হাঁটা (টহল দেওয়া হিসেবেও পরিচিত) হল পাবিশিষ্ট প্রাণীকুলের মধ্যে স্থলজ চলনের প্রধান চলনভঙ্গিগুলোর একটি। হাঁটা সাধারণত দৌড়ানো ও অন্যান্য চলনভঙ্গির থেকে ধীর গতির। "ইনভারটেড পেনডুলাম"(inverted pendulum) চলনভঙ্গি দ্বারা হাঁটাকে সজ্ঞায়িত করা হয় যেখানে শরীর প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে শক্ত অঙ্গ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর উপর উল্লম্ফন দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। ব্যবহারযোগ্য অঙ্গের সংখ্যা নির্বিশেষে এটি প্রযোজ্য, এমনকি আর্থপোড, ছয়টি, আট বা ততোধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহকারে হাঁটে।[১]
ইংরেজি শব্দ 'walk'(হাঁটা) পুরানো ইংরেজি শব্দ 'to roll' থেকে অবতীর্ণ হয়েছে বাংলায় যার অর্থ "গড়িয়ে যাওয়া"। মানুষ ও অন্যান্য দ্বিপদ প্রানীর মধ্যে, দৌড়ানো থেকে হাঁটা সতন্ত্রভাবে আলাদা কারন হাঁটার সময় মাটি থেকে একবারে শুধু একটি পা ওঠে এবং দুই পায়ের উপর ভারবহনের একটি পর্যায় থাকে। অপরদিকে, দৌড়ানোর সময় প্রতি পদক্ষেপে মাটি থেকে দুই পা-ই উঠে যায়। এই পার্থক্যটি প্রতিযোগিতামূলক হাঁটার ইভেন্টগুলিতে একটি আনুষ্ঠানিক শর্ত। চতুষ্পদী প্রজাতির জন্য প্রচুর চলনভঙ্গি রয়েছে যাকে হাঁটা বা দৌড়ানো বলা যেতে পারে এবং স্থগিত পর্বের বা কোনো সময়ে সংযুক্ত পায়ের সংখ্যার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে ভিন্নতা যান্ত্রিকভাবে সঠিক শ্রেণিবদ্ধকরণ তৈরি করে না। দৌড়ানো থেকে হাঁটা পার্থক্য করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হল গতি ক্যাপচার বা মাঝখানে ফোর্স প্লেট ব্যবহার করে কোনও ব্যক্তির ভরকেন্দ্রের উচ্চতা পরিমাপ করা। হাঁটার সময় ভরকেন্দ্রটি মাঝখানে সর্বাধিক উচ্চতায় পৌঁছে যায়, দৌড়ানোর সময় যা থাকে সর্বনিম্ন। তবে এই পার্থক্যটি কেবল মাত্র আনুভূমিক বা প্রায় আনুভূমিক স্থলজ চলনের ক্ষেত্রে সত্য। ১০% এর উপরে ঢালে হাঁটার জন্য এই পার্থক্যটি কিছু প্রাণির ক্ষেত্রে আর ধারণ করে না। ৫০% এরও বেশি পা মাটির সাথে (গড়ে সমস্ত পা জুড়ে) সংযুক্ত সময়কালের দীর্ঘ পদক্ষেপের শতাংশের ভিত্তিতে সংজ্ঞাগুলি "ইনভার্টেড পেন্ডুলাম" কৌশলের সনাক্তকরণের সাথে সুসংগত এবং যেকোনো সংখ্যক অঙ্গবিশিষ্ট প্রাণির জন্য হাঁটার ইঙ্গিত দেয়, যদিও এই সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ। দৌড়ানো মানুষ এবং প্রাণির মাটির সাথে সংযুক্ত সময়কাল চলনচক্রের ৫০% এর বেশি যখন চক্রাকার বাঁক ঘোরে, উর্ধমুখী ঢালে দৌড়ায় বা ভারবহন করে। গতি আরেকটি কারন যা দৌড়ানো থেকে হাঁটা আলাদা করে। যদিও হাঁটার গতি উচ্চতা, ওজন, বয়স, অঞ্চল, তল, ভার, সংস্কৃতি, প্রচেষ্টা এবং ফিটনেসের মতো অনেক কারণের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে, ক্রসওয়াকগুলিতে গড়ে মানুষের হাঁটার গতি ৫ কি.মি/ঘন্টা বা ১.৪ মি./সে. বা ৩.১ মাইল/ ঘন্টা। নির্দিষ্ট গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার গতি ৪.১৫ কি.মি/ঘন্টা (২.৮০ মাইল/ঘন্টা) থেকে ৪.৭৫ কি.মি./ঘন্টা ( ২.৯৫ মাইল/ঘন্টা) এবং অল্প বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার গতি ৫.৩২ কি.মি/ঘন্টা (৩.৩১ মাইল/ঘন্টা) থেকে ৫.৪৩ কি.মি/ ঘন্টা (৩.৩৭ মাইল/ঘন্টা); দ্রুত চলার গতি ৬.৫ কি.মি/ঘন্টা (৪ মাইল/ঘন্টা) হতে পারে। জাপানে, প্রমাণ হাঁটার গতি হচ্ছে ১ মিনিটে ৮০ মিটার বা ৪.৮ কি.মি/ঘন্টা। চ্যাম্পিয়ন রেস প্রতিযোগিরা গড়ে ২০ কি.মি(১২ মাইল) দূরত্ব ১৪ কি.মি/ঘন্টা (৮.৭ মাইল/ঘন্টা) বেগে হাঁটেন। একটি গড় মানব শিশু প্রায় ১১ মাস বয়সে স্বতন্ত্র হাঁটার ক্ষমতা অর্জন করে।
হাঁটা একদম সহজে করা যায় এমন একটি কাজ এবং বিশেষত এটি বাতজনিত লোকদের প্রচুর সুবিধা দেয়। হাঁটা মানসিক অবক্ষয়কে ধীর করে দেয়।সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দ্বারা সম্পাদিত ৬৫ বা তার অধিক বয়স্ক ৬,০০০ মহিলাদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে বয়স-সম্পর্কিত স্মৃতি হ্রাস তাদের মধ্যে কম ছিল যারা বেশি হাঁটেন।