হাবিবউল্লাহ কালাকানি حبیب الله کلکانی | |||||
---|---|---|---|---|---|
আফগানিস্তানের বাদশাহ | |||||
![]() | |||||
আফগানিস্তানের বাদশাহ | |||||
রাজত্ব | ১৭ জানুয়ারি ১৯২৯ – ১৬ অক্টোবর ১৯২৯ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ১৭ জানুয়ারি ১৯২৯ | ||||
পূর্বসূরি | ইনায়েতউল্লাহ খান | ||||
উত্তরসূরি | মুহাম্মদ নাদির শাহ | ||||
জন্ম | ১৯ জানুয়ারি ১৮৯১ কালাকান, কাবুল প্রদেশ | ||||
মৃত্যু | ১ নভেম্বর ১৯২৯ কাবুল, কাবুল প্রদেশ | (বয়স ৩৯)||||
| |||||
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) |
![]() |
আফগানিস্তানের ইতিহাস |
---|
সময়রেখা |
হাবিবউল্লাহ কালাকানি (ফার্সি: حبیبالله کلکانی; ১৯ জানুয়ারি ১৮৯১ – ১ নভেম্বর ১৯২৯) ছিলেন আফগানিস্তানের বাদশাহ। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিনি শাসন করেছেন। আফগানিস্তানের আধুনিকীকরণের বিরোধী বিভিন্ন আফগান গোত্রের সহায়তায় আমানউল্লাহ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তিনি ক্ষমতা পান।[১] ক্ষমতালাভের পর তিনি হাবিবউল্লাহ খাদেম-এ দীন-এ রাসুল্লাহ ("আল্লাহর রাসুলের ধর্মের সেবক") নামধারণ করেছিলেন। ক্ষমতালাভের নয় মাস পরে তিনি মুহাম্মদ নাদির শাহ কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন।[২][৩]
হাবিবউল্লাহ কালাকানি ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে কাবুলের উত্তরে কালাকান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন তাজিক বংশোদ্ভূত। তার পিতা আমানউল্লাহ ব্রিটিশ ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের সময় সৈনিকদের জন্য পানি বহনের কাজ করতেন। একারণে হাবিবউল্লাহকে "বাচে সাকাও" (পানি বহনকারী পুত্র) বলা হত।[২][৪] ধারণা করা হয় যে তিনি একজন বৃদ্ধ সুফির সাক্ষাত পেয়েছিলেন যিনি তাকে আমির হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।[৫]
কৈশোরে তিনি কাবুল আসেন এবং এখানে আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এসময় তিনি তার রাইফেলসহ দলত্যাগ করে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পেশাওয়ার (বর্তমান পাকিস্তান) চলে যান বলে জানা যায়।[২] সেখানে তিনি রাস্তায় চা বিক্রিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ধনী ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে সম্পদ কেড়ে নেয়ার জন্য তিনি তার কোশিস্তানি তাজিক অনুসারীদের কাছে রবিন হুডের মত চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। তবে তার প্রতিপক্ষরা তাকে ডাকাত ও সাধারণ অপরাধী হিসেবে দেখত।[৪]
বাদশাহ আমানউল্লাহ খান ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপ থেকে ফিরে আসেন। তিনি অনেক পাশ্চাত্য চিন্তাধারা গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি দেশকে দ্রুত আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। তবে এসকল উদ্যোগের ফলে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল শিনওয়ারি গোত্রীয়রা তার বিরুদ্ধে চলে যায় এবং আফগানিস্তান থেকে তার বিতাড়ন দাবি করে। তাজিক সঙ্গীদের সমর্থন কালাকানি এই সুযোগ কাজে লাগান।
আফগান সেনাবাহিনী লাগমান ও নানগারহারে ভয়াবহ যুদ্ধে নিয়োজিত থাকাবস্থায় কালাকানি ও তার তাজিক বাহিনী উত্তর দিক থেকে কাবুলের উপর আক্রমণ করতে শুরু করে। বিদ্রোহের পর দেশে দ্রুত গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াজিরিস্তান থেকে আগতরা দক্ষিণদিক থেকে কাবুল ঘিরে ফেলে। অন্যদিকে কালাকানি উত্তর দিক থেকে অগ্রসর হন। প্রথমে তিনি বাধাপ্রাপ্ত হলেও কয়েকদিন পর তার বাহিনী কাবুল দখল করতে সক্ষম হয়।[৪]
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে আমানউল্লাহ খান তার ভাই ইনায়েতউল্লাহ খানের হাতে শাসনভার অর্পণ করে কান্দাহারের মধ্য দিয়ে কাবুল ত্যাগ করেন। দুই দিন পর ১৬ জানুয়ারি কালাকানি ইনায়েতউল্লাহ খানের কাছে চিঠি লিখে আত্মসমর্পণ বা লড়াই যেকোনো একটার প্রস্তাব দেন। ইনায়েতউল্লাহ খান উত্তর দেন যে তিনি কখনো বাদশাহ হতে চাননি। তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করেন এবং ১৭ জানুয়ারি কালাকানিকে বাদশাহ ঘোষণা দেয়া হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কাবুলের আর্গ প্রাসাদ দখল করার পর কালাকানি ৭,৫০,০০০ ব্রিটিশ পাউন্ডের সন্ধান পান। এ থেকে সৈনিকদের বেতন দেয়া হয়।[২] তিনি প্রাসাদ থেকে ফুলের গাছ তুলে সেখানে সবজি রোপণের নির্দেশ দেন। তিনি নারীদের বিদ্যালয় ও পশ্চিমা শিক্ষকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে আমানউল্লাহ খান একটি নতুন সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেন। তিনি তার শীর্ষ জেনারেল নাদির খানকে ইউরোপ ডেকে আনেন। নাদির খানের বাহিনী দ্রুত পশ্চম ও দক্ষিণ আফগানিস্তান অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। তাদের ব্রিটিশ সমর্থন ও অনেক উপজাতীয় স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা ছিল।
নাদির খান পশতুনিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার সৈনিক লাভ করেছেন। তার বাহিনী দ্রুত কাবুল পৌছায় এবং কালাকানির বাহিনীকে পরাজিত করে। সেই বছরের অক্টোবরের শেষ নাগাদ কাবুল নাদির খানের বাহিনীর দ্বারা ঘেরাও হয়ে পড়ে। নাদির খানের বাহিনীতে তার ভাই শাহ ওয়ালি খান ও শ্যালক আমানউল্লাহও ছিলেন। হাবিবউল্লাহ কালাকানি শেষপর্যন্ত গ্রেপ্তার হন।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর ফায়ারিং স্কোয়াডে হাবিবউল্লাহ কালাকানির মৃত্যুদণ্ড হয়। তার ভাই ও আরো দশজন বিদ্রোহী নেতারও মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। এরপর তাদের মৃতদেহ প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়।[২] তার দাফনের স্থল নির্দিষ্ট করে শনাক্ত করা যায় না তবে ধারণা করা হয় যে তার গ্রাম কালাকানে তার কবর অবস্থিত।
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী ইনায়েতউল্লাহ খান |
আফগানিস্তানের বাদশাহ ১৭ জানুয়ারি ১৯২৯ – ১৬ অক্টোবর ১৯২৯ |
উত্তরসূরী মুহাম্মদ নাদির শাহ |