
সূত্র: Observatorio del Pluralismo Religioso en España[২২] |
|hdl-সংগ্রহ=
এর |hdl=
প্রয়োজন (সাহায্য)