মোবাইল ফোন প্রজন্মের |
---|
উপর একটি সিরিজের অংশ |
মোবাইল টেলিযোগাযোগ |
|
হাই স্পিড প্যাকেট অ্যাক্সেস বা এইচএসপিএ (ইংরেজি: High Speed Packet Access / HSPA)[১] হল দুইটি বেতার টেলিফোনি প্রটোকলের মিশ্রণ, হাই স্পিড ডাউনলিংক প্যাকেট অ্যাক্সেস (এইচএসডিপিএ) এবং হাই স্পিড আপলিংক প্যাকেট অ্যাক্সেস (এইচএসইউপিএ), যা ডাব্লুসিডিএমএ প্রটোকল ব্যবহার করে বিদ্যমান ৩য় প্রজন্মের বেতার যোগাযোগ প্রযুক্তিকে প্রসারিত করে। ৩জিপিপি মানের এক ধরনের বিবর্ধিত এইচএসপিএ (এইচএসপিএ+ নামেও পরিচিত) ২০০৮ সালের শেষ দিকে অবমুক্ত হয় এবং ২০১০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী গৃহীত হতে থাক। নতুন এই প্রযুক্তিতে বিট-রেট ডাউনলিংকে ১৬৮ মেগাবিট/সে এবং আপলিংকে ২২ মেগাবিট/সে পর্যন্ত হতে পারে।
প্রথম দিকের এইচএসপিএ প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ ডাটা রেট ছিল ডাউনলিংকে ১৪ মেগাবিট/সে এবং আপলিংকে ৫.৭৬ মেগাবিট/সে পর্যন্ত। এটি বিট-রেট বাড়িয়েছে এবং আসল ডাব্লুসিডিএমএ প্রটোকলের চেয়ে প্রায়োগিক ক্ষমতা ডাইনলিংকে পাঁচ গুন এবং আপলিংক দ্বিগুন পরিমাণ বৃদ্ধি করিয়েছে। এই উন্নতি বিভিন্নভাবে অর্জিত হয়।
২০১০ সালের জুলাই অনুসারে, ৮০টিরও বেশি দেশে ২০০টিরও বেশি অপারেটর বাণিজ্যিকভাবে এইচএসপিএ প্রযুক্তিতে সেবা দিয়ে থাকে।
ডাব্লুসিডিএমএ থেকে এইচএসপিএ প্রযুক্তিতে আপগ্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় প্রথম ধাপ হল এইচএসডিপিএ প্রবর্তনের মাধ্যম ডাউনলিংকের উন্নতি করা। এই উন্নত ডাউনলিংকে ১৪ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতি পাওয়া যেতে পারে। গতি এবং ধীরতায় এই উন্নতি প্রতি বিটে খরচ কমায় এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্যাকেট ডাটা অ্যাপ্লিকেশনের প্রতি সমর্থন বাড়ায়।
এইচএসডিপিএ প্রযুক্তির ভিত্তি হল শেয়ার্ড চ্যানেল ট্রান্সমিশন। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হল শেয়ার্ড চ্যানেল, মাল্টি-কোড ট্রান্সমিশন, হায়ার-অর্ডার মড্যুলেশন, সংক্ষিপ্ত ট্রান্সমিশন টাইম ইন্টের্ভাল (টিটিআই/TTI), দ্রুত লিংক অ্যাডাপটেশন এবং সময় নির্ধারণ সাথে দ্রুত হাইব্রিড অটোমেটিক রিপিট রিকুয়েস্ট (এইচএআরকিউ/HARQ)। ২০০৮ সালের মে অনুসারে ৯০ শতাংশ ডাব্লুসিডিএমএ নেটওয়ার্ক এইচএসডিপিএ প্রযুক্তিতে আপগ্রেড করা হয়েছে।[২] ভয়েস কলকে সাধারণত ডাটা স্থানান্তরের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের তিনটি নেটওয়ার্ক সেবাদাতা এম১, স্টারহাব এবং সিংটেল পুরো দ্বীপ জুড়ে ২৮ মেগাবিট/সে গতির সেবা দিয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়াতে টেলস্ট্রা দেশব্যাপী সর্বোচ্চ ১৪.৪ মেগাবিট/সে গতির সেবা প্রদান করে থাকে এবং কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় দিয়ে থাকে ৪২ মেগাবিট/সে গতির সেবা। ক্রোয়েশিয়ার ভিআইপিনেট ৭.২ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতির ডাউনলিংক সমর্থন করে থাকে। কানাডার রজার্স ওয়্যারলেস দিয়ে থাকে ২১ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতি।[৩] দক্ষিণ কোরিয়ায় এসকে টেলিকম এবং কেটিএফ দেশব্যাপী ৭.২ মেগাবিট/সে গতির সেবা দিয়ে থাকে। হং কং-এ, পিসিসিডাব্লু, হাচিনসন ৩ এবং সিএসএল ২১ মেগাবিট/সে গতিসম্পন্ন সেবা প্রদান করে। ভারতে বিপিএল, এমটিএস এবং টাটা ডোকোমো দেশব্যাপী ২১.১ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতি প্রদান করে থাকে, অন্যদিকে রিলায়েন্স এডিএই প্রদান করে ২৮.৮ মেগাবিট/সে গতি। শ্রীলঙ্কায় মোবিটেল এবং এটিসালাতের মত কোম্পানি ৪২ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতি প্রদান করে থাকে এবং ডায়ালগ, এয়ারটেল ও হাচ ৭.২ মেগাবিট/সে গতিসম্পন্ন সেবা দিয়ে থাকে।
ডাব্লুসিডিএমএ আপগ্রেড প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় প্রধান ধাপ হল আপলিংকের উন্নয়ন, যা ৩জিপিপি-এর ৬ষ্ঠ অবমুক্তিতে প্রবর্তিত হয়। এইচএসইউপিএ আপগ্রেড সাধারণত শুধুমাত্র একটি সফটওয়্যারের হালনাগাদ। উন্নত আপলিংক ডাব্লুসিডিএমএ-তে একটি নতুন ট্রান্সপোর্ট চ্যানেল যুক্ত করে, যা এনহ্যান্সড ডেডিকেটেড চ্যানেল (ই-ডিসিএইচ/E-DCH) নামে পরিচিত। উন্নত আপলিংক কিছু নতুন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্য ভিওআইপি, চিত্র আপলোড এবং বড় আকারের ই-মেইল বার্তা প্রেরণ উল্লেখযোগ্য। উন্নত আপলিংক ডাটা রেট বৃদ্ধি করে (সর্বোচ্চ ৫.৮ মেগাবিট/সে পর্যন্ত), ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ধীরতা কমায়। উন্নত আপলিংকের বৈশিষ্ট্যসমূহের সাথে এইচএসডিপিএ-এর বৈশিষ্ট্যসমূসের কিছু মিল রয়েছে, যেমন মাল্টি-কোড ট্রান্সমিশন, সংক্ষিপ্ত ট্রান্সমিশন টাইম ইন্টেরভাল (টিটিআই/TTI), দ্রুত সময় নির্ধারণ এবং দ্রুত হাইব্রিড অটোমেটিক রিপিট রিকুয়েস্ট (এইচএআরকিউ/HARQ)।
সিঙ্গাপুরে ২০০৭ সালের ১ আগস্ট, স্টারহাব ঘোষণা করে যে তাদের নতুন ম্যাক্সমোবাইল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ১.৯ মেগাবিট/সে গতির এইচএসইউপিএ সেবা প্রদান করবে। ফিনল্যান্ডে ২০০৭ সালের ৩০ আগস্ট, এলিসা ঘোষণা করে যে তারা কিছু নির্দিষ্ট শহরে ১.৪ মেগাবিট/সে গতির এইচএসইউপিএ সেবা প্রদান করবে এবং মাসখানিক সময়ের মধ্যে তারা তাদের সমগ্র ৩জি নেটওয়ার্কে তা চালু করবে। ৩ ইতালিয়া এবং এরিকসন ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই ঘোষণা করে যে তারা ৩ ইতালিয়া নেটওয়ার্কে এইচএসইউপিএ ৫.৮ মেগাবিট/সে গতির সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।[৪] হাইতিতে ন্যাটকম (ভিয়েতনামের ভিয়েতটেল কর্তৃক পরিচালিত, পূর্বে পাবলিক কোম্পানি ছিল) দেশব্যাপী ৭.২ মেগাবিট/সে গতির আপলিংক সেবা প্রদান করে থাকে।
বিবর্ধিত এইচএসপিএ (এইচএসপিএ বিবর্ধন বা এইচএসপিএ+ হিসেবেও পরিচিত) এটি বিদ্যমান এইচএসপিএ প্রযুক্তির চেয়ে অধিক উন্নত। বিবর্ধিত এইচএসপিএ-এর ডাউনলিংকে সর্বোচ্চ গতি ৮৪ মেগাবিট/সে এবং আপলিংকে ১০.৮ মেগাবিট/সে পর্যন্ত হয়ে থাকে সাথে একাধিক ইনপুট ও আউটপুট প্রযুক্তি এবং উন্নত মড্যুলেশন (৬৪ কিউএএম)। ডুয়াল সেল প্রযুক্তির মাধ্যমে একে দ্বিগুনও করা সম্ভব।
২০১১ সাল পর্যন্ত, এইচএসপিএ+ ব্যবকভাবে ডাব্লুসিডিএমএ অপারেটরদের দ্বারা স্থাপিত হয়েছে। করা হয়েছে প্রায় ২০০টি অঙ্গীকার।[৫]
ডুয়াল-ক্যারিয়ার এইচএসডিপিএ ৩জিপিপি ৮ম অবমুক্তির অংশ, এটি এইচএসপিএ-এর স্বাভাবিক ক্রমোন্নতি। এটি ব্যবহারকারীকে দুইটি সেলের সাথে একসঙ্গে সংযুক্ত করে, যার ফলে সংযোগের গতি বৃদ্ধি পায়।[৬] তত্ত্বগতভাবে, একটি এইচএসপিএ+ নেটওয়ার্ক একটি সেলের মাধ্যমে ২৮ মেগাবিট/সে থেকে ৪২ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতি সমর্থন করে, যদিও আসল গতি অনেক কম। সেলের সংখ্যা দ্বিগুন করে কিছু বৈচিত্র এবং যুগ্ন সিডিউলিং অর্জন করা যায়।[৭] ডুয়াল-সেল বিষেশভাবে কিউওএস এর (কোয়ালিটি অফ সার্ভিস) উন্নতি ঘটায়। ৯ম অবমুক্তি থেকে ডিসি-এইচএসডিপিএ এর সাথে এমআইএমও এর সমন্বয় সমন্বয় ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এই সমন্বয় অপারেটরদের নেটওয়ার্কে ধারণ ক্ষমতার উন্নয়নে সাহায্য করবে।
ডুয়াল-ক্যারিয়ার এইচএসডিপিএ ৩জিপিপি ইউএমটিএস ৯ম অবমুক্তিতে প্রমিত হয়। এর বৈশিষ্ট্যসমূহ ডিসি-এইচএসডিপিএ এর অনুরূপ।[৮] ৯ম অবমুক্তির প্রমিতকরণ ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হয়।[৯]
এইচএসপিএ প্রযুক্তিতে দুইয়ের অধিক ক্যারিয়ারের সমষ্টিকরণ বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে এবং ৩জিপিপি ১১তম অবমুক্তিতে ৪-ক্যারিয়ার এইচএসপিএ অন্তর্ভুক্ত করার কথা রয়েছে। এটি কিউ৩ ২০১২ তে চূড়ান্ত করা হবে বলে নির্ধারণ করা আছে এবং এমসি-এইচএসপিএ সমর্থিত প্রথম চিপসেট ২০১৩ এর শেষে অবমুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ১১তম অবমুক্তিতে ৮-ক্যারিয়ার এইচএসপিএ নির্ধারিত আছে যা ৪ × ৪ এমআইএমও এর সাথে অসংলগ্ন ব্যান্ডে অনুমোদিত এবং এটি ৬৭২ মেগাবিট/সে পর্যন্ত গতি সমর্থন করে।