Hâfiz Osman | |
---|---|
![]() A hilye by Hâfiz Osman. | |
জন্ম | 1642 |
মৃত্যু | ১৬৯৮ (বয়স ৫৫–৫৬) Istanbul, Ottoman Empire |
পরিচিতির কারণ | Islamic calligraphy |
আন্দোলন | Thuluth and Naskh |
হাফিজ উসমান (উসমানীয় তুর্কি: حافظ عثمان অধুনা তুর্কি: Hâfız Osman) (১৬৪২-১৬৯৮) ছিলেন একজন বিখ্যাত উসমানীয় ক্যালিগ্রাফার যিনি লিপিশিল্পের উন্নয়ন এবং হিলিয়ার জন্য একটি নকশা তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিলেন যা পৃষ্ঠা নকশার ক্ষেত্রে একটি শাস্ত্রীয় পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছিল।
ইস্তাম্বুলে উসমান দেন আলি নামে জন্মগ্রহণকারী হাফিজ ওসমান ছিলেন দরবেশ বংশোদ্ভূত। তিনি 'হাফিজ ওসমান' নামে কাজ করতেন।[১] তাঁর পিতা খাসসেকি মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন; এই পদটি তাকে এবং তার পরিবারকে উল্লেখযোগ্য সুরক্ষা প্রদান করত।[২]
তিনি একজন পারদর্শী ক্যালিগ্রাফার হয়ে ওঠেন এবং সুলতান দ্বিতীয় আহমেদ, দ্বিতীয় মুস্তাফা এবং তৃতীয় আহমেদের শিক্ষক ছিলেন। সুলতান দ্বিতীয় মুস্তাফা তাঁকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী, সুলতান প্রায়শই তাঁর লেখার কাজ দেখতেন এবং লেখার সময় কলমের কালিধারক হিসেবে কাজ করতেন।[৩]
হাফিজ ওসমান সুয়েলকুজাদে মুস্তাফা ইয়ুবি এবং দরবেশ আলির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ লাভ করেন। তিনি দরবেশ আলির কাছে নাসখ ও সুলুস শিখেন এবং সুয়েলকুজাদে মুস্তাফা ইয়ুবি কর্তৃক শংসাপত্রপ্রাপ্ত হন। ওসমান পঞ্চদশ শতাব্দীর ক্যালিগ্রাফার শেখ হামদুল্লাহর কাজেরও প্রশংসা করতেন এবং নিজের দক্ষতা উন্নত করতে তার কাজগুলি অধ্যবসায়ের সাথে অনুলিপি করতেন।[৪]
ওসমান কিছু পরিত্যক্ত ক্যালিগ্রাফি পদ্ধতি (ছয়টি লিপির কিছু) পুনরুজ্জীবিত করেন। এই লিপিগুলির বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার পরে 'হাফিজ ওসমানের ধারা' হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। তরুণ প্রজন্মের ক্যালিগ্রাফাররা এই ধারাটিকে পছন্দ করতেন এবং ধীরে ধীরে এটি হামদুল্লাহর ধারাটিকে প্রতিস্থাপন করে।[৫]
ওসমান শুধু একজন দক্ষ ক্যালিগ্রাফারই ছিলেন না, পাশাপাশি বিন্যাসের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন দক্ষ। তিনি টেক্সট ডিজাইনের উৎকর্ষতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান, প্রায়শই একই পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ধরনের ক্যালিগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত করতেন। তাঁর সেরা কাজটি হলো উসমানীয় হিলিয়া; একটি নকশা টেমপ্লেট যাতে নান্দনিকভাবে আটটি স্বতন্ত্র উপাদান সাজানো থাকে যাতে করে তা ধ্যান ও ভক্তির অনুভূতিগুলোর অনুপ্রেরণা জাগায়। এই উপাদানগুলি হল: বা মাখান (প্রস্তাবনা); গোবেক (পেট); হিলাল (অর্ধচন্দ্র); কোয়েলার (কোণ); অয়াক (আয়াত); এতক (পা); কলতুকার (গলি) এবং পেরভাজ (ফ্রেম)। এই হিলিয়া উসমানীয় বিশ্বে আদর্শ বিন্যাসে পরিণত হয়।[৪]
হিলিয়া হলো একটি ক্যালিগ্রাফিক প্যানেল যেখানে হাদিসভিত্তিক বর্ণনা থাকে যাতে নবী মুহাম্মদের (সা.) শারীরিক চেহারা এবং গুণাবলী বর্ণিত হয়। হাফিজ ওসমান এ ধরনের বর্ণনাগুলো আনুষ্ঠানিক নকশায় অন্তর্ভুক্ত করেন, যেগুলো দ্রুতই এই শিল্পকলার আদর্শ রূপে পরিণত হয়। হিলিয়া প্রাচীর অলঙ্কার বা বিভিন্ন উপরিতলের অলংকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকে, যা অন্যান্য ধর্মীয় ঐতিহ্যে মূর্তিচিত্রের মতই ভূমিকা পালন করে। নবীজির চেহারার একটি বাস্তবধর্মী ও শিল্পসম্মত বর্ণনা থাকলেও তারা তাঁর চেহারা কল্পনা করার স্থান রেখে দর্শকের কাছে নবীজির (সা.) আকৃতির বিরুদ্ধে মূর্তি নির্মাণের ধারণাকে মেনে নিতে বাধা দেয়।[৬]
হাফিজ ওসমান হামদুল্লাহর ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করেন, বিশেষ করে পরিত্যক্ত কয়েকটি লিপির পুনঃপ্রবর্তন ঘটান। তাঁর বেঁচে থাকা কাজের মধ্যে ইস্তাম্বুলের তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘরের গ্রন্থাগার এবং নাসের ডি. খলিলি সংগ্রহস্থলে রক্ষিত কুরআনের অনুলিপি রয়েছে। ওসমান কর্তৃক নির্মিত কুরআনের খণ্ডগুলি তার সময়কালের মধ্যে সর্বাধিক কাঙ্ক্ষিত ছিল।[৭]
তিনি রবিবার দরিদ্রদের এবং বুধবার ধনীদের পাঠদান করতেন। তাঁর জীবদ্দশায়, তিনি প্রচুর সংখ্যক ক্যালিগ্রাফারদের প্রশিক্ষণ দেন, তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন ইয়েদিকুলেলি সেয়্যিদ আবদুল্লাহ এফেন্দি।[৮]