স্বামীনাথন শিবরাম | |
---|---|
জন্ম | তামিলনাড়ু, ভারত | ৪ নভেম্বর ১৯৪৬
পেশা | রসায়নবিদ |
পরিচিতির কারণ | পলিমার রসায়নবিদ |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী আইএনএসএ বিশ্বকর্মা পদক সিআরএসআই রজত পদক আইসিএসএ মিলেনিয়াম পদক আইআইটিকে বিশিষ্ট অ্যালুমনাস পুরস্কার আইএসিএস এস. আর. পলিত স্মৃতি পুরস্কার কে. জি. নায়েক স্বর্ণ পদক এফআইসিসিআই পুরস্কার ওম প্রকাশ ভাসিন পুরস্কার গয়াল পুরস্কার বছরের বিশিষ্ট উপাদান বিজ্ঞানী পুরস্কার প্রফেসর এম. সানতাপা রজতজয়ন্তী পুরস্কার ভিএএসভিইকে পুরস্কার আইআইসিই আর. এ. মাশেলকর পদক |
ওয়েবসাইট | Official website |
স্বামীনাথন শিবরাম (Swaminathan Sivaram, জন্ম ৪ নভেম্বর ১৯৪৬) একজন ভারতীয় পলিমার রসায়নবিদ, উদ্ভাবক, প্রতিষ্ঠান নির্মাতা এবং পুনে জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার এর প্রাক্তন ডাইরেক্টর।[১] তিনি তাঁর অগ্রণী কাজ অ্যালকাইলেশন অফ টার্সিয়ারী অ্যালকাইল হ্যালাইডস উইথ ট্রাইঅ্যালঅ্যালুমিয়াম এবং ওলেফিন পলিমারাইজেশন এর জন্য পরিচিত [২] এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কাজ করা একজন ভারতীয়র সবচেয়ে বেশি মার্কিন পেটেন্ট তাঁরই নেওয়া। [৩] তিনি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পেশাদার সংস্থার ফেলো। ২০০৬ সালে ভারত সরকার ভারতীয় বিজ্ঞানে অবদানের জন্য তাঁকে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করেছিল।[৪]
শিবরাম ১৯৪৬ সালের ৪ নভেম্বর দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। [৫] তাঁর প্রারম্ভিক কলেজ পড়াশোনা ম্যাড্রাস ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে। সেখান থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি (বিএসসি) লাভ করেন এবং পরে ১৯৬৭ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, কানপুর থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (এমএসসি) অর্জন করেন।[২] এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং নোবেল বিজয়ী হারবার্ট সি. ব্রাউন এর অধীনে পারদু বিশ্ববিদ্যালয় এ ডক্টরাল গবেষণা করেন এবং ১৯৭২ সালে ডক্টরেট (পিএইচডি) অর্জন করেন। [৩] তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও দু'বছর টানা ছিলেন এবং ওহিওর আক্রোন বিশ্ববিদ্যালয় এর পলিমার সায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণা সহযোগী হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ভারতে ফিরে আসেন এবং বরোদার ইন্ডিয়ান পেট্রোকেমিক্যাল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইপিসিএল) এ গবেষক বিজ্ঞানী হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গবেষণা ম্যানেজার এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের মতো বিভিন্ন পদে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ২০০২ সালে পলিমার রসায়ন বিভাগের প্রধান হিসাবে ন্যাশনাল কেমিক্যাল ল্যবরেটরী (এনসিএল) এ চলে যান। পরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ২০১০ সালে তাঁর অবসর পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন।[৫]
শিবরাম ভারত ও বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টির দায়িত্ব পালন করেছেন। [৫] তিনি ১৯৯১ সালে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ব্লেইস পাস্কেল বিশ্ববিদ্যালয় এ একজন পরিদর্শন বিজ্ঞানী ছিলেন। ১৯৯৩-৯৪ সালে তিনি ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল টেকনোলজি তে পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কে. এস. রাঘবন রাসায়নিক সাপ্তাহিক পরিদর্শক অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত ছিলেন এবং সেপ্টেম্বর - অক্টোবর ১৯৯৫ সালে ইউনিভার্সিটি বর্ডেক্স এ পরিদর্শনকারী অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সালের মে মাসে ফ্রি ইউনিভার্সিটি অফ বার্লিন এর অতিথি লেকচারার এবং ২০০৬ সালে আক্রন বিশ্ববিদ্যালয় এর হ্যারল্ড এ মর্টন বিশিষ্ট ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্বে ছিলেন।[৫]
শিবরাম ভারত সরকার এবং বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন এবং মন্ত্রিসভার বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির (এসএসি-সি) প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। [৫] ভারী শিল্প ও পাবলিক এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রণালয় এর রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল ইনোভেশন কাউন্সিলের পাবলিক সেক্টর অন টাস্কফোর্স এর প্রাক্তন সদস্যও ছিলেন। তিনি প্রাক্তন সদস্য ছিলেন রাসায়নিক ও সার মন্ত্রক এবং তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কমিশন (ওএনজিসি) এর বোর্ড অব ট্রাস্টির।[৫] তিনি বেশ কয়েকটি বিজ্ঞান ফোরাম এবং সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। যেমন ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমী, জাতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত, রাসায়নিক গবেষণা সমিতি ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এবং ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ভারতের মেটেরিয়ালস রিসার্চ সোসাইটি।[৫] তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, মুম্বাই ছাড়াও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, পুনে এবং রাসায়নিক প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এর বোর্ড অব গভর্নর পদে আসীন ছিলেন। তিনি তাঁদের মুম্বই, কানপুর, চেন্নাই এবং হায়দরাবাদ ইনস্টিটিউটের জন্য ভারতীয় প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাকাল্টি সিলেকশন কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মস্কোর রাশিয়ান বিজ্ঞান একাডেমীর ক্যাটালাইসিসের বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।[৫]
তাঁর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শিবরাম হারবার্ট সি. ব্রাউন এবং জে. পি. কেনেডি-র সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ট্রাইঅ্যালকাইলঅ্যালুমিনামের সাথে টার্সিয়ারী অ্যালকাইল হ্যালাইড এর অ্যালকাইলেশন বিষয়ে কাজ করেছিলেন। কেনেডি সহ তাঁর গবেষণাগুলি কার্বোকেটোনিক পলিমারাইজেশন এর মেকানিজমের জ্ঞানের ভিত্তিকে প্রশস্ত করতে সহায়তা করেছে এবং নিয়ন্ত্রিত ও লিভিং কার্বোকেটোনিক পলিমারাইজেশন এর পরবর্তীকালের প্রয়োগকৌশলের দিকে পরিচালিত করেছে বলে জানা গেছে। [২] তাঁর গবেষণা পলিমারে নতুন বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে সহায়তা করেছে এবং পলিমারিক পদার্থের সংশ্লেষণ, গঠন এবং বৈশিষ্ট্যে আরও আলোকপাত করেছে। [৬] তিনি পলিমার স্তরযুক্ত কর্দম ন্যানোকম্পোসাইটস বিষয়ে কাজ করেছেন এবং মৃত্তিকার এক্সফোলিয়েটেড ন্যানোকম্পোসাইট তৈরির জন্য বেশ কয়েকটি জৈব সংশোধক সংশ্লেষণে সফল হয়েছেন। [৬] তাঁর নেতৃত্বে একটি দল জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার জিগলার ন্যাটা অনুঘটকের ব্যবহার করে ওলেফিন পলিমারাইজেশন নিয়ে গবেষণা চালায় যা এই বিষয়টিতে গবেষণার একটি নতুন ধারা উন্মুক্ত করে।[২] তাঁর গবেষণা কর্মগুলি পিয়ের পর্যালোচনা জার্নালে প্রকাশিত ২০০ টিরও বেশি নিবন্ধে লিপিবদ্ধ রয়েছে; রিসার্চগেট নামের একটি অনলাইন জ্ঞানের ভাণ্ডারে এর মধ্যে ২২৫ টিকে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। [৭] তিনি লিভিং অ্যানায়োনিক পলিমারাইজেশন অফ মিথাইল মেথ্যাক্রাইলেট এর লেখক এবং এটি লিভিং অ্যানায়োনিক পলিমারাইজেশন সম্পর্কিত তাঁর গবেষণা বিবরণীর একটি বই। [৮] তিনি সম্পাদনা করেছেন পলিমার সায়েন্স (২ খণ্ড) দুটি বই [৯][১০] এবং ম্যাক্রোমলিকুলার সিম্পোসিয়া, খন্ড ২৪০। [১১] তাঁর কয়েকটি নিবন্ধ রাসায়নিক বাষ্পের সঞ্চয়ন: ইলেকট্রনিক পদার্থের তাপ এবং প্লাজমা জমা নামের একটি বই হিসাবে সংকলিত হয়েছে। [১২] তাঁর প্রায় ১০০ টি পেটেন্টের মধ্যে ৫০ টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত। [২][১৩][১৪] তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের একজন ভারতীয়-ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি মার্কিন পেটেন্টের ধারক হিসাবে পরিচিত [৩] এবং তাঁর আবিষ্কারগুলির বেশিরভাগই ভারত এবং বিদেশে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য রাখা রয়েছে। তিনি ৩৬ জন শিক্ষার্থীকে ডক্টরাল গবেষণায় গাইডও করেছেন। [২]
শিবরামের প্রচেষ্টাসমূহের মধ্যে রয়েছে এনসিএলে ভারতে পেট্রোকেমিক্যাল গবেষণার জন্য প্রথম গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং এই সংস্থাকে আন্তঃশৃঙ্খলা গবেষণার কেন্দ্র হিসাবে রূপান্তরিত করা।[২] তিনি ভারতে প্রথম বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল (সিএসআইআর) এর নেতৃত্বে এনসিএল ইনোভেশন পার্ক এবং প্রযুক্তি-ব্যবসা ইনকিউবেটর এর প্রতিষ্ঠাতা।[২] তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইআইএসইআর) প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ছিলেন এবং ২০০৬ সালে আইআইএসইআর পুনে গঠনের সময় প্রকল্প পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। [২] তিনি ভারতের ভেনচার সেন্টার (উদ্যোক্তা উন্নয়ন কেন্দ্র) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং একজন বোর্ড আফ ডাইরেক্টর্স। এটি ভারতের জন্য প্রযুক্তি এবং জ্ঞান-ভিত্তিক উদ্যোগের প্রচারের জন্য জাতীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার এর একটি অলাভজনক উদ্যোগ। [১৫]