হরিদ্রাগণপতি (সংস্কৃত: हरिद्रा-गणपति, Haridrā-gaṇapati, আক্ষরিক অর্থে ‘হলুদ গণেশ’) বা হরিদ্রাগণেশ হলেন হিন্দু দেবতা গণেশের (গণপতি) একটি রূপ। হরিদ্রাগণপতি রাত্রিগণপতি নামেও পরিচিত।[১] হরিদ্রাগণপতির গায়ের রং হলুদ। তিনি হলুদ রঙের বস্ত্র পরিধান করেন। গণেশের এই রূপটি তার ৩২টি সর্বাধিক জনপ্রিয় রূপের অন্যতম।
নিত্যোৎসব ও মন্ত্রমহার্ণব নামক মূর্তিতত্ত্ব-সংক্রান্ত শাস্ত্রদুটিতে হরিদ্রাগণপতির একই বর্ণনা পাওয়া যায়। তার তিনটি নয়ন। তিনি স্বর্ণ সিংহাসনে উপবিষ্ট। তার গাত্রবর্ণ হলুদ। তিনি হলুদ রঙের বস্ত্র পরিধান করেন। হরিদ্রাগণপতির চার হাতে থাকে পাশ (ফাঁস), একটি অঙ্কুশ (হস্তি চালনার অঙ্কুশ), একটি মোদক (এক ধরনের মিষ্টান্ন) ও একটি দন্ত (তার নিজের ভগ্নদন্ত)।[২] তিনি পাশ দ্বারা নিজের ভক্তদের কাছে টেনে আনেন এবং অঙ্কুশ দ্বারা তাদের সঠিক পথে চালনা করেন।[৩]
দক্ষিণাম্নায় গ্রন্থের বিবরণ অনুসারে, হরিদ্রাগণপতির ছয়টি হাত। তিনি রত্ন-সিংহাসনে উপবিষ্ট। তার গাত্রবর্ণ হলুদ। তিনি হলুদ বস্ত্র পরিধান করেন। তার ডান দিকের তিনটি হাতে থাকে অঙ্কুশ, ক্রোধমুদ্রা (ক্রোধ প্রদর্শনের ভঙ্গিমা) ও অভয়মুদ্রা (অভয় দানের ভঙ্গিমা)। অন্যদিকে তার বাঁ দিকের তিনটি হাতে থাকে পাশ, পরশু (যুদ্ধে ব্যবহৃত কুঠার) ও বরদামুদ্রা (বর প্রদানের ভঙ্গিমা)।[৪]
অন্যান্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, হরিদ্রাগণপতির মুখটিতে হলুদ মাখানো থাকে। তার গায়ে থাকে একটি হলুদ রঙের যজ্ঞোপবীত (পৈতে)। তার গায়ের রং হলুদ এবং তার বস্ত্রের রঙও হলুদ। তার হাতে থাকে পাশ, অঙ্কুশ ও একটি লাঠি।[৫]
অজিতাগম গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে, হরিদ্রাগণপতির গায়ের রং হলুদ। তার দুপাশে থাকেন তার দুই অজ্ঞাতনামা স্ত্রী।[৬]
সম্পদ ও কল্যাণ কামনায় হরিদ্রাগণপতির পূজা করা হয়।[৭] বর্ণনা অনুসারে, তিনি তার ভক্তদের রক্ষা করেন।[৪]
গাণপত্য সম্প্রদায়ে গণেশ সর্বোচ্চ দেবতা রূপে পূজিত হন। এই সম্প্রদায়ের ছয়টি প্রধান শাখার অন্যতম হরিদ্রাগাণপত্য সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক হলেন হরিদ্রাগণপতি। তাকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র প্রমুখ সকল দেবতার নেতা, ঋষি ভৃগু ও দেবগুরু বৃহস্পতির গুরু এবং শেষনাগের অধিপতি মনে করা হয়। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান প্রদান করেন এবং তাকে বিশ্বসৃষ্টিকারী সকল দেবতারা পূজা করেন বলে মনে করা হয়। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, হরিদ্রাগণপতির পূজা করলে মোক্ষ লাভ করা হয়। হরিদ্রাগাণপত্য সম্প্রদায়ের অনুগামীরা মাথায় তপ্ত লোহা দিয়ে গণেশের মস্তক ও হাতের তালুতে তার দন্তের ছাপ অঙ্কন করত।[৫]
হরিদ্রাগণপতি হলেন গণেশের তান্ত্রিক রূপ। তার পূজায় বিশেষ মন্ত্র ও যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। পার্থিব চাহিদা পূর্ণ করার জন্য (বিশেষত যৌনজীবন-সংক্রান্ত বরলাভের জন্য) তার পূজা করা হয়। ছয়টি অভিচার ক্রিয়ার (অশুভ উদ্দেশ্যে মন্ত্রের ব্যবহার) সঙ্গে তিনি যুক্ত। এই ক্রিয়াগুলির মাধ্যমে দক্ষ মন্ত্রোচ্চারণকারী শত্রুকে সম্মোহিত করতে পারেন, আকর্ষণ করতে পারেন, ঈর্ষান্বিত করতে পারেন, বশ করতে পারে, অসার করতে পারেন বা হত্যা করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা হয়।[৮]