হিজামা বা হজ্জাম অথবা কাপিং নামে পরিচিত এই ভারতের জাতিগোষ্ঠী কাপিং থেরাপি অনুশীলনের জন্য পরিচিত। হিজামা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ আল হাজম থেকে। আরব দেশগুলিতে একজন কাপিং থেরাপি অনুশীলনকারীকে হিজামা বলা হত এবং ভারতেও এই নামটি ব্যবহৃত হত। [১]
মুহাম্মদের কিছু সহকারী খিলাফত ক্ষমতার সময় পারস্য, মিশরে ইসলামের বাণী প্রচার করে। তখন পারসিকরা ভারত জয় করতে উদ্যোগী হয়। এইভাবে, হিজামারা আরব থেকে পারস্য এবং তারপর ভারতে এসেছে। ভারতে তারা তাদের পেশা অনুশীলন করত এবং হিজামার সাথে আরও অনেক কিছু যেমন দাঁত টানানো, চুল কাটা, ভেড়া কাটা, ফোড়ার চিকিৎসা ইত্যাদির অনুশীলন করত। তাদের নামকরণ করা হয়েছিল হজ্জাম কারণ তাদের আদি দেশে তাদের এই নামেই ডাকা হত। তারা এখন উত্তর ভারত এবং পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে বসবাসকারী একটি জাতিগত গোষ্ঠী। পাকিস্তানে, তারা সিন্ধু এবং পাঞ্জাব প্রদেশে বসবাস করেন। তারা ভারতে অনুন্নত সম্প্রদায় হিসাবে বিবেচিত হয়। উত্তর ভারতে এদের জনসংখ্যা বেশি। [২] পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাব প্রদেশেও এদের বস্তি আছে। তারা উত্তরপ্রদেশে খলিফা নামেও পরিচিত। এরা পশ্চিমবঙ্গের সাতাত খলিফা নামে পরিচিত।
হিজামা হল আরব, পারস্য, ব্যাবিলন, চীনা, ফারাও, মিশরীয়, এশিয়ান, গ্রীস এবং সমগ্র ইউরোপ সহ বিস্তীর্ন অঞ্চলের বিবিধ জাতির দ্বারা অনুসৃত একটি প্রাচীন চিকিতসা সংক্রান্ত অনুশীলন। এটি বিশ্বজুড়ে ঐতিহ্যগত ওষুধ ও চিকিতসা পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হত। এই পদ্ধতি একসময় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এখনও সারা বিশ্বে আধুনিক অনুশীলনকারীরা এর ব্যবহার করে।
ইসলামে হিজামা প্রথাকে মুহাম্মদ জনপ্রিয় করেছিলেন।[৩]
প্রচলিত রীতি অনুসারে হিজামা করার জন্য সর্বোত্তম এবং সবচেয়ে উপকারী দিনগুলি সুন্নাহ দিন নামে পরিচিত। ইসলামিক (চন্দ্র) মাসের সতেরো, উনিশ বা একুশ তারিখ যা সোমবার, মঙ্গলবার বা বৃহস্পতিবার পড়ে সেইদিন হিজামার জন্য আদর্শ। [৪]
বিহারে হজ্জামরা সাধারণত খলিফা নামে পরিচিত এবং তারা হিন্দির একটি উপভাষা মৈথিলি ভাষায় কথা বলে। অধিকাংশ শিক্ষিত হজ্জামরা উর্দু ভাষায় কথা বলে। তারা বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করেন এবং এখনও তারা তাদের পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন। তবে ঝাড়খণ্ডের অনেক খলিফা এখন কৃষক হিসাবে তাদের জীবনযাপন করছেন। হজ্জাম সম্প্রদায়ের একটি বিরদারি পঞ্চায়েত রয়েছে, যা আন্তঃসাম্প্রদায়িক বিরোধের পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। পেশাগত কারনে এদের অনেকে মুম্বাই এবং কলকাতায় চলে গেছে। সেখানে তারা প্রধানত দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। [৫]