হাতুড়ে ডাক্তার

অনভিজ্ঞ একজন হাতুড়ে ডাক্তারের নিজেকে জ্ঞানী জাহির করার দৃশ্য !

হাতুড়ে ডাক্তার হচ্ছে সেই সকল ব্যক্তি যারা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত কিন্তু চিকিৎসা সেবায় যারা অদক্ষ। হাতুড়ে ডাক্তার শব্দটি একটি বাংলা বাগধারাযে ডাক্তার রোগ হাতড়ে বেড়ায়। হাতুড়ে ডাক্তাররা দাবী করেন তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারে জ্ঞান ও দক্ষতা আছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে তারা রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় কিংবা ভুল চিকিৎসা প্রদান করে। হাতুড়ে ডাক্তারেরা অল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অদক্ষ হয়। তারা প্রায় সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দেয়, সব রোগের চিকিৎসা করে। অনেক সময় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা অথবা স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে পরিচিতি ও চিকিৎসা কেন্দ্রে চাকরির কারণে এরা চিকিৎসা কাজে যুক্ত হয়। হাতুড়ে ডাক্তারদের চিকিৎসার কারণে অনেক সময় রোগী বড় ধরনের বিপদ এমনকি মৃত্যুমুখে পতিত হয়।[] ভারতের নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দেয়া অর্ধেকেরই চিকিৎসা সেবার কোনো ডিগ্রি নেই। যে সকল গ্রামে কোনো ডাক্তার নেই সেখানে হাতুড়েরাই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।[]

বর্ণনা

[সম্পাদনা]

যেকোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সহকারী হিসেবে কিংবা নিবন্ধিত চিকিৎসকের কাজে সহায়তা করে অথবা ঔষধের দোকানে বা চিকিৎসকের ডিসপেনসারিতে ঔষধ বিক্রি করার মাধ্যমে এদের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। এসময়ে কতগুলো সাধারণ রোগের সঙ্গে এরা পরিচিত হয়। এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ এর নাম শেখে এবং ক্রমে স্টেথোস্কোপ, থার্মোমিটার, রক্তচাপ মাপার যন্ত্র ইত্যাদি ব্যবহার করা শিখে নেয়। তার সাথে শরীরে ইনজেকশন প্রবেশ করানোর কৌশলও শিখে নেয়। বেশিরভাগ হাতুড়ে ডাক্তার এ ধরনের জ্ঞান নিয়েই তাদের পেশায় যোগদান করে। অনেকের আবার এ প্রাথমিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাটুকুও থাকে না, বিশেষত যারা প্রত্যন্ত গ্রামে চিকিৎসার কাজে নিযুক্ত থাকে।

বাংলাদেশ, এশিয়াআফ্রিকার উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলোর গ্রামের শতাধিক হাতুড়ে ডাক্তার চিকিৎসা পেশায় যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার থেকে কবিরাজ, ওঝা, হেকিম, আয়া, ধাত্রী, সাপুড়ে, হাড়-বসানোর বিশেষজ্ঞ ও রক্ত-মোক্ষণকারী পর্যন্ত রয়েছে। কখনো কখনো ভুল চিকিৎসা ও ভুল রোগনির্ণয় এর কারণে রোগকে কঠিন পর্যায়ে নিয়ে এরা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক হুমকি সৃষ্টি করে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষত গ্রাম এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্তরে এরা জনশক্তির একটি বড় উৎস।

নকল হাতুড়ে ডাক্তার

[সম্পাদনা]

অকার্যকর এবং বিপজ্জনক ঔষধ এর সঙ্গে মানব চিকিৎসার ইতিহাস জুড়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে নম্র পদার্থগুলি কি হতে পারে তার জন্য গ্র্যান্ডিওজ দাবী করা হয়েছিল: উদাহরণস্বরূপ, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেভলেন্টা আরবিকা আক্রমণকারীদের অনুশীলনমূলক খাদ্য হিসাবে অসাধারণ পুনরুদ্ধারমূলক গুণাবলী প্রচারিত হয়েছিল; এর চিত্তাকর্ষক নাম এবং অনেক আলোকিত প্রশংসাপত্র সত্ত্বেও এটি সত্যই সাধারণ মসুর ডাল ও ময়দা ছিল, যা অনেক অর্থের বিনিময়ে দোষীদের কাছে বিক্রি করা হত।

এমনকি যেখানে কোনও জালিয়াতির উদ্দেশ্য ছিল না, হাতুড়ে ঔষধগুলিতে প্রায়শই কোনও কার্যকর উপাদান থাকে না। কিছু ঔষধে আফিম, অ্যালকোহল এবং মধু জাতীয় পদার্থ রয়েছে যা লক্ষণীয় ত্রাণ দিতো তবে তার কোনও নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য ছিল না। ক্রেতাকে ফিরে আসতে প্ররোচিত করার জন্য কারও কারও আসক্তি গুণাবলী ছিল। হাতুড়েদের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া কয়েকটি কার্যকর প্রতিকারের মধ্যে রয়েছে ইমেটিকস, রেবেস্টিকস এবং মূত্রবর্ধক কিছু ঔষধ যার ঔষধি প্রভাব রয়েছে: পারদ, রৌপ্য এবং আর্সেনিক যৌগগুলি কিছু সংক্রমণ নিরাময় করতে পারে; উইলো ছাল, স্যালিসিলিক অ্যাসিড, রাসায়নিকভাবে অ্যাসপিরিন এর সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত; এবং কুইনাইন, জেসুইটের ছাল হল ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য মলদ্বারের জন্য কার্যকর চিকিৎসা। তবে, উপযুক্ত ব্যবহার এবং ডোজ সম্পর্কে হাতুড়ে ডাক্তারদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ ছিল।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "হাতুড়ে ডাক্তারের কেরামতি!"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "হাতুড়ে ডাক্তারকে কি বদলে দেয়া সম্ভব?"। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯