অনুশীলন সমিতি |
---|
![]() |
প্রভাব |
অনুশীলন সমিতি |
উল্লেখযোগ্য ঘটনা |
সম্পর্কিত প্রসঙ্গ |
হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলাটি হয়েছিল অনুশীলন সমিতির ৪৭ জন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীর গ্রেফতার ও বিচারকে ঘিরে। এর পরেই ১৯১০ সালের ২৪শে জানুয়ারি কলকাতায় ইন্সপেক্টর শামসুল আলমের হত্যার ঘটনাটি ঘটে। আলম ছিলেন বেঙ্গল পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তিনি, আলিপুর বোমা মামলার মূল সাক্ষী নরেন গোঁসাই হত্যা, গোঁসাই হত্যা মামলার সরকারি উকিল কলকাতা উচ্চ আদালতের উকিল আশুতোষ বিশ্বাসের হত্যা এবং ক্ষুদিরাম বসুর গ্রেপ্তারকারী পুলিশ অফিসার নরেন ব্যানার্জীর হত্যার তদন্ত করছিলেন। অনুশীলন সমিতি র গোপনে চলা বাংলার বিপ্লবী কার্যকলাপকে আলম প্রকাশ্যে আনেন, যেগুলি সেইসময়ের নানা হত্যা এবং ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বীরেন দত্ত গুপ্তের হাতে নিজের খুনের সময়, আলম অভিযোগগুলি একত্রিত করে একটি মামলার মাধ্যমে বিচারের জন্য আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।[১]
অভিযুক্তদের মধ্যে ৪৭ জন ২৯শে জানুয়ারি ১৯১০ এর মধ্যেই গ্রেপ্তার হয়ে যায়। অভিযুক্তদের বিচার ৪ঠা মার্চ ১৯১০ সালে শুরু হয়, কলকাতা উচ্চ আদালতে দ্বিতীয় শুনানি শুরু হয় ১৯১০ সালের জুলাইতে। সরকারি উকিল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন সমস্ত অপরাধগুলি এবং সমিতি একই সাথে যুক্ত। কিন্তু সমিতির কাঠামো বিকেন্দ্রীভূত হওয়ায় উকিলের সেই প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যায়। ৩৩ জন অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে, অন্যান্যদের সাথে বাঘা যতীন এবং নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে অপরাধী ঘোষণা করে এক বছরের জন্য সাজা দেওয়া হয়।
এই মামলাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমেই বাঘা যতীনের কাজ এবং সমিতির কার্যকলাপ ব্রিটিশ রাজের তদন্তের অধীনে চলে আসে। বাঘা যতীনের বিকেন্দ্রীভূত সংস্থা নীতির ফলে অসংখ্য আঞ্চলিক সংস্থা তৈরি হয়ে যায়। এফ.সি. ডালি একাধিকবার বলেছেন: "একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দল, এখানে বিভিন্ন উপদেষ্টা ও ছোটখাট প্রধান আছে... নথিভুক্ত তথ্যানুযায়ী আমরা দলটিকে চারভাগে ভাগ করতে পারি: (১) শিক্ষক, (২)প্রভাবশালী সমর্থক, (৩) নেতা, (৪) সদস্য।"[২] জে.সি. নিক্সনের রিপোর্ট আরো স্পষ্ট : "তাদের এই হিসাবে, যদিও বিভিন্ন দলগুলিকে আলাদা নাম ও আলাদা পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, এবং সম্ভবত এই পার্থক্যগুলি ছোট সদস্যদের মধ্যেই দেখা গেছে, এটি খুব পরিষ্কার যে বড় নেতারা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রায়ই বিভিন্ন সমিতির সদস্যদের নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করে নিতেন। ধরে নেওয়া যেতে পারে একসময় এই বিভিন্ন দলগুলি তাদের বিপ্লবী লক্ষ্যে স্বাধীনভাবে নৈরাজ্যমূলক অপরাধে জড়িত ছিল, কিন্তু উৎসতে তারা ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল।"[৩] বেশ কিছু পর্যবেক্ষক বাঘা যতীনকে এত সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন যে, নব নিযুক্ত ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ, আর্ল ক্রু (ভারতে এইচ এম এর সেক্রেটারী অব স্টেট) কে আরো স্পষ্টভাবে লিখেছেন : "মামলার বিষয়ে, আমি (...) গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি জাল অনেক বেশি ছড়ান হয়ে গেছিল; উদাহরণস্বরূপ হাওড়া গ্যাং মামলা, যেখানে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তাদের মধ্যে একমাত্র একজনই, আমার বিশ্বাসে, আসল অপরাধী। যদি এই এক অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করার একটি জোরদার প্রচেষ্টা চালান যেত, আমার মনে হয় ৪৬ জন ভুল পথে চালিত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর চেয়ে অনেক বেশি কাজের কাজ হত।"[৪] ২৮শে মে ১৯১১, হার্ডিঞ্জ স্বীকার করলেন : "দশম জাঠা মামলা আসলে হাওড়া গ্যাং মামলারই অংশ; এবং পরেরটিতে ব্যর্থ হওয়ার পর, বাংলার সরকার প্রথমটি চালিয়ে যাওয়ার নিরর্থকতা উপলব্ধি করলেন ... আসলে, আমার মতে, বাংলা ও পূর্ববাংলার অবস্থা, এর থেকে খারাপ কিছু আর হতে পারেনা। কোন প্রদেশেই আসলে কোন সরকার নেই..."[৫]