স্লথ[১] | |
---|---|
![]() | |
বাদামি গলা বিশিষ্ট স্লথ গতুন লেক, পানামা। | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | স্তন্যপায়ী |
উপশ্রেণী: | Theria |
অধঃশ্রেণী: | Eutheria |
মহাবর্গ: | Xenarthra |
বর্গ: | Pilosa |
উপবর্গ: | Folivora Delsuc, Catzeflis, Stanhope, and Douzery, 2001 |
Families | |
Bradypodidae |
স্লথ হল এক প্রকার স্তন্যপায়ী বৃক্ষচারি জীব। এদের সচরাচর মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় বনাঞ্চলে দেখা যায়। ইংরেজি sloth কথাটি এসেছে slouthe থেকে যার অর্থ অলস বা ধীর। এই স্লথরা অনেক ধীরে নড়াচড়া ও চলাফেরা করে তাই এদের নাম দেওয়া হয়েছে স্লথ বা অলস। স্লথদের পূর্বপুরুষরা ছিল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী যার আকার একটি প্রমাণ আকারের হাতির চেয়েও বড় ছিল । ছয় প্রকার শ্লথকে দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা হয় দুই আঙুল বিশিষ্ট শ্লথ এবং তিন আঙুল বিশিষ্ট শ্লথ । তবে বেশির ভাগ শ্লথের পায়ে তিনটি করে আঙুল দেখা যায়।
এদের বিপাক ক্রিয়া খুব ধীরগতিতে হয় এবং বাজ জাতীয় শিকারি পাখির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে ও নড়াচড়া করেনা বললেই চলে । তাই এদের এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। এদের ঘন লম্বা লোম পরজীবি প্রানীর জন্য আদর্শ আবাসস্থল। এদের শরীরে একপ্রকার পরজীবী সবুজ শ্যাওলা জন্মায় যা থেকে শ্লথেরা পুষ্টি আহরণ করে।এদের দেহ ঘন লোমে আবৃত থাকে এই কারণে ক্রান্তীয় বর্ষাবনের ভেজা আবহাওয়ার ফলে এদের শরীরে মথ, গুবরে পোকা, কৃমি, ফাংগি এবং উকুন বাসা বেধে থাকে।[২]
স্লথরা সচরাচর তৃণভোজী হয়ে থাকে এবং গাছের কচি পাতা, কুড়ি, কচি ডাল এবং ফল খেয়ে বেঁচে থাকে তবে কিছু কিছু প্রজাতির স্লথ ছোট ছোট পোকামাকড় এবং ছোট আকারের সরীসৃপ খেয়ে থাকে। সম্প্রতি দুই নখ বিশিষ্ট স্লথকে খোলা টয়লেট থেকে মানুষের মল খেতে দেখা গেছে।[৩] বৃক্ষচারী এই প্রাণীরা অসাধারন অভিযোজন ক্ষমতার প্রদর্শন করেছে। এরা লতা পাতা এবং কচি ডালপালা খেয়ে অভ্যস্ত, তবে এগুলো হজম করে শক্তির উৎপাদন করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া এবং এই সমস্ত তৃণ জাতীয় খাদ্য থেকে খুবই কম শক্তি পাওয়া যায়। তাই স্লথরা অত্যন্ত ধীরে নড়াচড়া ও চলাফেরা করে শক্তির অপচয় রোধ করে। তৃণ জাতীয় খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি পেতে এদের পাকস্থলি বিশেষভাবে বিকশিত হয়েছে। বিশাল আকৃতির একাধিক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পাকস্থলিতে খাদ্য খুব ধীরে ধীরে হয় যার ফলে খাদ্য থেকে সমস্ত খাদ্যগুন বের করে নেওয়া সম্ভব হয়। একবার খাদ্য গ্রহণ করার পর হজম হতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। এই পরিপাক প্রনালীর জন্য এদের পাকস্থলি শরীরের দুই তৃতীয়াংশ যায়গা দখল করে থাকে।
স্লথদের শারীরবৃত্তিয় কার্যকলাপ অত্যন্ত ধীরে চলে এবং বিশ্রামের সময় শক্তির অপচয় রোধের করতে এরা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কমিয়ে রাখতে সক্ষম। যদিও দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় বনভূমির বাহিরে এরা বেঁচে থাকতে পারে না তার পরেও অভিযোজনের দিক দিয়ে এদের অনেক সফল প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এদের ছয়টি প্রজাতীর মধ্যে কোনটিই খুব শিঘ্রই বিলুপ্ত হয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই।
স্লথদের পূর্বপুরুষ প্রায় ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। যদিও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে স্লথরা এদের প্লাসেন্টাল স্তন্যপায়ী পূর্বপুরুষ থেকে প্রায় দশ কোটি বছর অগে আলাদা হয়ে গিয়েছে।