হলাহল (সংস্কৃত: हलाहल) অথবা কালকূট (সংস্কৃত: कालकूटं), যার আক্ষরিক অর্থ "কালো বর্ণের বস্তু" বা "সময়ের ধাঁধা[১] হলো হিন্দু পুরাণে বর্ণিত একপ্রকার ভয়ংকর জীবন ধ্বংসকারী বিষ বা গরল। হিন্দু পুরাণ অনুসারে পারষ্পরিক আলোচনার পরে দেবতা ও অসুররা মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড করে এবং নাগরাজ বাসুকীকে মন্থনরজ্জু করে সঞ্জীবনী অমৃত লাভের আশায় ক্ষীরসাগর বা সমুদ্রমন্থন শুরু করে৷ ১৪ প্রকারের বিভিন্ন রত্ন সমুদ্রমন্থন থেকে আহরিত হয় এবং সেগুলো মন্থনকারী দুইপক্ষ দেবতা ও অসুরদের মধ্যে বণ্টিত হয়। কিন্তু অমৃত লাভের পূর্বেই সমুদ্রমন্থন থেকে হলাহল উত্থিত হয়। হলাহলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া দেবতা ও অসুর উভয় পক্ষই আহত হয়ে পড়ে। যেহেতু কেউ বিষের প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে সমর্থ নয়, তাই তারা প্রথমে দেব ব্রহ্মার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। ব্রহ্মা তাদেরকে পরামর্শ দিলেন, তারা যেন মহাদেবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন উভয় পক্ষ কৈলাস পর্বতে গিয়ে ভগবান শিবের হলাহল বা কালকূট বিষ থেকে সৃষ্টিকে বাঁচানোর সহায়তা নিবেদন করে। শিব সমস্ত বিষ পান করতে চাইলেন এবং তা পান করেন। কিন্তু তার পত্নী দেবী পার্বতী তার স্বামী শিবের গলায় জড়িয়ে ধরলেন যাতে হলাহল শিবের সারা শরীরে ছড়িয়ে না পড়ে। এরফলে দেবী পার্বতীর আরেক নাম হয় বিষকণ্ঠ (যার অর্থ যিনি গরলকে শিবের গলায় আটকে রাখেন। এই বিষের ফলে শিবের কণ্ঠ নীল বর্ণ ধারণ করে, এতে শিবের এক নাম হয় নীলকণ্ঠ (যার কণ্ঠ নীল)।[২]
মন্থনের ফলে চৌদ্দ প্রকার রত্ন সমুদ্রের থেকে উঠে আসে, যার মধ্যে অধিকাংশ রত্নই দেবতারা তাদের নিজেদের হস্তগত করে৷ এর বিপক্ষে মন্থন চলাকালীন অসুররা দেবতাদের সাথে যথেষ্ট প্রতারণাও করেছিলেন৷ এ প্রক্রিয়ায় অমৃত উঠে আসার আগেই হলাহল তৈরী হয়, যা উভয়পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে৷ বিষের মারণাত্মকতার সাথে টিকে থাকতে না পেরে দেব ও অসুর উভয় পক্ষেরই অনেকে শ্বাসকষ্টে মূর্চ্ছিত হন৷[৩]
আবার অন্যান্য একাধিক গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে যে, হলাহল সমুদ্রমন্থনে নয় বরং মন্থন রজ্জু হিসাবে ব্যবহৃত নাগরাজ বাসুকীনাগই অত্যধিক ঘুর্ণন ও দেবাসুরের অবিরত টানাটানির কারণে ঐ বিষোদ্গার করে৷ ফলে দেবতা এবং অসুররা বেশ আতঙ্কিত হন কারণ অমৃত প্রাপ্তির পূর্বেই এরকম মারণ বিষ সমস্ত সৃৃষ্টিকে বিনাশ করার ক্ষমতা রাখে৷[৪]
উদ্গীরীত বিষের তেজে দেবতা এবং অসুররা বেশ আতঙ্কিত হয়েছিলেন কারণ অমৃত প্রাপ্তির পূর্বেই এরকম মারণ বিষ সমস্ত সৃৃষ্টিকে বিনাশ করার ক্ষমতা রাখে৷ দেবগণ তখন ভগবান শিবের দ্বারস্থ হন এবং আত্মরক্ষার নিবেদন জানান৷ শিব তখন ত্রিভূবন রক্ষার্থে ঐ বিষ পান করলে তার কণ্ঠ নীল হয়ে ওঠে এবং এজন্য তিনি "নীলকণ্ঠ" নাম পান৷[৪][৫]