স্বয়ংবরম | |
---|---|
পরিচালক | আদুর গোপালকৃষ্ণন |
রচয়িতা | আদুর গোপালকৃষ্ণন কে. পি. কুমারন |
কাহিনিকার | আদুর গোপালকৃষ্ণন |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | এম. বি. শ্রীনিবাসন |
চিত্রগ্রাহক | মানকদা রবি বর্মা |
সম্পাদক | রমেশন |
প্রযোজনা কোম্পানি | চিত্রলেখা ফিল্ম কোঅপারেটিভ |
পরিবেশক | চিত্রলেখা ফিল্ম কোঅপারেটিভ |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৩১ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | মালয়ালম |
নির্মাণব্যয় | ₹ ২,৫০,০০০ (ইউএস$ ৩,০৫৫.৮৩)[১] |
স্বয়ংবরম (ইংরেজি: One's Own Choice) মালয়ালম-ভাষায় নির্মিত ১৯৭২ সালের একটি ভারতীয় কাহিনী চলচ্চিত্র। ছবিটির সহ-রচয়িতা এবং পরিচালনা করেছেন আদুর গোপালকৃষ্ণন এবং প্রধান চরিত্রে আছেন মধু ও শারদা। সঙ্গে সহঅভিনেতা রয়েছেন থিক্কুরিসি সুকুমারন নায়ার, আদুর ভবানী, কে. পি. এ. সি. ললিতা, এবং ভারথ গোপি। ছবিতে বিশ্বম (মধু) এবং সীতা (শারদা) নামের এক দম্পতির জীবন চিত্রিত করা হয়েছে যাঁরা তাঁদের বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছেন এবং নতুন জায়গায় নতুন জীবন শুরু করতে চান। শিরোনামটি একটি প্রাচীন ভারতীয় বিবাহরীতি অনুশীলনের অনুপ্রেরণায় গৃহীত যেখানে বিবাহযোগ্য বয়সের একটি মেয়ে দাবীদারদের মধ্যে থেকে থেকে একজনকে স্বামী হিসাবে বেছে নিতে পারতেন।
স্বয়ংবরম বেশ কয়েকটি আত্মপ্রকাশের ছবি হিসাবে চিহ্নিত। গোপালকৃষ্ণনের পরিচালনা, মালয়ালম তারকা ভরথ গোপির অভিনয় এবং গোপালকৃষ্ণন প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা সংস্থা চিত্রলেখা ফিল্ম কোঅপারেটিভের একসঙ্গে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে। ছবিটিতে এম. বি. শ্রীনিবাসন এর মৌলিক সুর সংযোজন, মানকদা রবি বর্মা র ক্যামেরার কাজ এবং রমেশনের চলচ্চিত্র সম্পাদনা উল্লেখযোগ্য। লেখক-পরিচালক কে. পি. কুমারন গোপালকৃষ্ণনের সাথে ছবিটির সহ-চিত্রনাট্যকার ছিলেন। ফিল্ম ফাইনান্স কর্পোরেশন (এফএফসি) এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য লোনের প্রাথমিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে গোপালকৃষ্ণণের এই প্রকল্পটি চালু করতে সাত বছর সময় লেগেছিল। পরে এফএফসি আংশিকভাবে চলচ্চিত্রটির জন্য অর্থ লগ্নি করলে বাকি অংশের অর্থ সংস্থান করেন চিত্রলেখা।
ছবিটি সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পায়। এটি নতুন তরঙ্গ সিনেমা আন্দোলন এ মালয়ালম সিনেমা কে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং মালায়ালাম চলচ্চিত্রে প্রথম সিঙ্ক্রোনাইজড সাউন্ড এবং স্থানীয় আউটডোর লোকেশন ব্যবহার করেছিল। লেইটমোটিফ শব্দ ব্যবহার করে এই ছবিটি প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র হয়ে ওঠার মর্যাদা লাভ করেছে। এটি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এর মতো বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং ১৯৭৩ সালের ২০ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এ চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে ছিল: সেরা কাহিনীচিত্র, সেরা পরিচালক এর পুরস্কার পান গোপালকৃষ্ণন এবং সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার পান শারদা।
বিশ্বম (মধু)) এবং সীতা (শারদা) এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি তাঁদের পরিবারের পছন্দের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছেন এবং নিজের শহর ছেড়ে দুজনেই নতুন জায়গায় নতুন জীবন শুরু করতে চান। প্রাথমিকভাবে তাঁরা একটি ভদ্র হোটেলে ছিলেন। তবে শীঘ্রই আর্থিক কারণে তাঁরা অন্য একটি সাধারণ হোটেলে চলে যান।
বিশ্বম একজন শিক্ষিত বেকার যুবক এবং একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লেখক। এর আগে তাঁর কিছু ছোট গল্প সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি স্বপ্ন দেখেন যে তাঁর উপন্যাস নিরভৃতি (উচ্ছাস) শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। তিনি এক সংবাদপত্র সম্পাদকের (ভাইকম চন্দ্রশেখরন নায়ার) এর সাথে দেখা করেন যিনি তাঁর উপন্যাসটি পড়তে রাজি হন। তবে বিশ্বমের ইতিমধ্যে যথেষ্ট প্রকাশিত লেখা নেই বলে উপন্যাসটি প্রকাশ করতে রাজী হন না। সীতাকে সেলস গার্ল হিসাবে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা গ্রহণ করতে পারেন না কারণ তিনি প্রয়োজনীয় ₹ ১০০০ সিকিউরিটি মানি জমা দিতে অক্ষম। চাকরি পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাপে তাঁরা বস্তিতে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হন। জানকী (আদুর ভবানী) নামে এক বৃদ্ধা এবং কল্যাণী নামে এক পতিতাকে (কে. পি. এ. সি. ললিতা) তাঁদের প্রতিবেশী হিসাবে পান। যেমন ভেবেছেন তেমন পছন্দসই কিছু কাজ না পেয়ে তাঁরা সীতার গহনাগুলি বিক্রি করেন।
বিশ্বম কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষকের চাকরি পেলেও শীঘ্রই সেটি হারাতে হয়। তারপরে তিনি বরখাস্তকৃত কর্মচারীর (ভারথ গোপী) পরিবর্তে একটি কাঠের দোকানে সামান্য বেতনের কেরানী হিসাবে একটি চাকরি গ্রহণ করেন। বিশ্বম এবং সীতা তাঁদের নবজাতক সন্তানের সাথে একটি সুখী ঘর গড়ার চেষ্টা করেন। তবে শিগগিরই তাঁরা অনিচ্ছাকৃতভাবে লড়াই করার সাথে সাথে তাঁদের স্বপ্নগুলি ম্লান হতে থাকে। বিশ্বম অসুস্থ হয়ে পড়লে সীতা তাঁর সমস্ত দক্ষতা দিয়ে তাঁর উন্নতির জন্য চেষ্টা করেও ওষুধ কিনতে অক্ষম হয়ে পড়েন। তিনি অবশেষে একজন ডাক্তারকে ডাকার সিদ্ধান্ত নেন। যাইহোক তাঁদের শিশু সন্তানের সাথে তাঁকে একা রেখে বিশ্বম মারা যান। বিশ্বমের মৃত্যুর পরে যখন সীতার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় তখন তিনি তা অস্বীকার করেন। চলচ্চিত্রটি শেষ হয় সীতা তাঁর শিশু সন্তানকে খাওয়ানোর দৃশ্য দিয়ে যেখানে হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ এর চিত্রিত দৃশ্য সীতার স্বয়ম্বর সভার দিকে তিনি একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন এবং তাঁদের বাড়ির দরজা দৃঢ়ভাবে রুদ্ধ।