হানি শাফট | |
---|---|
জন্ম | ইয়নেচা ইয়োহানা শাফ্ট ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯২০ হার্লেম, হল্যান্ড |
মৃত্যু | ১৭ এপ্রিল ১৯৪৫ ব্লুমেন্ডাল, হল্যান্ড | (বয়স ২৪)
জাতীয়তা | ডাচ |
অন্যান্য নাম | লাল চুলের মেয়ে |
পরিচিতির কারণ | প্রতিরোধী যুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
ইয়নেচা ইয়োহানা শাফ্ট[টীকা ১] (ওলন্দাজ ভাষায় Jannetje Johanna Schaft) (১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯২০ – ১৭ই এপ্রিল ১৯৪৫) ওলন্দাজ সাম্যবাদী বিপ্লবী ও গেরিলা যোদ্ধা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সাম্যবাদী বিপ্লবীদের প্রতিরোধী লড়াইয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি "লাল চুলের মেয়ে" (ওলন্দাজ ভাষায় Het meisje met het rode haar) হিসেবে সহযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন। প্রতিরোধ আন্দোলনে তার গোপন ডাকনাম ছিল "হানি" (Hannie).[১]
উত্তর হল্যান্ডের হারলেমে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। পিতা সোসাল ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। অল্পবয়েসেই রাজনীতি ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল তার। সমাজবিদ্যা ইত্যাদির প্রতি আগ্রহ তাকে আইন এবং মানবাধিকার নিয়ে পড়াশোনার দিকে নিয়ে যায়। ভ্যাম আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরার সময় সোনজা ফ্রানক ও ফিলিন পোলক নামে দুই ইহুদি ছাত্রের সাথে বন্ধুত্ব হয়। তখন থেকে বিশ্বে ইহুদিদের ওপর ঘটে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ১৯৪৩ সালে জার্মান বাহিনী নেদারল্যান্ডস দখল করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জার্মানির সাথে মিত্রতা শর্তে সই করার হুকুম হয়। শেফট তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর ফলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে হয়।[১]
প্রথমে ছোটখাটো কাজ দিয়ে নাৎসি পার্টি বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে সহায়কের কাজ করতেন শ্যাফট। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে নেদারল্যান্ড কমিউনিস্ট পার্টির সহায়ক সংগঠন কাউন্সিল অফ রেসিস্ট্যান্সে (ওলন্দাজ ভাষায় রাড ভান ভেরজেট) যোগ দেন। বাহক হিসেবে কাজের বদলে সশস্ত্র সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। জার্মান ভাষা সুন্দরভাবে বলতে পারার জন্যে জার্মান সেনাদের কাছে পৌছে যাওয়া তার পক্ষে সহজ ছিল। জার্মান ও ডাচ-নাজীদের ওপর একাধিক আক্রমণ পরিচালনায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে সমস্ত কর্মসূচীই যে প্রশ্নাতীত ভাবে মেনে নিতেন তা নয়। একবার নাজী সেনাদের শিশুসন্তানদের অপহরণ করার পরিকল্পনা হলে তিনি অসম্মত হন কারণ তার কাছে এই কাজ নাজীদেরই সমতুল বলে মনে হয়। শত্রুপক্ষের কাছে তিনি লাল চুলের মেয়ে হিসেবে পরিচিত হন। নাজীদের সন্ধানতালিকায় উপরের সারিতে ছিলেন এই কমিউনিস্ট যোদ্ধা। তার এক সহযোগী একটি হত্যাচক্রান্তে অংশ নিয়ে আহত হয়ে ডাচ-নাজী সেবিকাকে শাফটের আসল পরিচয় ভুলক্রমে বলে দেয়। নাজীরা শাফটের পিতামাতাকে গ্রেপ্তার করে ভোগৎ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এ পাঠায়। এই ঘটনার পরে কিছুটা হতোদ্যম শাফট প্রতিরোধী বাহিনীর সাথে সাময়িকভাবে দুরত্ব তৈরী করেন। পরে যদিও তিনি একাধিকবার বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, অস্ত্র পাচার, নিষিদ্ধ পত্রিপত্রিকা বিলি ইত্যাদি কর্মসূচীতে ফিরে আসেন। নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে চুলের রঙ কালো করে ফেলেছিলেন তিনি।
২১ মার্চ, ১৯৪৫ খৃষ্টাব্দে হার্লেম শহরের সেনা নাকাবন্দীতে তিনি ধরা পড়েন নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পত্রিকা বিলির অপরাধে। তাকে জেরা এবং অত্যাচার করে পুলিশ জানতে পারে তিনিই 'লাল চুলের মেয়ে' হানি শাফট। ১৭ এপ্রিল তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দুইজন নাজী তাকে গুলি করে। প্রচলিত আছে যে প্রথম জনের গুলিতে তিনি আহত হন এবং বলেন "তোমার চাইতেও ভাল গুলি চালাতে পারি আমি"। এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তির গুলিতে তিনি মারা যান।[২]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ৪২২ জন বিপ্লবীর নাম প্রতিরোধী কমিউনিস্ট বাহিনীর মধ্যে চিহ্নিত করা যায়। এদের মধ্যে শাফটই ছিলেন একমাত্র মহিলা। তার মৃত্যুর পর রানী হুইলহেলমিনা তাকে 'প্রতিরোধের প্রতীক' নামে সম্মানিত করেন। কমিউনিজমের পতনের পর সেদেশে তার স্মরণ নিষিদ্ধ হয়। পরে ডাচ রাজপরিবারের প্রত্যক্ষ তত্বাবধান ও উপস্থিতিতে তার কবর সসম্মানে পুনস্থাপিত করা হয়। শাফটের জন্মস্থান হার্লেমের কেনাউ পার্কে রাজকন্যা জুলিয়ানা তার ব্রোঞ্জ মুর্তির উদ্বোধন করেন। হল্যান্ডে একাধিক বিদ্যালয় ও রাস্তার নামকরন করা হয়েছে তার নামে।[২]