হাইপোথাইরয়েডিজম | |
---|---|
বিশেষত্ব | অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিবিজ্ঞান |
হাইপোথাইরয়েডিজম মানুষ ও পশুর একটি রোগ, যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে উৎপাদিত থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে হয়ে থাকে। শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন
জন্মগত অভাবজনিত বামনত্ব, পেশীকাঠিন্য ও মানসিক জড়তা হলে তাকে ক্রেটিনিজম বলে।
থাইরয়েড হরমোন তৈরীর জন্য আয়োডিন লাগে, এবং সারা দুনিয়ার পরিসংখ্যানে আয়োডিনের অভাবই হাইপোথাইরয়েডিজমের সর্বপ্রধান কারণ। এমন একটি কারণ যা দূর করা কঠিন নয়। অথচ এখনো এই দূরণীয় কারণের প্রকোপ পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ শিশুর মানসিক জড়তা ঘটিয়ে চলেছে। আয়োডিনের অভাবই প্রধান কারণ হলেও হাইপোথাইরয়েডিজমের একমাত্র কারণ নয়। নানান কারণে থাইরয়েড গ্রন্থিতে হরমোন উৎপাদনের অভাব হতে পারে, যার পরিণাম সাময়িক অথবা স্থায়ী হতে পারে। যেমন হাইপারথাইরয়েডিজমের ট্রিটমেন্ট করবার সময় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন-১৩১ প্রয়োগ করা হয় যা থাইরয়েড গ্রন্থিতে জমা হয় ও থাইরয়েড গ্রন্থির তীব্র ক্ষতি করে যার স্থায়ী ফল হিসাবে আয়াট্রোজেনিক (অর্থাৎ ঔষধজনিত বা চিকিৎসাঘটিত) হাইপোথাইরয়েডিজম ঘটে এবং তখন বাকী সারা জীবন এই রোগীদের থাইরয়েড হরমোন ওষুধ হিসাবে খেতে হয়।
সাধারণ জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ হাইপোথাইরয়েড।[১] খাবারে আয়োডিনের স্বল্পতা হাইপোথাইরয়েড হবার একটি বড় কারণ। হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হবার বেশকিছু কারণ আছে। ইতিহাস বলে, এবং এখনো অনেক উন্নয়নশীল দেশে, আয়োডিন স্বল্পতাকেই বিশ্বজুড়ে হাইপোথাইরয়েডিজমের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। আয়োডিনের স্বল্পতা ছাড়াও হাশিমোতোর থাইরয়েডিটিস বা থাইরয়েড গ্রন্থির এক প্রকার প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন), অথবা হাইপোথ্যালামাস বা পিটুইটারি গ্রন্থির থেকে নিসৃত থাইরয়েড স্টিম্যুলেটিং হর্মোনের স্বল্পতাও এই রোগের কারণ হতে পারে। গর্ভধারণের সময় দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধির কারণে থাইরয়েড হর্মোনের প্রয়োজন এত বেশি বৃদ্ধি পায় যে সাময়িক ভাবে থাইরয়েড হর্মোন কম পড়তে পারে যা জন্মদানের পর আপনি ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে কারো যদি আগে থেকেই মৃদু হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে তাহলে তা আরো প্রকট হয়ে পড়তে পারে। পোস্টপার্টাম থাইরয়েডিটিজ থেকেও হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে। দেখা যায় যে, সন্তান জন্মদানের পর এক বছরের মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশ মহিলা পোস্টপার্টাম (অর্থাৎ জন্মদান পরবর্তী) থাইরয়েডিটিসে আক্রান্ত হন। থাইরয়ডাইটিসের প্রথম দশায় থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে খুব বেশি বেগে হর্মোন নিসৃত হয়ে হাইপারথাইরয়েডিজম ঘটাতে পারে। এরপর দুটি ব্যাপার ঘটতে পারে; মহিলাটির থাইরয়েড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে বা তিনি হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হতে পারেন। যে সকল মহিলা পোস্টপার্টাম থাইরয়েডিটিজের মাধ্যমে হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে গড়ে পাঁচ জনের মধ্যে একজন স্থায়ী হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত হন এবং বাকি জীবন তাদের চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন হয়।
অস্থায়ী হাইপোথাইরয়েডিজমের আরেকটি কারণ হতে পারে ওলফ-চেইকোফ ইফেক্ট যাতে খুব বেশি আয়োডিনের প্রভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির মধ্যে থাইরোগ্লোব্যুলিনের সংগে আয়োডিন সংযোগ হবার (আয়োডিন আত্তিকরণ) ধাপটিতে অসুবিধা হতে পারে। এজন্য হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে খুবই অল্প বিশুদ্ধ আয়োডিন ব্যবহৃত হতে পারে, বিশেষ করে কেবল জরুরি অবস্থায়।
রোগ যে প্রত্যঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয় তার ওপর ভিত্তি করে হাইপোথাইরয়েডিজমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:[২][৩]
প্রকার | উৎপত্তি | বর্ণনা |
প্রাথমিক | থাইরয়েড গ্রন্থি | সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো হাশিমোতোর থাইরয়েডিটিস (একটি অটোইমিউন রোগ) এবং হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য রেডিওআয়োডিন থেরাপি। |
মাধ্যমিক | পিটুইটারি গ্রন্থি | এটা হয় যখন পিটুইটারি গ্রন্থি পর্যাপ্ত পরিমাণ থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) উৎপন্ন করতে ব্যর্থ হয়, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রয়োজনীয় থাইরক্সিন ও ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন উৎপন্ন হতে সাহায্য করে। যদিও সেকেন্ডারি হাইপোথাইরয়েডিজমের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই, তবুও সাধারণত টিউমার, রেডিয়েশন বা শল্যচিকিৎসার কারণে পিটুইটারি গ্রন্থি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেকেন্ডারি হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে।[৪] |
টারশিয়ারি | হাইপোথ্যালামাস | এটা ঘটে যখন হাইপোথ্যালামাস পর্যাপ্ত পরিমাণ থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (TRH) উৎপন্ন করতে ব্যর্থ হয়। পিটুইটারি থাইরোট্রপিন (TSH) উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। এটাকে হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাক্সিস-হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। |
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজমের নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়।[৪][৫][৬]
প্রাথমিক বা প্রাইমারি হাইপোথাইরয়েডিজম নির্ণয়ে বেশিরভাগ ডাক্তার সাধারণত পিউটুইটারি গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের (TSH) পরিমাণ পরিমাপ করেন। TSH–এর উচ্চমাত্রা নির্দেশ করে যে থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করছে না (প্রধানত থাইরক্সিন (T4) এবং অল্প পরিমাণ ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (T3))। কিন্তু সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি হাইপোথাইরয়েডিজম TSH পরিমাপের দ্বারা নির্ণয় করা যায় না। TSH এর পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও হাইপোথাইরয়েডিজম নির্ণয় করা যেতে পারে এবং সেজন্য যে রক্ত পরীক্ষাগুলো করাতে পরামর্শ দেয়া হয়, তা হলো:
এছাড়া আরো বিশেষ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
|তারিখ=
(সাহায্য)
শ্রেণীবিন্যাস | |
---|---|
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |