আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিউ) আইটিউ রেডিও রেগুলেশনস (আরআর) - এর ১.৩৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে স্যাটেলাইট টেলিভিশন হল ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট সার্ভিস।[১] টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলো সম্প্রচারিত হচ্ছে মহাকাশ রেডিও স্টেশন (উদাহরণ স্বরুপঃ ডিভিবি স্যাটেলাইট) থেকে রিলে করা সংকেতের মাধ্যমে। সাধারণত স্যাটেলাইট ডিশ নামে পরিচিত একটি আউটডোর অর্ধবৃত্তাকার রিফ্লেক্টর এন্টেনা এবং একটি লো-নয়েজ ব্লক ডাউন কনভার্টার (এলএনবি) এই সংকেত গ্রহণ করে। রিসিভারটি এরপর কাঙ্ক্ষিত টেলিভিশন প্রোগ্রামটি টেলিভিশন সেটে প্রদর্শনের যোগ্য করে। রিসিভারটি বাহ্যিক সেট-টপ বক্স অথবা সংযুক্ত অভ্যন্তরীণ টেলিভিশন টিউনার রূপে থাকতে পারে। স্যাটেলাইট টেলিভিশন বিস্তৃত পরিসরের টেলিভিশন চ্যানেল ও পরিসেবা প্রদান করে বিশেষ করে সেই সকল ভূ-প্রাকৃতিক এলাকায় যেখানে ট্যারিস্টরিয়াল টেলিভিশন কিংবা কেবল টেলিভিশন অনুপস্থিত।
রিসিপশনের সবচাইতে সাধারণ পদ্ধতিটি হল ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট টেলিভিশন (ডিবিএসটিভি)। এটি ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ)[২] নামেও পরিচিত। ডিবিএসটিভি সিস্টেমটিতে সংকেত একটি ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট হতে রিলে করা হয় কাইজু (ku) অয়েবলেন্থে এবং এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল সংকেত।[৩] স্যাটেলাইট টিভি সিস্টেমটিতে পূর্বে কিছু প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হত যা টেলিভিশন রিসিভ-অনলি নামে পরিচিত ছিল। ঐ প্রক্রিয়াগুলি এনালগ সংকেত গ্রহণ করত যা সি-ব্যান্ড স্পেকট্রামে প্রেরণ করা হত এফএসএস টাইপের স্যাটেলাইট দ্বারা এবং বৃহৎ আকৃতির ডিসের প্রয়োজন হত। ফলাফলস্বরুপ, ঐসব প্রক্রিয়ার ডাকনাম ছিল "বিগ ডিস" সিস্টেম এবং এর খরচও বেশি ছিল এবং জনপ্রিয়তাও ছিল না।[৪]
ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট টেলিভিশন সংকেত শুরুর দিকে এনালগ সংকেতের ব্যবহার ছিল এবং পরবর্তিতে এটি ডিজিটাল সংকেতে পরিবর্তিত হয়, উভয়ের জন্যই একটি কম্প্যাটিবল রিসিভার প্রয়োজন।ডিজিটাল সংকেত কখনো হাই-ডেফিনিশন টেলিভিশন (এইচডিটিভি) হতে পারে। কিছু চ্যানেল ও সম্প্রচার এনক্রিপশনযুক্ত নয় এবং এটি ফ্রি-টু-এয়ার ও ফ্রি-টু-ভিউ সম্পন্ন, অথচ বাদবাকি সবগুলো চ্যানেলই এনক্রিপশনযুক্ত করে সম্প্রচার করে (পে-টেলিভিশন), যার জন্য দর্শকদের সদস্যতা কিনতে হয়।[৫]
টেলিভিশনের জন্য ব্যবহৃত স্যাটেলাইটগুলোর কক্ষপথ সাধারণত, স্বভাবগতভাবে অতিরিক্ত উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে (এর কক্ষীয় নতি +/−৬৩.৪ ডিগ্রী এবং কক্ষীয় পর্যায়কাল প্রায় ১২ ঘণ্টা, এটি মোলনিয়া অরবিট নামে পরিচিত) কিংবা ভূস্থির কক্ষপথ ৩৭,০০০ কিমি (২৩,০০০ মা) পৃথিবীর নিরক্ষরেখা এর উপর দিয়ে।[৬]
রিলে করা অন্যান্য সকল কমিউনিকেশনের মতই স্যাটেলাইট টেলিভিশন রিলে করা হয় স্যাটেলাইট হতে, যেটা শুরু হয় আপলিংক ফেসেলিটির একটি প্রেরণকারী এন্টেনা থেকে। আপলিংক স্যাটেলাইট ডিসগুলো আকারে অনেক বড় হয়, প্রায় ৯ থেকে ১২ মিটার (৩০ থেকে ৪০ ফিট) ব্যাসের।[৭] আপলিংক ডিসটি একটি সুনির্দিষ্ট স্যাটেলাইট এর দিকে তাক করা থাকে এবং আপলিংক সংকেত প্রেরণ করা হয় একটি সুনির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে, যাতে করে ঐ স্যাটেলাইটে থাকা ট্রান্সপন্ডার গুলির একটি ঐ ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের সংকেত গ্রহণ করতে পারে।[৮] ট্রান্সপন্ডারটি সংকেতটি পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করে আরেকটি ফ্রিকোয়েন্সিতে ( এ প্রক্রিয়াটি ট্রান্সলেশন নামে পরিচিত, যাতে করে সংকেতটি আপলিংক সংকেত দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়), সাধারণত সি-ব্যান্ড (৪ - ৮ গিগাহার্জ), কাইজু- ব্যান্ড (১২ - ১৮ গিগাহার্জ), কিংবা উভয় ব্যান্ডে। স্যাটেলাইট ও পৃথিবীর সংকেত গ্রহণকারী স্টেশনের মধ্যবর্তী সংকেতের পথকে ডাউনলিংক বলে।[৯]
একটি আদর্শ স্যাটেলাইটে প্রায় ৩২টি কাইজু ব্যান্ড বা ২৪ টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার থাকে, আর এর থেকেও বেশি থাকে কাইজু/সি হাইব্রিড স্যাটেলাইটে। আদর্শ ট্রান্সপন্ডারের ব্যান্ডউইথ হয়ে থাকে ২৭ থেকে ৫০ মেগাহার্টজের।[১০] প্রতিটি ভূস্থির কক্ষপথে থাকা সি-ব্যান্ড স্যাটেলাইটকে একটি অপরটির থেকে দ্রাঘিমা রেখা বরাবর ২° দূরে রাখতে হয় যাতে করে সংকেতের বাধাবিঘ্ন না হয়; কাইজু জন্য দূরত্বটা প্রয়োজন ১°। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৩৬০/২ = ১৮০টি ভূস্থির কক্ষপথে থাকা সি-ব্যান্ড স্যাটেলাইট বা ৩৬০/১ = ৩৬০টি ভূস্থির কক্ষপথে থাকা কাইজু-ব্যান্ড স্যাটেলাইট স্থাপন সম্ভব। সি-ব্যান্ড সম্প্রচার টেরিস্টরিয়াল সংকেতের জন্য বাধাগ্রস্ত হয় অপরদিকে কাইজু ব্যান্ড বৃষ্টির জন্য বাধাগ্রস্ত হয় (আসলে এই ফ্রিকোয়েন্সির মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ শোষনের জন্য পানি একটি ভাল মাধ্যম)। বজ্রপাতে সক্ষম মেঘমালার বরফ কুচি দ্বারা এটি আরো ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।[১১]
কখন কখন সান আউটেজ ঘটে, যখন সংকেত গ্রহণকারী এন্টেনা বরাবর থাকা স্যাটেলাইটের ঠিক পিছনে সূর্য চলে আসে তখন, এ সময় সূর্যের রশ্মির বিকিরণ শক্তি স্যাটেলাইট সংকেতের বিঘ্ন ঘটায়।[১২] দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রমের কারণে ডাউনলিংক স্যাটেলাইট সংকেতটি দুর্বল হয়ে পড়ে (ইন্ভাস- স্কয়ার ল পড়ুন), সংকেতটি একটি অর্ধবৃত্তাকার গ্রহণকারী ডিস দ্বারা সংগ্রহ করা হয়, যা দুর্বল সংকেতটিকে ডিসের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রতিফলিত করে।[১৩] ডিসের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি যন্ত্র সংযুক্ত থাকে যা ফিডহর্ণ বা সংরহক নামে পরিচিত।[১৪] ফিডহর্ণ হল তরঙ্গ সংরহকের সেই অংশ যার সম্মুখ প্রান্তে উদ্দীপক সংযুক্ত থাকে এবং এটি ডিসের কেন্দ্রবিন্দু বা তার কাছাকাছি জায়গা থেকে সংকেত সংগ্রহ করে ও পরিবহন করে একটি প্রোব বা পিকআপে যা লো-নয়েস ব্লক ডাউন কনভার্টার (এলএনবি) সাথে যুক্ত থাকে। এলএনবি তরঙ্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং একটি নিচের শ্রেণীর মধ্যবর্তী তরঙ্গে (আইএফ) পরিবর্তন করে, যা এল-ব্যান্ড নামে পরিচিত।[১৫]
প্রকৃত সি-ব্যান্ড স্যাটেলাইট টেলিভিশন সিস্টেমে লো-নয়েস এমপ্লিফায়ার (এলএনএ) ব্যবহৃত হত, যা ডিসের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত ফিডহর্ণের সাথে সংযুক্ত থাকত। এমপ্লিফিকেশনকৃত তরঙ্গটি, যা উচ্চতর মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি রূপে থাকত, একটি দামী ইমপেন্ডেন্স ৫০ ওহমের লো লসের গ্যাস ভর্তি শক্তভাবে বাঁধণীযুক্ত এক্সিয়াল কেবল দ্বারা একটি তুলনামূলক ভাবে জটিল এন-কানেক্টরের মাধ্যমে ইনডোর রিসিভারে, কিংবা কিছু অন্যান্য ডিজাইনে ডাউন কনভার্টারে (একটি গ্যাস মিশ্রণ ও ভল্টেজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অসিলেটর আর কিছু ফিল্টার সার্কিট) প্রেরণ করা হত, যা উচ্চতর মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গটিকে একটি মধ্যবর্তী তরঙ্গে নামিয়ে আনত। চ্যানেল পরিবর্তনের জন্য সাধারণত ভোল্টেজ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অসিলেটর ব্যবহৃত হত, আর এই পরিবর্তন যোগ্য ভোল্টেজটি আলাদা একটি তার দিয়ে হেডএন্ড এর সাথে সংযুক্ত থাকত, পরবর্তিতে এই ডিজাইনটির আরো বিকশিত হয়েছে।[১৬]
এমেচার রেডিও তরঙ্গের জন্য মাইক্রোস্ট্রিপ-ভিত্তিক কনভার্টার ডিজাইন করা হয় যা পরবর্তিতে ৪ গিগাহার্জের সি-ব্যান্ডে সংযোজন করা হয়। এই ডিজাইনের মূলনীতিটি থেকে একটি নিম্ন পরিসীমার সহজে পরিচালনা যোগ্য মধ্যবর্তী তরঙ্গের ব্লক ডাউন কনভার্সন তৈরির ধারণা নেয়া হয়।[১৭]
এলএনবি ব্যবহারের সুবিধা হল ইনডোর রিসিভার ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন ডিস ও এলএনবি এর সংযোগের জন্য খুব কম দামের তার ব্যবহার করা যায় এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সি-ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সি পরিচালনার খরচ থেকে অনেক কম খরচে এল-ব্যান্ড ও আল্ট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সির (ইউএইচএফ) তরঙ্গ ব্যবহার করা যায়। প্রথমদিকের সি-ব্যান্ডের তারযুক্ত সংযোগ ও এন-কানেক্টর থেকে সস্তা ও সহজ ধরনের ৭৫-ওহমের তার ও এফ-কানেক্টর ব্যবস্থা গ্রাহকদের স্যাটেলাইট টেলিভিশন ব্যবহার করতে সহজ করেছে, বাস্তবতা হল, পরিবর্তিত আল্ট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি টেলিভিশন টিউনার যা টেলিভিশন চ্যানেল নির্বাচন করে, এটির ডি-মডিউল তথা ডাউন কনভার্সন হয়ে নিম্নশ্রেণীর মধ্যবর্তী ফ্রিকোয়েন্সির ৭০ মেগাহার্টজে পরিণত হওয়াটি ঘটে এই কেন্দ্রে। এই পরিবর্তনের ফলে স্যাটেলাইট টেলিভিশন তথা ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন ঘটে ফলে যা উচ্চবিত্তদের শখের বিষয় ছিল, আর যেখানে স্বল্প সংখ্যক পণ্য তৈরিতে হাজারেরও বেশি মার্কিন ডলার লাগত সেটি একটি স্বল্প মূল্যের বৃহৎ বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়।[১৮]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, স্যাটেলাইট টেলিভিশন সেবা প্রদানকারীরা ডিসের মধ্যের এলএনবিএফ হতে গ্রাহক যন্ত্র পর্যন্ত সংকেত প্রেরণে ৯৫০ - ২১৫০ মেগাহার্টজের মধ্যবর্তী ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ব্যবহার করে। এর ফলে আল্ট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সির সংকেতকে একই বিস্তারের এক্সিয়াল কেবল দ্বারা একই সময়ে পরিবহন সম্ভব। কিছু যন্ত্রে (ডাইরেক্টিভি এইউ৯-এস ও এইউ৯-এস) নিম্ন শ্রেণীর বি-ব্যান্ড রেঞ্জ ও ২২৫০ - ৩০০০ মেগাহার্টজের রেঞ্জ ব্যবহৃত হয়। কিছুটা নতুন ধরনের এলএনবিএফ ডাইরেক্টিভিতে ব্যবহার করা হয়, যা এসডাবলুএম (সিঙ্গেল অয়ার মাল্টিসুইচ) নামে পরিচিত, এগুলো সিঙ্গেল কেবল ডিস্ট্রিবিউশন ও একটি বৃহৎ ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ২-২১৫০ মেগাহার্টজের ব্যবহৃত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
স্যাটেলাইট রিসিভার বা সেট-টপ বক্স সংকেত কে কাঙ্ক্ষিত রূপে (যেমন টেলিভিশন, অডিও, ডাটা, ইত্যাদি) পুনঃ সমন্বয় ও পরিবর্তন করে।[১৯] প্রায়শই, কিছু গ্রাহককে প্রিমিয়াম গ্রাহক সেবা প্রদানের জন্য কিছু রিসিভার যন্ত্রের তরঙ্গের গোপন সংকেতকে পরিবর্তন করার বা ডিক্রিপ্টেড করার ক্ষমতা রয়েছে; এই রিসিভারগুলোকে বলা হয় ইন্টিগ্রেটেড রিসিভার/ ডিকোডার বা আইআরডি।[২০] নিম্ন তথ্য ক্ষয়ের তার (যেমন আরজি-৬, আরজি-১১, ইত্যাদি) ব্যবহার হয় রিসিভারের সাথে লো-নয়েস ব্লক ডাউন কনভার্টার সংযোগে। আরজি-৫৯ তার এই কাজে উপযোগী নয়, কারণ প্রযুক্তিগত দিক থেকে ৯৫০ মেগাহার্টজের উপরের তরঙ্গ পরিবহনের জন্য এটির ডিজাইন করা হয়নি, কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে যেমন এক্সিয়াল কেবলের গুনগত মানের উপর, তরঙ্গের শক্তির উপর, তারের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে এই তার দিয়েও কাজ চালানো যায়।
বাসাবাড়ির স্যাটেলাইট রিসিভারের একটি বাস্তব সমস্যা হল লো-নয়েজ ব্লক ডাউন কনভার্টার প্রকৃতপক্ষে একটিমাত্র সংকেতকে পরিচালনা করতে পারে। এটার কারণ হল লো-নয়েজ ব্লক ডাউন কনভার্টার দুটি ভিন্ন সার্কুলার পোলারাইজেশন (ডান-হাত ও বাম-হাত) কে অনুবাদ করে এবং কে-ব্যান্ডের ক্ষেত্রে, দুটি ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডকে (নিম্ন ও উচ্চ) একই ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের কেবলের মাধ্যমে পরিচালনা করে। কোন একটি সুনির্দিষ্ট চ্যানেলের জন্য ট্রান্সপন্ডার কোন ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি এবং পোলারাইজেশন ব্যবহার করছে তার উপর নির্ভর করে স্যাটেলাইট রিসিভারটি এলএনবি এর চারটি মোডের যেকোনো একটিতে পরিবর্তিত হয়। এলএনবির মোড পরিবর্তনের কাজটি রিসিভার সম্পন্ন করে ডিজিটাল স্যাটেলাইট ইকোয়েপমেন্ট কন্ট্রোল (ডিসিইকিউসি) প্রটোকল মেনে। যদি একটি একক ডিসে একাধিক স্যাটেলাইট রিসিভার সংযুক্ত থাকে, তাহলে একটি বিশেষ ধরনের মাল্টিসুইচ নামক যন্ত্র এলএনবির সংযোগ স্থানে সংযুক্ত করতে হয়। মাল্টিসুইচ আগে থেকেই এলএনবির ভিতরে যুক্ত রয়েছে এমন এলএনবিও আলাদা ভাবে বাজারে পাওয়া যায়। এই সমস্যাটি আরো জটিল হয়ে যায় যখন একাধিক ডিসের সাথে একাধিক রিসিভার সংযুক্ত থেকে (বা একাধিক এলএনবি একটি ডিসে সংযুক্ত থেকে) বিভিন্ন স্যাটেলাইটের দিকে তাক করা থাকে।[২১]
গ্রাহক যারা একাধিক স্যাটেলাইট হতে সংকেত গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য সহজ সমাধান হল একটি একক এলএনবি যুক্ত একক ডিসের সাথে ইলেকট্রিক মোটরযুক্ত করে ডিসটিকে ঘোরানোর ব্যবস্থা করা। ঘোরানোর অক্ষটা হতে হবে উত্তর হতে দক্ষিণ দিশা বরাবর এবং ডিসটির ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এর উলম্ব বরাবর এটিকে সুনির্দিষ্টভাবে বাঁকা হতে হবে। যদি সঠিকভাবে এটি তৈরি করা যায় তাহলে যখন ডিসটি ঘূর্ণায়মান থাকবে তখন নিরক্ষরেখা বরাবর ভূস্থির কক্ষপথের সম্ভব যে সকল স্থানে স্যাটেলাইট থাকতে পারে তার সবকটিতে সংযোগের জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। ডিসটি তখন দেখা যায় এমন কোন সুনির্দিষ্ট স্থানের ভূস্থির স্যাটেলাইটের তথ্য গ্রহণেও সক্ষম,উদাহারনস্বরুপ দিগন্ত রেখার উপরের কোন স্যাটেলাইটের। ডিসিইকিউসি প্রটোকলকে পরবর্তিতে পরিবর্ধন করা হয়েছে যাতে করে ঘূর্ণায়মান ডিস রোটরের দিকপরিবর্তনশীল আদেশগুলো এটি গ্রহণ করতে পারে।
সাধারণত তরঙ্গে গোপন সংকেতযুক্ত করে বা গোপন সংকেতযুক্ত না করে এনটিএসসি, পাল বা এসইসিএএম টেলিভিশন ব্রডকাস্টিং স্ট্যান্ডার্ডের মাধ্যমে এনালগ টেলিভিশন স্যাটেলাইটের সম্প্রচার করা হত। এনালগ সিগনালটি ছিল ফ্রিকোয়েন্সি মডিউলেটেড এবং এটি এফএম সংকেত থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হত যা বেসব্যান্ড নামে পরিচিত। বেসব্যান্ডটি গঠিত হয় ভিডিও সিগনাল ও অডিও সাব-ক্যারিয়ার(স্) নিয়ে। অডিও সাব-ক্যারিয়ারটিকে আরো ভাঙা হয় মূল অডিও সিগনালটির পাবার জন্য।
পরবর্তিতে কিউপিএসকে পদ্ধতি অনুসরণ করে সংকেতকে ডিজিটাইজড টেলিভিশন সংকেতে বা মাল্টিপ্লেক্স সংকেতে পরিণত করা হয়। সাধারণভাবে, ডিজিটাল টেলিভিশন, যেগুলো স্যাটেলাইট দ্বারা সম্প্রচারিত হয় সেগুলো সহ, সবকটি উন্মুক্ত মানদণ্ডের যথা এমপিইজি এবং ডিভিবি-এস / ডিভিবি-এস২ বা আইএসডিবি-এস এর অন্তর্গত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কন্ডিশনাল এক্সেসে এনক্রিপশন / গোপন সংকেতযুক্ত করার পদ্ধতিগুলো হল এনডিএস, বিআইএসএস, কোনাক্স, ডিসিপ্টার, ইরডেটো, ক্রিপটোওয়াক্স, ডিজি ক্রিপ্ট, বেটা ডিজিটাল, এসইসিএ মিডিয়াগার্ড, লজিওয়েস, নাগ্রাভিশন, পাওয়ারভিউ, ভায়াএক্সেস, ভিডিওসাইফার এবং ভিডিওগার্ড । অনেক কন্ডিশনাল এক্সেস সিস্টেম ভাঙ্গে অনুপ্রবেশ করা সম্ভব হয়েছে।
সাধারণত তিনটি মুখ্য কাজে স্যাটেলাইট টেলিভিশন ব্যবহৃত হয়: দর্শক কর্তৃক সরাসরি সিগনাল গ্রহণের জন্য, ঐ টেলিভিশনের আঞ্চলিক শাখা কর্তৃক গ্রহণের জন্য, অথবা হেডএন্ড কর্তৃক গ্রহণের জন্য যাতে করে তারা টেরিস্টরিয়াল কেবল সিস্টেমের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউশন করতে পারে।
দর্শক কর্তৃক সরাসরি সিগনাল গ্রহণের মধ্যে রয়েছে ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট (ডিবিএস) ও টেলিভিশন রিসিভ-অনলি (টিভিআরও), উভয়ই বাসাবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যেমন হোটেল ও অন্যান্য জায়গায় ব্যবহৃত হয় ।
ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট, (ডিবিএস) যা "ডাইরেক্ট-টু-হোম" নামেও পরিচিত, এটি দ্বারা কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট গুলিকে যা ডিবিএস সেবা প্রদান করে কিংবা সত্যিকার টেলিভিশন সেবাকে বুঝায়। সুগঠিত টেলিভিশন বাজারের প্রায় সব স্যাটেলাইট টেলিভিশন সেবা গ্রহণকারীই তাদের অনুষ্ঠানগুলো ডাইরেক্ট ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট সেবা দানকারীদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। সংকেত কাইজু-ব্যান্ডে প্রেরণ করা হয় ও এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল সংকেত, যার কারণে ছবি ও শব্দ উভয়ই হয় উচ্চমানের।
স্যাটেলাইট টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলি আসে বিভিন্ন উৎস থেকে এবং কখন এটি ষ্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচারও হতে পারে।[২২] ব্রডকাস্ট সেন্টারে অনুষ্ঠানমালা একত্র করে ও প্যাকেজে পরিণত করে চ্যানেলে প্রদর্শনের উপযোগী করা হয় এবং প্রয়োজনে চ্যানেলটির তরঙ্গ সংকেত এনক্রিপশনযুক্ত করা হয়। এরপর সংকেতটি আপলিংকের [২৩] মাধ্যমে স্যাটেলাইটে প্রেরণ করা হয়। কখনো কখনো একই ক্যাম্পাসের ভিতরে ব্রডকাস্ট সেন্টার, ষ্টুডিও, প্রশাসন এবং আপলিংক ব্যবস্থা থাকতে পারে।[২৪] স্যাটেলাইট এরপর সংকেতটির পরিবর্তন করে এবং চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে।[২৫]
বেশিরভাগ ডিভিএস ব্যবস্থা ডিভিবি-এস স্ট্যান্ডার্ড প্রেরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। পে-টেলিভিশন ব্যবস্থায় সম্প্রচারিত তথ্য এনক্রিপশনযুক্ত থাকে এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন তরঙ্গ গ্রহণের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পরে। যদিওবা প্রযুক্তিগত দিক থেকে তরঙ্গ গ্রহণের মূলনীতি একই কিন্তু পে-টেলিভিশনের প্রযুক্তিটি ব্যক্তিমালিকানাধীন, যাতে প্রায়শই কন্ডিশনাল এক্সেস মডিউল এবং স্মার্ট কার্ডের প্রয়োজন পরে। এই নিয়মাবলী স্যাটেলাইট টেলিভিশন প্রদানকারীদের নিশ্চিত করে যে শুধুমাত্র অনুমোদিত, অর্থ প্রদানকারী দর্শকরা পে-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানাবালী দেখতে পাবে কিন্তু একইসাথে ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেলগুলি শুধুমাত্র স্ট্যান্ডার্ড যন্ত্রপাতি দিয়েও দেখা যাবে। কন্ডিশনাল এক্সেস মডিউল ব্যতীত ডিবিএস রিসিভার বাজারে পাওয়া যায়।
স্যাটেলাইট টেলিভিশন রিসিপশনের প্রথম দিকে টেলিভিশন রিসিভ-অনলি বা টিভিআরও শব্দটির উদ্ভব হয়, যা কমার্শিয়াল স্যাটেলাইট টেলিভিশনের আপলিংক ও ডাউনলিংক অপারেশনকে (প্রেরণ ও গ্রহণ) আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত হত। স্যাটেলাইট টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির প্রযুক্তি ভিন্ন দিকে সরে যাবার আগ পর্যন্ত এটি ছিল স্যাটেলাইট টেলিভিশন ট্রান্সমিশনের মূল পদ্ধতি, ১৯৯০ এর শুরুর দিকে উচ্চতর ক্ষমতা সম্পন্ন ডিবিএস স্যাটেলাইট উত্থাপনের মাধ্যমে এটির শুরু হয় ও এটি কাইজু ব্যান্ডে তরঙ্গ সম্প্রচার করত।[২৬] স্যাটেলাইট টেলিভিশন এ সময় বাসা-বাড়ির দর্শকদের কাছে সরাসরি প্রেরণ না করে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রচারের পরিকল্পনা ছিল।[২৭] প্রথমদিকের স্যাটেলাইট টেলিভিশন রিসিভারগুলোর বেশিরভাগই তৈরি করত শৌখিন মানুষেরা বা ইঞ্জিনিয়াররা। প্রথমদিকের এই টিভিআরও সিস্টেমগুলো প্রধানত চলত সি-ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সিতে ও বেশ বড় আকারের ডিসের প্রয়োজন হত, যার ব্যাস ছিল সাধারণত ৩ মিটার (১০ ফিট) এরও বেশি।[২৮] ফলাফলস্বরুপ, টিভিআরও কে "বিগ ডিস" বা "বিগ আগলি ডিস" (বিইউডি) স্যাটেলাইট টেলিভিশন বলা হত।
টিভিআরও ডিজাইন করা হয় এফএসএস-ধরনের স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার দ্বারা সি-ব্যান্ড ও কাইজু-ব্যান্ডে একই সাথে টেলিভিশন বা অডিও রূপে এনালগ ও ডিজিটাল স্যাটেলাইট তথ্য গ্রহণের জন্য। [২৯][৩০] উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির কাইজু-ব্যান্ড ডিবিএস স্যাটেলাইট সিস্টেমের জন্য গড়ে উঠতে থাকে এবং উচ্চ ক্ষমতার সম্প্রচার ব্যবস্থা ও এন্টেনার ক্ষমতার সুব্যবহারের কারণে এতে ছোট আকারের ডিস এন্টেনা ব্যবহার করা যেত। টিভিআরও সিস্টেমে ছোট আকারের ডিস এন্টেনার বদলে বড় আকারের ডিস ব্যবহার করতে হয়, এর কারণ টিভিআরও সিস্টেমের মালিকেরা অধিকাংশ সময়ই কাইজু-ব্যান্ডের সেটআপের পরিবর্তে শুধুমাত্র সি-ব্যান্ডের সেটআপ ব্যবহার করে। অতিরিক্ত রিসিভার বক্স ব্যবহার করে আরো কিছু স্যাটেলাইট সিগনাল যেমন ডিভিবি/এমপিইজি-২ ও ৪ডিটিভি গ্রহণ করা সম্ভব।
সরু প্রস্থের বিমের একটি সাধারণ অর্ধবৃত্তাকার স্যাটেলাইট ডিস এন্টেনার মানে হল এটি একটি একই সময়ে শুধুমাত্র একটি স্যাটেলাইট হতে সংকেত গ্রহণ করতে পারবে।[৩১]সিমূলস্যাট বা ভরট্যাক্স-আরএসই টওআরইউএস হল একটি আপাতদৃষ্টিতে-অর্ধবৃত্তাকার ভূ-পৃষ্ঠের স্যাটেলাইট এন্টেনা যা একই সাথে ৩৫টি বা তার অধিক সি - ও কাইজু - ব্যান্ডের স্যাটেলাইট হতে সম্প্রচার গ্রহণ করতে পারে।[৩২]
১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ সাইন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি. ক্লার্ক সারা বিশ্বব্যাপী একটি কমিউনিকেশন ব্যবস্থার কথা প্রস্তাব করেন যা পৃথিবীর কক্ষপথে পরস্পর সমান দূরত্বে থাকা তিনটি স্যাটেলাইট দ্বারা কাজ করবে।[৩৩][৩৪] অক্টোবর ১৯৪৫ এর ওয়ারলেস ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনে তার এই লেখাটি প্রকাশিত হয় এবং এর জন্য ১৯৬৩ তে তিনি ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউট ষ্টুয়ার্ট ব্যালেনটাইন মেডেল জেতেন।[৩৫][৩৬]
উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপ পর্যন্ত প্রথম পাবলিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন সংকেত রিলে করা হয়েছিল ২৩ জুলাই ১৯৬২ সালে আটলান্টিক সমুদ্রের উপর টেলস্টার উপগ্রহের মাধ্যমে, যদিওবা একটি পরীক্ষামূলক সম্প্রচার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ১১ জুলাই করা হয়েছিল। সংকেত গ্রহণ ও সম্প্রচার করা হয়েছিল উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে এবং ১০০ মিলিয়ন মানুষ এটি দেখেছিল। [৩৭] ১৯৬২ সালে উত্থাপিত রিলে ১ স্যাটেলাইট প্রথম স্যাটেলাইট যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে টেলিভিশন সংকেত প্রেরণ করেছিল।[৩৮] প্রথম জিওসিঙ্ক্রনাইজড কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, সিনকম ২, ২৬ জুলাই ১৯৬৩ তে উত্থাপিত হয়েছিল।[৩৯]
বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক যোগাযোগ উপগ্রহ, ইন্টেলস্যাট ১ এবং এর ডাকনাম "আর্লি বার্ড", অক্টোবর ১৯৬৫ সালের ৬ই এপ্রিল ভূস্থির কক্ষপথে উত্থাপন করা হয়।[৪০] অক্টোবর ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের প্রথম জাতীয় নেটওয়ার্ক, অরবিটার তৈরি করা হয় এবং এটি অতি উপবৃত্তাকার মোলনিয়া স্যাটেলাইট ব্যবহার নীতির উপর ভিত্তি করে করা হয় যাতে স্যাটেলাইট হতে টেলিভিশন সংকেত পুনঃ সম্প্রচার ও স্থল ডাউনলিঙ্ক স্টেশনে প্রেরণ করা হয়।[৪১] উত্তর আমেরিকায় প্রথম বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা চালু করতে কানাডার ভূস্থির কক্ষপথের স্যাটেলাইট অনিক ১ স্যাটেলাইট, ৯ই নভেম্বর ১৯৭২ সালে উত্থাপন করা হয়।[৪২] এটিএস -6, ছিল বিশ্বের প্রথম পরীক্ষামূলক শিক্ষাবিষয়ক ও ডাইরেক্ট ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট (ডিবিএস) স্যাটেলাইট, যা মে ৩০, ১৯৭৪ এ প্রেরিত হয়।[৪৩] এটি ৮৬০ মেগাহার্টজের ওয়াইডব্যান্ড এফএম মডুলেশন ব্যবহার করে সম্প্রচার করত এবং দুইটি শব্দের চ্যানেল ছিল। এটি যদিওবা ভারতীয় উপমহাদেশের সম্প্রচারের জন্য ছিল কিন্তু গবেষকেরা পশ্চিম ইউরোপে থেকেও এর সংকেত গ্রহণ করতে পারত বাড়িতে নির্মিত সরঞ্জামের মাধ্যমে যা ইতোমধ্যে ব্যবহৃত ইউএইচএফ টেলিভিশন ডিজাইন কৌশলের সমান ছিল।[৪৪]
ভূস্থির কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে সোভিয়েতের প্রথম ডাইরেক্ট-টু-হোম টেলিভিশন স্যাটেলাইট ছিল একরান ১ স্যাটেলাইট, যা ২৬ অক্টোবর ১৯৭৬ সালে চালু হয়।[৪৫] এটিতে ৭১৪ মেগাহার্টজের ইউএইচএফ ডাউনলিঙ্ক ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হত, এতে মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি যাতে আগে থেকে বিদ্যমান ইউএইচএফ টেলিভিশন প্রযুক্তির সংরহক দ্বারা এটির সংকেত গ্রহণ করা যায়।[৪৬]
"স্যাটেলাইট টেলিভিশন" ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গড়ে ওঠে কেবল টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির যোগাযোগ স্যাটেলাইট হিসাবে দূরবর্তী স্থানের কেবল টেলিভিশনের হেডএন্ডে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রেরণের জন্য। হোম বক্স অফিস (এইচবিও), টার্নার ব্রডকাস্টিং সিস্টেম (টিবিএস) এবং খ্রিস্টীয় ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক (সিবিএস, পরে ফ্যামিলি চ্যানেল) গুলো হল প্রথম চ্যানেল যারা স্যাটেলাইট টেলিভিশন ব্যবহার করে অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য। ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রিয়াসের টেইলরের হাওয়ার্ড, হলেন প্রথম ব্যক্তি যে ১৯৭৬ সালে তার বাড়িতে নির্মিত সিস্টেমের মাধ্যমে সি-ব্যান্ড স্যাটেলাইট সংকেত গ্রহণ করেছিলেন।[৪৭]
ইউএস এ-তে, পিবিএস, একটি অ-লাভজনক পাবলিক সম্প্রচার সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যারা ১৯৭৮ সালে টেলিভিশন অনুষ্ঠান স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে।[৪৮]
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত প্রকৌশলীরা মস্কভা (বা মস্কো) সম্প্রচার ব্যবস্থা তৈরি করেন এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি সিগন্যাল প্রচার শুরু করেন। পরে তারা একই বছরে গোরিযোন্ট যোগাযোগ স্যাটেলাইট উত্থাপন করেন। এই স্যাটেলাইটগুলো ভূস্থির কক্ষপথ ব্যবহৃত করত।[৪৯] এগুলো শক্তিশালী অন-বোর্ড ট্রান্সপন্ডারগুলো দিয়ে সজ্জিত ছিল, তাই গ্রহণকারী অধিবৃত্তাকৃতির ডাউনলিঙ্ক স্টেশনের এন্টেনার আকার ৪ ও ২.৫ মিটারে কমে আসে। ১৮ই অক্টোবর, ১৯৭৯ তারিখে, ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) জনগণকে বাসাবাড়িতে ফেডারেল সরকারের লাইসেন্স ছাড়া ভূ-স্থল স্যাটেলাইট স্টেশনের অনুমতি দেয়।[৫০] ১৯৭৯ সালের নেইম্যান-মার্কাস পত্রিকার ক্রিসমাস ক্যাটালগের প্রচ্ছদ ফিচার ছিল প্রথম বাসাবাড়ির স্যাটেলাইট টিভি স্টেশনের যা $ ৩৬,৫০০ তে বিক্রয় করা হবে।[৫১] এর ডিসগুলো প্রায় ২০ ফুট (৬.১ মি) ব্যাসের ছিল[৫২] এবং রিমোট কন্ট্রোল্ড ছিল।[৫৩] এর কিছুদিন পরেই এর মূল্য অর্ধেকে নেমে আসে, কিন্তু এটিতে মাত্র আটটির মত চ্যানেল ছিল।[৫৪] দা সোসাইটি ফোর প্রাইভেট এন্ড কমার্শিয়াল আর্থ স্টেশন (এস্পএসিই), একটি সংগঠন যারা ভোক্তা ও স্যাটেলাইট টিভি সিস্টেমের মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করে, এটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৫৫]
প্রথমদিকের স্যাটেলাইট টেলিভিশন সিস্টেমগুলো খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না, যার কারণ ছিল এর খরচ এবং বড় আকারের ডিস।[৫৬] ১৯৭০ সালের শেষ দিকের এবং ১৯৮০ সালের শুরুর দিকের সিস্টেমের স্যাটেলাইট টেলিভিশন ডিসগুলোর ব্যাস ১০ থেকে ১৬ ফুট (৩ থেকে ৪.৯ মি) ছিল,[৫৭] এগুলো ফাইবার গ্লাস বা সলিড অ্যালুমিনিয়াম বা ইস্পাতের তৈরি ছিল[৫৮] এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে $ ৫০০০ এরও বেশি খরচে, কখনও কখনও $ ১০,০০০ এরও বেশি খরচে এটি কিনতে পাওয়া যেত।[৫৯] ভূ-স্থল স্টেশন থেকে পাঠানো অনুষ্ঠানগুলো পৃথিবীর উপরে ২২,৩০০ মাইল (৩৫,৯০০ কিমি) অবস্থিত ভূস্থির কক্ষপথে থাকা আঠারোটি স্যাটেলাইট থেকে রিলে করা হয়।[৬০][৬১]
১৯৮০ সালের মধ্যে, স্যাটেলাইট টেলিভিশন ইউএসএ এবং ইউরোপে ভালভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৬শে এপ্রিল ১৯৮২ সালে, ইউকেতে প্রথম স্যাটেলাইট চ্যানেল, স্যাটেলাইট টেলিভিশন লিমিটেড (পরে স্কাই ১), চালু হয়েছিল।[৬২] এর সংকেত "ইএসএ" অরবিটাল টেস্ট স্যাটেলাইটের হতে প্রেরিত হয়েছিল। ১৯৮১ এবং ১৯৮৫ সালের মধ্যে টিভিআরও সিস্টেমের বিক্রয় হার বৃদ্ধি পায় দাম কমতে থাকায়। রিসিভার প্রযুক্তির উন্নতি এবং গ্যালিয়াম আরসেনিড এফইটি প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ছোট আকারের ডিস ব্যবহার করা সম্ভব হয়। পাঁচ লাখ সিস্টেম, যার খরচ পরে হিসাবে $ ২০০০ এর মত, ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয়েছিল।[৬৩] এমনকি শুধুমাত্র একটি স্যাটেলাইটের দিকে তাক করা সিস্টেমের দাম আরো সস্তা ছিল।[৬৪] যে সকল এলাকার মানুষের কাছে স্থানীয় স্টেশনের সম্প্রচার বা তারের টেলিভিশন সেবা পৌছায় না তারা কোন মাসিক ফি না দিয়ে ভাল মানের সম্প্রচার লাভ করতে পারত। তবে অনেক বড় আকারের ডিসগুলো অনেকের কাছে আতঙ্কের বিষয় ছিল, অনেক মানুষের কাছে এগুলো চক্ষুশূল ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ দ্বৈত-মালিকানাধীন এপার্টমেন্টের মালিক, পাড়া-মহল্লায় এবং বাড়ির মালিকপক্ষ অ্যাসোসিয়েশনগুলো কঠোরভাবে বড় ডিস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করত, তবে যে সকল এলাকায় বড় ডিস ব্যবহার বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা অবৈধ ছিল সেসকল এলাকা বাদে। এই নিষেধাজ্ঞার দেয়া ব্যবস্থা ১৯৮৬ সালে পরিবর্তিত ঘটে যখন ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন ঘোষণা দেয় নিষেধাজ্ঞার দেয়া সব অধিকার অবৈধ। একটি পৌরসভা কর্তৃক জমির মালিককে নির্দেশ দিতে পারে যে ডিস স্থাপনের স্থান নতুন করে নির্বাচন করার, যদি তা এলাকাভিত্তিক নিষেধাজ্ঞাকে লঙ্ঘন করে, কিন্তু তারা ডিস ব্যবহারকে নিয়ম-নীতির বাইরের ব্যবহার বলতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে কমতে থাকে যখন ডিসের আকার আস্তে আস্তে কমে আসে।
মূলত, সব চ্যানেল উন্মুক্তভাবে (আইটিসি) অর্থাৎ বিনাগোপন সংকেতযুক্ত করে প্রচারিত হত কারণ অনুষ্ঠান গ্রহণ করতে করতে যে সরঞ্জাম প্রয়োজনীয় ছিল তা ভোক্তাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল। টিভিআরও সিস্টেমের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধির সাথে সাথে, অনুষ্ঠান প্রদানকারীরা এবং সম্প্রচারকারীরা তাদের তরঙ্গে গোপন সংকেতযুক্ত করে ও মাসিক ফি ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রচার শুরু করে।
অক্টোবর ১৯৮৪ সালে, মার্কিন কংগ্রেস কেবল কমিউনিকেশনস পলিসি এক্ট ১৯৮৪ পাশ করে, যা টিভিআরও সিস্টেম ব্যবহারকারীদের বিনাগোপন সংকেতযুক্ত সকল সংকেত গ্রহণের অধিকার প্রদান করে অর্থাৎ বিনামূল্যে প্রেরণ করা হয়, একটি যুক্তিসঙ্গত খরচের মাধ্যমে তারা গোপন সংকেতযুক্ত তরঙ্গগুলোও উপলব্ধি করতে পারবে।[৬৫] যেহেতু কেবল চ্যানেলগুলো বড় ডিস দ্বারা সম্প্রচার গ্রহণে প্রতিরোধ করতে পারবে, তাই অন্য কোম্পানিরা প্রতিযোগিতায় নামার বিষয়ে উত্তেজনা অনুভব করা।[৬৬] জানুয়ারি ১৯৮৬ সালে, এইচবিও তাদের চ্যানেলে এখন-অপ্রচলিত ভিডিওসাইফার II এনক্রিপশন পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করে। অন্যান্য চ্যানেলের এর থেকে কম সুরক্ষিত টেলিভিশন এনক্রিপশন সিস্টেম ব্যবহার করে শুরু করে। এইচবিও এই গোপন সংকেতযুক্ত করার ঘটনায় তারা অনেক বড় ডিস সিস্টেমের মালিকের কাছে তোপের মুখে পড়ে, অধিকাংশের কাছে ঐ সময় এই সকল চ্যানেল প্রাপ্তির জন্য আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না, তারা দাবি করেন যে কেবল চ্যানেল মাধ্যমে উন্মুক্ত সংকেত সংগ্রহ করার কঠিন হবে। পরিশেষে এইচবিও ডিস মালিকদের প্রতি মাসে $ ১২.৯৫ এর বিনিময়ে সরাসরি সেবা গ্রহণ করতে পারবে জানায়, এই মূল্য কেবল গ্রাহকদের পরিশোধ করা মূল্যের চেয়ে সমান বা কোন ক্ষেত্রে উচ্চতর এবং তাদের এই সেবার গ্রহণের জন্য একটি গোপন সংকেতযুক্ত তরঙ্গ উন্মুক্ত তরঙ্গে পরিণত করতে পারে এরূপ একটি যন্ত্র $ ৩৯৫ তে ক্রয় করতে হবে। এই ঘটনার কারণে এপ্রিল ১৯৮৬ তে এইচবিও এর ট্রান্সপন্ডার গ্যালাক্সি ১ এর উপর হামলার করেন জন আর. ম্যাকডুগ্যাল। এক এক করে সব বাণিজ্যিক চ্যানেল এইচবিও এর নেতৃত্ব অনুসরণ শুরু করে এবং তাদের চ্যানেলের তরঙ্গ গোপন সংকেতযুক্ত করে প্রচার শুরু করে। "স্পেস" এবং ডাইরেক্ট ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএসএ) এর সংযুক্তির মাধ্যমে স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টিং এন্ড কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন (এসবিসিএ) ২রা ডিসেম্বর, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভিডিওসাইফার II গোপন সংকেতযুক্ত করার এনালগ পদ্ধতি অনুসরণ করত এটির ভিডিও সংকেতে এবং অডিও সংকেতে ডাটা এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ড ভিত্তিক এনক্রিপশন ব্যবহৃত হত। পরিশেষে ভিডিওসাইফার II হেরে যায় যখন কালো বাজারির মাধ্যমে বাজারে গোপন সংকেতযুক্ত তরঙ্গ উন্মুক্ত তরঙ্গে পরিণত করার যন্ত্র পাওয়া যেতে শুরু করে যা প্রাথমিকভাবে "টেস্ট" ডিভাইস হিসাবে বিক্রি হত।
১৯৮৭ সালের মধ্যে, নয়টি চ্যানেল তরঙ্গে গোপন সংকেতযুক্ত করে প্রচার শুরু করে, কিন্তু ৯৯টি ফ্রি-টু-এয়ার হিসাবে পাওয়া যেত। এইচবিও প্রাথমিকভাবে $ ১৯.৯৫ এর একটি মাসিক ফি ধার্য করে, এর পরপরই $ ২০০ এর বিনিময়ে এক বছরের জন্য সব চ্যানেল বিনাগোপন সংকেতযুক্ত ভাবে দেখা সম্ভব হত। ডিস বিক্রয় ১৯৮৫ সালের ৬০০,০০০ পিস থেকে ১৯৮৬ সালে ৩৫০,০০০ পিসে নেমে আসে, কিন্তু পে-টেলিভিশন সেবা দানকারীরা এটিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছিলেন কারণ কিছু মানুষের কখনই কেবল-সেবা গ্রহণ করা সম্ভব নয় এবং ফলাফলস্বরুপ ইন্ডাস্ট্রিটি তার পতন থেকে এক সময় ঘুরে দাঁড়ায়।[৬৭] গোপন সংকেতযুক্ত করে প্রচারের কারণে পে-পার-ভিউ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটে।[৬৮] ১লা নভেম্বর, ১৯৮৮ তে, এনবিসি তার সি-ব্যান্ড তরঙ্গ গোপন সংকেতযুক্ত করে প্রচার শুরু করে কিন্তু কাইজু-ব্যান্ডের সংকেত এনক্রিপশনবিহীন রাখে যাতে দর্শকরা যারা তাদের শাখা কেন্দ্র হতে বিজ্ঞাপন দেখতে পাচ্ছিলেন না তাদের না হারায়। যুক্তরাষ্ট্রে দুই মিলিয়ন স্যাটেলাইট ডিস ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই এখনও সি ব্যান্ড ব্যবহার করে। এবিসি এবং সিবিএস তরঙ্গে গোপন সংকেতযুক্ত করে প্রচার শুরু করার কথা বিবেচনা করেছিল, যদিও সিবিএস এর অনিচ্ছা ছিল কারণ অনেক মানুষ স্থানীয় শাখা নেটওয়ার্ক দেখতে পাবে না।[৬৯] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট টেলিভিশন নেটওয়ার্কের পাইরেসি রোধে ১৯৯২ সালে ক্যাবল টেলিভিশন কনজিউমার প্রোটেকশন এবং কম্পিটেশন আইন প্রবর্তনের করা হয়। এই আইন কেউ ভঙ্গ করে সংকেত চুরিরত অবস্থায় ধরা পড়লে $ ৫০,০০০ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে এবং সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত জেলের বিধান করা হয়েছে। একই অপরাধী এটির পুনরাবৃত্তি করলে অপরাধীকে $ ১০০,০০০ পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাবাস হবে।[৭০]
ইউরোপেও স্যাটেলাইট টেলিভিশন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছিল কিন্তু প্রাথমিকভাবে এগুলো কম শক্তি সম্পন্ন যোগাযোগ স্যাটেলাইট ব্যবহার করত এবং এর কারণে অনেক বড় আকারের ডিসের প্রয়োজন হত ১.৭ মিটারের চেয়েও বড়। ১১ই ডিসেম্বর ১৯৮৮ তে লাক্সেমবার্গ - অ্যাস্ট্রা ১এ নামে স্যাটেলাইট উত্থাপন করে, এটি ছিল পুরো পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে সেবা প্রদানের জন্য প্রথম মাঝারি ক্ষমতার স্যাটেলাইট।[৭১] মাঝারি ক্ষমতার স্যাটেলাইটগুলোর মাঝে এটি ছিল প্রথম স্যাটেলাইট যা কাইজু-ব্যান্ডে সংকেত প্রেরণ করত এবং ছোট আকারের ডিস (৯০ সেমি) ব্যবহার করা যেত সংকেত গ্রহণে। অ্যাস্ট্রার প্রবর্তনের ফলে যুক্তরাজ্যের বাজারের বিজয়ী রাষ্ট্রীয় ডাইরেক্ট ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট লাইসেন্সধারী, ব্রিটিশ স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টিং হেরে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯০ এর শুরুর দিকে, চারটি বড় ক্যাবল কোম্পানি প্রাইমস্টার নামক ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং কোম্পানি চালু করে মাঝারি ক্ষমতার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সম্প্রচার ব্যবস্থার কারণে ছোট (৯০ সেমি) আকারের ডিশ ব্যবহার করা যেত। ১৯৯৪ এ হিউজেস ডাইরেক্টিভি এবং ডিশ নেটওয়ার্ক স্যাটেলাইট টেলিভিশন সিস্টেমের নামার পর এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়।
৪ঠা মার্চ, ১৯৯৬ তে ইকোস্টার- ডিজিটাল স্কাই হাইওয়ে (ডিশ নেটওয়ার্ক) চালু করে ইকোস্টার স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ তে ইকোস্টার তার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উত্থাপন করে তার ডিস নেটওয়ার্কের চ্যানেল সংখ্যা ১৭০ এ বৃদ্ধি করার জন্য।[৭২] এই ব্যবস্থার ফলে আরো ভালো ছবি এবং স্টেরিও শব্দ সম্পন্ন ১৫০ - ২০০টি ভিডিও ও অডিও চ্যানেল হয় এবং এতে ছোট আকারের ডিস ব্যবহার করা যেত। এটি ব্যাপকভাবে টিভিআরও সিস্টেমের জনপ্রিয়তা হ্রাস করে। ১৯৯০-এর মধ্যভাগে, চ্যানেলগুলো তাদের ডিজিটাল টেলিভিশন সম্প্রচার ডিজিসাইফার কন্ডিশনাল এক্সেস সিস্টেম ব্যবহার করে সম্প্রচার শুরু করে।[৭৩]
এনক্রিপশনের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিবিএস সেবার সহজ প্রাপ্যতার কারণে, যেমন প্রাইমস্টার এবং ডাইরেক্টিভি, ১৯৯০ সালের শুরুর দিক থেকে টিভিআরও সেবার জনপ্রিয়তাকে হ্রাস পেতে শুরু করে। ডিবিএস স্যাটেলাইটের সংকেত, (সর্বশেষ কাইজু-ব্যান্ডে পরিচালিত হচ্ছে) ফ্রিকোয়েন্সি এবং ক্ষমতা উভয় দিক থেকে অধিক শক্তিশালী (কারণ আধুনিক স্যাটেলাইটের সৌর প্যানেল এবং শক্তির ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি হয়েছে) আর এর ফলে সি-ব্যান্ডের তুলনায় অনেক ছোট আকারের ডিসের প্রয়োজন হয় এবং ডিজিটাল মডুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করায় এনালগ মডুলেশন পদ্ধতির চেয়ে রিসিভারে অনেক কম শক্তির সংকেত প্রয়োজন।[৭৪] এছাড়াও প্রতিটি স্যাটেলাইট কাইজু-ব্যান্ডের ৩২টি পর্যন্ত ট্রান্সপন্ডারগুলো বহন করতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র সি ব্যান্ডের ২৪টি ও বিভিন্ন ডিজিটাল সাবচ্যানেল মাল্টিপ্লেক্স (এমসিপিসি) অবস্থায় অথবা একটি একক ট্রান্সপন্ডার উপর আলাদা অবস্থায়তেও (এসসিপিসি) স্যাটেলাইটে থাকতে পারে।[৭৫] মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি এবং অর্ধপরিবাহী পদার্থের উন্নয়নের কারণে শব্দ হ্রাস পাবার সমস্যা সমাধান হয়েছে। [৭৬] যাইহোক, ডিবিএস পরিসেবায় উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ব্যবহারের ফলে রেইন ফেইড ধরনের সমস্যা হচ্ছে যেখানে দর্শকরা প্রবল বর্ষণের সময় সংকেত হারাচ্ছে। সি-ব্যান্ড স্যাটেলাইট টেলিভিশন সংকেতের রেইন ফেইডের প্রবণতা কম।[৭৬]
পুরনো (কিন্তু প্রমাণিত) স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সাথে উদাহারনস্বরুপ, বর্তমানে ইউএস এর ডিবিএস-ভিত্তিক স্যাটেলাইট সেবা দানকারীরা (ডিস নেটওয়ার্ক এবং ডাইরেক্টিভি) এখন বিদ্যমান এফএসএস শ্রেণীর স্যাটেলাইটের কাইজু-ব্যান্ডের ট্রান্সপন্ডারগুলোর অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহার করছে, যা কক্ষপথে আগে থেকে বিদ্যমান ডিবিএস স্যাটেলাইটের পাশাপাশি তাদের সেবাপ্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এটা শুরু করা হয়েছিল তাদের সিস্টেমে আরো চ্যানেল ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, যা অতিপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায় যখন হাই-ডেফিনিশন চ্যানেল ও স্থানীয় স্টেশনের সম্প্রচারক্ষম চ্যানেলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। চ্যানেলগুলো যা এফএসএস স্যাটেলাইটের কাইজু-ব্যান্ডের স্ব স্ব ট্রান্সপন্ডারগুলো দ্বারা সম্প্রচারিত হয়, তথ্য গ্রহণের এই ক্ষমতা ডাইরেক্টিভি ও ডিস নেটওয়ার্ক উভয় কর্তৃক অর্জন করা সম্ভব হয়েছে তাদের গ্রাহকদের দুইগুণ বড় ব্যাসের (৩৬") ডিস ব্যবহার করতে দেয়ায় যা পূর্বে ছিল ১৮" (ও ২০" ডিস নেটওয়ার্ক "ডিস৫০০" এর জন্য), এক একটি ডিসে ২টি বৃত্তাকার-পোলারাইজড এলএনবিএফস্ থাকে (সেবা প্রদানকারীর নিজস্ব ২টি ডিবিএস স্যাটেলাইট হতে তথ্য গ্রহণের জন্য, স্যাটেলাইট প্রতি ১টি এলএনবিএফ) এবং একটি আদর্শ রৈখিক-পোলারাইজড এলএনবি যেটি এফএসএস স্যাটেলাইট হতে চ্যানেলের সম্প্রচার গ্রহণ করে। এই নতুন ডিবিএস / এফএসএস - হাইব্রিড ডিস বাজারজাত করে ডাইরেক্টিভি ও ডিস নেটওয়ার্ক, যথাক্রমে "স্লিমোলাইন" এবং "সুপারডিস" নামে, যা উভয় সেবা প্রদানকারীর জন্য বর্তমানে আদর্শ মানের, তাদের পূর্বের ১৮"/ ২০" একক বা দ্বৈত এলএনবিএফ যুক্ত ডিসগুলো হয় এখন অব্যবহৃত, অথবা শুধুমাত্র কিছু প্রোগ্রাম প্যাকেজ, পৃথক চ্যানেল, বা সেবা প্রদানকারীদের ডিবিএস স্যাটেলাইট হতে সম্প্রচার কাজে ব্যবহৃত হয়।
উইকিমিডিয়া কমন্সে স্যাটেলাইট টেলিভিশন সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।